বহুমাত্রিক জগতের রোমাঞ্চের খোঁজে

ফ্ল্যাটল্যান্ড, পরিচালক: ড্যানো জনসন ও জেফরি ট্র্যাভিস, ধরন: কল্পবিজ্ঞান (অ্যানিমেটেড), দৈর্ঘ্য: ৩৪ মিনিট, মুক্তিসাল: ২০০৭, আইএমডিবি রেটিং: ৬.৯/১০

বিজ্ঞানের সত্যটা প্রচারের জন্য জিওর্দানো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়। গ্যালিলিওকে করা হয় কারারুদ্ধ। একই রকমের ঘটনা কি উচ্চ মাত্রার জগতে ঘটা সম্ভব?

উচ্চ মাত্রার জগৎ কেমন, সেটা কল্পনা করাই আমাদের জন্য কঠিন, এর বিচারবুদ্ধির তল পাওয়া আরও কঠিন। সুতরাং চাইলেই আমরা বলতে পারি না উচ্চ মাত্রার জগৎ যদি থাকেই, সেখানকার জীবনযাপন সম্পর্কে আমাদের জানা-বোঝা আসলেই অসম্ভব, যদি না সেটি নিজে থেকে আমাদের কিছু বুঝতে দেয়। আর যদি বুঝতেও দেয়, তাহলেও সেই জগৎ সম্পর্কে পুরোপুরি জানা আমাদের জন্য অসম্ভব। কিন্তু নিজেদের চেয়ে কম মাত্রার কোনো জগতের সন্ধান যদি পাই, তাহলে সেই জগৎটা আমাদের কাছে কেমন হবে?

এই প্রশ্নের উত্তর থাকছে ফ্ল্যাটল্যান্ড সিনেমায়। সিনেমার মূল চরিত্রগুলো সব দ্বিমাত্রিক জীব? এদের কারও আকার বর্গক্ষেত্রের মতো, কেউ ত্রিভুজ, কেউ বৃত্ত, কেউ ষড়ভুজের মতো। সেই জগতে এক বর্গক্ষেত্র, যার নাম আর্থার স্কয়ার; হঠাৎ করেই পায় অন্য মাত্রার জগতের সন্ধান। স্বপ্নে। এক ত্রিমাত্রিক গোলকের মাধ্যমে। প্রথমে তার কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছিল ত্রিমাত্রিক জগতের ব্যাপারটা। তখন গোলক তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় একমাত্রিক জগতের প্রাণী এক সরলরেখার সঙ্গে। তখন সে বুঝতে পারে উচ্চ স্তরের প্রাণী হওয়ার সুবিধা কতটা আর নিম্ন স্তরের প্রাণীদের ভ্রমের ব্যাপারটা।

ত্রিমাত্রিক জগৎ দেখার অভিজ্ঞতা লাভের পর, সে নিজের জগতে ফিরে জানায় বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথা। কিন্তু মধ্যযুগের ইউরোপের শাসকদের মতো দ্বিমাত্রিক জগতের শাসকেরা তাকে বন্দী করে। এরপরই উচ্চ মাত্রার জগতের প্রাণীর কেরামতি দেখানোর পালা। শেষমেশ কী হলো, জানতে হলে দেখতে হবে সিনেমাটি।

যে ‌আর্থার স্কয়ারের কথা এখানে আলোচনা করা হলো, সে কিন্তু সর্বেসর্বা নয় সিনেমার। বরং হেক্সা নামের এক বুদ্ধিমতী ও স্কয়ারের অত্যন্ত মেধাবী নাতনি ষড়ভুজের কষা গাণিতিক হিসাব, দক্ষতা আর অনুমান করার ক্ষমতা আপনাকে বিস্মিত করবে, যদি আপনি বহুমাত্রিক জগৎ নিয়ে আগ্রহী হন, বুঝতে চেষ্টা করেন বিভিন্ন মাত্রার সৌন্দর্য। আর্থার স্কয়ারের স্ত্রী অ্যালেন স্কয়ারের উপস্থিতি সিনেমাটির বাড়তি সংযোজন। এ ছাড়া দ্বিমাত্রিক দুনিয়া কেমন, এর রাস্তাঘাট, আসবাব, ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, বইয়ের ব্যাগ, লাগেজ, দেয়াল, যানবাহন—সবকিছুই আপনাকে ভিন্ন স্বাদ উপহার দেবে।

যাঁরা আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি পড়েছেন, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৃতির সূত্রগুলো বুঝতে চান, পদার্থবিজ্ঞানের মাত্রার ধারণা যাঁরা কিছুটা হলেও বোঝার চেষ্টা করেন, তাঁদের জন্য এই সিনেমা দেখা আবশ্যক।

এই সিনেমা পুরোটাই অ্যানিমেটেড। দেখলে বোঝা যায়, খুব স্বল্প বাজেটে তৈরি। আইএমডিবি রেটিং ১০-এ ৬.৯। তবে এগুলো দেখে ছবিটাকে বিচার করলে ভুল হবে। সিনেমাটা দেখার পর, বাজেট বা দৈর্ঘ্যের স্বল্পতা নিয়ে কেউ মাথাই ঘামাবেন না, সে কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

ফ্ল্যাটল্যান্ড সিনেমা তৈরি হয়েছে এডুইন অ্যাবোটের কল্পবিজ্ঞানধর্মী বই ফ্ল্যাটল্যান্ড: আ রোমাঞ্চ অব মেনি ডাইমেনশন-এর কাহিনি অবলম্বন। যাঁরা এখনো দেখেননি, তাঁরা দেখে নিতে পারেন। বিভিন্ন মুভি ডাউনলোডের সাইট থেকে সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

সাম্য শিকদার