বিজ্ঞান অভিযাত্রা ১৯৬৫

বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি বিজ্ঞানে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২৪- পেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ৩৫ বছর গবেষণা করেছেন। কীটতত্ত্বে পিএইচডি করেছেন চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস থেকে। একসময় খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে পড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে রেজাউর রহমান নিজে এই বিজ্ঞান অভিযাত্রা অংশ হন।

ছবি: লেখক

অভিযাত্রা শব্দটির সহজ অর্থ দাঁড়ায় ‘যাত্রা’। অভিযান অর্থেও তা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়। তবে এর সঙ্গে ‘বিজ্ঞান’ কথাটা যোগ হলে তা তেমন আর সহজ থাকে না। জটিলই হয়ে দাঁড়ায়। এখন অভিযাত্রা শব্দটা হয়ে দাঁড়ায় খানিকটা জটিল, যা দুঃসাহসিক যাত্রা বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। এখানে দুর্গম, দুঃসাহসিক কথাগুলো সহজে এসে যায়, কেননা বিজ্ঞান অনুসন্ধান, সত্য খোঁজা, প্রকৃতির অজানাকে জানার পথগুলো যে সহজে পাওয়া যায় না। তা বিপত্সংকুল বা ঝুঁকিপূর্ণ তো হওয়ারই কথা।

বিজ্ঞান অভিযাত্রার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Expedition’। অনেক ক্ষেত্রে তা Exploration-ও হতে পারে। এ বিষয়ের সঙ্গে আমরা খুব একটা পরিচিত না হলেও উন্নত বিশ্বে এর যথেষ্ট প্রচলন রয়েছে। টিভি চ্যানেল খুললেই আমরা এর প্রমাণ পাই। প্রতিনিয়ত দুর্গম অঞ্চলে দু-চারটা এমনই অভিযাত্রার দৃশ্য দেখা যায়। সেসব অভিযাত্রী দল আফ্রিকা-আমাজন ও দুর্গম মরু অঞ্চলের কোথায় যায় না তারা? যায় সাগর জলের অতল গভীরেও। সেসব অভিযান বা অভিযাত্রা থেকে জানা যায় নতুন নতুন তত্ত্ব-তথ্য। এর পেছনে তারা খরচ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ২০১৫ সালের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের (WWF) তিব্বত মালভূমির মেকং নদী অভিযাত্রায় বিজ্ঞানীরা ১৬৩টি নতুন প্রজাতির প্রাণী শনাক্ত করেছেন। এর আগে এসব প্রজাতির অস্তিত্ব জানা ছিল না। বিজ্ঞানের জগতে এর মূল্য অপরিসীম। এখানে আরেকটা চমকপ্রদ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। প্রকৃতিবিদ ডারউইন তাঁর বিশ্ববিখ্যাত অভিযোজন বা বিবর্তন তত্ত্বের মূল উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন গালাপগোস দ্বীপমালা অভিযাত্রার প্রাণিকুলের সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ থেকে।

আরও পড়ুন

আজ থেকে অর্ধশতাব্দী (৫১ বছর) আগে (১৯৬৫) এমনই বিরল এক বিজ্ঞান অভিযাত্রার ছাত্র সদস্য হিসেবে যোগ দিতে পেরে আমি গর্ববোধ করি। আমি তখন এমএসসির (কীটতত্ত্ব) শেষ বর্ষের ছাত্র। এই অভিযানের অর্থায়ন ও সাহায্যকারী সংস্থা ছিল এশিয়াটিক সোসাইটি অব পাকিস্তান। পার্বত্য চট্টগ্রামের (বান্দরবান সাব-ডিভিশন) এই বিজ্ঞান অভিযাত্রার মূল নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক কাজী জাকের হোসেন (জীববিজ্ঞানী), প্রয়াত প্রফেসর সালার খান (উদ্ভিদবিদ), আমি (ছাত্র সদস্য), আবদুল। এ ছাড়া রুমা বাজার থেকে ছিল আমাদের সার্বক্ষণিক বন্দুকধারী শিকারি ও প্রহরী জিংলিয়ান ব্যোম (সে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ও অবসরপ্রাপ্ত ইপিআর সদস্য)।

প্রাক্-কথন

ঐতিহাসিক আমল থেকে আদি সভ্যতার দেশ ভারতে মহেঞ্জোদারো, মোগল আমল; বৌদ্ধযুগের অধ্যাত্মবাদ, দর্শন, সাংস্কৃতিক ও জনজীবনের নানাবিধ অগ্রগতি এবং বিকাশ লাভ হলেও প্রকৃতিচর্চা, বনাঞ্চল ও এর ছোট-বড় জীবজন্তু-কীটপতঙ্গ-সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চা বা গবেষণার পৌরাণিক দলিল খুব একটা পাওয়া যায় না। একইভাবে বনজ সম্পদ-সম্পর্কিত জরিপ বা তালিকার রেকর্ডও অপ্রতুল। এসব বিষয়ে আমাদের হাতে যে প্রামাণ্য দলিল রয়েছে তা হলো: Fauna and flora of British India। তখনকার ইংরেজ শাসকদের এই বৈজ্ঞানিক অন্বেষণ ও কর্মকাণ্ডের মূলে ছিল তাদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদ। ভারতের প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভালোভাবে না জানার কারণে দুরারোগ্য ব্যাধি যেমন ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, প্লেগ, বসন্ত, কলেরায় আক্রান্ত হয়ে তারা মারা যেত। সে সময় এসব রোগের প্রতিরোধ বা চিকিত্সা তেমন জানা ছিল না। কাজেই ব্রিটিশ ইন্ডিয়া টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের প্রকৃতি অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।

তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্য, আমাদের অঞ্চল (পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তান) ব্রিটিশদের ও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের নেক নজরে পড়েনি। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের প্রতি শাসকগোষ্ঠী তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি। এ ছাড়া তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্ট ও বান্দরবান এলাকার যাতায়াতব্যবস্থা ছিল বিপত্সংকুল ও দুর্গম। হাঁটা পথে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

সুতরাং প্রকৃতিবিদ জাকের স্যারের উদ্যোগ ও নেতৃত্বে ‘বিজ্ঞান অভিযাত্রা ১৯৬৫’ ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও সময়োচিত এক পদক্ষেপ। সেই সময় আমাদের এ যাত্রার আগে চট্টগ্রামের এই পাহাড়ি অঞ্চলে অন্য কেউই পরিদর্শন করতে আসেননি। বিশেষ করে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে।

এই বিজ্ঞান অভিযাত্রা ঢাকা থেকে ১১ জানুয়ারি, ১৯৬৫ সালে শুরু হয়েছিল। ১৩ তারিখ বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা হই। চড়াই-উতরাই, ভাঙা-কাটা, উঁচু-নিচু পথ, টিলা ডিঙিয়ে বান্দরবান পৌঁছাতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। বন বিভাগের বাংলোতে রাত কাটিয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে এই প্রথম টের পেলাম, ঘনবসতি ছাড়িয়ে রিজার্ভ ফরেস্টের কাছাকাছি হলে অগণিত পাখি ও বন্য জন্তু-জানোয়ারের আকর্ষণীয় কিচিরমিচির ডাক, হল্লা যে এত আকর্ষণীয় ও বিস্তৃত হতে পারে তা জানা ছিল না। কৌতূহলী হয়ে জানালার পর্দা সরাতেই প্রায় চমকে উঠি। কুয়াশাভেজা সতেজ সবুজ গাছে যেন আগুন ধরে আছে। গাছের পাতা ছাড়িয়ে শুধু চোখে পড়ছিল টুকটুকে আগুনে লাল এক গাছ। লাল টুকটুকে পাখি সব ঝাঁকে ঝাঁকে জড়ো হয়েছে এই গাছে। জাকের স্যার পরে আমাকে জানিয়েছিলেন, ‘এগুলো স্কালেট মিনিবিক পাখি। এতগুলো একসঙ্গে পেয়ে যাব ভাবিনি। পাখিগুলো বনের আরও গভীরে থাকে বলে আমার জানা ছিল।’ আমি বিজ্ঞান অভিযাত্রার প্রথম পাঠ পেয়ে গেলাম। অর্থাত্ জীববিজ্ঞান অভিযাত্রার মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো: ১. অজানা বনভূমির ধরন, বিস্তৃতি, পার্শ্ববর্তী দেশে এর প্রসার ২. রিজার্ভ বনাঞ্চলের ছোট-বড় পশুপাখি, গাছগাছালি দেখা, রেকর্ড ও নমুনা সংগ্রহ (সম্ভব হলে) এবং এসবের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিরূপণ করা।

পরদিন ১৪ জানুয়ারি সাঙ্গু নদী ধরে আমাদের যাত্রা শুরু হয় রুমা বাজারের দিকে, এটি সর্বশেষ পুলিশ স্টেশন। সাঙ্গু নদী গভীর নয়, আর নৌকাগুলো ছিল লগকাঠের ছিপ নৌকা ধরনের। পরের দিন বেলা তিনটার দিকে আমরা রুমা বাজার পৌঁছে যাই।

চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্ট ও বান্দরবান এলাকার যাতায়াতব্যবস্থা ছিল বিপত্সংকুল ও দুর্গম
ছবি: লেখক

১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় আসল রিংখিয়াং লেকমুখী অভিযাত্রা (লেকের অপর পাড়ে বার্মা বর্ডার)। এই পথ দুর্গম বন্ধুর উঁচু পাহাড়ি, হাঁটা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমাদের মালপত্র, খাদ্য-রসদ বহন করার জন্য জোগাড় হলো ১২ জন উপজাতীয় কুলি । এর মধ্যে টিপরা তরুণ কুলিরা ছিল বেশ কর্মঠ ও ভারী মাল বহনে পটু। পরপর সাংনাক্রো, দ্য সং সং কলিঙ্গ ও মধু পাহাড় অতিক্রম করে আমরা বেলা আড়াইটার দিকে পৌঁছে যাই সাংনাক্রোপাড়ায়। এই পথটুকু পার করতে গিয়ে লক্ষ করি, গভীর সবুজ বনের ওপরকার ঘনত্বের জন্য আকাশ দেখা যায় না। ফলে দুই পাড়েই যেন সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে। শীতও বাড়তে থাকে। পাড়ার উপজাতীয় নেতা আমাদের সাদরে গ্রহণ করেন। তাঁর বাঁশের মাচাং ঘরে আমরা রাত কাটাই।

চূড়ান্ত গন্তব্যস্থল রিংখিয়ান লেক সামনে রেখে আমাদের দ্বিতীয় দিনের যাত্রার আয়োজন শুরু হয় সকাল থেকে। আমাদের পরবর্তী ভ্রমণ প্রাণসা পাড়া হয়ে নাইনল পাড়া। এ পর্যায়ে আমার বোর্ড স্টাফিং প্রশিক্ষণ নিতে হলো জাকের স্যারের কাছ থেকে। কেননা, বন্দুক হাতে জিংলিয়ান শিকারির হাত নিশপিশ করছিল। সে আগের দিন সন্ধ্যালগ্নে চারটি পাখি মেরে নিয়ে এসেছিল। এই পাখিগুলোর ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। তাই যাত্রার আগেই পাখিগুলো সংরক্ষণ (স্টাফিং) করতে হলো।

বার্ড স্টাফিং

মৃত পাখিটিকে সযতনে বুকের দিক কাঁচি দিয়ে কেটে পাখা ও পায়ের বাইরের অংশটুকু বাদ দিয়ে পুরো মাংসল অংশটুকু বের করে আনতে হয়। এখানে পাখির চামড়ায় লেগে থাকা মাংস ও রক্তে যাতে সংক্রমণ না হয়, এর জন্য সায়ানাইড যৌগ ও আটা মাখিয়ে ভেতরের মাপমতো লোহার তারে তুলা পেঁচিয়ে জায়গাটা ভরে দিতে হয়। মোটামুটি জীবন্ত পাখিটির আকার-আকৃতির কাছাকাছি হলে সুই-সুতায় তা সেলাই করে ফেলতে হয়। পাখায় রক্ত বা ময়লার দাগ লেগে থাকলে তা তুলায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড লাগিয়ে মুছে ফেলতে হয়। এ পর্যায়ে ‘স্টাফড’ পাখিটিকে রোদে দিলে ভালো হয়। এভাবে পাখিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। ছোট ও মাঝারি পাখির স্টাফিং তেমন অসুবিধা হয়নি। তবে বড় পাখি বা অন্য কোনো জন্তু-জানোয়ার হলে এদের হাড় বড় ও শক্ত বলে তা গুছিয়ে আনতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

পাহাড় ডিঙিয়ে দুর্গম পথ ভাঙতে ভাঙতে স্যাররা মাঝেমধ্যেই থামছেন। জাকির স্যার দুরবিন ধরে ওপরের দিকে দেখছেন পাখি। নোট করছেন। কখনো বা টেপ রেকর্ডার চালিয়ে সংগ্রহ করছেন পাখির মিষ্টি মধুর গান। সালার খান ছালার ব্যাগে তুলে রাখছেন বিরল সব ফুল-পাতা, গাছগাছালি। লাইনল ও পোহাই পাড়ায় পৌঁছে রাত কাটিয়ে আমরা ১৯ জানুয়ারি বিকেল চারটার দিকে রিংখিয়াং লেক এলাকায় পৌঁছে যাই। (চিত্র ১) এটাই ছিল আমাদের পূর্বনির্ধারিত টার্গেট লেক। তাই এখানেই আমরা ক্যাম্প গেড়ে বসি এবং চার দিনের বেশি সময় থাকি। এখানকার Fauna-flora, লেকের ও বনজঙ্গলের নানা দিক পর্যবেক্ষণই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। লেকের ওপারে বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) সীমান্ত।

চিত্র ২. একটি টিপরা ছেলে। এদের লম্বা চুল পেছনে বেঁধে রাখে
সংগৃহীত

অভিযাত্রা ১৯৬৫-এর অর্জন

১. শতাধিক সংগ্রহের মধ্য থেকে ৭০ প্রজাতির পাখি শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া আরও ২০টি প্রজাতি দেখা-শনাক্ত (Sight record) করার মধ্যে আমাদের মোট পাখির প্রজাতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০টি। এর মধ্যে ছয়টি প্রজাতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রেকর্ড করা হয়। সার্বিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আমাদের সংগৃহীত পাখিগুলো ভারতীয়, হিমাচল চৈনিক ও মালয়েশীয় কিংবা মিশ্র জাতের। ২. আমরা প্রায় ১৫০টি প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করি। এর মধ্যে ১০টি প্রজাতি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রেকর্ড করা হয়। ৩. এ ছাড়া আমরা কিছু প্রজাপতি, কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী সংগ্রহ করি। ৪. কিছু জলজ উদ্ভিদের নমুনা ও সেমাইটেডে সংগ্রহ করি। পরিশেষে রুমা বাজার থেকে বার্মা বর্ডার পর্যন্ত উপজাতীয় গোত্রগুলোর একটা তালিকাও আমরা তৈরি করি। এর মধ্যে চাকমা, ব্যোম, মগ, টিপরা, মুরং উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলে টিপরা ও মুরংরা প্রাচীনতম বলে জানা যায়।

২৪ জানুয়ারি আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ গবেষণা ও সংগ্রহ শেষে ফেরার প্রস্তুতি নিই। ২৫ তারিখ চাকমা পাড়ায় রাত কাটিয়ে প্রাণসা পাড়ায় পৌঁছে যাই এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে এক দিন থেকে ফিরতি পথে রুমা বাজারের আস্তানা গাড়ি। রুমা বাজার থেকে বান্দরবান পৌঁছি ২৯ জানুয়ারি। এরপর বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ৩১ জানুয়ারি সকালে ঢাকায় ফিরে আসি।

এই বিজ্ঞান অভিযাত্রায় আমাদের সংগৃহীত ও শনাক্ত করা কিছু জনপ্রিয় পাখির প্রজাতির পরিচিতি এখানে দেওয়া গেল: ১. লাল জংলি মোরগ ২. লম্বা লেজবিশিষ্ট কালো বক কালিজ পাখি ৩. বড় চ্যাপ্টা মাথাওয়ালা কাঠঠোকরা ৪. সাধারণ আইয়োরা। অন্যদিকে পাহাড়ের এক টিলা থেকে আমরা বিশাল এক হর্নবিল পাখিকে উড়ে যেতে দেখেছি। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম পাখি সদস্যের একটি।

চিত্র ৩. রিংখিয়াং লেক (ওপর থেকে তোলা ছবি)
সংগৃহীত

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগের (১৯৬৫-২০১৭) এই বিজ্ঞান অভিযাত্রার অর্জনের দিকে যদি ফিরে তাকাই তখন মনে হয়, জীববিজ্ঞানী হিসেবে সেই যে অভিজ্ঞতাও বাস্তব জ্ঞান আমার হয়েছিল, তা আজও আমাকে উত্সাহিত করে। আমাকে আকর্ষণ করে বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে এবং আরও আকর্ষণীয় বিষয় হলো প্রতিবারই আমি বনজঙ্গলে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। পেয়েছি নতুন চিন্তার খোরাক। এখানে একটা গ্রাম্য বচন স্মরণ করা যায়: জঙ্গলই মঙ্গল। আসলেও তাই। আমাদের পৃথিবীতে কত অজানা যে রয়েছে, এর কি শেষ আছে? কদিন আগে আমাজানের গহিন বনভূমিতে দেখা গেছে এক প্রাচীন মানবগোষ্ঠী, যা এর আগে কেউ কোনো দিন দেখেনি। আজকের এই উন্নততর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কি তা সম্ভব? উত্তর ইতিবাচক। সুতরাং আমাদের সময়-সুযোগ হলেই যেতে হবে গ্রামে, বনজঙ্গলে, খালবিল, নদীনালায়। অচেনাকে দেখা, অজানাকে জানা বিজ্ঞানচর্চার অতি প্রয়োজনীয় এক অধ্যায়। সেখানে রয়েছে বিজ্ঞান ধাঁধার অনেক সমাধানও।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি ও মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত