ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্যবইতে আমরা প্রায় সবাই পরমাণুর মডেল দেখেছি। বোঝার সুবিধার জন্য ছবিগুলো আঁকা হতো একদম সরল করে। অনেকটা সৌরজগতের মতো দেখাত সেগুলো। মাঝখানে সূর্যের জায়গায় গোল প্রোটন, চারপাশের বিভিন্ন কক্ষপথে আরও ছোট ছোট বৃত্তের মতো ইলেকট্রন। গ্রহের মতো করে প্রোটনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেগুলো।
পরের দিকে এসে আমরা পাঠ্যবইতেই জানতে পারি, পরমাণুর মডেলটা আসলে সেরকম নয়। তবু বড় হওয়ার পরও অনেকের মাথায় এই ছবি রয়ে যায়। চট করে ইলেকট্রন বা প্রোটনের কথা শুনলেই মাথায় বৃত্তের ছবি উঁকি দেয়। যাঁরা আরেকটু বাড়িয়ে চিন্তা করেন, তাঁদের মাথায় আসে গোলকের চিত্র। মনে হয়, পারমাণবিক এসব কণা বুঝি দেখতে অতি ক্ষুদ্র মারবেলের মতো। বিষয়টি পুরোপুরি এমন নয়। প্রোটনের আকৃতি পরিবর্তনশীল।
বর্তমান কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড বা প্রমিত মডেল অনুযায়ী, ছয় রকম কোয়ার্ক রয়েছে। আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম কোয়ার্ক। শুধু প্রোটন নয়, পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা আরেকটি কণা, নিউট্রনও কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি
প্রোটনের দিকে উপপারমাণবিক কণা (প্রচলিতভাবে অতিপারমাণবিক কণা বলা হয়) ছুড়ে, সেসব কণার বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রোটনের আকৃতি কোয়ার্ক নামের উপপারমাণবিক কণা দিয়ে প্রভাবিত। কারণটা বোঝা অবশ্য কঠিন নয়। প্রোটন এই কোয়ার্ক কণা দিয়েই গঠিত। বর্তমান কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড বা প্রমিত মডেল অনুযায়ী, ছয় রকম কোয়ার্ক রয়েছে। আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম কোয়ার্ক। শুধু প্রোটন নয়, পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা আরেকটি কণা, নিউট্রনও কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। তিনটি করে কোয়ার্ক মিলে একটি নিউক্লিও কণা, অর্থাৎ প্রোটন বা নিউট্রন গঠিত হয়। অতি সরলীকরণ করে বললে, কোয়ার্ক হলো শক্তির উচ্চগতিশীল একেকটি বিন্দু। পদার্থ গঠনের অন্যতম মৌলিক কণা।
যুক্তরাজ্যের অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ভিজিটিং অধ্যাপক ও পদার্থবিদ রবার্ট ম্যাথিউ। তাঁর মতে, কোয়ার্কের গতি ও ঘূর্ণনের ওপর ভিত্তি করে মোটামুটি চার ধরনের আকৃতি হতে পারে প্রোটনের। সবচেয়ে গতিশীল কোয়ার্কের কারণে প্রোটনের আকার চীনা বাদামের মতো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রোটনের ঘূর্ণনের দিকেই ঘোরে কোয়ার্কগুলো। আবার কাঁকুড় আকৃতি—সিলিন্ডার দুই প্রান্ত ক্রমে সংকুচিত হয়ে এক বিন্দুতে মিললে যেমন দেখায়, তেমনও হতে পারে প্রোটনের আকৃতি। অপেক্ষাকৃত কম গতিশীল কোয়ার্কের কারণে এমনটা হয়।
প্রোটনের আকৃতি বেগল বা ডোনাটের মতো হতে পারে উচ্চগতির কোয়ার্কের কারণে। সে ক্ষেত্রে কোয়ার্কের ঘূর্ণন হয় প্রোটনের ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে। আর সবচেয়ে কম গতির কোয়ার্কের প্রভাবে প্রোটনের আকার গোলকের মতো হয়ে যায়। তার মানে, প্রোটনের আকার গোল ভাবলেও সেটা পুরোপুরি ভুল নয়। তবে সব প্রোটনই গোল নয়, এই যা!