এক মহাজাগতিক ফিনিক্স পাখির উপাখ্যান

১৯৬৭ সালের গ্রীষ্মকাল। দুই বছরের দীর্ঘ কর্মযজ্ঞ শেষে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদেরা তখন বিশাল এক রেডিও টেলিস্কোপ তৈরির দ্বারপ্রান্তে। প্রায় সাড়ে চার একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত সেই টেলিস্কোপ নির্মাণে অন্য অনেকের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন অসামান্য প্রতিভাধর এক তরুণী জ্যোতির্বিদ জোসেলিন বেল বার্নেল। প্রজেক্টটির পরিচালক ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ অ্যান্থনি হিউইশের অধীনে সে সময় পিএইচডি করছিলেন তিনি। তাঁর অন্যতম দায়িত্ব ছিল টেলিস্কোপটির রেডিও অ্যান্টেনাগুলো স্থাপনের কাজে সহায়তা করা। ১৯৬৫ সাল থেকে দুই বছর এ কাজে নিরলসভাবে শ্রম দিয়েছিলেন বেল। আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে মিলে তিনি প্রায় এক হাজার রেডিও অ্যান্টেনা স্থাপনে সরাসরি অংশ নেন। অবশেষে ১৯৬৭ সালের জুলাইয়ে আসে প্রত্যাশিত মাহেন্দ্রক্ষণ। নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হলেও সীমিত পরিসরে চালু করা হয় ২ হাজার ৪৮ রেডিও অ্যান্টেনার সমন্বয়ে গঠিত টেলিস্কোপটি।

টেলিস্কোপটি কাজ শুরু করতেই দূর মহাবিশ্বের অজস্র মূল্যবান তথ্যের নাগাল পেতে লাগলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেগুলো সূক্ষ্মভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল। সে জন্য হয়তো নির্মাণকাজ থেকে ছুটি দিয়ে বেলকে দেওয়া হয় এক গুরুদায়িত্ব। নিজ হাতে প্রতিদিন প্রায় ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সমতুল্য কাগজের তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করেন তিনি। এভাবে প্রায় দুই মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে অসংখ্য তথ্যের ভিড়ে হঠাৎ এক অদ্ভুত সিগন্যালের হদিস পান বেল। সিগন্যালটি ছিল একটি রেডিও তরঙ্গের—ঠিক ১.৩৩৭ সেকেন্ড পরপর ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল। এর পুনরাবৃত্তির সূক্ষ্মতাকে তুলনা করা চলে একমাত্র অ্যাটমিক ক্লকের সঙ্গে। সিগন্যালটি এত নিখুঁত ছিল যে জোসেলিন বেল ও তাঁর একাডেমিক সুপারভাইজার অ্যান্থনি হিউইশ একে ভিনগ্রহের অতি উন্নত কোনো সভ্যতার আবিষ্কার হিসেবে কল্পনা করতে শুরু করেন। সে জন্য তাঁরা এ রহস্যময় সিগন্যালের নাম দেন এলজিএম-১ বা লিটল গ্রিন ম্যান-১।

জ্যোতির্বিদ জোসেলিন বেল বার্নেল
ছবি: ডেভিড হেরাল্ড

অদ্ভুতুড়ে রেডিও সিগন্যালের উৎস হিসেবে এলিয়েন সভ্যতার ধারণা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অচিরেই পৃথিবীর আকাশের সম্পূর্ণ ভিন্ন অংশে ঠিক একই ধরনের আরেকটি নতুন সংকেত শনাক্ত করার পর আইডিয়াটি বাতিল করে দিতে বাধ্য হন জোসেলিন বেল। আসলে উৎস দুটির মধ্যকার দূরত্ব এত বেশি ছিল যে কোনো একক মহাজাগতিক সভ্যতা থেকে তাদের আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। আবার সম্পূর্ণ আলাদা দুটি সভ্যতা থেকে হুবহু একই ধরনের রেডিও সিগন্যাল নিঃসরিত হওয়া মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। অর্থাৎ এলিয়েন সভ্যতা নয়, অদ্ভুতুড়ে সিগন্যালের রহস্যের সমাধান লুকিয়ে আছে অন্য কোথাও। এ উপসংহারে পৌঁছে বেল যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ, পিএইচডি শেষ করার আগেই নিশ্চিতভাবে এলিয়েনদের খোঁজ মিলে গেলে হয়তো পৃথিবীতে লঙ্কাকাণ্ড বেধে যেত। যার ডামাডোলে শিকেয় উঠত সব গবেষণা। যাহোক, প্রশ্ন হলো এলিয়েনরা না পাঠিয়ে থাকলে অন্য কোন মহাজাগতিক উৎস থেকে নিঃসরিত হতে পারে অ্যাটমিক ক্লকের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো সূক্ষ্ম রেডিও সিগন্যাল?

উত্তর—নক্ষত্র। তবে যেনতেন নক্ষত্র নয়। একদম মৃত নক্ষত্র। অবাক হলেন? ভাবছেন, নক্ষত্রেরও কি মৃত্যু হয়? আর যদি হয়েও থাকে, তাহলে তারা কী করে এত সূক্ষ্ম সিগন্যাল তৈরি করতে পারে? এসব প্রশ্ন মাথায় আসা খুব স্বাভাবিক। তবে সেসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের প্রবেশ করতে হবে নক্ষত্রের গহিনে। জানতে হবে তাদের অন্তিম দিনগুলো কেমন কাটে। 

২.

মহাবিশ্বের সব নক্ষত্রের গহিনে প্রতিনিয়ত দুটি শক্তির মধ্যে রেষারেষি চলতে থাকে। প্রথমটি মহাকর্ষ। বিপুল বিক্রমে এটি সবসময় নক্ষত্রপৃষ্ঠকে সংকুচিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু এই লক্ষ্য পূরণে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় তাপশক্তি। এর চাওয়া মহাকর্ষের ঠিক উল্টোটি। নক্ষত্রপৃষ্ঠকে বাইরের দিকে প্রসারিত করতে আদাজল খেয়ে নামে। নক্ষত্রের স্বাভাবিক জীবনকালের পুরো সময়ে সর্বগ্রাসী মহাকর্ষ ঠেকিয়ে রাখতে পারে এই তাপশক্তি। যে প্রক্রিয়ায় নক্ষত্রের ভেতরে তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, তার নাম ফিউশন। এটি একধরনের নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় নক্ষত্রের মূল জ্বালানি হাইড্রোজেনের দুটি নিউক্লিয়াস একসঙ্গে জোড়া লেগে পরিণত হয় হিলিয়ামে। আর তাতেই উপজাত হিসেবে অবমুক্ত হয় প্রচুর শক্তি।

লাখো কোটি বছর ধরে নক্ষত্রের গহিনে চলতে পারে ফিউশনের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনের এই প্রক্রিয়া। এ সময়ে উৎপন্ন হিলিয়ামগুলো কোরের ভেতরের দিকে এসে জমা হতে থাকে। তাদের ভর হাইড্রোজেনের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় এমন হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত নক্ষত্রের বুকে হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব থাকে, ততক্ষণ চলতে থাকে ফিউশন। ফলে সেখানে নির্বিঘ্নে বজায় থাকে মহাকর্ষ ও তাপশক্তির ভারসাম্য। কিন্তু জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে বদলাতে শুরু করে পরিস্থিতি। দুই শক্তির মল্লযুদ্ধে প্রথমবারের মতো জিতে যেতে শুরু করে মহাকর্ষ। এরপর সেখানে কী ঘটবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে নক্ষত্রের ভরের ওপর। আমাদের সূর্যের মতো নক্ষত্রগুলোর বেলায় মহাকর্ষের টানে হিলিয়ামসমৃদ্ধ কোর বা কেন্দ্র ক্রমেই সংকুচিত হতে থাকে। এ ঘটনা কোরের তাপমাত্রা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে। ফলে নক্ষত্রগুলোর বাইরের পৃষ্ঠের অংশ স্রোতের বিপরীতে গিয়ে স্ফীত হতে শুরু করবে। প্রসারণ ঘটলে সেখানকার তাপমাত্রা কমে যেতে থাকবে অনুমিতভাবেই। তখন নক্ষত্রগুলো লাল বর্ণের আলো বিকিরণ করবে। জীবনের এই পর্যায়ে পৌঁছালে তাদের ডাকা হয় রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব নক্ষত্র।

যেসব নক্ষত্রের ভর আমাদের সূর্যের আট গুণের বেশি, সেগুলোর শেষ পরিণতি হয় আরও নাটকীয়। অতিরিক্ত ভরের উপস্থিতির দরুন এ রকম নক্ষত্রগুলোতে মহাকর্ষের শক্তিমত্তা হয় বহুগুণ বেশি।

বাইরের পৃষ্ঠের অংশের তাপমাত্রা কমলেও মহাকর্ষীয় সংকোচনের কারণে রেড জায়ান্টদের কেন্দ্রের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে। একসময় সেটি ছুঁয়ে ফেলে ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর। এই অতি উচ্চ তাপমাত্রায় কোরের মধ্যে থাকা হিলিয়ামগুলোয় প্রথমবারের মতো শুরু হয় ফিউশন। পরস্পরের সঙ্গে জোড়া লেগে এগুলো রূপান্তরিত হয় কার্বনে। অপেক্ষাকৃত ভারী হওয়ায় নবসৃষ্ট কার্বনগুলো হিলিয়ামদের হটিয়ে কোরের ভেতরের দিকের এলাকাগুলো দখল করে নেয়। আর প্রস্তুত হতে থাকে ফিউশনের মাধ্যমে আরও ভারী নিউক্লিয়াস গঠনের জন্য। তবে আমাদের সূর্যের কাছাকাছি ভরের নক্ষত্রদের বেলায় কার্বন বা এর চেয়ে ভারী নিউক্লিয়াসের ফিউশন সম্ভব নয়। কারণ, এর জন্য কোরের তাপমাত্রা যে পর্যায়ে উন্নীত হতে হবে, তা জোগান দেওয়ার সামর্থ্য নেই মহাকর্ষীয় সংকোচনের। নতুন পর্যায়ের ফিউশন শুরু করতে না পারলেও এই সময়ে কোরে উৎপন্ন তাপশক্তি অন্য আরেকটি বিধ্বংসী কাজ করে। নক্ষত্রের পৃষ্ঠকে উড়িয়ে নিয়ে একদম বাইরে ফেলে দেয়। পড়ে থাকে কেবল উন্মুক্ত কোর বা কেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষ। বিজ্ঞানীরা এগুলোর নাম দিয়েছেন হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা সাদা বামন নক্ষত্র। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ফিউশন বিক্রিয়া চলমান থাকে না। অবশ্য ফিউশন ছাড়াই প্রথম দিকে সাদা বামনগুলো প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকে। কালের বিবর্তনে ঠান্ডা হতে থাকে এগুলো। একপর্যায়ে এগুলোর সব ধরনের তাপ ও আলোর বিকিরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তখন এগুলোকে ডাকা হবে কালো বামন নক্ষত্র নামে। কোনো ধরনের বিকিরণ নির্গত না করায় অসীম মহাশূন্যে এগুলোকে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। সে জন্য এখন পর্যন্ত তাদের অস্তিত্ব পুরোপুরি তাত্ত্বিক। এভাবে রেড জায়ান্ট থেকে হোয়াইট ডোয়ার্ফ এবং সবশেষে সম্ভাব্য ব্ল্যাক ডোয়ার্ফে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের সূর্যের মতো নক্ষত্রগুলোর মহাজাগতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

নক্ষত্রের জীবন চক্র

যেসব নক্ষত্রের ভর আমাদের সূর্যের আট গুণের বেশি, সেগুলোর শেষ পরিণতি হয় আরও নাটকীয়। অতিরিক্ত ভরের উপস্থিতির দরুন এ রকম নক্ষত্রগুলোতে মহাকর্ষের শক্তিমত্তা হয় বহুগুণ বেশি। ফলে রেড জায়ান্ট দশায় তাদের কোরে সহজে কার্বনের নিউক্লিয়াসের ফিউশন ঘটতে পারে। তখন এগুলো জোড়া লেগে রূপান্তরিত হতে পারে নিয়ন, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াসে। এ সময়ে অবমুক্ত বিপুল শক্তির প্রভাবে আরও ত্বরান্বিত হয় ফিউশন বিক্রিয়া। ক্রমে আবির্ভূত হতে থাকে আরও ভারী নিউক্লিয়াস। তবে নক্ষত্রের কোরে আয়রন বা লোহার দেখা মিলতেই বদলে যায় সব। নিমেষে থমকে যায় ফিউশনের অগ্রযাত্রা। কারণ, আয়রন ও নিউক্লিয়াস একে অন্যের সঙ্গে জোড়া লাগার মাধ্যমে এক ফোঁটা শক্তিও অবমুক্ত হতে পারে না; বরং উল্টো শক্তি শোষিত হয়। ফিউশনজাত শক্তির অনুপস্থিতিতে নক্ষত্রের গহিনে লাখ কোটি বছর ধরে চলা যুদ্ধে অবশেষে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে মহাকর্ষ। এর সংকোচন বাধা দেওয়ার মতো আর কিছুর অস্তিত্ব তখন থাকে না। প্রবল সংকোচনের ধাক্কা সইতে না পেরে একসময় বিস্ফোরিত হয় এসব নক্ষত্র। এ ঘটনার নাম সুপারনোভা।

সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে অবশিষ্ট নক্ষত্রকেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষ যদি যথেষ্ট ভরসম্পন্ন হয় (তিন সৌরভরের বেশি), তাহলে সেখানে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ এক অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এর আকর্ষণের মাত্রা এত বেশি হয় যে আলো এর টান উপেক্ষা করে দূরে সরে যেতে পারে না। অর্থাৎ তখন জন্ম হয় ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের। আর যদি সুপারনোভা ধ্বংসাবশেষ ১.৪~৩ সৌরভরের সীমায় থাকে, তাহলে ব্ল্যাক হোলের পরিবর্তে আত্মপ্রকাশ করে আরেক রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু—নিউট্রন তারা। তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষের শক্তি ব্ল্যাক হোলের মতো অকল্পনীয় মাত্রার না হলেও যথেষ্ট। ফলে সেখানকার বেশির ভাগ পরমাণুর ইলেকট্রন ও প্রোটন জোড় বেঁধে পরিণত হয় চার্জনিরপেক্ষ নিউট্রনে। এমনটি ঘটার দরুন এ ধরনের নক্ষত্ররা পরিণত হয় মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঘনত্বের বস্তুতে। এভাবে নিউট্রন তারা অথবা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে জীবনাবসান ঘটে দূর মহাবিশ্বের অতিকায় নক্ষত্রগুলোর।

৩.

একটু আগেই উল্লেখ করা নিউট্রন তারা নামের নাক্ষত্রিক ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নক্ষত্রের অন্তিম দিনগুলো নিয়ে আমাদের এতক্ষণের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এই মৃত নক্ষত্রগুলোর গহিন থেকে উদ্ভূত হয় জোসেলিন বেলের আবিষ্কার করা অদ্ভুতুড়ে রেডিও সিগন্যাল। উৎস নিশ্চিত হওয়ার পরে এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যাটমিক ক্লকের নিখুঁততার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো এ সিগন্যালগুলো উৎপন্ন হওয়ার বিস্তারিত মেকানিজম।

পালসার যেভাবে কাজ করে

প্রথমে নিউট্রন তারাদের নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেওয়া যাক। এই মৃত নক্ষত্রগুলো আকারে খুব ছোট। সাধারণত তাদের ব্যাসের মান হয় ২০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। একসময়ের মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকা নাক্ষত্রিক পৃষ্ঠ মহাকর্ষের প্রবল সংকোচনের কারণে বাধ্য হয়ে পৌঁছায় এহেন দশায়। আকারে সংকুচিত হলেও তাদের ভরের মানে তেমন কোনো তারতম্য আসে না। অর্থাৎ এ ক্ষুদ্র পরিসরে কেন্দ্রীভূত থাকে আমাদের সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে ৪০ শতাংশের বেশি ভরের পুরোটা। ফলে অকল্পনীয় ঘনত্ব লাভ করে এ নক্ষত্রগুলো। সামান্য এক চিনির কিউবের সমান আকারের নিউট্রন তারকার উপাদান আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে এলে দেখা যাবে, তার ওজন ছাড়িয়ে গেছে ১০০ মিলিয়ন টনের বেশি। এই মহাজাগতিক বস্তুগুলো নিজ অক্ষের ওপরে সব সময় প্রচণ্ড বেগে ঘুরতে থাকে। ঘূর্ণনের পর্যায়কাল নির্ভর করে ব্যাসার্ধের ওপরে। মহাকর্ষের প্রভাবে তারা যত সংকুচিত হয়, ততই পাল্লা দিয়ে কমে আসে পূর্ণ ঘূর্ণনের সময়কাল। সাধারণত নিউট্রন তারকাগুলোতে এই মান থাকে সেকেন্ডের ঘরে। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সর্বোচ্চ পর্যায়কালের নিউট্রন তারকা পিএসআর জে৩০৯০১-৪০৪৬, এর বেলায় এই সময়কালের মান মাত্র ৭৫.৯ সেকেন্ড।

নিজ অক্ষের ওপরে অকল্পনীয় গতিতে ঘুরতে থাকা নিউট্রন তারকাগুলোর মূল উপকরণ নিউট্রন হলেও তাদের মধ্যে যে একেবারেই অন্যান্য চার্জিত ইলেকট্রন বা প্রোটনের অস্তিত্ব থাকবে না, এমনটি নয়। মহাকর্ষের প্রবল চাপ সত্ত্বেও মোট ভরের প্রায় ১০ শতাংশের মতো চার্জিত কণার অস্তিত্ব থেকে যায়। তারা নিশ্চিত করে মৃত নক্ষত্রগুলোকে ঘিরে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের সরব উপস্থিতি। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করলে এর সবলতা ট্রিলিয়ন গুণের বেশি। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে নিউট্রন তারকার পৃষ্ঠে অবশিষ্ট থাকা চার্জিত বস্তুরা প্রাণহীন নক্ষত্রের দুই মেরুর দিকে ত্বরিত হতে থাকে। আর তখন তারা রেডিও তরঙ্গসহ এক্স–রে, গামা রশ্মি, দৃশ্যমান আলো ইত্যাদি হরেক রকম বিকিরণ নির্গত করতে থাকে। নক্ষত্রের দুই মেরুর কাছের এলাকায় এ বিকিরণগুলো কেন্দ্রীভূত হয়ে বিম আকারে ছড়িয়ে পড়ে দূর মহাশূন্যে। নিউট্রন তারকার নিজ অক্ষের ঘূর্ণনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ বিমের দিক পরিবর্তিত হতে থাকে, অনেকটা নিচের দেখানো ছবির মতো করে। যদি এ বিমগুলোর গতিপথে পৃথিবী থাকে, তাহলে কেবল আমরা নির্দিষ্ট সময় পরপর পুনরাবৃত্তি হওয়া সিগন্যাল শনাক্ত করতে পারব। যেমনটি করেছিলেন জোসেলিন বেল বার্নেল। এ নিউট্রন তারকাগুলোকে তখন আলাদাভাবে ডাকা হবে পালসার নামে।

রহস্যময় রেডিও সিগন্যালের উৎস হিসেবে পালসারদের ভূমিকা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরে জোসেলিন বেল ও অ্যান্থনি হিউইশ তাঁদের আবিষ্কৃত মহাজাগতিক বস্তুটির নাম বদলে দেন। লিটল গ্রিন ম্যান ১ বদলে এর নাম রাখা হয় সিপি-১৯১৯। সিপি–এর পূর্ণ রূপ কেমব্রিজ পালসার। অন্যদিকে ১৯১৯ সংখ্যাটি নির্দেশ করে পৃথিবীর পূর্ব আকাশে বস্তুটির কৌণিক অবস্থানকে। এ নতুন নামও খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মহাবিশ্বের সব পালসারের নামকরণে সামঞ্জস্য রাখার উদ্দেশ্যে শেষ পর্যন্ত বস্তুটির নাম দেওয়া হয় পিএসআর বি১৯১৯+২১। পিএসআর–এর পূর্ণ রূপ পালসেটিং সোর্স অব রেডিও। 

৪.

সত্তরের দশকের শেষ দিকে জ্যোতির্বিদেরা দূর মহাকাশে নতুন আরেকটি রেডিও তরঙ্গের উৎস খুঁজে পেয়েছিলেন। পৃথিবীর আকাশে এ নতুন উৎসের অবস্থান ছিল জোসেলিন বেলের আবিষ্কার করা পালসারের চেয়ে সামান্য কয়েক ডিগ্রি দূরে। প্রথমে সদ্য আবিষ্কৃত বস্তুকে একটি গতানুগতিক পালসার হিসেবে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এর থেকে আসা সিগন্যাল সূক্ষ্মভাবে বিচার–বিশ্লেষণ করতেই বাধে ঝামেলা। অন্যান্য পালসারের মতো এটির সিগন্যাল নির্দিষ্ট সময় পরপর পুনরাবৃত্তি হয় না; বরং তারা পৃথিবীতে আসতে থাকে বিরতিহীনভাবে।

আমরা সবাই টিভির পর্দায় কমবেশি সিনেমা দেখেছি। প্রতিটি সিনেমা তৈরি হয় হাজার হাজার স্থির ছবির সমন্বয়ে। যাদের ধারণ করা হয় বিশেষ ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করে। টিভির পর্দায় এ ছবিগুলোকে খুব দ্রুত একটির পর একটি প্রদর্শন করা হয়। এত দ্রুত যে আমাদের মস্তিষ্ক পরপর দুটি স্থির ছবিকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে না। ফলে আমাদের কাছে তারা চলমান ছবি হিসেবে ধরা দেয়। টিভির পর্দার মতো অনেকটা একই ঘটনা একটু আগে উল্লেখ করা রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তুটির বেলায় ঘটলে বিরতিহীন রেডিও সিগন্যালের বেশ জুতসই একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতে পারে। সেই বস্তু যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গতিতে ঘুরতে থাকা কোনো পালসার হয়, তাহলে এর থেকে উৎপন্ন হওয়া বিকিরণগুলো এত দ্রুত পৃথিবীতে আসবে বা তাদের পুনরাবৃত্তি হবে যে সাধারণ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তাদের পরপর দুটি সিগন্যাল আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। তখন আমাদের কাছে তারা ধরা দেবে বিরতিহীন সিগন্যাল হিসেবে। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখলেন, কোনো পালসার প্রতি সেকেন্ডে নিজ অক্ষের ওপরে কমপক্ষে ২৫০ বার ঘুরলে এমনটি ঘটা সম্ভব। অর্থাৎ এহেন পালসারগুলোর পর্যায়কাল কোনোভাবেই চার মিলিসেকেন্ডের বেশি হতে পারবে না। তবে সেই সময় পর্যন্ত জ্যোতির্বিদেরা সর্বনিম্ন ৩৩ মিলিসেকেন্ডের পালসার খুঁজে পেয়েছিলেন। এর অবস্থান ছিল ক্র্যাব নেবুলায়। 

ক্র্যাব নেবুলা

যাহোক, তত্ত্বটির যথার্থতা প্রমাণে জ্যোতির্বিদেরা অনন্ত মহাবিশ্বে খুঁজতে শুরু করলেন অকল্পনীয় বেগে ঘুরতে থাকা পালসারদের। কাজটি ছিল খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতো কঠিন। কিন্তু বিজ্ঞানীদের হার না মানা মানসিকতার কাছে সব বাধা যেন তুচ্ছ। অবশেষে ১৯৮২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রাজিলের পুয়ের্তো রিকোতে অবস্থিত আরেসিবো রেডিও টেলিস্কোপ নতুন একটি পালসার শনাক্ত করে। এর পর্যায়কালের মান ১.৫৫৮ মিলিসেকেন্ড। প্রতি সেকেন্ডে পালসারটি ৬৪২ বার নিজ অক্ষের ওপর ঘোরে। অর্থাৎ এটি ক্র্যাব নেবুলার পালসারের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ দ্রুতগতিতে ঘুরতে পারে। সেখান থেকে আগত রেডিও সিগন্যাল প্রত্যাশামাফিক বিরতিহীন হিসেবে ধরা দেয় আমাদের কাছে।

মিলিসেকেন্ড পালসার আবিষ্কারের মাধ্যমে বিরতিহীন মহাজাগতিক রেডিও সিগন্যালের রহস্য সমাধান হলেও হাজির হয় বেশ কিছু নতুন সমস্যা। তেমন একটি সমস্যা হলো বয়স–সংক্রান্ত। প্রতিনিয়ত হরেক রকম বিকিরণ নিঃসারিত করায় কালের বিবর্তনে শক্তি হারাতে থাকে পালসারগুলো। তখন তাদের নিজ অক্ষের ওপরে ঘূর্ণন ক্রমেই ধীর হয়ে আসে। অর্থাৎ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগুলোর পর্যায়কালের মান ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকার কথা। এই যুক্তি অনুসারে, সদ্য আবিষ্কৃত মিলিসেকেন্ড স্কেলের পর্যায়কালের পালসারটির বয়স হওয়া উচিত খুব কম। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো। যদি সত্যি পালসারটি জীবনের সূচনালগ্নে থাকত, তাহলে এর চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রচুর পরিমাণ সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব থাকার কথা। যাদের সাধারণত ১০ হাজার বছরের বেশি সময় পর্যন্ত সহজে আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায়। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পালসারটির ত্রিসীমানায় এমন কোনো ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। চমক এখানেই শেষ নয়, ক্রমাগত শক্তি বিকিরণের পরও পালসারটির নিজ অক্ষের ওপরে ঘূর্ণন ধীর হয়ে যাওয়ার গতি কল্পনাতীত কম। এহেন গতি বজায় থাকলে এর বয়স কোনোভাবেই ২০০ মিলিয়ন বছরের কম হওয়ার কথা নয়। এত প্রাচীন পালসারের অস্তিত্ব যে মহাবিশ্বে থাকতে পারে, তা বিজ্ঞানীদের দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। এখন প্রশ্ন হলো, মিলিসেকেন্ড পালসারগুলো কোন কৌশলে এমন অস্বাভাবিক দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারে? 

৫.

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের থ্রিলার সম্রাট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি বইটি পড়েছেন? যদি টানটান উত্তেজনার এই থ্রিলার পড়া হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয় ক্যানিবলিজম নিয়ে বেশ ভালো একটি ধারণা পেয়ে গেছেন আপনি। বইটির প্রধান চরিত্র মুশকান জাবেরির অনন্ত যৌবনের মতো মিলিসেকেন্ড পালসারগুলোর অস্বাভাবিক দীর্ঘ জীবনের পেছনে রয়েছে এই ক্যানিবলিজম। চমকে গেলেন? চলুন বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা যাক।

মিলিসেকেন্ড পালসারদের গল্পের শুরু হয় বাইনারি স্টার সিস্টেমগুলোতে। যেখানে দুটি নক্ষত্রের ভরের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। সাধারণত বেশি ভরের নক্ষত্রগুলোতে ফিউশনের গতি তুলনামূলক অনেক বেশি হয়। ফলে তারা দ্রুত সব হাইড্রোজেন জ্বালানি পুড়িয়ে অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি পৌঁছে যেতে পারে জীবনের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে। এভাবে বাইনারি সিস্টেমগুলোর বৃহত্তর নক্ষত্রটি এর সঙ্গীর তুলনায় বেশ আগেভাগে পৌঁছে যায় স্বাভাবিক জীবনের অন্তিম দশায়। এটি যদি যথেষ্ট ভরসম্পন্ন হয়, তাহলে একসময়ে সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে এর জীবনাবসান ঘটবে। এহেন প্রলয়ংকরী বিস্ফোরণে সিস্টেমের ক্ষুদ্রতর নক্ষত্রটি টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তবে কোনোভাবে যদি এটি টিকে যেতে পারে, তাহলে এক ব্যতিক্রমী নাক্ষত্রিক সিস্টেমের সাক্ষী হয় মহাবিশ্ব। যেখানে জোড় বাঁধে একটি করে স্বাভাবিক নক্ষত্র এবং সুপারনোভার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ভূত নিউট্রন তারকা।

