গন্ধের রহস্য

ময়লার স্তুপের কাছে দিয়ে গেলে প্রচন্ড বাজে গন্ধ নাকে ধ্বাক্কা দেয়। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আবার বিরিয়ানি রান্নার গন্ধে মন চনমন করে ওঠে। পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসলে ভালো হয়ে যায় মন। কিন্তু কেন এমন হয়? মস্তিষ্ক গন্ধের ভালোমন্দ আলাদা করে কীভাবে? গন্ধ ব্যাপারটা আসলে কী?

আমাদের নাকের ভিতরে অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর (Olfactory Receptor) নামে লাখ লাখ কোষ আছে। এগুলোর কাজ হলো, বিভিন্ন অণুর গন্ধের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা। বায়ুমণ্ডল কোটি কোটি অণু-পরমাণু দিয়ে ভর্তি। শ্বাস নেওয়ার সময় এসব অণু-পরমাণু অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টরকে উদীপ্ত করে। অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর সেই উদ্দীপনা পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্কে। তখনই আমরা ঐ পরিবেশের ঘ্রাণ পাই।

গন্ধ ব্যাপারটা মূলত অণুর একটি বৈশিষ্ট্য। যা আমরা আমাদের অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর কোষ দিয়ে শনাক্ত করতে পারি। যেসব এই বৈশিষ্ট্য আমরা শনাক্ত করতে পারে, তাদেরকে বলা হয় ওডোর মলিকিউল বা গন্ধ অণু।

গন্ধ কী জিনিস সেটা তো বোঝা গেল। কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক ভালো আর খারাপ গন্ধ আলাদা করে তাহলে কীভাবে?

বিজ্ঞানীরা বলেন, এর পিছনে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা মূলত দায়ী। কোন গন্ধ নিয়ে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা থাকলে, তা আমাদের কাছে ভালো লাগে। উল্টোটা হয় খারাপ অভিজ্ঞতার বেলায়। গন্ধের সাথে আমাদের স্মৃতির দারুণ সম্পর্ক আছে। গন্ধ নিয়ে আমাদের এই স্মৃতির নাম, অলফ্যাকশন-অ্যাসোসিয়েড মেমোরি বা ঘ্রাণ-সম্পর্কিত স্মৃতি। এই স্মৃতির কারণেই একই জিনিসের গন্ধ কারো কাছে সুগন্ধ, আবার কারো কাছে দুর্গন্ধ মনে হতে পারে। বিভিন্ন খাবারের বেলাতে এই বিষয়টা খুব লক্ষ্য করা যায়।

তবে, এমন অনেককিছুই আছে যেগুলোর গন্ধের ব্যাপারে আমাদের অতীতের কোন অভিজ্ঞতা থাকে না। তারপরও সেগুলো আমাদের কাছে ভালো বা খারাপ লাগে। এটা কেন হয়? এর কারণ, সহজাত প্রবৃত্তি (instincts)। সহজাত প্রবৃত্তি হলো, প্রাণীর ডিএনএ তে জমা পড়া লাখ লাখ বছরের অভিজ্ঞতা।

এই প্রবৃত্তির কারণে সম্পূর্ণ নতুন কোন গন্ধের সংকেত মস্তিষ্কে এসে পৌঁছালে, মস্তিষ্ক তাৎক্ষণিকভাবে তা পূর্ববর্তী গন্ধের স্মৃতিগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করে। আমাদের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনকিছুর গন্ধের সাথে নতুন গন্ধের মিল পাওয়া গেলে, সেটাকে দুর্গন্ধ হিসেবে উপস্থাপন করে। ভালোকিছুর সাথে মিল পাওয়া গেলে বিবেচনা করে সুগন্ধ হিসেবে।

সুগন্ধ যেমন মনকে আন্দোলিত করে। সুখের স্মৃতি মনে করায়। তেমনি দুর্গন্ধ আমাদেরকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে। পঁচা খাবারের দুঃর্গন্ধ আমাদের বাঁচিয়ে দেয় ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে। তাই, গন্ধ হোক ভালো বা মন্দ। সবই আমাদের জন্য সমান দরকারী।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।