সেরে উঠছে ওজোনস্তরের ক্ষত

অ্যান্টার্কটিকার বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানীরা ১৯৮৫ সালে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কিছু সমস্যা লক্ষ করেছিলেন। কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ওজোনস্তরের পুরুত্ব পরিমাপ করে তাঁরা দেখলেন, একটি বিশেষ গ্যাসের স্তর সূর্যের বিকিরণের কারণে ওজোনস্তরের বেশির ভাগ অংশকে ক্ষয় করে ফেলছে। ওই ক্ষয়ের ফলে ওজোনস্তরে অস্বাভাবিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সত্তরের দশক থেকে ওজোন গ্যাস হ্রাস পেতে শুরু করেছিল। ফলে ওজোনস্তর পাতলা হতে শুরু করেছিল। বিশেষ করে মেরুর চারপাশে। দীর্ঘদিন পরীক্ষা চালানোর পর আশির দশকের মাঝামাঝি বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন, ওজোনস্তর এভাবে ধ্বংস হতে থাকলে পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে এটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এতে ত্বকের ক্যানসারের হার বৃদ্ধি পাবে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে এবং সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খল ধ্বংস হবে।

বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী শঙ্কার সৃষ্টি করে। সভা–সমাবেশ করে ওজোনস্তর রক্ষার জন্য বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক নানান ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ক্ষতিকর রাসায়নিক, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) নিষিদ্ধ করা হয়। ওজোনস্তর পুনরুদ্ধারের জন্য সিএফসির নতুন উৎপাদন নিষিদ্ধ করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়। সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একমত হন সব দেশের প্রতিনিধিরা।

এগুলো মেনে চলায় ওজোনস্তর দিন দিন আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। যদিও পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। তবু প্রতিবছর ক্ষয় ও ক্ষয়পূরণের গড় হিসাব করলে দেখা যায়, ওজোনস্তর ক্ষয়ে সৃষ্ট গর্ত ছোট হয়ে আসছে। গবেষণার তথ্য থেকে দেখা যায়, কিছু বছর খারাপ, আবার কিছু বছর ভালো অবস্থায় থাকছে স্তরটি। যেমন ২০২০ সালে ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট গর্তটি বেশ বড় ছিল। ২০১৯ সালে আবার গর্তটি খুব ছোট ছিল। গবেষকেরা সন্দেহ করেন, বায়ুমণ্ডলীয় সিএফসি যে হারে হ্রাস পাচ্ছে, তা থেকে বোঝা যায়, সিএফসির নতুন উৎপাদন নিষিদ্ধ করার চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সবাই চুক্তি মানছেন না।

বিভিন্ন উপায়ে আশির দশকের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ওজোনস্তরের এই জটিল সমস্যার সমাধান করেছিল। সিএফসি শিল্প–উপযোগী ছিল, কিন্তু এর বিকল্প বের করা হয়েছে। কয়েক দশক ধরে জলবায়ুসংকটের মধ্যে আছে বিশ্ব। জীবাশ্ম জ্বালানির অপচয় রোধে সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্পগুলো এখন উৎপাদন করা হচ্ছে।

গত শতাব্দীতে ওজোনস্তরের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি পুষিয়ে গেছে। ওজোনসংকটের প্রতি বিশ্ববাসীর প্রতিক্রিয়াকে একটি শিক্ষামূলক, অনুপ্রেরণাদায়ক এবং সাফল্যের গল্প হিসেবে দেখলে জলবায়ুসংকটও যে নিরসন সম্ভব, তা স্পষ্ট হবে। তবে সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে নিরলসভাবে, একই রকম দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: নাসা, ভক্স