সাক্ষাৎকার

বিজ্ঞানের বই ভালো করে পড়তে হবে—আহসান হাবীব, রম্য লেখক ও কার্টুনিস্ট

আহসান হাবীব বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট, লেখক ও সম্পাদক। বিজ্ঞানরম্য ও নানা স্বাদের সায়েন্স ফিকশন লেখেন। মাসিক স্যাটায়ার ম্যাগাজিন উন্মাদ-এর সম্পাদক। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এমসিটি ডিপার্টমেন্টে গ্রাফিক নভেল পড়ান। যুক্ত আছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাস্ট্রোফিজিকস সেন্টারের সঙ্গেও। এককালে দেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন ম্যাগাজিন মৌলিক সম্পাদনা করেছেন।

সম্প্রতি বিজ্ঞানচিন্তার মুখোমুখি হয়েছিলেন আহসান হাবীব। আলাপে-আড্ডায় তাঁর ভাষ্যে উঠে এসেছে শৈশব-কৈশোর, কার্টুনিস্ট হওয়ার গল্প, অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞানভাবনাসহ আরও অনেক কিছু। তাঁর মুখোমুখি হয়েছিলেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার ও সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ। ক্যারিকেচার: মেহেদী হক। ছবি তুলেছেন আশরাফুল ইসলাম

বিজ্ঞানচিন্তা:

কেমন আছেন?

আহসান হাবীব: আমি ভালো আছি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনি দীর্ঘদিন ধরে উন্মাদ নামের ভিন্নধর্মী একটি ম্যাগাজিন বের করছেন। এ রকম একটা ম্যাগাজিনের কথা শুরুতে কীভাবে মাথায় এল?

আহসান হাবীব: ভাবনাটা ঠিক আমার একার নয়। আমার বন্ধু ইশতিয়াক হোসেন, কাজী খালিদ আশরাফ, সাইফুল হক, ইলিয়াস খান—সবাই মিলেই ভেবেছে। তখন টেনসিল পেপারে বিশেষ কলমে কার্টুন এঁকে বা কিছু লিখে সাইক্লোস্টাইল নামের একটি মেশিনে ছাপা যেত, পত্রিকার মতো কিছু একটা বের করা যেত আরকি। ফটোকপি মেশিন ছিল না তখন। এসব করতে করতেই পত্রিকা করার চিন্তাটা ইশতিয়াক আর খালেদের মাথায় প্রথম এসেছিল। তারপর তো ইতিহাস...। ১৯৭৮ সালের মে মাসে প্রথম বের হয় উন্মাদ। যতগুলো কপি বের হয়েছিল, সব বিক্রি হয়ে যায়। আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এতে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

সবকিছু নিয়েই উন্মাদ-এ রসিকতা করা হয়। এর অভিজ্ঞতা কেমন?

আহসান হাবীব: ভালো-খারাপ দুই–ই আছে। আমাদের নামে মামলা হয়েছে, অফিসে আক্রমণও করেছে। সিনেমা নিয়ে ব্যঙ্গ করতাম। তখন গুলিস্তানের একটি সিনেমা অফিস থেকে আমাদের আক্রমণও করেছিল। এক জাজ আমাদের বিরুদ্ধে প্রায় এক কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমার বড় ভাই মারা যাওয়ার পর নুহাশপল্লিতে আকবর আলী হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে এসেছিলেন। তখন আমি মাকে নিয়ে ওখানে ছিলাম। তিনি যাওয়ার সময় আমাকে ওই মামলা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি খুব অবাক হয়েছিলাম, এত বছর পরও উনি সেটা মনে রেখেছেন!

বিজ্ঞানচিন্তা:

কার্টুনকে কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন?

