প্লাস্টিকের রিসাইক্লিং কোডের মানে কী

পৃথিবীজুড়ে দিন দিন বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহারছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীজুড়েই প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। এমনকি খাবার পানি হিসেবে প্লাস্টিক বোতলজাত পানির (Mineral water) ব্যবহারও বাড়ছে। কিন্তু একেক ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হয় একেক কাজে। এর কোনোটা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর না হলেও কিছু প্লাস্টিক আমাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। প্লাস্টিকের পানির বোতলের গায়ে মোড়ানো কাগজে পানির গুণাবলি লেখা থাকে। একই সঙ্গে যে ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে বোতল তৈরি করা হয়, সেটাও লেখা থাকে। আবার প্রতিটি প্লাস্টিকের বোতল বা কনটেইনারের নিচে ত্রিভুজের মধ্যে কিছু নম্বর দেওয়া থাকে। এই নম্বরগুলোই নির্দেশ করে কত দিন বা কতবার ওই কনটেইনারটি ব্যবহার করা বিজ্ঞানসম্মত। সারা পৃথিবীতে পানির বোতল উত্পাদনের জন্য ফুড গ্রেড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। পানির বোতলে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হলে বোতলের মোড়কে তিনটি ঘূর্ণমান তিরচিহ্ন বা Recycle sign ব্যবহার করতে হয়। এটি ASTM International Resin Identification Coding System, সংক্ষেপে রেজিন আইডেনটিফিকেশন কোড বা রিসাইক্লিং কোড নামে পরিচিত।

আমরা যখন পানির বোতল কিনি, তখন বোতলের গায়ে কোন রিসাইকেল কোডটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ভালোভাবে লক্ষ করা উচিত। যে প্লাস্টিকগুলো মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর, সেসব ব্যবহার করে যদি কোনো বোতল তৈরি করা হয়, তাহলে সেটা বর্জন করতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

রিসাইক্লিং কোডসমূহ

PET (Polyethylene terapthalate)

স্বচ্ছতার কারণে পেট (PET) প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বেশি। সাধারণত পেট বোতল একবারের বেশি ব্যবহার না করাই ভালো। সে কারণেই এ ধরনের বোতলে একটি ত্রিভুজের মধ্যে ১ লেখা থাকে। কারণ বারবার ব্যবহার করলে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া জন্মে। পেট বোতল বেশির ভাগ সময় ফুড গ্রেড না হয়ে ফুড কনট্যাক্ট গ্রেড হয়ে থাকে। অর্থাত্ কোনো খাবারের সংস্পর্শে না এলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে, PET বোতল তাপ ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এলে বিক্রিয়া করে পানির গুণাগুণ নষ্ট করে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কনকর্ড শহরে PET বোতলজাত পানি নিষিদ্ধ করা হয়।

HDPE (High-density polyethylene)

সাধারণত ডিটারজেন্ট, জুস, শ্যাম্পুু, টয়লেট ক্লিনারের বোতল এই অস্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয়। তবে অন্যান্য প্লাস্টিক বোতলের সঙ্গে তুলনা করলে এ বোতলের পানিই সবচেয়ে নিরাপদ ও পানযোগ্য। উচ্চতাপে বিক্রিয়া প্রায় করে না বললেই চলে। এ ধরনের বোতলের গায়ে একটি ত্রিভুজের মধ্যে ২ লেখা থাকে। মানে দুই বছরের বেশি বোতলটি ব্যবহার না করাই ভালো।

PP (Polypropylene)

অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর পানির বোতল পিপি দিয়েই তৈরি করা হয়। এ ছাড়া আইসক্রিম-ইয়োগার্টের পাত্র, ওষুধের বোতল, সিরাপ বা সসের বোতল আর বেশ কিছু দামি প্লাস্টিকের কনটেইনারে এই চিহ্ন থাকে। প্রতিদিন পানি রাখার জন্য বাসা বা কর্মক্ষেত্রে পলিপ্রোপিলিন দিয়ে তৈরি বোতল সবচেয়ে নিরাপদ।

PVC (Polyvinyl chloride)

নাম দেখেই বুঝতে পারছেন সাধারণত প্লাস্টিকের পাইপ, খাবার র্যাপিংয়ের জন্য, রান্নার তেলের বোতল তৈরিতেই বহুলভাবে ব্যবহূত হয়। এই বোতলের পানি পান করা একদমই উচিত নয়। কারণ, পিভিসি মাত্র ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে। ফলে আপনার শরীরে হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

PS (Polystyrene)

এ ধরনের প্লাস্টিকের পাত্র পলিস্টিরিন বা স্টাইরোফোম দিয়ে তৈরি। এটি প্লাস্টিক বোতল তৈরিতে প্রায় ব্যবহার হয় না বললেই চলে। সাধারণত ফাস্টফুড কেসিং বা কফি কাপ তৈরিতে এটি ব্যবহূত হয়। কিন্তু খুব বেশি বার ব্যবহার করা উচিত নয় এ ধরনের পাত্র। বিশেষত এ ধরনের পাত্রে কখনোই খাবার গরম করা উচিত নয়।

LDPE (Low-density polyethylene)

এই চিহ্ন থাকলে সেই প্লাস্টিক বহু ব্যবহারযোগ্য। HDPE-এর তুলনায় অধিকতর দৃঢ় ও ব্যয়বহুল। এটি পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি করা হয়। এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিকারক কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি।

PC (Polycarbonate) ও অন্যান্য

প্রথম ছয়টি ক্যাটাগরিতে যেসব প্লাস্টিক অন্তর্ভুক্ত নয়, সেসব এই ক্যাটাগরির আওতায় পড়ে। এই নম্বরের অর্থ, এ ধরনের প্লাস্টিক মারাত্মক ক্ষতিকর। এ শ্রেণির সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত প্লাস্টিক হচ্ছে পলিকার্বনেট। এটি প্রায় ভাঙে না বললেই চলে। এ জন্য বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে কেবল স্পোর্টস ওয়াটার বোতল বা ফুড কনটেইনার তৈরিতে ব্যবহূত হয়। এই প্লাস্টিকে সাধারণত Bisphenol A (BPA) থাকে, যা ক্যানসার তৈরি করতে পারে। তবে এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই BPA মুক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত