আমার জীবনের একটি বিস্ময়কর মুহূর্ত ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জেতা। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের একটি আরডুইনো কর্মশালায় অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে বুসানে স্বর্ণপদক অর্জন—এই যাত্রাটা আমাকে এতদূর নিয়ে আসবে তা ভাবিনি।
তবে এই পথচলা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। বুসানে আমাদেরকে সমুদ্র সৈকত পরিচর্যা ও পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য রোবট তৈরি করতে বলা হয়েছিল। সময় দেওয়া হয়েছিল ৫ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে প্রথমে আমি কয়েকটি রোবট তৈরি করেছি। সেগুলো সমুদ্রের ময়লা রিসাইকেল করবে, পর্যটকদের খাবার দেবে এবং দুর্যোগের সময় নিরাপত্তা দেবে মানুষকে। প্রথমে রোবট একটু ম্যালফাংশন করছিল। রোবটের মোটরগুলো ঠিকভাবে টেস্ট করে, সার্কিটের কানেকশনগুলো আবার যাচাই করে নিয়ে ম্যালফাংশন সমাধান করি। এরপর রোবটের কাজগুলো নিয়ে দুই মিনিটের একটি মুভি তৈরি করতে হয়। এসময় ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারেও কিছু ঝামেলা হচ্ছিল। কিন্তু আমি ঠান্ডা মাথায় সবগুলো সমস্যা সমাধান করে সবকিছু সুন্দরভাবে শেষ করতে পারি। সমাপনী অনুষ্ঠানে যখন আমার নাম ও বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হলো স্বর্ণপদকজয়ী হিসেবে, তখন আমার যে আনন্দ হয়েছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সেই মুহূর্ত আমি কোনোদিন ভুলব না।
এই অলিম্পিয়াড আমাকে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে শিখিয়েছে। আমার বাবা-মা আর বন্ধুরা সবসময় আমার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল। তাঁদের ভালোবাসা আর বিশ্বাস ছাড়া আমি এতদূর আসতে পারতাম না।
বাংলাদেশ দলের সব প্রতিযোগীই ভীষণ পরোপকারী ছিল। একজন আরেকজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সময়েও নিজ দেশের সবাই একে অপরকে মানসিক সাপোর্ট দিয়ে গেছে। আমি ওদেরকে এখন নিজের পরিবারের মতোই ভালোবাসি। আমাদের দলনেতা লাফিফা ম্যাম (লাফিফা জামাল) প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের খেয়াল রেখেছেন, রোবটিক্সে দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। ভালো মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করেছেন।
শুধু রোবটিকস নয়, জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছি আমাদের কোচ মিশাল ভাইয়ার কাছে। বাংলাদেশ দলে নির্বাচিত হওয়ার পর নিয়মিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে রোবটিকসের বিভিন্ন বিষয়ে সেশন হতো। আমাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভাইয়ার আন্তরিকতা আজীবন মনে থাকবে।
আমি গর্বিত যে আইআরও দলে ছিলাম এবং দেশের জন্য একটি স্বর্ণপদক অর্জন করতে পেরেছি।