বিশেষ আপেক্ষিকতা

কোনো বস্তু আলোর বেগে চলতে গেলে কী ঘটবে, তা নির্ভর করে আপনার অবস্থানের ওপর

আইজ্যাক নিউটনের মতে, গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকতে চায়, বল হলো বস্তুর ভর ও ত্বরণের গুণফল এবং প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে কোনো বস্তু আলোর বেগে চললে এই পদার্থবিজ্ঞান আর কাজ করে না।

আপনি যদি গাড়ির ভেতর থাকেন, তাহলে আরেকটি গাড়ি আপনার পাশ দিয়ে একই বেগে চলতে থাকলে কী হবে? আসলে তখন মনে হবে, পাশের গাড়িটা মোটেও চলছে না, স্রেফ স্থির হয়ে আছে। কিন্তু আইনস্টাইন নিজেকেই প্রশ্ন করলেন, কেউ যদি কোনো আলোকরশ্মির পিঠে চড়ে বসে, তাহলে কি পাশ দিয়ে চলা আরেকটি আলোকরশ্মিকেও থেমে আছে বলে মনে হবে? অনেক পরে আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন, না, তা ঘটবে না। আসলে তখন সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান আর কাজ করবে না। আপনার পাশের আলোকরশ্মিকেও তখনো আলোর বেগেই চলছে বলে মনে হবে। আপনি কোথায় আছেন বা কত জোরে ভ্রমণ করছেন, তা আলোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। মানে হলো, শূন্য মাধ্যমে আলো সব সময় একই বেগে চলবে।

আর এ বিষয়টি সম্ভব করতে অনিবার্যভাবে পরিবর্তন করতে হয়েছে স্থান ও কাল। বাইরের দর্শকের কাছে একটি বস্তু যেদিকে চলছে সেদিকে ছোট দেখাবে (বা স্থান সংকুচিত হয়ে যাবে)। অন্যদিকে কোনো কিছু যত দ্রুত বেগে চলবে, তার সময় তত ধীরে চলছে (কাল দীর্ঘায়ন) বলে মনে হবে দর্শকের কাছে।

পটভূমি

আলোর গতি ধ্রুব। একে সাধারণত c দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এটিই মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিসীমা। আবার কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারে না, এ সত্যের ওপর নির্ভরশীল পদার্থবিজ্ঞানের আমাদের এখনকার উপলব্ধি। একমাত্র বিদ্যুৎচুম্বকীয় বিকিরণ‌ই সর্বোচ্চ গতিবেগে চলতে পারে, শূন্যস্থানে যার বেগ সেকেন্ডে ২,৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার। ভরযুক্ত যেকোনো কিছু অতি দ্রুতবেগে চলতে থাকলে স্থান ও কালে অদ্ভুত কিছু ঘটতে দেখা যায়। এ বিষয়ই আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।

বিশেষ আপেক্ষিকতার সহজপাঠ

আলবার্ট আইনস্টাইন

আইনস্টাইনের জন্ম ১৮৭৯ এবং মৃত্যু ১৯৫৫ সালে। জীবদ্দশায় পদার্থবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক কিছু পরিবর্তন আনেন তিনি। ছেলেবেলায় জার্মানিতে থাকার সময় ভৌত বল ও জ্যামিতির রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে জার্মানির এক স্কুল ছেড়ে পালিয়ে সুইজারল্যান্ডে মা–বাবার কাছে চলে যান। পরবর্তী সময়ে সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁর চাকরিজীবন শুরু হয় সুইস পেটেন্ট অফিসে।

এ সময়ই জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব ও আলোর চলাচল নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। ১৯০৫ সালে এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন জার্মানির বিখ্যাত এক বিজ্ঞান জার্নালে। এটিই পরে বিশেষ আপেক্ষিকতা হিসেবে পরিচিতি পায়। এ ছাড়া একই বছর তিনি পরমাণুর অস্তিত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে গবেষণাপত্র এবং তাঁর বিখ্যাত সূত্র E=mc2 প্রকাশ করেন।