আহসান হাবীব: আমি তো একটা ব্যাংকে চাকরি করতাম। গ্রামীণ ব্যাংকে জীবনের প্রথম চাকরি শুরু করি। মানিকগঞ্জে পোস্টিং হয়। সেখানে সম্ভবত সাত থেকে আট দিন ছিলাম। একা একা ভালো লাগছিল না। পরে মনে হলো, অন্য কিছু করি। উন্মাদ বন্ধ হয় হয় অবস্থা। ওদিকে ইশতিয়াক শুরু করল রিয়েল স্টেটের ব্যবসা। তত দিনে খালেদ আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। পরে ঠিক করলাম...আমিই তাহলে উন্মাদটা বের করি না কেন। উন্মাদ–এর অন্য সবাই খুশিই হলো। সেই সময় আমি চাকরি ছেড়ে উন্মাদ বের করা শুরু করলাম। আগে এটা ত্রৈমাসিক ছিল। আমি পরে এটাকে মাসিক করি।

আমাদের যাত্রাটা খুব কঠিন ছিল। উন্মাদ নামের কারণে কেউ বিজ্ঞাপন দিত না। এখনো দেয় না। পরে আমি লিখতাম, ‘দেশের একমাত্র বিজ্ঞাপনহীন পত্রিকা’। পরে অবশ্য কিছু বিজ্ঞাপন আমরা পেয়েছি। কিন্তু সেগুলো সব আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবের দেওয়া। প্রফেশনালি এখনো কোনো বিজ্ঞাপন আমরা পাইনি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার বেড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের সময়। আপনার বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা বলুন।

আহসান হাবীব: আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম। যুদ্ধ শুরু হলো। বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ডিস্ট্রিবিউট করলেন, সবাইকেই যুদ্ধ করতে হবে। একটা স্মৃতি এখনো মনে আছে। একদিন রাতে হঠাৎ খবর এল, দুটি গানবোট বলেশ্বর নদ দিয়ে পিরোজপুরে আসছে (বাবা তখন পিরোজপুরের পুলিশপ্রধান)। সবাই অস্ত্র নিয়ে ছুটল, যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে। আব্বার নিজস্ব একটা পিস্তল ছিল, একটা বন্দুক ছিল আর একটা রাইফেল ছিল। আব্বা পিস্তল নিলেন, বড় ভাই বন্দুক আর মেজ ভাই রাইফেল নিয়ে ছুটল...আমার ইচ্ছা হলো, আমিও যাই ওদের সঙ্গে। আমাকে নেওয়া হলো না। তবে আমাকে একটা গুরুদায়িত্ব দেওয়া হলো। যদি আর্মি প্রতিরোধ ভেঙে শহরে ঢুকেই পড়ে, তাহলে আমি যেন মা আর তিন বোনকে নিয়ে বাসার পেছনের দরজা দিয়ে পাশের খাল টপকে খালের ওই পাড়ে চলে যাই। পিরোজপুরবাসী সবার প্রথম প্রতিরোধে অবশ্য সেই গানবোট দুটি ফিরে যায়।

কিছুদিন পর তারা উল্টো দিক দিয়ে, মানে হুলারহাট দিয়ে ঢুকে পড়ে। আমরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হলাম। বাবা রয়ে গেলেন। আব্বার রয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। যাহোক, এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢুকল। ওরা যে কত ভয়ংকর, তা তখনো বুঝতে পারিনি। ওরা আব্বাকে মেরে ফেলল। তারপর আমাদের জীবন খুব কঠিনভাবে কেটেছে। পরিবারের একেকজন একেক জায়গায় ছিলাম। পরে আমার নানা এসে আমাদের খুঁজে খুঁজে বের করেছেন। আমরা তিন বোন আর মা চলে গেলাম নানার বাড়ি। এর মধ্যে বড় ভাইকে আর্মিরা মহসীন হল থেকে ধরে নিয়ে গেল, ওকে অনেক টর্চার করেছিল। কত ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটেছে তখন... এখন সবই স্মৃতি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

যুদ্ধের পর টিকে থাকার এই লড়াই আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

