আমগাছকে বলা হয় বাংলাদেশের জাতীয় গাছ। আর আম ভারতের জাতীয় ফল। বাংলাদেশের আগেই ভারত জাতীয় ফল হিসেবে আমকে গ্রহণ করেছে বলে আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। তবে জাতীয় ফল যা-ই হোক, আমাদের দেশের মানুষের প্রিয় ফলের তালিকা করলে প্রথমে থাকবে আম।
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রায় সবাই প্রচুর আম খায়। আসলে শুধু আমাদের দেশই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় আম খুব পছন্দের ফল। কাঁচা থেকে পাকা, সব অবস্থায় এই ফল খাওয়া হয়। কাঁচা আম খেতে একরকম, পেকে গেলে অন্যরকম। আমাদের দেশে ঘরে ঘরে আমের আচার বানিয়ে দীর্ঘদিন রেখে খাওয়ার প্রচলন আছে। আবার আম গাছটা দেখতেও বড্ড সুন্দর। বলা চলে, আমের গুণ। এর পাশাপাশি আমে আছে প্রচুর পুষ্টি।
পুষ্টির দিক দিয়ে আমকে বলা যায় অনন্য। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও পটাসিয়াম। মিষ্টি স্বাদের কারণে আমে প্রচুর চিনিও থাকে। তবে এই চিনি কৃত্রিম অন্যান্য খাবার, যেমন বিস্কুটের মধ্যে থাকা চিনির মতো নয়। একটি মাঝারি আকারের খোসা ছাড়ানো আমে প্রায় ৪৬ গ্রাম চিনি থাকে। সাধারণ দোকান থেকে কেনা চকলেট, চিপস বা বিস্কুটের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি।
তবে আমের প্রাকৃতিক চিনি আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না। বিস্কুটের অতিরিক্ত চিনি যেমনটা করে। কারণ, আমে থাকা উপকারী আঁশ (ফাইবার) আমাদের দেহ আগে ভেঙে নেয়, পরে চিনি গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে। ফলে রক্তে গ্লুকোজ যুক্ত হয় ধীরে ধীরে। এতে এই গ্লুকোজ আমাদের দেহ সহজে সামলাতে পারে। কিন্তু বিস্কুটের চিনি শরীরে সরাসরি প্রবেশ করে। ফলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যায়।
একটি আম খেলে আমাদের দৈনন্দিন আঁশ বা ফাইবারের চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পূরণ হয়। যদিও আপেল বা নাশপাতির মতো ফলের তুলনায় আমে আঁশ কিছুটা কম। এর অন্যতম কারণ হলো, আমরা সাধারণত আমের খোসা খাই না। আমের খোসায় অনেক আঁশ থাকে। তবুও আমকে ‘ভালো আঁশের উৎস’ হিসেবে ধরা হয়।
আমের আঁশ হজমের গতি কমিয়ে দেয়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কাজেও সহায়তা করে আম।
ভিটামিন সি-এর কথা তো আগেই বলেছি। একটি লেবুজাতীয় ফলের সমপরিমাণ ভিটামিন সি থাকে আমে। একটি মাঝারি আকারের আমে থাকে প্রায় ১২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। একটি বড় কমলার অর্ধেকে এই পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি শরীরকে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আয়রন শোষণেও সাহায্য করে।
সবুজ শাকসবজি বা ডাল জাতীয় খাবারে যে আয়রন থাকে, তা শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু এ ধরনের খাবার যখন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়, যেমন লেবু দিয়ে ডাল খেলে শরীর আয়রনকে সহজে গ্রহণ করতে পারে। লেবুর বদলে আম হতে পারে ভালো বিকল্প। সবুজ শাক বা ডালের সঙ্গে আম খেলে শরীর এসবে থাকা আয়রনকে সহজে গ্রহণ করতে পারে।
এখানেই শেষ নয়। আমে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। আমরা মনে করি কলা পটাসিয়ামে ভরপুর একটি ফল। কথাটা সত্যি। তবে আমও খুব একটা পিছিয়ে নেই। একটি মাঝারি আকারের আমের অর্ধেক অংশে প্রায় ৫৬৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। যেখানে একটি মাঝারি কলায় থাকে প্রায় ৪২২ মিলিগ্রাম।
অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। পটাসিয়াম এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারে। এভারে রক্তচাপ বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এই উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু পটাসিয়াম শরীরে তরলের পরিমাণের ভারসাম্য রক্ষা করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, সবচেয়ে ভালোভাবে আম খাওয়ার উপায় কী? পাকা আম এমনিতে খাওয়াই ভালো। মানে এর সঙ্গে আর বাড়তি চিনি দিয়ে না খেলেই হলো। এভাবে ফ্রোজেন আমেও বাড়তি চিনি যুক্ত না করলে তাজা আমের মতোই পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে আচার বানানোর জন্য শুকানো আমের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। এক কাপ শুকনো আমে থাকে ২৫৫ ক্যালরি ও ৫৩ গ্রাম চিনি। এই পরিমাণ অনেক বেশি। একই পরিমাণ তাজা আমে থাকে মাত্র ৫০ ক্যালরি এবং ১১ গ্রাম চিনি। যখন আম থেকে সব পানি বের করে ফেলা হয়, তখন সবটুকু চিনি ও ক্যালোরি ঘন হয়ে কম আয়তনে চলে আসে। এতে অনেক পার্থক্য তৈরি হয়। তাই পাকা আমের এই মৌসুমে পুষ্টিকর আম নির্ভয়েই খাওয়া চলে।