পালসার যেভাবে কাজ করে

নিউট্রন তারকাগুলো আকারে ছোট হলেও অকল্পনীয় মাত্রায় ভারী। এ কারণে ব্যতিক্রমী নাক্ষত্রিক সিস্টেমগুলোতেও প্রয়োজনীয় ভারসাম্যের অবস্থা বিরাজ করতে পারে। স্বাভাবিক ও মৃত—উভয় ধরনের নক্ষত্র সেখানে একে অন্যকে ঘিরে নির্বিঘ্নে পরিভ্রমণ করতে থাকে। এমন সিস্টেমের নিউট্রন তারা থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গের বিম আমাদের পৃথিবী অভিমুখী হলে স্বাভাবিক নিয়মে তাকে আলাদাভাবে ডাকা হবে পালসার নামে। ক্রমাগত শক্তি বিকিরণের দরুন কালের বিবর্তনে এটি নিজ অক্ষের ওপর ঘূর্ণন ধীর হয়ে আসবে। সেই সঙ্গে কমবে এর থেকে আগত সিগন্যালের তীব্রতা। মোটামুটি এক লাখ বছরের মধ্যে পালসারের সিগন্যাল এতটা দুর্বল হয়ে পড়ে যে সেগুলো আর শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। তখন যেন নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নেয় পালসারটিকে। এ সময়ে এটির ভরের মানে কোনো রূপ পরিবর্তন না আসায় সিস্টেমের সামগ্রিক ভারসাম্য আগের মতো বজায় থাকে।

এরপর সময় বয়ে যেতে থাকে আপন গতিতে। প্রায় অনন্তকাল (!) পরে বাইনারি সিস্টেমের ক্ষুদ্রতর নক্ষত্রটির জীবনপ্রদীপও ফুরিয়ে আসে। মূল হাইড্রোজেন জ্বালানি নিঃশেষিত হওয়ার পর এর কোরে শুরু হয় হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের ফিউশন। অর্থাৎ নক্ষত্রটি আত্মপ্রকাশ করে রেড জায়ান্ট হিসেবে। আর ঠিক তখন ঘটে এক অদ্ভুত ঘটনা। 

পালসার-নক্ষত্রের বাইনারি সিস্টেমে উভয় সদস্য তাদের চারদিকে একটি নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে তাদের নিজস্ব মহাকর্ষের প্রাধান্য বজায় থাকে। বিজ্ঞানীরা এ এলাকার নাম দিয়েছেন রোচ লোব (Roche lobe)। ওগুলো দেখতে অনেকটা পানির ফোঁটার মতো। ওপরের প্রথম ছবিতে পালসার-নক্ষত্রের সিস্টেমের রোচ লোব দুটি কেমন হতে পারে, তা দেখানো হয়েছে। তাদের স্পর্শবিন্দুতে মহাকর্ষের প্রভাব থাকে শূন্যের কোঠায়। কারণ, সেখানে নক্ষত্রগুলোর টান একে অন্যকে পুরোপুরি নাকচ করে দেয়। স্পর্শবিন্দু থেকে এক পা বাঁয়ে গেলে আমরা প্রবেশ করব পালসারের রাজত্বে। আর উল্টোটা করলে আমাদের আটকে যেতে হবে স্বাভাবিক নক্ষত্রের মহাকর্ষের জালে। 

রোচ লোবের ধারণা

যাহোক, স্বাভাবিক নক্ষত্রটি রেড জায়ান্টে পরিণত হলে এটির ব্যাসার্ধ আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে যায়। তখন সেটির আকার এত বড় হয়ে যায় যে এর বাইরের পৃষ্ঠের কিছু অংশ প্রবেশ করে পার্শ্ববর্তী রোচ লোবে। নিমেষে সহোদর নক্ষত্রের অংশগুলো নিজের দিকে টেনে নেয় মৃতপ্রায় পালসারটি। সেগুলোকে আত্তীকরণের মাধ্যমে যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায় সেটি। আবার বাড়তে থাকে এটির নিজ অক্ষের ওপরে ঘূর্ণনের গতিবেগ। ক্রমাগত সঙ্গী রেড জায়ান্টের অংশ খেয়ে ফেলতে থাকলে একসময়ে পালসারটির পর্যায়কাল নেমে আসে মিলিসেকেন্ড স্কেলে। অর্থাৎ সুপারনোভা বিস্ফোরণের বহু বছর পর ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্জন্ম হয় মৃতপ্রায় সাধারণ পালসারদের। তবে এবারে আগের চেয়ে বেশি শক্তিমত্তা নিয়ে আসে। আর এ জন্য তাদের ত্রিসীমানাতেও দেখা মেলে না সুপারনোভার কোনো ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন। 

লেখক: সহকারী ব্যবস্থাপক, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড

সূত্র: দ্য প্ল্যানেট ফ্যাক্টরি/এলিজাবেথ টাস্কার