আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত প্রাকৃতিক ঘটনা। প্রচণ্ড চাপে পৃথিবীর অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা লাভা আকারে বেরিয়ে আসে বিশেষ ধরনের পর্বতের জ্বালামুখ দিয়ে। বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এই লাভার কিছু অংশ গ্যাস ও ছাইয়ে পরিণত হয়। বাকি অংশ শীতল হয়ে শক্ত লাভা হিসেবে জমা হয় পর্বতের গায়ে।
আগ্নেয়গিরি থেকে যেসব গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, তার মধ্যে আছে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড। কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রিন হাউজ ইফেক্ট তৈরি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম প্রভাবক এই গ্যাস। অন্যদিকে সালফার ডাই-অক্সাইড সূর্যের আলোকে খুব ভালোভাবে প্রতিফলিত করতে পারে। বায়ুমণ্ডলে সালফার ডাই-অক্সাইড মিশে গেলে ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশ কমে যায়। আবার অগ্নুৎপাতের ফলে ছাই ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এই ছাই বায়ুমণ্ডলে মিশে ঢেকে দেয় সূর্যের আলো। ফলাফল, তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমে যায়।
অগ্নুৎপাতের কারণে এই যে তাপমাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে, পৃথিবীর সার্বিক জলবায়ুর ওপরে এটা কেমন প্রভাব ফেলে? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আগ্নেয়গিরি থেকে কী পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, তা জানতে হবে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, প্রতিবছর মানুষ যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে, সেটা পৃথিবীর সব আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি।
অর্থাৎ মানুষের তৈরি কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় অগ্নুৎপাতের কারণে নির্গত হওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেশ কম। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ঠ নয়।
অন্যদিকে অগ্নুৎপাতের ফলে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার বিষয়টিও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ছাই এবং সালফার ডাই-অক্সাইড বৃষ্টির সঙ্গে মিশে ভূ-পৃষ্ঠে পড়ে। ফলে, অগ্নুৎপাতের কারণে ইতিবাচক প্রভাবও পড়ে না জলবায়ু পরিবর্তনে।
সবমিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে আগ্নেয়গিরির ভূমিকা অনেকটাই নিস্ক্রিয়। অগ্নুৎপাতের কারণে চারপাশের এলাকায় সাময়িকভাবে তাপমাত্রা কমে যাওয়া, এসিড বৃষ্টি, বায়ুমণ্ডল দূষিত হওয়ার মতো প্রভাব পড়ে। বড় আকারের অগ্নুৎপাতের ফলে এসব বিষয় আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে। কিন্তু পুরো পৃথিবীর জলবায়ুর প্রসঙ্গ এলে, সেখানে আগ্নেয়গিরির তেমন ভূমিকা আসলে নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ ঢাকা
সূত্র: নাসা ও সায়েন্স ফোকাস