মস্তিষ্ক, চুল, বাবল গাম এবং অন্যান্য

১. কখনো চুল না কাটলে ৩০ ফুটের বেশি লম্বা হতে পারে

কথাটা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও ঘটনা সত্যি। মানুষের চুল সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় আধা ইঞ্চি করে বাড়ে। কারো কারো ক্ষেত্রে একটু কম বা বেশি হতে পারে, তবে এটা গড় হিসাব। একজন মানুষ যদি ৭০ বছর বাঁচে এবং সে কখনো চুল না কাটে, তাহলে তাঁর চুল কত বড় হবে, তা একটু হিসাব করে বলে দেওয়া যায়। প্রতি বছর চুল বাড়বে ০.৫ ইঞ্চি, তাহলে বছরে হবে ০.৫ × ১২ = ৬ ইঞ্চি। আর ৭০ বছরে চুলের মোট বৃদ্ধি হবে ৬ × ৭০ বছর = ৪২০ ইঞ্চি। যেহেতু ১ ফুট হলো ১২ ইঞ্চির সমান, তাই ৪২০ ইঞ্চি মানে ৪২০ ÷ ১২ = ৩৫ ফুট। ওপরের হিসেবের প্রায় কাছাকাছি। তবে দেশভেদে মানুষের আয়ু কম-বেশি হয়, চুলের দৈর্ঘ্যও বাড়তে কমতে পারে। তবে বাস্তবে কিন্তু এত লম্বা চুল দেখা যায় না। কারণ, চুল দুর্বল হয়ে ভেঙে যায়। তাছাড়া আমাদের মাথার পুরনো চুল ঝরে যায় এবং নতুন চুল গজায়। আর সৌন্দর্যের জন্য তো মানুষ চুল কাটেই। সব মিলিয়ে ৩০ ফুট বা তার বেশি লম্বা চুল দেখা যায় না।

২. মস্তিষ্কের সংকেতগুলো স্নায়ুর মধ্যে ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার গতিতে ছোটে

আমাদের স্নায়ু তৈরি হয় বিশেষ ধরনের কোষ দিয়ে। এই কোষকে বলে নিউরন। প্রতিটি নিউরনের একটি লম্বা অংশ থাকে, যাকে বলে অ্যাক্সন। অ্যাক্সনের চারপাশে মায়েলিন নামে একটি চর্বিযুক্ত পদার্থের আবরণ থাকে। এই মায়েলিনের আবরণ অনেকটা বৈদ্যুতিক তারের ইন্সুলেটরের মতো কাজ করে। এগুলোই মস্তিষ্কের সংকেতকে দ্রুত এবং সঠিকভাবে এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে যেতে সাহায্য করে। সংকেত এক নিউরণ থেকে আরেক নিউরনে ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার গতিতে যেতে পারে। এ কারণেই আমরা খুব দ্রুত চিন্তা করতে পারি, অনুভব করতে পারি।

৩. ডলফিন পানির নিচে ২৪ কিলোমিটার দূরের শব্দও শুনতে পায়!

২৪ কিলোমিটার কিন্তু অনেক পথ। ঢাকা থেকে প্রায় গাজিপুরের দূরত্ব। মানে ঢাকা থেকে কোনো শব্দ করলে তা গাজিপুর থেকে শুনতে পারবে একটা ডলফিন। এর কিছু কারণ রয়েছে। বাতাসের চেয়ে পানির নিচে শব্দ প্রায় পাঁচ গুণ দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করে। মানে পানির নিচে শব্দ অনেক দূরে পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু মানুষ কিন্তু সে শব্দ এত দূর থেকে শুনতে পায় না। কারণ, ডলফিনের আছে বিশেষ কান। ডলফিনদের কানের ভেতরের গঠনটা এমনভাবে তৈরি যে তারা পানির নিচের শব্দ খুব ভালোভাবে ধরতে পারে। তাদের কানের চারপাশে ফ্যাটের একটি স্তর থাকে। এই স্তর বাইরের অন্যান্য আওয়াজ থেকে ভেতরের কানকে রক্ষা করে এবং নির্দিষ্ট দিকের শব্দ শুনতে সাহায্য করে। এমনকি ডলফিনরা খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পারে, যা মানুষের শোনার ক্ষমতার বাইরে। এই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ পানির নিচে অনেক দূরে পর্যন্ত যেতে পারে।

