‘বিজ্ঞানের অস্কার’ ব্রেকথ্রু পুরস্কার ঘোষণা, কারা পেলেন

বিজ্ঞানের অস্কার হিসেবে পরিচিত ব্রেকথ্রু পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে ব্রেকথ্রু প্রাইজ ফাউন্ডেশন। গত ৫ এপ্রিল, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ব্রেকথ্রু পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক সের্গেই ব্রিন, প্রিসিলা চ্যান, মার্ক জুকারবার্গ, ইউরি মিলনারসহ আরও অনেকে।

জীববিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা এবং গণিতে মোট ছয়টি ব্রেকথ্রু পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পুরস্কারের মূল্য ৩০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তা প্রায় ৩৬ কোটির বেশি। এর পাশাপাশি আরও আট তরুণ পদার্থবিদ ও গণিতবিদকে নিউ হরাইজন পুরস্কার নামে ৬টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এর প্রত্যেকটার অর্থমূল্য ১ লাখ ডলার। সম্প্রতি পিএইচডি শেষ করা তিন নারী গণিতবিদের প্রত্যেকে ৫০ হাজার ডলার করে পুরস্কার পেয়েছেন। এই পুরস্কারের নাম মরিয়াম মির্জাখানি নিউ ফ্রন্টিয়ার্স প্রাইজ। সব মিলিয়ে চলতি বছর মোট ১৮৭ লাখ ডলারের বেশি অর্থমূল্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

আলবার্তো অস্কেরিও এবং স্টিভেন হাউজার

২০২৫ সালে জীববিজ্ঞানে ব্রেকথ্রু পুরস্কার পেয়েছে মোট তিনটি দল। এরমধ্যে একটি দলে আছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগতত্ত্ববিদ আলবার্তো অস্কেরিও এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকোর স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ স্টিভেন হাউজার। তাঁরা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস নামে একটি জটিল রোগ নিয়ে গবেষণার জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন। অন্য দুটি দলের মধ্যে ডায়াবেটিস ও স্থূলতার ওষুধ আবিষ্কারের জন্য ড্যানিয়েল ড্রাকার, জোয়েল হাবেনার, জেন্স হোলস্ট, লোটে নুডসেন ও স্বেতিয়ানা মোজসভ পুরস্কার পেয়েছেন। আর জিন সম্পাদনার নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ডেভিড লিউ পেয়েছেন একই বিভাগে পুরস্কার।

সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের ১৩ হাজারের বেশি বিজ্ঞানীকে পদার্থবিজ্ঞানে ব্রেকথ্রু পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল পরীক্ষা করেছেন, হিগস বোসনের বৈশিষ্ট্য মেপেছেন এবং মহাবিশ্বের শুরুর দিকের কণা নিয়ে গবেষণা করেছেন। ব্রেকথ্রু পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তাঁরা তরুণ গবেষকদের সার্নে কাজ করার সুযোগ দেবে বলে ঘোষণা করেছে। এছাড়া মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখায় গেরার্ট হোফট্‌কে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি উপপরমাণবিক কণার স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

গণিতে এই পুরস্কার পেয়েছেন ডেনিস গেইটসগরি। তিনি জ্যামিতিক ল্যাংল্যান্ডস কনজেকচার প্রমাণে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। এই কনজেকচারের সাহায্যে গণিতের অনেক আলাদা শাখার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

ডেনিস গেইটসগরি

তরুণ যে আট পদার্থবিদ ও গণিতবিদ ১ লাখ ডলার করে পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৫ জন পদার্থবিদ ও ৩ জন গণিতবিদ। পদার্থবিদদের মধ্যে ওয়াসিম বকর এমন একটি বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্র বানিয়েছেন, যা আলোর জালে আটকা থাকা পরমাণুকেও দেখতে পারে। জিওংওয়ান হাহ কোয়ান্টাম জগৎ নিয়ে নতুন কিছু ধারণা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাতে এই ধারণা কাজে লাগতে পারে। সেবাস্তিয়ান হ্যাফার্ট, রেবেকা জেনসেন-ক্লেম ও মাইকে ভ্যান কুটেন এমন এক ধরনের উন্নত টেলিস্কোপ বানানোর কৌশল আবিষ্কার করেছেন. যা পৃথিবীর বাতাস ভেদ করে মহাকাশের ছবি আরও পরিষ্কারভাবে তুলতে পারবে।  গণিতে ইওয়ান গুইন পুরস্কার পেয়েছেন কনফরমাল সম্ভাব্যতা নিয়ে। বক্ররেখা এবং পৃষ্ঠের মতো সম্ভাবনা মতো সম্ভাবনাময় বস্তু নিয়ে এই ক্ষেত্র কাজ করে।

জন পারডন জ্যামিতি ও টপোলজিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন পুরস্কার। আর স্যাম রাসকিন জ্যামিতিক ল্যাংল্যান্ডস প্রোগ্রামের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

মারিয়াম মির্জাখানি নিউ ফ্রন্টিয়ার্স পুরস্কার পাওয়া সি ইং লি ল্যাংল্যান্ডস প্রোগ্রামে কাজ করেছেন। রাজুলা শ্রীবাস্তব হারমোনিক বিশ্লেষণ এবং সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। আর মেশিন লার্নিয়ের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অ্যালগরিদম আবিষ্কার করে পুরস্কার পেয়েছেন ইউইন ট্যাং।

সূত্র: ব্রেকথ্রু প্রাইজ ডটঅর্গ