কয়লা কীভাবে তৈরি হয়

কয়লা এক ধরনের জৈব সেডিমেন্টারি বা পাললিক শিলা। অ-নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস। মূলত কয়লা পুড়িয়ে তাপ উৎপন্ন করা হয়। এরপর সেই তাপকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয় বিদ্যুৎ শক্তি। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল চেঞ্জ ডাটা ল্যাব-এর তথ্যানুসারে, বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানি হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কয়লার ব্যবহার।

গাছ হাজার হাজার বছর মাটি চাপা থাকার পর পরিণত হয় কয়লায়। এই তথ্যটুকু কমবেশি সবার জানা। কিন্তু আসলে ঠিক কীভাবে মাটির নিচে কয়লা তৈরি হয়?

গাছ থেকে কয়লা তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ। প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে, কার্বোনিফেরাস যুগে পৃথিবীর জলবায়ু ছিল উষ্ণ এবং আর্দ্র। প্রচুর পরিমাণে জলাভূমি ছিলো ভূপৃষ্টজুড়ে। জলাভূমির চারপাশে গড়ে উঠতো বনাঞ্চল। মারা যাওয়ার পর এসব গাছের ঠাই হতো জলাভূমির তলদেশে। প্রাথমিকভাবে পানির নিচে অক্সিজেনের অভাবে আংশিক পচে যাওয়া গাছের কাণ্ড পিট অবস্থায় রূপান্তরিত হতো।

ধীরে ধীরে গাছের এই পিট অবস্থা জলাভূমির নিচে পলিমাটির আস্তরণের নিচে চাপা পড়তো। বাড়ত চাপ ও তাপের পরিমাণ। এ কারণে একটা সময় পিট পরিণত হতো লিগনাইটে। লিগনাইট বাদামী কয়লা নামেও পরিচিত। জ্বালানি হিসেবে কিছু কিছু এক্ষেত্রে এই কয়লা ব্যবহৃত হয়।

এরপর পানির প্রবাহ, স্রোত ও ভূমির পরিবর্তনের ফলে লিগনাইটের উপরে জমত আরও শক্ত মাটির আস্তরণ। যতোই ভূ-পৃষ্টের নিচে যেত ততই চাপ ও তাপ বাড়ত। ফলে লিগনাইট থেকে সাব-বিটুনিমাস এবং বিটুনিমাস কয়লা তৈরি হতো একটা সময়। বিটুমিনাস কয়লা প্রচুর হাইড্রোকার্বনে সমৃদ্ধ। কার্বনের পরিমাণ এতে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। জ্বালানি হিসেবে বিটুমিনাসের ব্যবহারই সবচেয়ে বেশি।

কয়লার সবচেয়ে পরিষ্কার রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় অ্যানথ্রোসাইট কয়লাকে। এতে উদ্বায়ী হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ কম। ক্রমাগত তাপ ও চাপের বৃদ্ধির ফলে বিটুমিনাস থেকে অ্যানথোসাইট তৈরি হয়। তবে, অ্যানথ্রোসাইট রূপান্তরের শেষধাপ নয়। তাপ এবং চাপ আরও বাড়তে থাকলে অ্যানথ্রোসাইট পরিণত হয় গ্রাফাইটে। সবশেষ পর্যায়ে গ্রাফাইট থেকে তৈরি হয় হীরা।

৩৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনের শানসি প্রদেশে কয়লা ব্যবহারের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। বিশ্বজুড়ে কয়লার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় ১৮ শতকে শুরু হওয়া শিল্প বিপ্লবের সময়। বাষ্প ইঞ্জিন চালানোর জন্য তখন একমাত্র জ্বালানি ছিল কয়লা।

প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই জ্বালানি। স্ট্যাটিস্টায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, কয়লার কারণে শুধু ২০২০ সালেই প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড যুক্ত হয়েছে বায়ুমণ্ডলে।

আশার কথা, কয়লার ব্যবহার কমছে ধীরে ধীরে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে প্রায় সব দেশই কয়লার ব্যবহার বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে। এগোচ্ছে, সৌর বিদ্যুৎ বা নিউক্লিয়ার ফিউশনের মতো গ্রিন এনার্জির দিকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস