আপডেট
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটর
প্রথমবারের মতো ন্যানোফোটনিক ইলেকট্রন অ্যাকসিলারেটর বানালেন বিজ্ঞানীরা। লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার থেকে প্রায় ৫৪ গুণ ছোট এই কণাত্বরক যন্ত্র ঋণাত্মকভাবে চার্জিত কণাদের ক্ষুদ্র লেজার স্পন্দনের মাধ্যমে ত্বারিত করে। ছোট্ট এই কণাত্বরক যন্ত্র এঁটে যাবে যেকোনো পয়সার ওপরে, চালানো যাবে মানুষের দেহের ভেতরেও। কী করার পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা এর মাধ্যমে?
দৈর্ঘ্যে ছোট যেকোনো পয়সার ব্যাসের চেয়েও ক্ষুদ্র। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম এই কণাত্বরক যন্ত্র চালু হয়েছে সম্প্রতি। কাজও করছে ঠিকঠাকভাবে। এ ধরনের ক্ষুদ্র কণাত্বরকের নামও আছে—ন্যানোফোটনিক ইলেকট্রন অ্যাকসিলারেটর (এনইএ)। গত ১৮ অক্টোবর পৃথিবীখ্যাত জার্নাল নেচার-এর প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে এর কথা।
জার্মানির ফ্রেডরিখ-আলেক্সান্ডার ইউনিভার্সিটি অব এরল্যাঙ্গেন-নুরেমবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই খুদে কণাত্বরক যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করছেন। ২৮.৪ কিলোইলেকট্রন ভোল্ট থেকে ৪০.৭ কিলোইলেকট্রন ভোল্ট (কেইভি) শক্তির ইলেকট্রনকে ত্বারিত করেছেন তাঁরা এ যন্ত্র দিয়ে।
ছোট্ট, খুদে কণাদের জগৎ নিয়ে দারুণ কৌতুহল বিজ্ঞানীদের। নানাভাবে তাঁরা এ জগতের রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছেন। খুদে এই কণাত্বরক যন্ত্র তারই প্রয়াস। তাঁদের আশা, এর মাধ্যমে খুলে যাবে নতুন অনেক গবেষণার দ্বার। নানারকম কাজে ব্যবহৃত হবে। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, মানুষের দেহের ভেতরেও এই কণাত্বরক যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে। রোগীর দেহে রোগনির্ণয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসায় কাজে লাগবে এই যন্ত্র।
খুদে এই ন্যানোফোটনিক ইলেকট্রন অ্যাকসিলারেটরে রয়েছে অতিক্ষুদ্র এক মাইক্রোচিপ। এর ভেতরে রয়েছে আরও ছোট একটা ভ্যাকুয়াম টিউব। এটা কয়েক হাজার খুদে ‘পিলার’ বা স্তম্ভ দিয়ে তৈরি। গবেষকরা এই খুদে স্তম্ভগুলোর দিকে ক্ষুদ্র লেজার স্পন্দন ছুড়ে দিয়ে ত্বারিত করতে পারেন ইলেকট্রনকে।
মূল অ্যাকসিলারেশন টিউবের দৈর্ঘ্য ০.০২ ইঞ্চির মতো (০.৫ মিলিমিটার)। তুলনা করতে গেলে চলে আসে সুইজারল্যান্ডে সার্নের বিখ্যাত কণাত্বরক লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের কথা। পৃথিবীর বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হিসাবে খ্যাত এই অ্যাকসিলারেটর। দারুণ সব কণা আবিষ্কৃত হয়েছে এর মাধ্যমে। যেমন বিখ্যাত হিগস বোসন কণা, ভূতুড়ে নিউট্রিনো, চার্ম মেসন ইত্যাদি। দৈর্ঘ্যে সেটা ১৬.৮ মাইল লম্বা, মানে প্রায় ২৭ কিলোমিটার। সে তুলনায় খুদে এই যন্ত্র প্রায় ৫৪ গুণ ছোট।
মূল অ্যাকসিলারেশন টিউবের ভেতরে টানেলের প্রস্থ মাত্র ২২৫ ন্যানোমিটারের মতো। তুলনা করতে গেলে মানুষের চুলের কথা বলতে হয়। চুলের প্রস্থ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ন্যানোমিটারের মতো। এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ন্যানোপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান—ন্যাশনাল ন্যানোটেকনোলজি ইনস্টিটিউট।
‘এর সবচেয়ে বড় প্রয়োগ হতে পারে, কোনো রোগীর দেহে এন্ডোস্কোপের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া। এর ফলে রোগীদেহের আক্রান্ত জায়গায় সরাসরি রেডিওথেরাপি পরিচালনা করা সম্ভব হতে পারে।’
এই খুদে যন্ত্র বানানোর প্রস্তাব করা হয় ২০১৫ সালে। তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৮ বছর। অবশেষে চালু হলো এ যন্ত্র। গবেষকদের এক বিবৃতিতে জানা গেছে এ কথা। প্রথমবারের মতো কোনো পার্টিকেল অ্যাকসিলারেটর একটা মাইক্রোচিপ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফ্রেডরিখ-আলেক্সান্ডার ইউনিভার্সিটি অব এরল্যাঙ্গেন-নুরেমবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রয় শিলোহ। তিনি এ গবেষণাপত্রের সহলেখক। লিড অথার বা প্রধান লেখক টমাস কোলুবাও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। তিনি বলেন, ‘এর সবচেয়ে বড় প্রয়োগ হতে পারে, কোনো রোগীর দেহে এন্ডোস্কোপের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া। এর ফলে রোগীদেহের আক্রান্ত জায়গায় সরাসরি রেডিওথেরাপি পরিচালনা করা সম্ভব হতে পারে।’ তবে এ আশা বাস্তবায়িত হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তিও করেছেন ইতিমধ্যেই। তাঁদের পরীক্ষণের ফল অবশ্য এখনো রিভিউ করে দেখা হচ্ছে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স, নেচার