আহসান হাবীব: এটা আমি বেশ উপভোগ করেছি। রক্ষী বাহিনী একবার আমাদের বের করে দিল বাসা থেকে (বাবর রোডের বাসাটা আমরা শহীদ পরিবার হিসেবে পেয়েছিলাম)। আমার বড় ভাই (হুমায়ূন আহমেদ) সেটা নিয়ে পরে লিখেছিল। ওই রাতটা আমরা রাস্তায় ছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা আমি খুব উপভোগ করেছি। একটা রাত রাস্তায় থেকে ভালোই লেগেছে। ওই রাতে বিশাল একটা চাঁদ উঠেছিল আকাশে; বেশ একটা পিকনিক পিকনিক ভাব ছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের বাড়ি তখন লুট হয়ে গেছে। আমরা যখন ঢাকায় এলাম, তখন শুধু কিছু কম্বল ছিল। ওই কম্বলেই আমরা ঘুমাতাম। আর কিছু ছিল না। এভাবেই চলছিল। আম্মা নানা রকম সেলাইয়ের কাজ করতেন। ভাইয়া টিউশনি করত। আম্মা একদিন আমাকে বললেন, ‘তুমি গিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে এসো।’ আমি বললাম, ‘একা স্কুলে ভর্তি হব কীভাবে?’ আম্মা বললেন, ‘এখন থেকে সবকিছু একাই করতে হবে।’ আমি তখন সেগুনবাগিচার একটা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করলাম। এখন ভাবতে অবাক লাগে; কিন্তু তখন ঠিকই গিয়ে কথা বলেছিলাম। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আমি স্কুলে ভর্তি হতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘তোমার বাবা কই, তাঁকে নিয়ে আসো?’ বললাম, ‘পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছে।’ তখন উনি আর কিছু না বলে আমাকে একটা পরীক্ষা দিতে বললেন। পরীক্ষা দিলাম। তারপর আমাকে ভর্তি করে নিলেন। আম্মা খুব কঠিন নিয়ম চালু করেছিলেন। সবাইকে নিজের কাজ একা একা করতে হবে, সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনি নিজে একজন জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট। আপনার দুই ভাইও জনপ্রিয়। আপনার চোখের সামনেই তাঁরা জনপ্রিয় হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা কেমন লাগে?

আহসান হাবীব: আমি তেমন জনপ্রিয় নই। তবে আমার বড় ভাই যে বড় লেখক হবেন, তা আমরা টের পাচ্ছিলাম। বাইরের মানুষেরাও বলত। জিনিসটা আমরা অনুভব করতাম। আসলে লেখালেখিটা আমাদের জন্য কঠিন ছিল না। বাবা নিজে লিখতেন। আমার আম্মাকেও বাবা লেখক বানিয়েছিলেন। বাবা নানা পত্রিকায় লিখতেন। আম্মা লিখতেন বেগম পত্রিকায়। বেগম পত্রিকায় আবার লেখকের ছবি ছাপা হতো লেখার সঙ্গে। ওই পত্রিকা বের হলে আমরা ছোটরা আম্মার ছবি খুঁজে বের করতাম। লেখার চেয়ে আম্মার ছবি ছাপা হওয়াই যেন আমাদের কাছে মুখ্য ছিল। তারপর বড় ভাই লেখা শুরু করল, মেজ ভাই প্রথম সায়েন্স ফিকশন লিখল বিচিত্রায়। আমাদের একটা পারিবারিক পত্রিকা ছিল। আব্বা ছিলেন সেটার সম্পাদক। নাম ছিল সুনিলিত সাগরিত। এখন আমাদের বাড়ির নামও এটা। এই পত্রিকায় আমাদের বাধ্যতামূলক সবাইকে লিখতে হতো। আব্বা পরে এর সম্পাদকের দায়িত্ব আমার বড় বোনকে দিয়েছিলেন, বড় বোন বাংলায় মাস্টার্স করা। বড় আপা কবি নজরুল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে রিটায়ার্ড করে। আপা আবার কড়া সম্পাদক ছিল। বড় ভাইয়ার লেখাও বাদ দিয়েছে। সে–ই বোধ হয় একমাত্র সম্পাদক, যে হুমায়ূন আহমেদের লেখা বাদ দিয়েছে (হা হা হা)।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার পরিবারের সবাই লেখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ সময় আপনি উন্মাদ বের করা শুরু করলেন। তখন পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

