নতুন বইয়ের ঘ্রাণ

নতুন বইয়ের মাতাল ঘ্রাণ শুধু বইপড়ুয়ারাই নাকি টের পান! এর পেছনে রসায়নের কারসাজি। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক অ্যান্ডি ব্রুনিং বিস্তর ব্যাখ্যা করেছেন এ বিষয়ে। বইয়ের কাগজ, কালি ও বই ছাপানোর বিভিন্ন ধাপে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান এই ঘ্রাণের জন্য দায়ী। সেটা অনেকগুলো উদ্বায়ী রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। পুরোনো ও নতুন বই থেকে প্রায় কয়েক শ রকমের উদ্বায়ী জৈব যৌগ নিঃসরিত হয়। নতুন ও পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণ এক নয়? এর পেছনেও জোরালো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে!

নতুন বইয়ের কাগজ প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় তন্তুগুলোকে কাগজের জন্য উপযোগী করে তুলতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দরকার। যেমন, অম্লতার জন্য ব্যবহূত হয় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড। তন্তুগুলো ধোয়া হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ আরও অনেক রাসায়নিক দ্রবণে। এসব উপাদান পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কিছু উদ্বায়ী জৈব যৌগ তৈরি করে। সেগুলো বাতাসে ভেসে আসে আর আমরা পাই মাতাল ঘ্রাণ! এ ছাড়া বইয়ের পাতায় পাতায় ছাপানো কালির সঙ্গে ও বই বাঁধাইয়ের সময় কিছু আঠালো উপাদান ব্যবহূত হয়, যেগুলোর অধিকাংশই জৈব ‘কো-পলিমার’। এর থেকেও গন্ধ ছড়ায়। আপনার বুকশেলফের বইগুলো কিন্তু শুধু শুধু বসে নেই চুপচাপ। ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া সব সময়।

পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণের জন্য দায়ী বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের রাসায়নিক বিশ্লেষণ বা ভাঙন। বিশেষ করে সেলুলোজ ও লিগনিনের রাসায়নিক ভাঙন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বই পুরোনো হয়ে গেলে বইয়ের পাতাগুলো হলদেটে হয়ে যায়। সেটা লিগনিনের জন্যই! একটু পাতলা কাগজে লিগনিনের পরিমাণ কম থাকে, যেমন খবরের কাগজ। কাগজের প্রাথমিক উত্স বিভিন্ন কাঠের গুঁড়ো। কাঠে প্রচুর লিগনিন ও সেলুলোজ থাকে। কাগজে সেলুলোজের তন্তুগুলোকে একসঙ্গে ধরে রাখার কাজ করে লিগনিন। অক্সিজেনের সংস্পর্শে লিগনিনে জারণ ঘটে। ফলে তৈরি হয় নানা অম্ল। সেই অম্লই সেলুলোজ ভেঙে যায়।  এতে হলদেটে হয়ে যায় বইয়ের পাতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অম্লীয় উপাদানগুলোর উপস্থিতিতে ‘অ্যাসিড হাইড্রোলাইসিস’ বিক্রিয়া ঘটতে থাকে। ফলে উদ্বায়ী জৈব যৌগ তৈরি হয়। সেগুলোই আসলে পুরোনো বইয়ের গন্ধের উত্স। কী চমত্কার সেই পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণ! নতুন বইয়ের ঘ্রাণও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়!

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত