কণাদের ক্ষয় ও অমর (!) প্রোটনদের গল্প

স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মৌলিক কণাগুলো প্রকৃতির গাঠনিক একক। এদের সমন্বয়ে তৈরি আমাদের গোটা বিশ্বজগত। এরা একে অন্যের সঙ্গে জোড়া লেগে তৈরি করে আমাদের চেনা-অচেনা, দেখা-অদেখা সব ধরনের বস্তু। পুরো বিষয়টা অনেকটা খেলনা লেগো সেটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে হরেক রকম মজার জিনিস তৈরি করার মতন। তবে মহাবিশ্বের গঠনের এমন মডেলকে কম-বেশি সত্য বলা যেতে পারে কেবল আপ কোয়ার্ক, ডাউন কোয়ার্ক ও ইলেকট্রনের জন্য। বাকি মৌলিক কণাদের জন্য এমন মডেল মোটেই কার্যকরী নয়। কারণ, এভাবে জোড়া লেগে বড় আকারের কিছু তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় এদের হাতে থাকে না। তার আগেই এরা ক্ষয়ে যায়। অর্থাৎ, এদের অস্তিত্ব থাকে খুব অল্প সময়ের জন্য। কণা ভেদে টিকে থাকার সময়কালে তারতম্য হতে পারে।

টপ কোয়ার্কদের কথাই ধরুন। এরা মাত্র ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০১ সেকেন্ড (১০-২৫) পরেই ক্ষয়ে যায়। অন্যদিকে, মুক্ত নিউট্রনরা টিকে থাকতে পারে প্রায় ৮৮২ সেকেন্ড পর্যন্ত। কণাদের জীবনকালের এহেন দৈর্ঘ্য কিন্তু প্রতিটি কণার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। এটি আসলে গড় মান। অর্থাৎ, আপনি যদি একসঙ্গে অনেকগুলো মুক্ত নিউট্রনকে  ৮৮২ সেকেন্ড ধরে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন, এদের সবাই ক্ষয়ে যাচ্ছে না। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশে ক্ষয় প্রক্রিয়া সংঘটিত হবে। আর বাকিরা টিকে থাকবে বহাল তবিয়তে। ঠিক কখন এবং কোন কণাটি ক্ষয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব।

আলোচনার গভীরে যাওয়ার আগে প্রথমেই চলুন একটি বিভ্রান্তি দূর করে নেওয়া যাক। কণাদের ক্ষয় বলতে আসলে কি বোঝায়? অনেকেই ক্ষয় বলতে ভেঙ্গে যাওয়া বা ভেঙ্গে ফেলাকে বোঝান। তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে গিয়ে দুটি কম ভরের নিউক্লিয়াস তৈরি হওয়া এর একটি যুতসই উদাহরণ। আবার, অনেক সময় বাইরে থেকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করে নিউক্লিয়াসদের ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়াকে ক্ষয় হিসেবে নির্দেশ করা হয়। তবে কণাপদার্থবিদদের কাছে ক্ষয় প্রক্রিয়ার সংজ্ঞাটি মোটেই এমন নয়। তাদের কাছে ক্ষয় প্রক্রিয়া আসলে একধরনের রূপান্তরের নামান্তর। এতে একটি কণা সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হয় অন্য কণায়। ক্ষয় প্রক্রিয়াকে কেবল ভাঙ্গন হিসেবে বিবেচনা করলে মৌলিক কণাদের ক্ষয় হওয়া নিয়ে বেশ ভালো রকমের ঝামেলা বেঁধে যায়। কারণ, মৌলিক কণারা প্রকৃতির ক্ষুদ্রতম একক। এদের ভাঙ্গলে কোনো কিছুই পাওয়া যায় না। ফলে গতানুগতিক অর্থে এদের ক্ষয় হওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্ষয় প্রক্রিয়াকে একধরনের রূপান্তর বলাই বেশি যৌক্তিক। যেমন টপ কোয়ার্কের ক্ষয় প্রক্রিয়ায় দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এরা রূপান্তরিত হয় বটম কোয়ার্ক এবং ডব্লিউ বোসনে।

হরেক রকম শর্ত

কিন্তু কেন কণারা ক্ষয়ে যায়? কখনো কি ভেবে দেখেছেন? উত্তরটা যদি মজা করে দিই, তাহলে বলতে হয়, কণাদের অলসতার জন্যই এমনটা হয়। কণারা মোটেই খাটনি করতে আগ্রহী নয়। তাই এরা নিজেদের মধ্যে সঞ্চিত থাকা বিভব শক্তি ছেড়ে দিতে পারলেই যেন হাপ ছেঁড়ে বাঁচে। কোনো কণার মাঝে যত কম বিভব শক্তি থাকে, সেটি তত বেশি ভারসাম্যপূর্ণ হয়। এজন্য সুযোগ পাওয়া মাত্রই এরা শক্তি ছেড়ে দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে। আর এ সময়েই এরা রূপান্তরিত বা ক্ষয় হয়। অর্থাৎ ক্ষয় প্রক্রিয়ার পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা অর্জনের চেষ্টা।

ক্ষয় প্রক্রিয়া এলোমেলোভাবে ঘটে না। বেশ কিছু শর্ত মেনে সংঘটিত হয়। যেমন ক্ষয় প্রক্রিয়া শেষে নতুন যে কণাদের পাওয়া যায়, তাদের ভর অবশ্যই মূল কণার চেয়ে কম হতে হয়। যেই ভরটুকু কম পাওয়া যায়, সেটি রূপান্তরিত হয় শক্তিতে। নতুন সৃষ্টি হওয়া কণাদের গতিশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তারা। ক্ষয় প্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো কোয়ান্টাম সংখ্যাদের সংরক্ষণশীলতা। অর্থাৎ ক্ষয় প্রক্রিয়ার আগে ও পরে কোয়ান্টাম সংখ্যাদের যোগফলের মান একই থাকতে হয়।

শর্তগুলো কীভাবে কাজ করে, তার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আমরা জানি, নিউট্রন বা প্রোটনরা মৌলিক কণা নয়। এরা তৈরি হয় আপ কোয়ার্ক ও ডাউন কোয়ার্কের সমন্বয়ে। নিউট্রনে থাকে একটি আপ কোয়ার্ক ও দুটি ডাউন কোয়ার্ক। অন্যদিকে, প্রোটনরা দুটি আপ কোয়ার্ক ও একটি ডাউন কোয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত। নিউট্রনরা ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রূপান্তরিত হতে পারে প্রোটনে। এ সময় দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এদের মধ্যে থাকা একটি ডাউন কোয়ার্ক পরিণত হয় আপ কোয়ার্কে। ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত হিসেবে উৎপন্ন হয় একটি ইলেকট্রন ও একটি অ্যান্টিনিউট্রিনো।

নিউট্রনের ক্ষয় প্রক্রিয়া শেষে দেখা যায়, উৎপন্ন প্রোটন, ইলেকট্রন ও অ্যান্টিনিউট্রিনোদের সম্মিলিত ভর মূল কণা নিউট্রনের চেয়ে কম। হারিয়ে যাওয়া ভরের সমান গতিশক্তি নিয়ে নির্গত হয় এরা। অর্থাৎ, প্রথম শর্ত পরিপূর্ণভাবে মেনে চলে। দ্বিতীয় শর্ত নিয়েও অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই। সব ধরনের কোয়ান্টাম সংখ্যা সংরক্ষিত থাকে এ প্রক্রিয়ায়। তড়িৎ আধানের কথাই ধরুন। মূল কণা নিউট্রনের চার্জ শূন্য। অন্যদিকে, প্রোটন, ইলেকট্রন ও অ্যান্টিনিউট্রিনোর চার্জ যথাক্রমে +১, -১ এবং ০। অর্থাৎ, এদের সম্মিলিত চার্জের পরিমাণও মূল কণার সমান। ফলে ক্ষয় প্রক্রিয়ার আগে ও পরে পুরোপুরিভাবে সংরক্ষিত থাকে তড়িৎ আধান। বাকি কোয়ান্টাম সংখ্যাগুলোর ক্ষেত্রেও ঘটে একই ঘটনা। সব শর্ত ঠিক-ঠাক মেনে চলে বলে মুক্ত নিউট্রন এবং পরমাণুর ভেতরে থাকা আবদ্ধ থাকা নিউট্রন—উভয়েই অংশ নিতে পারে এই ক্ষয় প্রক্রিয়ায়।

অমর প্রোটন ও নতুন একধরনের নক্ষত্রের কথা

শর্তের বেড়াজালে নিউট্রনদের ক্ষয় আটকে না গেলেও ঠিকই ধরা পড়ে যায় মুক্ত প্রোটনদের ক্ষয় প্রক্রিয়া। মুক্ত নিউট্রনরা সহজে প্রোটনে পরিণত হতে পারলেও উল্টোটা হয় না। অর্থাৎ মুক্ত প্রোটনদের থেকে নিউট্রন পাওয়া যায় না। বাধ সাধে ওপরে বর্ণনা করা শর্তগুলো। প্রোটনদের নিউট্রনে রূপান্তরিত হতে হলে সেখানে থাকা একটি আপ কোয়ার্ককে পরিণত হতে হবে ডাউন কোয়ার্কে। কিন্তু সমস্যা হলো, ডাউন কোয়ার্কের ভর আপ কোয়ার্কের তুলনায় সামান্য বেশি। তাই ক্ষয় প্রক্রিয়ায় মূল কণার চেয়ে তুলনামূলক হালকা ভরের কণা পাওয়ার শর্তটি লঙ্ঘিত হয়। আসলে প্রোটনরাই সবচেয়ে কম ভরের ব্যরিয়ন কণা (কমপক্ষে তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি যৌগিক কণা)। এরা সর্বনিম্ন বিভব শক্তি ধারণ করে। ফলে ব্যরিয়ন কণাদের মাঝে এরা সর্বোচ্চ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তাই ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য কণাতে রূপান্তরের কোনো সুযোগ নেই মুক্ত প্রোটনদের। এরা অবিকৃত অবস্থায় টিকে থাকে অনন্তকাল।

অবশ্য অনেক পদার্থবিদদের ধারণা প্রোটনদেরও ক্ষয় হয়। তবে এর গতি কল্পনাতীত ধীর। একটি মাত্র প্রোটন কণা ক্ষয় হতে প্রয়োজন পড়তে পারে প্রায় ১০৩৪ বছর। এই সংখ্যাটি যে কত বড়, তা নিশ্চয়ই নতুন করে বলে দিতে হবে না। আমাদের মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স মাত্র ১.৩৮×১০১০ বছরের কাছাকাছি। অর্থাৎ, মহাবিশ্বে থাকা প্রোটনদের জীবনকালের অর্ধেকও পার হয়নি এখনো। অবশ্য কেউই এখন পর্যন্ত প্রোটনদের ক্ষয় প্রক্রিয়ার নিশ্চিত প্রমাণ খুঁজে পাননি। তাই আপাতত এদের অমর হিসেবে ধরে নিলেও খুব একটা ভুল হবে না।

প্রোটনরা যদি সত্যি অমর হয়, তাহলে সুদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ নতুন একধরনের নক্ষত্রের আবির্ভাব হবে মহাবিশ্বে। এর নাম লৌহ নক্ষত্র। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এদের পুরোটাই তৈরি হবে লোহা দিয়ে। শুধু যে লোহা নির্মিত নক্ষত্রের আবির্ভাব হবে, তা নয়, বরং কল্পনাতীত ধীর প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বে থাকা সব মৌলিক পদার্থ এক সময়ে রূপান্তরিত হবে লোহায়। কেন? আগেই বলেছিলাম, ক্ষয় প্রক্রিয়ার মূলে রয়েছে ভারসাম্য অর্জন করা। প্রকৃতিতে থাকা সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ মৌলিক পদার্থের নাম লোহা। তাই প্রোটনরা ক্ষয় না হলে কালের বিবর্তনে এক সময় সব মৌলই রূপান্তরিত হবে লোহায়। যে সব মৌলের ভর লোহার চেয়ে বেশি, সেগুলো নিউক্লিয়ার ফিশন এবং আলফা ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রূপান্তরিত হবে। অন্যদিকে, লোহার চেয়ে কম ভরের মৌলদের রূপান্তর ঘটবে কোল্ড বা শীতল ফিউশনের মাধ্যমে।

অদ্ভুত এক প্রক্রিয়া এই শীতল ফিউশন। হালকা ধারণা দেওয়া যাক। ফিউশন প্রক্রিয়ায় মূলত দুটি ছোট নিউক্লিয়াস একসঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি করে বড় একটি নিউক্লিয়াস। এ সময় অবমুক্ত হয় বিপুল শক্তি। ফিউশন ঘটানোর জন্য ছোট নিউক্লিয়াসগুলোকে প্রথমে কাছাকাছি নিয়ে আসতে হয়। এই কাজটি মোটেও সহজ নয়। কারণ নিউক্লিয়াসগুলোতে থাকা প্রোটনরা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তবে নক্ষত্রের কেন্দ্রে অতি উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের প্রভাবে বিকর্ষণ বলকে অতিক্রম করে এই নিউক্লিয়াসগুলোর কাছে আসার সুযোগ তৈরি হয়। ফলে সংঘটিত হতে পারে ফিউশন। এ ধরনের ফিউশনের নাম থার্মোনিউক্লিয়ার ফিউশন।

কোল্ড ফিউশনে পুরো বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে হয়। এতে অতি উচ্চ তাপমাত্রা বা চাপের কোনো বালাই নেই। এক রকম ‘জাদুর কাঠি’র ছোঁয়ায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপেই নিউক্লিয়াসরা একে অন্যের কাছে আসে, সংঘটিত হয় ফিউশন। বিজ্ঞানের ভাষায় এই জাদুর কাঠির নাম কোয়ান্টাম টানেলিং। কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটার সম্ভাবনা খুব কম হলেও একেবারে শূন্য নয়। তাই কোল্ড ফিউশনের মাধ্যমে ছোট নিউক্লিয়াসগুলো ধাপে ধাপে লোহায় পরিণত হতে লাগবে অচিন্তনীয় সময়। এর সাংখ্যিক মান ১০৩২০০ বছর। অবশ্য কোল্ড ফিউশন আসলেই ঘটবে কিনা, তা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে জানেন না এখনো। যেমন তারা নিশ্চিত নন প্রোটনের অমরত্ব নিয়ে। যাহোক, কোল্ড ফিউশনের মাধ্যমে একসময় মহাবিশ্বের সব নক্ষত্র পরিণত হবে লৌহ নক্ষত্রে। সে সময় তারা কোনো ধরনের আলো বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করবে না। কেবল গ্র্যাভিটির প্রভাব শনাক্ত করার মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে এদের। চন্দ্রশেখর সীমার নিচে থাকা লৌহ নক্ষত্রগুলো প্রায় ১০১০^২৬ বছর পর পরিণত হবে নিউট্রন নক্ষত্রে। আর এ সীমার ওপরের নক্ষত্রগুলো সরাসরি পরিণত হবে ব্ল্যাকহোলে। খুব সম্ভবত ১০১০^৭৬ বছর পর শেষ পর্যন্ত সব লৌহ নক্ষত্রেরই পরিণতি হবে ব্ল্যাকহোল। যারা কিনা এক সময় বিলীন হয়ে যাবে হকিং রেডিয়েশন বিকিরণের মাধ্যমে। সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলদেরও হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে বিলীন হতে সময় লাগে মাত্র ১০১০০ বছর। তাই জীবনকালের বিচারে এক সময় মহাবিশ্বে শুধু রাজত্ব থাকবে লৌহ নক্ষত্রদের। আর এটি কেবল সম্ভব হবে প্রোটনদের অমরত্ব নিশ্চিত হলেই।

তাহলে ধনাত্মক বিটা ক্ষয় প্রক্রিয়া?

অমর প্রোটনদের কথা শুনে অনেকের মনে নিশ্চিতভাবে একটি প্রশ্ন এসেছে। বিশেষ করে যাঁরা নিউক্লিয়ার ফিজিকস নিয়ে কিছুটা জানেন। প্রশ্নটি হলো, প্রোটনরা যদি ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না-ই পারে, তাহলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ধনাত্মক বিটা ক্ষয় প্রক্রিয়া সংঘটিত হয় কীভাবে? আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার এ প্রক্রিয়াটির কথা বলেছি। এ প্রক্রিয়ায় একটি প্রোটন থেকে পাওয়া যায় একটি নিউট্রন, পজিট্রন এবং নিউট্রিনো।

আসলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটনরা ঠিকই ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। পারে না কেবল মুক্ত প্রোটনরা। এমনটা হওয়ার পেছনে মূল ভুমিকা পালন করে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি বা বাইন্ডিং এনার্জি। বিষয়টা একটু জটিল। তবু চলুন, একবার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যাক।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে তড়িৎ চৌম্বক বল ও সবল নিউক্লিয়ার বলের মধ্যে টানা পোড়েন চলতে থাকে অনন্তকাল ধরে। ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট প্রোটনগুলো তড়িৎ চৌম্বক বিকর্ষণ বলের মাধ্যমে একে অন্যকে দূরে ঠেলে দিতে চায়। অন্যদিকে, সবল বল এদেরকে বেঁধে রাখতে চায় একসঙ্গে। ভারসাম্যপূর্ণ নিউক্লিয়াসে বল দুটি একে অন্যকে নাকচ করে দেয়। ফলে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। যদি কোনোভাবে নিউক্লিয়াসে থাকা একটি প্রোটন ক্ষয় প্রক্রিয়ায় নিউট্রনে পরিণত হয়, তাহলে সেখানে কার্যকর তড়িৎ চৌম্বক বিকর্ষণ বলের মান হ্রাস পাবে। ফলে সেই নিউক্লিয়াসের প্রোটন ও নিউট্রনদের একত্রে ধরে রাখতে প্রয়োজন হবে আগের চেয়ে কম শক্তি। বেঁচে যাওয়া এই শক্তিটুকুই ভর শক্তি সমীকরণ অনুসারে ভরে রূপান্তরিত হয়ে ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেবে প্রোটনদের। ফলে ওপরে উল্লেখ করা ক্ষয় প্রক্রিয়া সংঘটনের প্রথম শর্তটি আর লঙ্ঘিত হবে না। মুক্ত প্রোটনদের বেলায় এভাবে ভরের যোগান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই তারা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না।

লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)

সূত্র: বেঞ্জামিন ভার, বরিস লেমার ও রিনা পিকোলোর কোয়ার্কি কোয়ার্ক: এ কার্টুন গাইড টু দ্য ফ্যাসিনেটিং রেলম অব ফিজিকস অবলম্বনে