‘আচ্ছা, তোমাদের কি মনে হয়, রোবটরা কি কখনো পৃথিবী দখল করতে পারবে?’ সবার মনে জাগা এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল এই চমৎকার আয়োজনে। ‘সায়েন্স আনপ্লাগড’ পর্বে এমন সব মজার জিজ্ঞাসার উত্তর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল। তাঁর বক্তব্যে জানা যায়, রোবটের জন্য পৃথিবী দখল করা মোটেও চারটিখানি কথা নয়! দিনভর এরকম নানা আয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের হাসি-খুশি অংশগ্রহণ দেখে দ্বন্ধে পড়ে যেতে হয়।
স্বাভাবিক। শুক্রবার সকাল মানেই একটু আরাম, আরেকটু বেলা অব্দি ঘুম। সপ্তাহের এই একটা দিনই তো সবকিছু থেকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচা যায়। কিন্তু এমন এক সকালেও দেখা গেল আসাদ গেট এলাকায় বহু শিক্ষার্থীর আনাগোনা। ওরা সবাই স্কুলশিক্ষার্থী। সচরাচর কোনো পরীক্ষা ছাড়া এমনটা চোখে পড়ে না। একটু আলাপ করেই জানা গেল, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, এমনকি দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছে কয়েক শ শিক্ষার্থী। ওরা সবাই এসেছে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্বে অংশ নিতে। ৩১ অক্টোবর, শুক্রবার সকাল আটটায় রাজধানীর আসাদ গেটে সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে শুরু হয় বিজ্ঞানের এই আয়োজন।
স্কুলের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আবার বিশাল লাইন! দেখা গেল, তথ্যকেন্দ্রের সামনে সার বেঁধে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা। কেক, আইসক্রিম, দুপুরের খাবারের কুপন, নাস্তা, গিফট পাউচসহ দিনভর যা কিছু প্রয়োজন, শিক্ষার্থীদের এ সময় দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কুইজের শিক্ষার্থীরা কিছুটা সময় ঘুরে বেড়ায়, জাতীয় উৎসবে এসে ওদের আনন্দটুকু মুখে ফুটে ওঠে। ওদিকে প্রজেক্টের শিক্ষার্থীরা গুছিয়ে ফেলে নিজেদের প্রজেক্ট। একটু পরেই শুরু হবে বিচারকার্য, কাজেই সময় তো নাই!
প্রতিবারের মতোই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও উৎসব পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় এ আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ ও ভেন্যু প্রধান ব্রাদার লিও জেমস পেরেরা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, অ্যাসোসিয়েশন ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আলম, বিকাশ লিমিটেডের ইভিপি এবং রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান হুমায়ূন কবির, বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুমসহ আরও অনেকে। এ সময় রোবট নাও-এর ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্ব। এরপরই অতিথি এবং শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে বেলুন ওড়ান।
উদ্বোধনের পরপর শুরু হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নেয় আঞ্চলিক পর্বের কুইজ বিজয়ীরা। এ সময় দেশের ৭টি অঞ্চলের কুইজ বিজয়ী প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী নিজেদের মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষায় নামে। নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবং মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় নবম-দশম শ্রেণি ও ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আয়োজিত হয় একটি বিশেষ কুইজ। এ কুইজে নিবন্ধিত ৫০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
এরপরই আসে উদ্বোধনী বক্তব্যের পালা। এ পর্বে উদ্বোধনীতে উপস্থিত গুণি অধ্যাপক ও গবেষকেরা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এসব কথা মন দিয়ে শোনে উপস্থিত সব খুদে বিজ্ঞানী। প্রথমেই মঞ্চে আসেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো বিজ্ঞানের নতুন সব উদ্ভাবনের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে খাপ খাইয়ে নিতে শেখানো। সেই সঙ্গে একটা প্রজন্ম গড়ে তোলা, যারা নিজেদের টেকনিক্যাল দক্ষতা দিয়ে আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে।’
এরপর মঞ্চে উপস্থিত হন বিকাশ লিমিটেডের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকের যে বিকাশ অ্যাপ আমরা ব্যবহার করি, সেটি তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সবচেয়ে বড় আশার বিষয় হলো, এই অ্যাপের পরবর্তী সংস্করণগুলো আমাদের দেশের তরুণেরাই তৈরি করেছে। আমাদের মেধা আছে, বুদ্ধি আছে। সেই বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে হবে।’
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতিবাচক মানসিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি কিংবা দুর্যোগ মোকাবেলা করে সেটিকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তোমাদের থাকতে হবে।’
সবশেষে মঞ্চে আসেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘সফল হওয়ার মন্ত্র একটাই: প্রচুর পড়তে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও তোমরা সবাই বেশি করে বই পড়ার অভ্যাস করবে, যাতে করে তোমরা বিশ্বসেরা জ্ঞানী-গুণি হয়ে আমাদের বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে পারো। পাশাপাশি বিজ্ঞান জানতে হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। তবে সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে।’
উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। পাশাপাশি চলতে থাকে প্রজেক্ট প্রদর্শনী। একটু ঘুরতেই জানা গেল, এবারের জাতীয় বিজ্ঞান উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৫০টির বেশি স্কুলের আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীরা অংশ নিয়েছে প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে। ৭টি অঞ্চলের বিজয়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ১৭০ শিক্ষার্থী মোট ৭০টি প্রজেক্ট নিয়ে এই ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়।
ওদিকে মূলমঞ্চে শুরু হয়ে যায় রোবট নাও-এর শো। এ পর্ব পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অপূর্ব। মঞ্চে রোবট নাও তার নানা অঙ্গভঙ্গি এবং হিপহপ ড্যান্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলে দেয়।
এরপরেই শুরু হয় সায়েন্স আনপ্লাগড। মজার সব বিষয় নিয়ে দারুণ সব বিজ্ঞান বক্তৃতা। এরকমই একটি বক্তব্যের কথা বলছিলাম শুরুতে। অধ্যাপক লাফিফা জামালের সেই পর্বটির মাধ্যমেই শুরু হয় সায়েন্স আনপ্লাগড। এরপরেই গান। এ সময় গিটার হাতে মঞ্চ মাতান গায়ক জাহিদ অন্ত। চমৎকার দুটি গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাঁর পর্ব।
সায়েন্স আনপ্লাগড-এর পরের পর্বটি শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নানের ‘জিন ও ডিএনএ: যে ভাষায় লেখা আমাদের গল্প’ নিয়ে আলাপচারিতার মাধ্যমে। সায়েন্স আনপ্লাগড-এর পরের পর্বে কার্টুনিস্ট নাসরীন সুলতানা মিতু হাজির হন ‘কালিতুলিতে গল্পবিজ্ঞান’ নিয়ে। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কার্টুন এবং বিজ্ঞান মিলিয়ে চমৎকার এক আড্ডা দেন।
একদিকে জমে উঠেছে আড্ডা, ওদিকে চলছে বিজ্ঞানচিন্তার একাডেমিক টিমের বিচার কার্যক্রম। প্রজেক্ট ঘুরে দেখছেন বিচারকেরা, কখনো প্রশ্নবানে জেরবার করছেন শিক্ষার্থীদের, পরক্ষণে দারুণ প্রজেক্ট দেখে প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করছেন না। প্রজেক্ট বিচার শেষে মধ্যাহ্ন বিরতি। এরপর ঠিক দুইটায় আবারও মঞ্চে শুরু হয় আয়োজন।
আয়োজনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বিজ্ঞানবক্তা আসিফের মহাজাগতিক ক্যালেন্ডারের কথার মধ্য দিয়ে। এরপর আসে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত বিজ্ঞান ম্যাজিক। জাদু! মঞ্চে আসেন জাদুকর রাজীব বসাক। এ সময় তিনি একা নন, শিক্ষার্থীদেরও মাঝেমধ্যে ডেকে নেন মঞ্চে। এভাবে বিজ্ঞান ও জাদুর এক অসাধারণ সম্মেলনে মাতিয়ে রাখেন উপস্থিত দর্শকদের।
এরপরেই মঞ্চে দেখা গেল রুবিকস কিউব নিয়ে মজার এক আয়োজন। বহু শিক্ষার্থী মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রুবিকস কিউব মিলিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। জমে ওঠে এ পর্বটি। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক দলের সদস্য রঙ্গন রায়। মাত্র ২৪ সেকেন্ড রুবিকস কিউব সমাধান করে প্রথম স্থান অর্জন করে বরিশাল জিলা স্কুলের দিলশান। দ্বিতীয় স্থানে ছিল চ্যাম্পিয়ন একাডেমির আহমেদ এবং তৃতীয় স্থান দখল করে রুহান। পুরস্কার বিতরণী পর্বে পুরস্কৃত করা হয় এই তিনজনকে।
এর পরপরই সবাইকে চমকে দিয়ে মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাফা কবির। শুরুতেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ওদের রুবিকস কিউব মেলানো দেখে আমি তো অবাক! এরপর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক কিছু কথা বলেন এই অভিনেত্রী।
চ্যাটজিপিটি চিনি না, এমন মানুষ এখন বের করা খুব কঠিন। সবার মাঝে জনপ্রিয় এমন এক জিনিস যখন, তখন সেটা নিয়ে আলাপ না করলে কি চলে? এ পর্যায়ে তাই এআই নিয়ে কথা বলতে মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক এআই অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দলের দলনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক বি এম মইনুল হোসেন। এআই কীভাবে কাজ করে এবং কতটুক এআই ব্যবহার করা উচিৎ, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
এরপর ফের গান। ‘নিটোল পায়ে রিনিক-ঝিনিক’-এর মতো গান গেয়ে মঞ্চ মাতান দ্য রকস্টার শুভ। এতসব আয়োজনের ফাঁকে সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। তাই বলে কিন্তু আয়োজন শেষ হয়নি। এই পর্যায়ে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। তিনি আলোচনা করেন এলিয়েনের অস্তিত্ব এবং বিজ্ঞান নিয়ে। ‘সায়েন্স আনপ্লাগড’ পর্বের শেষ বক্তা হিসেবে এরপর মঞ্চে আসেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ফিজিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। পদার্থবিজ্ঞানের কঠিন ‘রিলেটিভিটি এবং আইনস্টাইনের মহাবিশ্ব’কে শিক্ষার্থীদের মাঝে সহজ ভাষায় তুলে ধরেন তিনি।
ইতিমধ্যেই চলে আসে ফলাফল। একাডেমিক টিমের সদস্যরা একাধিকবার বিচারকার্য শেষে নির্ধারণ করেন জাতীয় বিজ্ঞান উৎসবের প্রজেক্ট প্রদর্শনীর সেরাদের সেরা প্রজেক্ট। পাশাপাশি কুইজের দুই বিভাগের সেরা শিক্ষার্থীদের তালিকাও প্রস্তুত। ফলে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী। এ পর্বে অন্য অতিথিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উপচার্য অধ্যাপক মো. আশরাফুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত আহমেদ এবং চিকিৎসক ও লেখক তানজিনা হোসেন, বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক কাজী আকাশ, উচ্ছ্বাস তৌসিফ এবং নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার। অতিথি হিসেব আরও উপস্থিত বায়োলজির অলিম্পিয়াড দলের কোচ সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং গীতিকার কবির বকুল।
দেখা গেল, জাতীয় পর্বে প্রজেক্টে সেরাদের সেরা হয়েছে বিএএফ শাহীন কলেজের আরীব বিন ফারুক ও সাইম ইবনে সারওয়ার। ‘দ্য সল্টিং আউট’ নামের একটি প্রজেক্ট বানিয়ে নিজেদের দেশসেরা প্রমাণ করে তারা। এ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলের এস.এম. সাইফান শাফি। সে বানিয়েছিল, ‘পোকেডেক্স: দ্য আল্টিমেট এডভান্সড এআই এসিস্ট্যান্ট’। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, জিনিসটি কী। সবশেষে তৃতীয় স্থান দখল করে ‘ক্লাইমাকোর’ নামের একটি প্রজেক্ট। এটি বানিয়ে পুরস্কার জিতে নেয় সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষার্থী রায়িন আর রাদ। এ পর্বের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ। প্রজেক্টে মোট ১৫টি প্রজেক্টে ৩১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
কুইজ প্রতিযোগিতায় মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে রংপুর জিলা স্কুলের মো. ফাহিম ফয়সাল; দ্বিতীয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের রাজর্ষি দাশ গুপ্ত এবং তৃতীয় হয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মো. রিফাত সময়।
নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে পারমাণবিক শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইরাম মাহমুদ রুহান; দ্বিতীয় হয়েছে নাচোল উপজেলা স্কুলের তাহমিদ উল ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছে বরিশাল জিলা স্কুলের দিলশান হোসেন। কুইজে প্রতি বিভাগে ১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশেষ কুইজে প্রথম হয়েছে চ্যাম্পিয়ন একাডেমির তানভির হোসেন; দ্বিতীয় সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজের আহমেদ মুস্তাকিম খান এবং তৃতীয় হয়েছে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মৌনি জামান রুকান। এ বিভাগে ১৪ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া রুবিকস কিউবে তিন জন এবং সুডোকুতে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। সুডোকু প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে আদর্শ চক্রবর্তী, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে জয় করে নেয় যথাক্রমে সামিউল হক এবং আল মাহিম।
বিজ্ঞান প্রজেক্টে প্রথম তিনটি গ্রুপকে বিকাশের সৌজন্যে ল্যাপটপ; এবং কুইজের দুই বিভাগের সেরাদের সেরাকে বিকাশের সৌজন্যে বিশেষ পুরস্কার এবং বিজ্ঞানচিন্তার সৌজন্যে ট্যাব পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বই, বিজ্ঞানবাক্স, সার্টিফিকেট, মেডেল, ট্রফিসহ ছিল আরও অনেক পুরস্কার।
এ উৎসবের স্ন্যাকস পার্টনার ছিল ড্যান কেক, আইসক্রিম পার্টনার ছিল পোলার। এছাড়া সহযোগিতায় ছিল অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স, অনুপম প্রকাশনী, জ্ঞানকোষ, গুফি এবং ঢাকা কমিক্স।
এবার বাড়ি ফেরার পালা। ফটো সেশন, উল্লাস এবং দিনের শেষ আলোয় পর্দা নামে এ আয়োজনের। দিনব্যাপী এ আয়োজন সঞ্চালনা করেন সাইমুম মৌসুমী বৃষ্টি। আর পুরস্কার বিতরণী পর্ব সঞ্চালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার।
সারা দেশের মোট সাতটি অঞ্চলে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত হলো বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব। মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তার যৌথ আয়োজন ছিল এটি।