অবলাল (ইনফ্রারেড লাইট) আলো আবিষ্কারের পরের বছরই, অর্থাৎ ১৮০১ সালে আরেক জার্মান বিজ্ঞানী জোহান উইলহ্যাম রিটার (১৭৭৬-১৮১০) আবিষ্কার করলেন নতুন আরেক অদেখা আলো, আল্ট্রাভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মি।
বিজ্ঞানী রিটার ছিলেন মূলত রসায়নবিদ। পরীক্ষাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করাই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। কৌতুহলবশত তিনি গবেষণা করছিলেন সিলভার ক্লোরাইডের বিক্রিয়ার গতি নিয়ে। মানে, সিলভার ক্লোরাইড কত দ্রুত বিভিন্ন রঙের আলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করতে পারে, তা নিয়ে। ততদিনে বিজ্ঞানী মহলের সবার জানা ছিল, সিলভার ক্লোরাইডকে আলোতে রাখলে তার রং সাদা থেকে কালো হয়ে যায় ধীরে ধীরে। কারণ সিলভার ক্লোরাইড আলোর উপস্থিতিতে ভেঙ্গে কালো বা ধূসর রংয়ের সিলভার মেটাল আর ক্লোরিন গ্যাসে পরিণত হয়। আর এই ভেঙ্গে যাওয়ার হার লাল রঙের (বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের) আলোর চেয়ে বেগুনি রঙের (ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের) আলোতে বেশি হয়। তাই বেগুনি রঙের আলোতে থাকা সিলভার ক্লোরাইড অপেক্ষাকৃত দ্রুত কালো হয়।
বিজ্ঞানী রিটার তাঁর পরীক্ষার মাধ্যমে এর কাজের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে কৌতুহলবশত কিছু পরিমাণ সিলভার ক্লোরাইড বেগুনি (ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের) আলোর বাইরে, অর্থাৎ অন্ধকারে রাখলেন। এরপর দেখলেন, সেই সিলভার ক্লোরাইডের রং সবচেয়ে দ্রুত কালো হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের দেখা বেগুনি আলোর বাইরেও আরও একটা অদেখা (আরও ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের) আলোর অস্তিত্ব তিনিই প্রথম বুঝতে পারেন। যেহেতু এই আলো রাসায়নিক বিক্রিয়াকে বেশি দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে, তাই বিজ্ঞানী রিটার সেই আলোর নাম দেন রাসায়নিক (কেমিক্যাল) আলো। পরে সেটাই আল্ট্রাভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মি হিসেবে পরিচিতি পায়।
কিন্তু কোন রহস্যের জন্য বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (লাল) আলো থেকে কম তরঙ্গের (বেগুনি/অতিবেগুনি) আলো সিলভার ক্লোরাইডকে তাড়াতাড়ি কালো করতে পারে, সেটা তখনো (১৮০১ সালে) অজানাই ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে। আরও প্রায় ১০০ বছর পরে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে আলোর শক্তি ও তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সম্পর্কের সমীকরণ (E=hƲ) দিয়ে দেখান, কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মির শক্তি বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মির শক্তি থেকে বেশি। আর এই কম তরঙ্গের অতিবেগুনি রশ্মি বেশি শক্তিশালী হওয়ায় সিলভার ক্লোরাইডের বিক্রিয়াকে তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে পারে। এই রশ্মির শক্তি এত বেশি যে মানুষের চামড়ার কোষের ডিএনএকে পর্যন্ত ধংস করতে পারে। যার কারণে মানুষের ত্বকে ক্যান্সার হতে পারে। তাই প্রখর সূর্যের আলোকে এডিয়ে চলাই ভালো আমাদের জন্য। কারণ প্রখর সুর্যালোকে থাকে প্রচুর মাত্রার অতিবেগুনি রশ্মি। ফলে হতে পারে মরণঘাতি ক্যান্সার।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র