আহসান হাবীব: আম্মা একটু বিরক্ত ছিলেন। কারণ, তাঁর দুই ছেলে পিএইচডি করেছে, এক মেয়ে কলেজের প্রিন্সিপাল। কিন্তু আমি উন্মাদ নিয়ে আছি। সোজা ছবি আঁকি না, ব্যাঁকাত্যাড়া ছবি আঁকি (আম্মার ভাষায়)। আমার বিয়ের সময় বললেন, ‘তুই আগেই ব্যাংকের চাকরি ছাড়িস না। বিয়েটা হয়ে গেলে পরে ছাড়িস।’ ছেলে যে উন্মাদ, এটা বলতে চাইতেন না (হাসি)। কিন্তু চাকরি না করার সিদ্ধান্ত তখন নিয়ে নিয়েছি আমি। এ কারণে আম্মা একটু বিরক্ত ছিলেন। তিনি চাইতেন, আমি ভাইবোনদের মতো শিক্ষক হই। এখন আমি শিক্ষক হয়েছি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে এমসিটি ডিপার্টমেন্টে গ্রাফিক নভেল পড়াই। কিন্তু আম্মা তা দেখে যেতে পারলেন না। দেখলে হয়তো খুশি হতেন।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনারা ভাইয়েরা সবাই বিদেশে গেলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। আপনি দেশে থেকে গেলেন। কখনো কি বিদেশে পড়াশোনার জন্য যাওয়ার ইচ্ছা হয়নি?

আহসান হাবীব: না। বড় ভাই (আমরা তাকে দাদাভাই ডাকতাম) বিদেশে গিয়ে আমাকে চিঠি লিখেছিল যে ‘আমি এ দেশে এসেছি, তোমাকেও এখানে আসতে হবে। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কোরো।’ কিন্তু আমার তা হয়নি। আমার দুই ভাইয়ের মতো আমি অতটা মেধাবী নই (হা হা হা)। তারা দুজনেই বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্র।

বিজ্ঞানচিন্তা:

ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?

আহসান হাবীব: ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির ড্রাইভার। বগুড়ায় থাকার সময় আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে এই গাড়ি ঢং ঢং শব্দ করে ছুটে যেত। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম তখন। আর স্বপ্ন দেখতাম যে এই গাড়ির ড্রাইভার আমাকে হতেই হবে। বাবাকে আমার স্বপ্নের কথা বলেছিলাম। মনে আছে, তিনি বলেছিলেন, ‘ফাসক্লাস আইডিয়া’। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার সময় আমাকে একটাই প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত চলে কী?’ আমি বলেছিলাম, ‘দমকল বাহিনীর গাড়ি।’ ওটাই আমার স্বপ্ন ছিল।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন ম্যাগাজিন মৌলিক। আপনিই ছিলেন ওটার সম্পাদক। সেই ঘটনা বলুন।

আহসান হাবীব: আমি আর হাসান খুরশিদ রুমি (সাই ফাই লেখক ও অনুবাদক) ভাবলাম, সায়েন্স ফিকশন নিয়ে একটা কিছু করা যেতে পারে। বেলাল নামে আমাদের এক বন্ধু ছিলেন। তাঁর একটা পত্রিকা ছিল, মৌলিক। উনি বললেন, ‘আমাকেও আপনাদের দলে নিন।’ কিন্তু সায়েন্স ফিকশনের সঙ্গে তো মৌলিক নামটা যায় না। তারপরও নামটা রয়ে গেল। ভালোই বিক্রি হতো ম্যাগাজিন। সমস্যা হতো লেখক নিয়ে। সায়েন্স ফিকশন লেখার মতো লেখক নেই তখন। আমরা শুধু অনুবাদ করতাম। অনুবাদ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। পরে আর বের হলো না। পরে মৌলিক–এর সব লেখা নিয়ে জাগৃতির দীপন একটা বড় সায়েন্স ফিকশন সংকলন বের করেছিল।

বিজ্ঞানচিন্তা:

কার্টুন থেকে সায়েন্স ফিকশনের দিকে কীভাবে গেলেন?

আহসান হাবীব: আমার সায়েন্স ফিকশনগুলোকে আমি বলি ‘সায়েন্স ফ্রিকশন’। সায়েন্সের সঙ্গে একটু ঘষা লেগে যাওয়া আরকি...মানে ফ্রিকশন। তারপর আবুল বাসার (বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক) আমাকে একবার বলল সায়েন্স ফিকশন লিখতে। সাহস করে লিখলাম। কিন্তু আসলে সায়েন্স ফিকশন হচ্ছে কি না, তা বলতে পারি না। তবে প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, ‘সায়েন্স ফিকশন হচ্ছে এ যুগের রূপকথা।’ তো, আমি হয়তো আবুল বাসারের চাপে পড়ে মাঝেমধ্যে এ যুগের রূপকথা লিখি বা লেখার চেষ্টা করি।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বিজ্ঞান নিয়ে সবাই সিরিয়াস কথা বলে। কেউ ফান করার চেষ্টা করে না। আপনি বিজ্ঞান নিয়েও রসিকতা করেন। এর কারণ কী?

আহসান হাবীব: বিজ্ঞানবক্তা আসিফের সায়েন্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি ম্যাগাজিন ছিল। সে একবার আমার কাছে লেখা চাইল। বলল, বিজ্ঞান নিয়ে একটু মজা করে কিছু লেখেন। ‘সায়েন্স টুন’ নামে তখন লিখতাম। পরে ওই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তো বিজ্ঞানচিন্তায় লেখা শুরু করলাম। আসলে, হিউমারের অনেকগুলো লেভেল আছে, যেমন জেনারেল হিউমার, উইটি, আয়রনি, স্যাটায়ার, ল্যাম্পুন...আমি বিজ্ঞান রম্যতে চেষ্টা করি অন্তত প্রথম দিককার দুটি লেভেল ধরে রাখতে। আরেকটা কারণ আছে। ছোটবেলায় বিখ্যাত মানুষেরা কে কী করত, তা খাতায় লিখে রাখতাম। আমার মেজ ভাই এটা আমাকে শিখিয়েছিল। তখন আমি মজার কিছু ঘটনা পেয়েছিলাম। একাত্তরে বাড়ি লুট হয়ে যাওয়ার সময় সেই খাতাও হারিয়ে যায়। সেগুলোর কিছু কিছু এখনো মনে আছে। সেগুলোই মনে করে করে লিখি আরকি, নতুনও বানাতে হয়।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বিজ্ঞান নিয়ে আপনার আগ্রহ নানাভাবে দেখেছি। ম্যাগাজিন করেছেন একসময়। এখন ড্যাফোডিল অ্যাস্ট্রোফিজিকস সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিজ্ঞান নিয়ে এই আগ্রহ কীভাবে হলো?

আহসান হাবীব: এটা আমার পরিবার থেকেই হয়েছে। আমার দুই ভাই বিজ্ঞানের বাইরে কিছু বুঝত না। আমি একবার আর্ট কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। ওরা বলল, সায়েন্সে পড়তে হবে। আমার মেজ বোন শিখু তো আর্ট কলেজে ভর্তিই হয়েছিল। বড় ভাই তাকেও সায়েন্স নিয়ে পড়তে বাধ্য করেছিল। এ জন্য মেজ বোনের বড় ভাইয়ের ওপর খুব রাগ ছিল। এখন মনে হয়, মেজ বোনের আর্ট কলেজেই থাকা উচিত ছিল। ওকে বিজ্ঞানে এনে দাদাভাই খুব একটা ভালো কাজ করেনি। সে খুব ভালো আর্টিস্ট ছিল। অসাধারণ ভাস্কর্য তৈরি করত নিজে নিজেই। আমার এ বোনটা ক্যানসারে মারা গেছে।

অনেক ছেলেমেয়ে আছে, যারা আমাকে বলে, ‘স্যার, বই পড়তে ভালো লাগে না। কিছুই ভালো লাগে না’, ডিপ্রেশনে ভোগে। তাদের আমি বলি বিজ্ঞানের বই পড়তে; বিশেষ করে মহাকাশ–সম্পর্কিত বই। এতে মন ভালো থাকবে... মহাকাশের বিশালতাটা বুঝতে পারলে ওই বিস্ময়েই ডিপ্রেশন কেটে যাবে, আমার তা–ই ধারণা। অনেকে আমার কথা মানে। কারণ, বিজ্ঞানে এত বিস্ময় আছে যে তা সঠিকভাবে জানতে পারলে ভালো লাগবে। আমার আম্মা একসময় তার নিজের মৃত্যু কামনা করতেন। বাসায় কেউ গেলে বলতেন, ‘আমার জন্য দোয়া করেন, যেন তাড়াতাড়ি মারা যাই। অনেক দেখেছি। আর কিছু দেখতে চাই না।’ আমি তখন আম্মাকে বোঝাতাম, ‘অনেক কিছু দেখা ও জানার এখনো বাকি আছে আপনার। বিজ্ঞান আপনাকে আরও অনেক কিছু দেখাবে। একদিন হয়তো দেখবেন, একটা ফ্লাইং সসার চলে এসেছে! ভিনগ্রহ থেকে কোনো প্রাণীও চলে আসতে পারে। যাওয়ার জন্য এখনই এত অস্থির হচ্ছেন কেন?’ এভাবে বলে আম্মাকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করতাম। আম্মা অবশ্য খুব একটা সন্তুষ্ট হতো বলে মনে হয় না।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বর্তমানে তো এআই চলে এসেছে। গল্প লেখা যায়, ছবি আঁকা যায়। এ ব্যাপারে কী ভাবছেন?

