দ্বিমাত্রিক এবং ত্রিমাত্রিক গতি

ধরে নিচ্ছি, আমরা সবাই একমাত্রিক গতি বা সরলরেখা বরাবর গতি জানি। কিন্তু সরলরৈখিক গতির খুব বেশি বাস্তব উদাহরণ নেই। একটি উদাহরণ হল, লিফট অন্য একটি উদাহরণ হল সুপার মার্কেটের চলন্ত সিঁড়ি। এরকম বিশেষ কয়েকটি উদাহরণ ছাড়া বাস্তবের সব গতিই দ্বিমাত্রিক বা ত্রিমাত্রিক। যেমন ঢাকা শহরের এক জায়গা থেকে একটু দূরের অন্য জায়গায় যেতে আমাদের সামনে পেছনে যেতে হয়, ডানে বামে যেতে হয়, ফ্লাইওভারের কারণে ওপরে নিচেও উঠানামা করতে হয়; যা কিনা ত্রিমাত্রিক একটি গতি।

মনে হতে পারে, এই ধরনের ত্রিমাত্রিক গতি খুবই কঠিন। কিন্তু সুবিধা হল, আমরা যেহেতু একমাত্রিক গতি বা সরলরেখা বরাবর গতি ভালো করে বুঝেছি, তাহলে ত্রিমাত্রিক গতিকে যদি তিনটি একমাত্রিক গতি দিয়ে প্রকাশ করতে পারি, তাহলেই সমস্যার সমাধান পেয়ে গেলাম। সামনে পেছনের গতি একটি একমাত্রিক গতি, ডানে বামের গতি একটি একমাত্রিক গতি, এবং ওপরে নিচের গতি আরো একটি একমাত্রিক গতি। ত্রিমাত্রিক গতিকে এভাবে ভাগ করতে পারলে, আমাদের আর নতুন করে কিছুই করতে হচ্ছে না, শুধু একটি একমাত্রিক গতিকে তিনবার সমাধান করতে হবে। একবার সামনে-পেছনের জন্যে, দ্বিতীয়বার ডানে-বামের জন্যে, এবং তৃতীয়বার ওপর-নিচের জন্য। এগুলোই সহজভাবে প্রকাশ করার জন্য আমরা ভেক্টরের সাহায্য নেব।

এখন শুরু করছি একমাত্রিক গতির সমীকরণ দিয়ে। একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে যদি ত্বরণ পরিবর্তিত না হয়, দিক ও মান দুক্ষেত্রেই, তাহলে আমরা জানি, x=x0 + v0t + 1/2at2… … …(১)

এই সমীকরণের মানে হল, আমরা যদি একটি বিন্দু বস্তুর একটি নির্দিষ্ট সময়ের অবস্থান x0, সেই সময়ের বেগ v0, এবং সমত্বরণ a জানি, তাহলে অন্য যে কোন সময় t-এর জন্যে বস্তুর অবস্থান x বের করতে পারব। এখানে নির্দিষ্ট সময় বলতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়কে শূন্য ধরা হয়, অর্থাৎ t=0।

বেগের ক্ষেত্রে আমরা জানি, v = v0 + at… … …(২)

এই সমীকরণের মানে হল, আমরা যদি একটি বিন্দু বস্তুর কোন একটি সময়ের বেগ v0, এবং সমত্বরণ a জানি, তাহলে অন্য যে কোন সময় t-এর জন্যে আমরা বস্তুর বেগ v বের করতে পারব। ত্রিমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে সমীকরণ দুটো হল, যথাক্রমে r = r0 + v0t + 1/2at2… … …(৩) এবং v = v0 + at… … ….(৪)। এখানে ভেক্টরের সহায়তায় তিনটি সমীকরণকে একটি মাত্র সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র।

যেমন r = r0 + v0t+1/2at2 এখানে তিনটি সমীকরণ আছে x = x0 + v0xt + 1/2axt2, y = y0 + v0yt + 1/2ayt2, এবং z = z0 + v0zt + 1/2azt2। এখানে সামান্য একটু পরিবর্তন হল, তিনটি দিকের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেগ এবং সমত্বরণ আলাদাভাবে বোঝানোর জন্যে নতুন একটি সাবস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন v0x এবং ax হল যথাক্রমে x-দিকের নির্দিষ্ট সময়ের বেগ এবং সমত্বরণ! তেমনি বেগের সমীকরণেও তিনটি সমীকরণ আছে, সমীকরণ তিনটি যথাক্রমে বেগের জন্যে দুটো সমীকরণ vx = v0x + axt, vy = v0y + ay t, এবং vz = v0z + azt। প্রতিটি দিকের বেগ ও ত্বরণের সঙ্গে অন্য দুটো দিকের বেগ ও ত্বরণের কোন সম্পর্ক নেই। যদিও তিনটি সমীকরণে t একই সময় নির্দেশ করে।

এখন একটি প্রশ্ন হল, শুধু কি ত্রিমাত্রিক গতির অবস্থান, বেগ, এবং ত্বরণ ভেক্টর রাশি? এর উত্তর অবশ্যই না, একমাত্রিক গতির অবস্থান, বেগ, এবং ত্বরণও ভেক্টর রাশি। সেখানে আলাদা করে ভেক্টর চিহ্ন দেয়া হয়নি, কারণ একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে প্লাস এবং মাইনাস চিহ্ন দিয়েই ভেক্টরের দিক নির্দেশ করা যায়। যেমন মূল বিন্দু থেকে ডানের দিকের রাশি বোঝাতে প্লাস চিহ্ন, এবং মূল বিন্দু থেকে বাম দিকের রাশি বোঝাতে মাইনাস চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

ত্রিমাত্রিক গতির সমীকরণ থেকে আমরা বুঝতে পারছি, প্রতিটি দিকের গতিই একটি একমাত্রিক গতি, এবং প্রতিটি দিকের গতি আলাদা আলাদাভাবে সমাধান করলেই হবে। কিন্তু এর পরেও বাস্তবের একটি গতি পুরোপুরি সমাধান একটু কঠিন। এমন না যে আমাদের নতুন সমীকরণ আবিষ্কার করতে হবে। এর কারণ হল, ঢাকার একটি গাড়ি, যাকে একটি বিন্দু বস্তু হিসেবে প্রকাশ করা যায়, পুরো যাত্রপথে কখনোই সমত্বরণে থাকতে পারে না। আঁকাবাঁকা রাস্তা, সেইসঙ্গে জ্যাম বা ট্র্যাফিক সিগনালের জন্যে ত্বরণের মান এবং দিক দুটোই পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুরো যাত্রাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে সমাধান করা যায়, তবে শর্ত হল প্রতিটি ভাগেই ত্বরণের মান এবং দিক পরিবর্তিত হতে পারবে না, তাহলেই আমরা ওপরে উল্লেখিত সমীকরণগুলো ব্যবহার করতে পারব।

এখন একটি বিশেষ ধরনের দ্বিমাত্রিক গতি আলোচনা করব। একটি নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতি, যা কি না দ্বিমাত্রিক গতি, উপরোক্ত সমীকরণ দিয়ে আমরা এর সমাধান বের করতে পারি। এখানে আমরা বাতাসের বাঁধাকে বাদ দিয়েই সমাধান করব। একটি নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতি হল, হাত থেকে ছুড়ে দেয়া যে কোন একটি বস্তুর গতি। তবে এখানে একটি শর্ত হল, বস্তুটি নিজের চারদিকে ঘুরতে পারবে না। একটি বল, একটি কলম—কঠিন একটি বস্তু যার আকার পরিবর্তন হতে পারবে না। ঘরের যে কোনো দেয়ালের সমান্তরাল বরাবর একটি বস্তু ছুড়ে দিলে দেখা যায়, বস্তুটির গতি একটি দ্বিমাত্রিক গতি। এটা দেয়াল বরাবর সামনের দিকে যাচ্ছে, একই সঙ্গে ওপরে এবং নিচেও যাচ্ছে। সুতরাং এটি একটি দ্বিমাত্রিক গতি। কিন্তু যদি ঘরের কোণাকুণি ভাবে ছুড়ে মারা হয়, তাহলে প্রথমে মনে হতে পারে এটা একটি ত্রিমাত্রিক গতি। কিন্তু সেই কোণাকুণি বরাবর একটি দেয়াল কল্পনা করলেই বুঝা যায়, একেও দ্বিমাত্রিক গতি দিয়েই প্রকাশ করা যায়। বিজ্ঞান এবং গণিতের কাজই হল যতদূর সম্ভব সব কিছুকে সহজ ভাবে প্রকাশ করা।

একটি নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিকে কিভাবে সমাধান করব? এখানে সমাধানের মানে হল একটি নির্দিষ্ট সময়ের অবস্থান এবং সেই সময়ের বেগ জানা থাকলে, এবং সমত্বরণ জানা থাকলে অন্য সময়ের অবস্থান ও বেগ বের করতে পারব। পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছিতে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান ও দিক পরিবর্তিত হয় না, অর্থাৎ ত্বরণ একটি সমত্বরণ, এর মান g=9.81 ms2 এবং দিক হল নিচের দিকে। অন্যদিকে সামনের বা পেছনের দিকে কোন ত্বরণ নেই। সামনে পেছনের গতিকে সাধারণত -গতি এবং ওপর নিচের গতিকে -গতি হিসেব প্রকাশ করা হয়। তাহলে এই দ্বিমাত্রিক গতির জন্য প্রয়োজনীয় সমীকরণ হল, অবস্থানের জন্যে দুটো সমীকরণ x = x0 + v0xt + 1/2axt2 এবং y = y0 + v0yt + 1/2ayt2, এবং বেগের জন্যে দুটো সমীকরণ vx = v0x + axt, এবং vy = v0y + ayt।

যে কোন নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতির সমাধান করতে সবসময়ই সমীকরণ চারটি x=x0+v0xt+1/2axt2 এবং y = y0 + v0yt + 1/2ayt2, vx=v0x+axt, এবং vy= v0y + ayt এভাবেই লিখতে হবে। তারপর আলাদা করে x0, v0x, ax=0, y0, v0y, এবং ay= -g এর মানগুলো বসিয়ে দিলেই হল। কিন্তু একটি বড় সমস্যা হয় যখন y-গতির সমীকরণ দুটোকে y = y0 + v0yt - 1/2gt2 এবং vy=v0y-gt এভাবে লেখা হয়। যা কোনভাবেই লেখা উচিৎ নয়। সমীকরণে y-বরাবর ত্বরণ ay-ই লিখতে হবে। তারপর পরের লাইনে ay = -g বসিয়ে সমাধান করতে হবে। তা না হলে অনেকেই, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা একটি ধাঁধায় পড়ে যায়, বস্তু যখন ওপরের দিকে যায়, তখন কি g লিখবে না -g লিখবে। একই প্রশ্ন যখন বস্তু নিচে যায়।

অথচ এখানে ধাঁধার কিছু নেই। ay = -g বা অভিকর্ষজ ত্বরণ হল পুরো পৃথিবীর বৈশিষ্ট্য। বস্তু ওপরে যাক, নিচে যাক, বা থেমেই থাক, পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছে y-বরাবর ত্বরণ সব সময়ই ay = -g. আরো একটি অহেতুক ধাঁধা হল g-এর মান কি -9.81m/s2 না 9.81 m/s2. এই প্রশ্নকে অহেতুক বলছি কারণ, g হচ্ছে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান, যা কি না সব সময়ই একটি ধনাত্মক সংখ্যা, অর্থাৎ g=9.81 m/s2। সুতরাং y-বরাবর গতি হচ্ছে সমত্বরণের (ত্বরণের মান ও দিক নির্দিষ্ট) গতি এবং x-বরাবর গতি হচ্ছে সমবেগের গতি। অর্থাৎ ax=0। এর কারণ হাত থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিকে ব্যাখ্যা করা হয়। হাত থেকে ছেড়ে গেলে x-বরাবর কোন বল বা ত্বরণ থাকে না, সেজন্যে ax= 0. হাতে থাকা অবস্থায় বলের কারণে বস্তুর গতি ব্যাখ্যা কর যথেষ্ট জটিল একটি বিষয়।