৪. প্রথম বাবল গাম তৈরি হয়েছিল ১৯০৬ সালে, নাম ছিল ব্লিবার-ব্লুবার

যুক্তরাষ্ট্রের মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক ফ্রাঙ্ক এইচ. ফ্লির ১৯০৬ সালে প্রথম বাবল গাম বা চুইংগাম তৈরি করেন। এই গামটি ছিল ভঙ্গুর ও আঠালো। এতটাই ভঙ্গুর ছিল যে ঠিকভাবে জুড়ে থাকত না। ফলে এটি কখনোই বাজারে বিক্রি হয়নি। এর আরও একটি সমস্যা ছিল। যদি কেউ এই গাম ফুলিয়ে ফাটিয়ে ফেলত তাহলে তা তুলতে সলভেন্ট নামে এক ধরনের তরল দিয়ে জোরে জোরে ঘষতে হত! এরপর ফ্রাঙ্কের কোম্পানির হিসাবরক্ষক ওয়াল্টার ডায়মার ১৯২৮ সালে ‘ডাবল বাবল’ নামে আরেকটি গাম তৈরি করেন। এটি প্রথম বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।

৫. আলোর গতিতে ভ্রমণ করলে প্লুটোতে পৌঁছানো যাবে মাত্র চার ঘণ্টায়

পৃথিবী থেকে বামন গ্রহ প্লুটোর সবচেয়ে কাছে দূরত্ব ৫৯০ কোটি কিলোমিটার। আর সবচেয়ে দূরের দূরত্ব প্রায় ৭৫০ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। আলো সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে ছোটে। পৃথিবী থেকে আলোর গতিতে প্লুটোর সবচেয়ে কাছের দূরত্বে পৌঁছাতে প্রায় ৪ ঘণ্টা লাগবে। তবে দূরের দূরত্বে যেতে চাইলে ৪ ঘণ্টার চেয়ে একটু বেশি সময় লাগবে বৈকি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমানে মানুষের তৈরি কোনো মহাকাশযানই আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে পারে না। আমাদের সবচেয়ে দ্রুতগতির মহাকাশযানও আলোর গতির তুলনায় খুবই ধীরে চলে। আলোর গতিতে ভ্রমণের জন্য যে পরিমাণ শক্তি দরকার, তা আমাদের বর্তমান প্রযুক্তিতে পাওয়া সম্ভব নয়।

৬. দেহের প্রায় ১০ হাজার কোষ একটা লোহার মাথায় এঁটে যাবে

একটা লোহার মাথা কিন্তু খুব ছোট। সেই ছোট্ট জায়গায় আমাদের দেহের প্রায় ১০ হাজার কোষ ধরবে। তাহলে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে কত কোষ আছে ভাবুন। কোষ হলো আমাদের শরীরের সবচেয়ে ছোট একক। একটা বাড়ি তৈরিতে যেমন অনেকগুলো ইট লাগে, তেমনি আমাদের শরীর তৈরি হয় কোটি কোটি ছোট ছোট কোষ দিয়ে। কোষ এতটাই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। কোষ দেখার জন্য লাগে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ। তবে আমাদের শরীরে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কোষ আছে। একেকটার আকার একেকরকম। কিছু কোষ খুব ছোট, আবার কিছু তুলনামূলক বড়। তবে বেশিরভাগ কোষ এত ছোট যে কয়েক হাজার কোষ একসঙ্গে রাখলে একটা লোহার মাথার এঁটে যাবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রায় ৩৭ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে। ৩৭ ট্রিলিয়ন মানে ৩৭১২ বা ৩৭-এর পরে ১২টা শূন্য!

৭. কিছু সালাম্যান্ডারের লেজ, পা এবং চোখও গজায়!

স্যালাম্যান্ডার হলো ছোট টিকটিকির মতো একটা প্রাণী। এদের হারানো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নতুন করে গজাতে পারে। একে বলে রিজেনারেশন। এটা প্রকৃতির এক বিস্ময়কর ঘটনা। এদের লেজ, পা এবং চোখের কিছু অংশ যেমন রেটিনা পুনর্গঠন হতে পারে। কোনো কারণে এরা দেহের কোনো অঙ্গ হারালে ওই জায়গায় বিশেষ ধরনের কোষ তৈরি হয়। এই কোষগুলো খুব দ্রুত বিভাজিত হয় এবং ধীরে ধীরে নতুনভাবে অঙ্গ গজায়। একটা সম্পূর্ণ লেজ বা পা গজাতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। চোখের অংশ পুনর্গঠিত হতে আরও কম সময় লাগে। তবে সব প্রজাতির স্যালাম্যান্ডারের অঙ্গ গজাতে সমান সময় লাগে না। প্রজাতিভেদে সময় কম বেশি লাগে। 

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিডস ম্যাগাজিন অবলম্বনে