আহসান হাবীব: মাঝে আমি কিছুদিন এআইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। একবার এআইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তোমরা কি মানুষের জন্য বিপজ্জনক?’ অনেক হাবিজাবি কথা বলে শেষে হঠাৎ বলেছে, ‘নট ইয়েট’। আবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘শূন্য কেন এত পরে আবিষ্কৃত হলো?’ প্রথমে গণিতের ভাষায় উত্তর দিয়েছিল। পরে বললাম, ‘ফিলোসফির (দর্শনের) ভাষায় উত্তর দাও।’ তখন এআই একটা মজার উত্তর দিয়েছিল। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা পরে আমাদের জন্য বিপজ্জনকও হতে পারে। আমি একবার উন্মাদ–এর একটা আর্টিকেলের জন্য আইডিয়া দিতে বলেছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম, তার সেন্স অব হিউমার কেমন। দেখলাম, খুবই দুর্বল। হয়তো ভবিষ্যতে হবে। বয়স তো এখনো বেশি দিন হয়নি এআইয়ের।

বিজ্ঞানচিন্তা:

এআই দিয়ে গল্প লেখা কিংবা আঁকাআঁকি করায় কি মানুষের সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে?

আহসান হাবীব: গত বইমেলায় কিন্তু অনেকে এআইয়ের সাহায্যে প্রচ্ছদ করেছে। বিজ্ঞানচিন্তাও এখন প্রচ্ছদ করছে। আমরাও এখন ভেবেছি, উন্মাদ-এ দু–তিন পৃষ্ঠার একটা আর্টিকেল করব এআই দিয়ে। কমান্ড আমাদের হলেও কাজটা তো করে দিচ্ছে এআই। নিজের কাজ করার মধ্যে একটা স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। এআই করে দিলে সেটা পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া হিউমারের একটা ব্যাপার তো আছেই। ওই একটা জায়গায় আমরা আলাদা থাকব। আমার মনে হয় না, এআইকে এখনই ভয় পাওয়ার কিছু আছে। আমার ফিল্ডে এখনো এআই দুর্বল। ভবিষ্যতে আরও ভালো করলে আমরাও নিশ্চয়ই সহায়তা নেব।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেন্ট্রাল পার্কে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে আহসান হাবীব
বিজ্ঞানচিন্তা:

শৈশবে আপনারা বই পড়ে বড় হয়েছেন। এখন তো সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

আহসান হাবীব: আমি যেখানে ক্লাস নিই, সেখানে প্রতিবছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ওদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সবার হবি (শখ) জিজ্ঞেস করা হয়। কেউ বলে গান গাওয়া, ছবি আঁকা কিংবা সিনেমা দেখা, ট্রাভেল (ভ্রমণ) করা। কিন্তু কেউ এখন বই পড়ার কথা বলে না। একবার হঠাৎ একটা ছেলে বলল, সে বই পড়ে। আমরা খুশি হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী বই পড়ো? সে বলল, পিডিএফ পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, একটা বইয়ের নামও সে বলতে পারল না, মানে মনে করতে পারল না। এখনকার জেনারেশন (প্রজন্ম) এভাবেই বই পড়ছে। বিজ্ঞানের এক প্রফেসর বলেছেন, ‘আমাদের দুই–দুইটা প্রজন্ম বই না পড়ে বড় হয়ে গেছে।’ বলা যায়, এ কারণেই কিন্তু গ্রাফিক নভেলের উদ্ভব। ভারী ভারী বই কেউ পড়তে চায় না। কিন্তু ওই ভারী বইয়ের গ্রাফিক নভেল দিলে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, সেপিয়েন্স বইটার গ্রাফিক নভেল বের হয়েছে সম্প্রতি। এ কারণেই বলা হয়, এখন গ্রাফিক নভেলের রেনেসাঁ যুগ চলছে। তবে সবাই নয়, অনেক তরুণই এখনো বই পড়ে। এটাই আশার কথা।

বিজ্ঞানচিন্তা:

এমন একটা বইয়ের নাম বলবেন, যেটা পড়ে আপনার জীবন বদলে গেছে?

আহসান হাবীব: এ রকম অনেক বই আছে। শুধু বই কেন, এমন অনেক জোকস বা উক্তিও আছে, যা দিয়ে জীবন বদলে যায়। যেমন একটা কোটেশন আমার খুব প্রিয়। ‘তোমার হাতে সময় নেই, এ কথাটা কখনো বলবে না। তোমার চেয়ে কম সময় নিয়ে পৃথিবীতে এসে অনেকে অনেক কিছু দিয়ে গেছে।’ একটা বই হয়তো খারাপ হতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে খুঁজে দেখলে হয়তো একটা লাইন পাওয়া যাবে, যেটা জীবন বদলে দেওয়ার মতো অনুভূতি তৈরি করবে। কিছু কিছু ‘ট্র্যাপ জোকস’ আছে, যা আপনাকে অন্যভাবে ভাবতে শেখাবে।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বাংলাদেশে বিজ্ঞানচর্চা বাড়ানোর উপায় কী?

আহসান হাবীব: মানুষকে বিজ্ঞানে আগ্রহী করতে হবে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলেই বলবে, ‘বিবিএ পড়ব।’ সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায় না। যারা পড়ে, তারাও শুধু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। বেসিক সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায় না। এটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে। আমার দুই ভাইয়ের একজন পদার্থবিজ্ঞান আর একজন রসায়ন নিয়ে পড়েছে। এখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটা দেখা যায় না। আমাদের সেদিকে যেতে হবে। বিজ্ঞান যে কত রহস্যময়, কত আনন্দের, তা বুঝতে হবে। সে জন্য সায়েন্স ফিকশন জরুরি। আমি মুনির নামে একটা ছেলেকে চিনি। এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। অত্যন্ত মেধাবী। যেকোনো জিনিস হ্যাক করে ফেলতে পারে। নাসার ওয়েবসাইট পর্যন্ত একবার হ্যাক করে ফেলেছিল। তার একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আমি মৌলিক-এ। জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘ছেলেমেয়েরা যে এখন গেম খেলে, এটা কি সমস্যা না?’ সে বলেছিল, ‘সমস্যা না। গেম খেললে ওরা কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচিত হবে, ভয় দূর হবে।’ ও একবার একটা বড় কাজ করেছিল। জার্মানির একটা বড় ক্যানসার হাসপাতালের (বাচ্চাদের) সব ডেটা হারিয়ে গিয়েছিল, মানে ডেটা সেন্টার কলাপস করেছিল। তখন তারা বিশ্বের কাছে সাহায্য চাইল, কেউ এই ডেটা উদ্ধার করে দিতে পারবে কি না। মুনির সেটা বাংলাদেশে বসে ঠিক করে দিয়েছিল।

বিজ্ঞানচিন্তা:

দেশে কিছু সায়েন্স প্রোগ্রাম বা বিজ্ঞানবক্তৃতা এখনো হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে আর কী করা যায়?

আহসান হাবীব: আমি ভাবছি, বিজ্ঞানবক্তা আসিফকে নিয়ে একটা সায়েন্স কার্টুন কোর্স করব। দুজনে মিলে এটা করার কথা ভেবেছি। সায়েন্স কার্টুনের মূল্য আছে। অনেক দিন থাকবে, যেটা পলিটিক্যাল কার্টুনের ক্ষেত্রে নেই।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার কাছে সর্বকালের সেরা আবিষ্কার কোনটা?

আহসান হাবীব: আমার তো মনে হয় ‘চাকা’। যেদিন চাকা ঘুরতে শুরু করল, সেদিন থেকেই সব শুরু...

বিজ্ঞানচিন্তা:

প্রযুক্তির বদৌলতে দুনিয়া বদলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হবে বলে মনে করেন?

আহসান হাবীব: বিষয়গুলো এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে ধরতে পারছি না। পৃথিবী সত্যিই দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে টেকনোলজি মিস করে ফেলি। আমি কোয়ার্ক ৫–এ কাজ করতাম, এখন নাকি কোয়ার্ক ২০ চলছে।

একনজরে

জন্ম: ১৫ নভেম্বর, ১৯৫৭, সিলেট

বাবা: শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ

মা: আয়েশা ফয়েজ

সন্তান: ১ মেয়ে। শবনম আহসান

স্ত্রী: আফরোজা আমীন

অবসর: বই পড়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো

প্রিয় বই: হুমায়ুন আহমেদের কুহক

প্রিয় লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সুবোধ ঘোষ

প্রিয় সিনেমা: স্পার্টাকাস

রং: কালো (যেকোনো রঙের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট)

বিজ্ঞানচিন্তা:

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আপনার একটা মজার স্মৃতির কথা আমাদের বলুন।

আহসান হাবীব: বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ একবার এসে আমাকে বলল, ‘সিগারেট খাবি?’ আমি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। বললাম, ‘খাব।’ বলল, ‘যা, রান্নাঘর থেকে ম্যাচ (দেশলাই) নিয়ে আয়।’ নিয়ে এলাম। তখন আমাদের বাসা বগুড়ায়। দুজনে বাসার পেছনে চলে গেলাম। সে কাগজের মোড়ক খুলে দুটি সিগারেট বের করল। আমি খুব উত্তেজিত, বাবার মতো এখন সিগারেট টানব (আমার বাবা খুব সুন্দর করে সিগারেট খেতেন)। আমাকে একটা দিয়ে দাদাভাই নিজে একটা নিল। ঠোঁটে চেপে ধরে আছি সিগারেট। সে ম্যাচ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিল, পরে দেখি, ওটা আসলে চকলেট। দেখতে শুধু সিগারেটের মতো।

বিজ্ঞানচিন্তা:

আপনার কাছে কী মনে হয়, আমাদের পরিবেশ এখন আগের চেয়ে নিরানন্দ হয়ে গেছে?

আহসান হাবীব: হ্যাঁ, সবাই মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। কারও সঙ্গে কেউ কথা বলে না। এটা তো নিরানন্দই।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বিজ্ঞানচিন্তার শুরু থেকেই আপনি আছেন। কেমন লাগে বিজ্ঞানচিন্তা? কোথায় আরও উন্নতি করা দরকার?

আহসান হাবীব: বিজ্ঞানচিন্তা খুব ভালো করছে। প্রতি মাসে আমি ম্যাগাজিনটা খুঁটিয়ে পড়ি। বেশ ভালো লাগে। অনেক নতুন ব্যাপার জেনে আনন্দ পাই। এবার দেখলাম, ধারাবাহিকভাবে একটা বিজ্ঞান কমিকস শুরু হয়েছে। এ রকম ধারাবাহিকভাবে প্রতি সংখ্যায় কমিকস থাকলে ভালো হয়।

বিজ্ঞানচিন্তা:

বিজ্ঞানচিন্তার বেশির ভাগ পাঠক কিশোর ও তরুণ। ওদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

আহসান হাবীব: ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী। তাদের শুধু বলব বইটা একটু বেশি করে পড়তে। বিশেষ করে মহাকাশবিষয়ক বই। মহাকাশের বিশালতা তাদের ভেতরে ঢোকা জরুরি। তাহলে জাগতিক ক্ষুদ্রতা দূর হয়ে যাবে। তারা যখন রাতের মহাকাশের দিকে তাকিয়ে গ্রহ-নক্ষত্র দেখবে, তখন নিজেরাই বুঝতে পারবে, অনন্ত নক্ষত্রবীথি কত বিশাল...কত বিপুল। আর তারাও ওই অনন্ত নক্ষত্রবীথির অংশ হয়ে আছে...বহু আগে থেকেই।

অনুলিখন: অনিক রায়, শিক্ষার্থী, তিতুমীর কলেজ, ঢাকা

*লেখাটি ২০২৪ সালে বিজ্ঞানচিন্তার অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত