আমাজন পরিণত হয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরকে

মানবসৃষ্ট কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণের জন্য এতদিন অন্যতম বড় নির্ভরতার নাম ছিল মহাবন আমাজন। কিন্তু নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, গত এক দশকে এই ট্রপিকাল বনটি যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করেছে, নিঃসরণ করেছে তার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, এই মহাবনের ওপর নির্ভর করে থাকা আর সম্ভব নয়। সম্প্রতি নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।

গবেষণাটিতে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমাজন শোষণ করেছে ১৩.৯ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর নিঃসরণ করেছে ১৬.৬ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড। বলা বাহুল্য, এর পেছনে দায়ী আমরা, মানুষ। কারণ, এই নিঃসরণের পেছনে আছে আমাজনের পুড়ে যাওয়া। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলেছে এই মহাবনের বুকে। নিজেদের সবচেয়ে বড় বন্ধুদের একটিকে মানুষ গত প্রায় এক দশক ধ্বংস করে গেছে প্রচণ্ড নির্মমতায়। গবেষণাটি মূলত আমাজনের বেড়ে চলা বৃক্ষের শুষে নেওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের আয়তন আর পুড়ে যাওয়া বা ধ্বংস হওয়ার ফলে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের আয়তন মেপে দেখেছে।

ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর আর্গোনোমিক রিসার্চের (আইএনআরএ) গবেষক এবং গবেষণাপত্রটির একজন লেখক জ্যাঁ-পিয়েরে উইনেরোঁ বলেছেন, 'এরকম কিছু যে হতে পারে, তা আমরা খানিকটা আন্দাজ করেছিলাম আগেই। কিন্তু এই প্রথম তথ্য-উপাত্ত আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমাজনের ভূমিকা বদলে গেছে, পরিণত হয়েছে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরকে। এখনও এটা পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু একসময় এটাকে আর আগের ভূমিকায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। এবং এটা কখন হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা নেই।'

গবেষণা থেকে আরও দেখা গেছে, ২০১৯ সালে পুড়ে যাওয়া এবং গাছ কাটা মিলে বনটির ধ্বংসের পরিমাণ আগের দুই বছরের চেয়ে চারগুণ বেশি হয়েছে। আগের দুই বছরে বন ধ্বংস হয়েছে ১ মিলিয়ন হেকটরের মতো। অথচ ২০১৯ সালে এ পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৯ মিলিয়ন হেকটর-এ। এই জায়গার মধ্যে আস্ত নেদারল্যান্ডস দেশটা-ই এঁটে যাবে!

গত অর্ধ শতকে মোট কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ আগের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তবে গাছ ও মাটি এর প্রায় ৩০ শতাংশের মতো কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়। সমুদ্র শুষে নেয় আরও প্রায় ২০ শতাংশ।

আমাজনের ভূমিকা যদি বদলে যায়, জলবায়ু বিপর্যয় সামাল দেওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সময় থাকতে থাকতে মানুষ কি পারবে নিজেদের তৈরি এ সমস্যা সামাল দিতে? নাকি আমাজনকে আর কখনো আগের ভূমিকায় পাওয়া যাবে না? এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে সময়ে। তবে সে পর্যন্ত আমরা আমাজনকে সারিয়ে তুলতে না পারি, অন্তত আরও ক্ষতি যেন না করি, সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র: নেচার, সায়েন্স এলার্ট ডট কম