একটি উদাহরণ দিলেই পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হতে পারে। ধরে নেই, সমতল ভূমি থেকে 20 m উঁচু একটি বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে একজন একটি বল ছুড়ে মেরেছে, যার বেগের মান ছিল v0 = 10 m/s, এবং দিক ছিল অনুভূমিকের সঙ্গে θ0=300। এ ধরনের একটি সমস্যায় আমরা সাধারণত জানতে চাই, বলটি সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠতে কত সময় নেবে, সর্বোচ্চ উচ্চতায় বা আগের উচ্চতায় ফিরে আসতে কত সময় নেবে, বিল্ডিং থেকে কত দূরে গিয়ে ভূমিতে পড়বে, ভূমিতে পড়ার ঠিক আগে এর গতিবেগ কত হবে, কোন সময়ে x-বরাবর বেগের মান y-বরাবর বেগের মানের সমান হবে, ইত্যাদি।

বলটি নিক্ষেপ করার পর এটি প্রথমে ওপরে উঠতে থাকবে, একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ওঠার পর আবার নিচে নামতে থাকবে, এই নির্দিষ্ট উচ্চতাকে সর্বোচ্চ উচ্চতা বলে। একই সঙ্গে বলটির y-বরাবর বেগ পরিবর্তিত হতে থাকবে, এবং সর্বোচ্চ উচ্চতায় বলটির y-বরাবর বেগ শূন্য হতে হবে। কারণ এখানে বলটি গতির দিক পরিবর্তন করবে। কিন্তু x-বরাবর বেগের মান বা দিক কোনটারই কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ax = 0। y-বরাবর বেগ পরিবর্তিত হবে বলে অনুভূমিকের সঙ্গে বেগের কোণও পরিবর্তিত হতে থাকবে।

শুরুতেই সমস্যা সম্পর্কে যা কিছু জানি গুছিয়ে নিতে পারি। আমরা জানি, v0=10 m/s, এবং যা অনুভূমিকের সঙ্গে 300 কোণ তৈরি করেছে। সুতরাং v0x = v0 cosθ0 এবং v0y = v0 sinθ0। সেই সঙ্গে দুটো ত্বরণ হল ax = 0 এবং ay = -g। উচ্চতা বের করতে y0 = 0 কোথায় ধরব, সমতল ভূমিতে না বিল্ডিং এর ছাদে! মূল বিন্দুর ওপর সমস্যার সমাধান নির্ভর করে না, সেজন্যে মূল বিন্ধু যে কোন একটি বিন্দুতে নেয়া যেতে পারে। তবে যেখান থেকে সময়ের শুরু, সেখানেই অবস্থানে মূল বিন্দু ধরে নেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ বিল্ডিংয়ের ছাদে হচ্ছে অবস্থানের মূল বিন্দু y0 = 0, y0=0। এখন উপরোক্ত সমস্যার পুরো সমাধান না বের করে, দুটো ক্ষেত্রের সমাধান বের করছি। সর্বোচ্চ বিন্দুতে যেতে কত সময় লাগবে। আমরা জানি, সর্বোচ্চ বিন্দুতে vy=0, সুতরাং সময় বের করতে vy=v0y + ay t এই সমীকরণটি ব্যবহার করতে পারি; 0=v0 sin⁡θ0 -g t, সুতরাং t=v0 sinθ0 /g.

অন্য সমস্যা হল আগের বিন্দুতে ফিরে আসতে কত সময় লাগবে। এই ক্ষেত্রে আমরা বেগ vy সম্পর্কে জানি না কিন্তু দুটো সময়ের উচ্চতা জানি, যখন সময় শূন্য তখন, আর যখন সময় তখন। সুতরাং y = y0 + v0y t+1/2ayt2 এই সমীকরণে যা যা জানি বসিয়ে দিয়েই সময় বের করতে পারব 0=0 + v0sinθ0t-1/2g t2, যা একটি দ্বিঘাত সমীকরণ। এখান থেকে দুটো সমাধান পাই, এক t=0 এবং দুই t= 2v0sinθ0/g। সুতরাং t=0 সময়ে বস্তুটি প্রথমেই y_0 অবস্থানে ছিল, এবং t=2v0 sinθ0/g সময় পর আবার সেই বিন্দুতে ফিরে আসবে। একইভাবে সমতল ভূমিতে পড়তে কত সময় লাগবে তার জন্যে y=- 20 m বসিয়ে দিয়ে দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান বের করলেই জানা যাবে। প্রশ্ন হতে পারে কেন y= -20 m, কারণ মূল বিন্দু থেকে ওপরের দিকে y ধনাত্মক এবং নিচের দিকে y ঋণাত্মক।

নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতির ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আমরা রেঞ্জ R বের করতে চাই। রেঞ্জের একটি সংজ্ঞা হল, নিক্ষিপ্ত বস্তুটি আগের উচ্চতায় ফিরে আসতে গিয়ে x -বরাবর যে দূরত্ব অতিক্রম করে। আগের উচ্চতায় ফিরে আসতে সময় লাগে t = 2 v0sinθ0/g, সুতরাং এই সময়ে বস্তুটি x-বরাবর কত দূরত্ব যাবে তার জন্যে x = x0+v0xt+1/2at2 এই সমীকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে; রেঞ্জ R= x-x0 = v0xt + 1/2axt2, এখানে v0x = v0cosθ0, ax = 0 , এবং t = 2v0sinθ0/g বসিয়ে দিলেই R = 2v02 sinθ0cosθ0/g = v2 sin (2θ0)/g পাওয়া যাবে।

অনেক ক্ষেত্রে নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিপথের সমীকরণও আমরা জানতে চাই। এতক্ষণ আমরা নিক্ষিপ্ত বস্তুর অনেক কিছুই বের করেছি সময়ের সাপেক্ষে। নিক্ষিপ্ত বস্তুর গতিপথের সমীকরণ থেকে আমরা জানতে চাই x-এর সাপেক্ষে y-এর পরিবর্তন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই x0=0 এবং y0=0 ধরে নিতে পারি। তারপর x = x0 + v0xt + 1/2axt2 সমীকরণ থেকে t-এরে মান বের করতে হবে, যা কি না t = x/v0x এবং t-এর মান y = y0 + v0yt + 1/2ayt2 বসিয়ে দিলেই হল। তাতে আমরা পাব y=tanθ0x - gx2/(2 (v0cosθ0)2, যা কি না একটি প্যারাবোলার সমীকরণ!

এই ধরণের সমস্যার সমাধান বের করতে প্রথমেই একটি চিত্র একে নিলে বুঝতে খুবই সহজ হতে পারে। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, অধিকাংশ সময়েই আমরা শুধু সমস্যার সমাধান চাই এবং সমস্যাটা ভালো করে বুঝতে চাই না। কিন্তু সমস্যা ভালো করে না বুঝে সমস্যার সমাধান একেবারেই অর্থহীন। সমস্যাটা বোঝার মাঝেই এর সমাধান, সুতরাং সমস্যা বুঝার আনন্দটা পেতে শিখলেই সমাধান এমনিতেই চলে আসবে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়