বিজ্ঞান অন্বেষণের সূচনা

শ্রেয়সীর ছোটবেলায় একটা খেলনা রোবট ছিল। রোবটটি হাতে নিয়ে সে প্রায়ই ভাবত, ‘এটা কি সত্যিই নিজের ইচ্ছায় নড়াচড়া করতে পারে?’ একদিন সাহস করে সে রোবটটা খুলে দেখল—ভেতরে সার্কিট, মোটর ও ব্যাটারি! যন্ত্রপাতিগুলো কীভাবে কাজ করে, তা সে তখনো বুঝতে পারেনি। তবে সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল—একদিন সে এমন রোবট নিজেই বানাবে। আর তার জন্য বিজ্ঞান জানতে হবে গভীরভাবে।

বিজ্ঞানী হওয়ার প্রথম ধাপ

বিজ্ঞানী হতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন গভীর আগ্রহ। তা হতে পারে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত বা অন্য যেকোনো শাখায়। তুমি যদি বিজ্ঞানী হতে চাও, তবে তোমার কৌতূহল, অনুসন্ধানী মানসিকতা ও অধ্যবসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ডিজিটাল যুগে আমরা খুব সহজেই যেকোনো বিষয়ে জানতে পারি। বিজ্ঞান বিষয়ে জানার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হয় নিয়মিত বই, ম্যাগাজিন বা ব্লগ পড়ার মাধ্যমে। পাশাপাশি বিজ্ঞানবিষয়ক ভিডিও, ডকুমেন্টারি ও টেড টকস দেখতে পারো। চারপাশের প্রাকৃতিক ঘটনা ও পরিবেশ সম্পর্কে চিন্তা করো এবং তার পেছনের বিজ্ঞানকে অনুসন্ধান করো।

বিজ্ঞানীদের জীবনকাহিনি পড়লে বুঝতে পারবে, কেউই এক দিনে বিজ্ঞানী হননি। প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে ছিল অধ্যবসায়

বিজ্ঞানীদের গল্প থেকে অনুপ্রেরণা

বিশ্বের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীরা কীভাবে তাঁদের গবেষণা শুরু করেছিলেন, কীভাবে নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন—এসব জানার চেষ্টা করো। তাঁদের জীবনকাহিনি পড়লে বুঝতে পারবে, কেউই এক দিনে বিজ্ঞানী হননি। প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে ছিল অধ্যবসায়, ব্যর্থতা ও শেখার অবিরাম চেষ্টা। তাই যদি বিজ্ঞানী হতে চাও, তবে ধৈর্য ধরে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে এবং মৌলিক বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।

গবেষণার পথে এগিয়ে চলা

বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি গবেষণাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান প্রদর্শনী বা মেলায় অংশগ্রহণ করতে পারো। বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান সংস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম বা গবেষণামূলক প্রকল্প নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। এসব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করলে গবেষণার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। ছোট ছোট প্রকল্প সম্পন্ন করে তার ফলাফল প্রকাশ করতে পারলে তোমার গবেষণার দক্ষতাও বাড়বে।

প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন

আধুনিক যুগে বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য মৌলিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতাও প্রয়োজন। প্রোগ্রামিং, সফটওয়্যার ও ডেটা বিশ্লেষণের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মডেলিং, সিমুলেশন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। তাই কিছু মৌলিক কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যেমন পাইথন বা ম্যাথমেটিকা শেখা উচিত। এ ছাড়া MATLAB, SPSS, LabVIEW–এর মতো বৈজ্ঞানিক সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করলে গবেষণার ক্ষেত্র আরও প্রশস্ত হবে।

বিজ্ঞানী হওয়ার মানসিকতা

একজন বিজ্ঞানীকে হতে হবে দূরদর্শী। যেকোনো সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা ও তার সমাধানে নতুন উপায় খুঁজে বের করা বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। বিজ্ঞানী হওয়ার পথ কখনোই সহজ নয়। তবে যদি ভালোবাসা ও আগ্রহ থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি একদিন তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত

বছর কয়েক পর। শ্রেয়সীর সামনে টেবিলে রাখা একটি ছোট রোবট—এটি তার নিজের তৈরি! কন্ট্রোলার চাপ দিতেই রোবটটি সামনে এগিয়ে গেল। মুহূর্তেই মনে ভেসে উঠল ছোটবেলার সেই খেলনা রোবট, যা তাকে প্রথমবার বিজ্ঞান সম্পর্কে কৌতূহলী করে তুলেছিল। শ্রেয়সী জানে, শেখার এখনো অনেক কিছু বাকি। বিজ্ঞান তো এক দিনে শেষ হওয়ার বিষয় নয়! কিন্তু আজ সে বুঝতে পারছে, বিজ্ঞানী হওয়া মানে শুধু বই পড়া নয়; বরং প্রশ্ন করা, পরীক্ষা করা এবং অজানাকে জানার নেশায় ডুবে থাকা।

লেখক: অধ্যাপক, রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

*লেখাটি ২০২৫ সালে বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত