মহাবিশ্বের গোপন রহস্য

গুপ্তবস্তু

নাগরদোলায় চড়লে সবারই প্রায় একই অভিজ্ঞতা হয়। মনে হয়, কেন্দ্র থেকে এই বুঝি ছিটকে বাইরে পড়ে গেলাম। কিন্তু নাগরদোলায় বসার আসন বা অন্য কোনো কাঠামো আঁকড়ে ধরে সেই পতন ঠেকিয়ে দিই আমরা। শিশুপার্কের গোলাকৃতি নাগরদোলায় একগুচ্ছ পিংপং বল রাখলে কী হবে? বলগুলো তো আর মানুষের মতো কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারবে না। তাই ঘোরার গতি বাড়ার একপর্যায়ে বলগুলো ছিটকে সজোরে বাইরে চলে যাবে। সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান দিয়ে বোঝা যায়, এমনটাই ঘটা উচিত। কিন্তু মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে একসময় বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন, সাধারণ এই কাণ্ডজ্ঞান সেখানে ধোপে টিকছে না। গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে কোমা ক্লাস্টার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমনই অদ্ভুত একটা ব্যাপার চোখে পড়ল বিজ্ঞানীদের। একে বলা হয় কসমোলজির ইতিহাসে সবচেয়ে অদ্ভুত এক অধ্যায়।

স্পিনিং গ্যালাক্সিগুলোকেও নাগরদোলার সঙ্গে তুলনা করা যাক। কারণ, এই ছায়াপথগুলোও প্রায় একইভাবে কাজ করে। এসব গ্যালাক্সি যেহেতু ঘুরছে, তাই তার ভেতরে থাকা নক্ষত্রগুলোর সাধারণ প্রবণতা থাকে বাইরের দিকে ছিটকে যাওয়ার। কিন্তু একমাত্র মহাকর্ষের টানের কারণে নক্ষত্রগুলো গ্যালাক্সিতে আটকে থাকে এবং গ্যালাক্সির কেন্দ্র ঘিরে ঘুরপাক খায়। ছায়াপথের এই মহাকর্ষ টান আসে তার ভেতরের বস্তুগুলোর ভর থেকে। স্বাভাবিক নিয়ম হচ্ছে, গ্যালাক্সি যত দ্রুত ঘুরবে, তার ভেতরের নক্ষত্রগুলো আটকে রাখতে ওই গ্যালাক্সিতে তত বেশি ভর থাকতে হবে। নইলে নক্ষত্রগুলো বাইরে ছিটকে ভবঘুরের মতো টো টো করে ঘুরতে থাকবে। কাজেই গ্যালাক্সির ভর হিসাব করে সহজ সূত্র ব্যবহার করে বোঝা সম্ভব গ্যালাক্সিটা ঠিক কত জোরে ঘুরছে।

শুরুতে সেই কাজই করতে লাগলেন জ্যোতির্বিদেরা। প্রথমে গ্যালাক্সিতে থাকা নক্ষত্রের সংখ্যা গুনে দেখা হলো। এরপর নির্ণয়ও করা হলো তাদের ভর। এবার নিউটনের সূত্র ব্যবহার করে গ্যালাক্সিটা কেমন গতিতে ঘুরবে, তা–ও নির্ণয় করলেন জ্যোতির্বিদেরা। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, কাগজ-কলমের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবে গ্যালাক্সির ঘূর্ণন মিলল না। হিসাবে ভুলচুক হয়েছে ভেবে আবারও গোড়া থেকে সব গণনা করা হলো। কিন্তু সেই কদুই পাওয়া গেল। চোখ কপাল ছাড়িয়ে মাথায় পৌঁছে যাওয়ার মতো অবস্থা বিজ্ঞানীদের। নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হলেন তাঁরা। দেখা গেল, কাগজে-কলমে গ্যালাক্সির যে ঘূর্ণনগতি পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়েও দ্রুতগতিতে ঘুরছে গ্যালাক্সিটা। এই বেগে ঘুরলে নক্ষত্রগুলো অনেক আগেই মুক্তিবেগ অর্জন করে গ্যালাক্সির বাইরে ছিটকে যাওয়ার কথা। সেই নাগরদোলার পিংপং বলগুলোর মতো। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বাস্তবে তা তো ঘটছে না। এবার উল্টো দিক থেকে হিসাব করে দেখা হলো। অর্থাৎ গ্যালাক্সিটা সত্যিকার গতিবেগের জন্য তার মধ্যে কী পরিমাণ বস্তু বা ভর দরকার, তা হিসাব করা হলো। এবার হিসাব বলল, গ্যালাক্সিতে যে পরিমাণ ভর আছে, তার চেয়ে ৪০০ গুণ ভর থাকলেই কেবল গ্যালাক্সিটার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়া ঠেকানো সম্ভব। সেই ভর বা বস্তুগুলো কোথায়? কিন্তু অনেক আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও সেই ভরের কোনো বস্তুর দেখা মিলল না। তাহলে ঘটনা কী? নিউটনের সূত্র কি তাহলে ভুল? নাকি অন্য কিছু?

ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণে এই ধাঁধার সমাধানে অদ্ভুত এক অনুমান করে বসলেন সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিৎজ জুইকি। তাঁর সেই অনুমানের কারণে জ্যোতির্বিদ্যায় যে জমাট রহস্যের জন্ম নিল, তার সমাধান হয়নি আজও।

ডার্ক ম্যাটার ধাঁধার সমাধান হিসেবে ধারণা করা হয়, ছায়াপথগুলো হয়তো কোনো অদৃশ্য বলয় ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এই বলয়ে পদার্থের পরিমাণ ছায়াপথের সব নক্ষত্রের চেয়ে ১০ গুণ বেশি

ফ্রিৎজ জুইকির জন্ম বুলগেরিয়ার ভার্নায়, ১৮৯৮ সালে। সুইস বংশোদ্ভূত এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের সন্তান জুইকি। ছয় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন সুইজারল্যান্ডে। শিক্ষা নেন জুরিখে আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুইস ফেডারেল পলিটেকনিকে (বর্তমানে ইটিএইচ)। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে। একটা স্কলারশিপ পেয়ে ১৯২৫ সালের দিকে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সে দেশের নামকরা ক্যালটেকে পদার্থবিদ রবার্ট মিলিকানের সঙ্গে গবেষণা করতে এসেছিলেন তিনি।

১৯৩০-এর দশকে কোমা ক্লাস্টারের গ্যালাক্সিগুলোর গতিবেগ মেপে তাদের ভর নির্ণয় করার চেষ্টা করেন জুইকি। ৩২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কোমা ক্লাস্টার। এটা হাজারখানেক গ্যালাক্সির একটা গুচ্ছ। মহাবিশ্বে ক্লাস্টারগুলোই সবচেয়ে ভারী কাঠামো বলে মনে করা হয়। কোমা ক্লাস্টার থেকে পছন্দমতো উজ্জ্বল ছয়টি গ্যালাক্সি বাছাই করে সেগুলোর গতিবেগ নির্ণয় করেন তিনি। সে জন্য মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরির ১০০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন তিনি। এককালে এই টেলিস্কোপ ব্যবহার করেই প্রসারণশীল মহাবিশ্ব আবিষ্কার করে হইচই ফেলেছিলেন জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল।

জুইকির হিসাবে দেখা গেল, গ্যালাক্সিগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৩ মিলিয়ন কিলোমিটার। কিন্তু এই গতিবেগের সাপেক্ষে গ্যালাক্সিগুলোতে দৃশ্যমান যে ভর পাওয়া গেল, তার পরিমাণ অনেক অনেক কম। জুইকির হিসাবে তা প্রায় ৪০০ শতাংশ কম। সহজ কথায়, কোমা ক্লাস্টারের ছায়াপথগুলো নিউটোনিয়ান মহাকর্ষ অনুযায়ী চলাচল করছে না। তার মানে, এসব গ্যালাক্সি এত জোরে ঘুরছে যে নিয়ম অনুযায়ী তাদের ছিটকে বাইরে চলে যাওয়া উচিত। আবার নিউটনের গতির সূত্র অনুসারে ক্লাস্টারগুলো অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা। তিনি ভাবলেন, একটিমাত্র উপায়েই কোমা ক্লাস্টারের নক্ষত্রগুলো ছিটকে যাওয়া রোধ করা সম্ভব; সেটা হলো, টেলিস্কোপে সেখানে যে পরিমাণ বস্তু পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে যদি কয়েক শ গুণ বেশি বস্তু থাকে, তাহলেই কেবল তারা ওভাবে একসঙ্গে থেকে যেতে পারে। কথা নাহয় মানলাম, কিন্তু তাহলে বাকি ভরগুলো গেল কোথায়? এর বছরখানেক আগেও ঠিক একই ফল পেয়েছিলেন ডাচ বিজ্ঞানী ইয়ান ওর্ট। কিন্তু তিনি এর মর্মার্থ ঠিক বুঝতে পারেননি। ঠিক এইখানেই গভীর এক অন্তর্দৃষ্টি কাজে লাগালেন কল্পনাপ্রবণ জুইকি। তিনি বুঝতে পারলেন, এর একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে, যদি গ্যালাক্সিগুলোতে দৃশ্যমান ভরের চেয়ে আরও ৪০০ গুণ ভর অদৃশ্য থাকে। সেই অজানা-অদৃশ্য বস্তুদের তিনি নাম দিলেন Dunkle Materie বা ডার্ক ম্যাটার (Dark matter)। বাংলায় বলা হয় গুপ্তবস্তু। অনেকে তমোবস্তুও বলেন।

মহাবিশ্বে পদার্থের বণ্টনের ক্ষেত্রে ভয়াবহভাবে কিছু একটা ঠিক নেই—ইতিহাসে সেটাই ছিল প্রথম ইঙ্গিত। দুর্ভাগ্য বলতে হবে, জুইকির এই পথপ্রদর্শকমূলক কাজ প্রত্যাখ্যান, নয়তো তাচ্ছিল্য করেন সেকালের জ্যোতির্বিদেরা। অবশ্য এর পেছনে কিছু কারণও ছিল। প্রথমত, জ্যোতির্বিদেরা কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারলেন না যে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ভুল হতে পারে। কারণ, কয়েক শতাব্দী ধরে পদার্থবিজ্ঞানে আধিপত্য ধরে রেখেছে মহাকর্ষ সূত্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এ ধরনের সংকটের নজির এর আগেও দেখা গিয়েছিল। যেমন উনিশ শতকে ইউরেনাসের কক্ষপথ বিশ্লেষণ করার সময় কিছু বিচ্যুতি পাওয়া গেল। আইজ্যাক নিউটনের সমীকরণ থেকে অতি সামান্য বিচ্যুতি ছিল সেটা। কাজেই অনেকে ভাবলেন, হয় নিউটন ভুল, নয়তো সৌরজগতে এমন কোনো গ্রহ আছে, যা আমাদের অজানা। এই অজানা গ্রহের মহাকর্ষই ইউরেনাসকে সবলে টানছে। পরে দ্বিতীয় অনুমানটাই সঠিক বলে প্রমাণিত হলো। আরেকবার নিউটনের সূত্রকে ভুল মনে করেছিলেন জ্যোতির্বিদেরা। সে যাত্রাতেই নিজের আভিজাত্য বজায় রাখে নিউটনের সূত্র। সেবার মানে, ১৮৪৬ সালে প্রথম প্রচেষ্টায় নেপচুন নামের নতুন এক গ্রহ খুঁজে পাওয়া গেল। নিউটনের সূত্র ব্যবহার করে অনুমান করা জায়গাতেই ঠিক ঠিক পাওয়া গেল নতুন সেই গ্রহকে।

দ্বিতীয়ত, সেকালে জুইকির ব্যক্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কিছুটা খামখেয়ালি আর কল্পনাপ্রবণ হিসেবে বদনাম ছিল জুইকির। আবার ভিনদেশ থেকে আসার কারণে জ্যোতির্বিদেরা আউটসাইডার বা বহিরাগত হিসেবে গণ্য করতেন তাঁকে। তাই সেকালের মার্কিন অভিজাত বিজ্ঞানী সমাজের কাছে পদে পদে হাস্যকর ও তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর অবদান নেহাত কম নয়। যেমন ১৯৩৩ সালে ওয়ালটার বাডের সঙ্গে সুপারনোভা নামকরণ করেন তিনি। আবার সঠিকভাবে প্রায় ১৪ মাইল ব্যাসের একটা ক্ষুদ্র নিউট্রন স্টারের কথাও অনুমান করেন ওই জুইকিই। তিনি ধারণা করেছিলেন, সেটা সম্ভবত কোনো বিস্ফোরিত নক্ষত্রের চূড়ান্ত ধ্বংসাবশেষ। এত কিছু সত্ত্বেও ডার্ক ম্যাটারের ব্যাপারটা মানতে পারেননি মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাঁর এ ধারণা সেকালে সবার কাছে খুবই অদ্ভুত মনে হয়েছিল। পরিণামে ১৯৩৪ সালের ১৯ জানুয়ারি তীব্র ব্যঙ্গ করে এক কার্টুনও ছেপে বসে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস। এভাবে ডার্ক ম্যাটার–সংক্রান্ত আইডিয়ার হালে কোনো পানি পেল না। পাত্তা পেলেন না জুইকিও। একসময় রাগে-ক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে নিজ দেশে চলে যান। এরপর ডার্ক ম্যাটারের কথাটা সরকারি দপ্তরের মতো লালফিতায় ফাইলবন্দী হয়ে জঞ্জালের মতো পড়ে রইল বহুকাল।

১৯৩০-এর দশকে কোমা ক্লাস্টারের গ্যালাক্সিগুলোর গতিবেগ মেপে তাদের ভর নির্ণয় করার চেষ্টা করেন জুইকি। ৩২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত কোমা ক্লাস্টার

১৯৬২ সালের দিকের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ম্যাকডোনাল্ড অবজারভেটরিতে ৮২ ইঞ্চি টেলিস্কোপ বসেছে তখন। সেখানেই আকাশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেন মার্কিন জ্যোতির্বিদ ভেরা রুবিন। দুই সহকর্মীর সঙ্গে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ঘূর্ণন নিয়ে গবেষণা করছিলেন তিনি। এ সময় এক অদ্ভুত ব্যাপার চোখে পড়ল তাঁর। নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণত সূর্য থেকে কোনো নক্ষত্র যত দূরে থাকে, সেটি চলাচল করে ততই ধীরগতিতে। যেমন কোনো গ্রহ সূর্যের যত কাছে হয়, তার চলার গতিও তত বেশি। এ কারণে বুধ গ্রহের নাম দেওয়া হয়েছিল গতি দেবতার নামে। কারণ, গ্রহটা সূর্যের খুব কাছে। অন্যদিকে প্লুটোর গতি বুধের চেয়ে ১০ শতাংশ ধীর। কারণ, গ্রহ সূর্য থেকে অনেকটা দূরে।

একইভাবে ভেরা রুবিন আমাদের ছায়াপথের নীল নক্ষত্রগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখেন, নক্ষত্রগুলো ছায়াপথের চারপাশে একই গতিতে ঘুরছে। মোদ্দা কথা, ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে নক্ষত্রগুলোর দূরত্ব তাদের গতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলছে না। একে বলা হয় ফ্ল্যাট রোটেশন কার্ভ। তার মানে, নক্ষত্রগুলো নিউটোনিয়ান গতিবিদ্যার বিধি মানছে না। আরও দেখা গেল, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি এতই জোরে ঘুরছে যে তার মহাকর্ষ নক্ষত্রগুলোকে সঠিক জায়গায় আটকে রাখার কথা নয়। নক্ষত্রগুলো ছিটকে চারদিকে ছড়িয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু ছায়াপথটি প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর ধরে বেশ স্থিতিশীল। কাজেই এই রোটেশন কার্ভ ফ্ল্যাট বা সমতল কেন, সেটা এক রহস্যই বটে। হিসাব বলছে, ছায়াপথটিকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বাঁচাতে হলে বিজ্ঞানীরা যতটুকু কল্পনা করেছেন, একে তার চেয়েও অন্তত ১০ গুণ বেশি ভারী হতে হবে। কাজেই মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ৯০ শতাংশ ভর অনুপস্থিত, নয়তো কোনো অদৃশ্য রূপে রয়েছে। এভাবে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল জুইকির সেই উদ্ভট বাতিল ধারণা। লালফিতায় ফাইলবন্দী ডার্ক ম্যাটার রহস্য আবার সবার সমানে তুলে আনলেন রুবিন।

মজার ব্যাপার হলো, তাঁদের গবেষণায় ডার্ক ম্যাটার-রহস্য সমাধান তো হলোই না, বরং আরও ঘনীভূত হলো। তবে এবারও আরেক দফা বাধার মুখে পড়ল ডার্ক ম্যাটার। ভেরা রুবিন নারী বলে তাঁর গবেষণার ফলাফল শুরুতে মেনে নিতে বেঁকে বসেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৭৮ সালে ১১টি সর্পিল ছায়াপথ পরীক্ষা করেন রুবিন ও তাঁর সহকর্মীরা। এঁদের প্রতিটি এতই জোরে ঘুরছিল যে নিউটনের সূত্র অনুযায়ী তাদের কোনোভাবে একত্রে থাকার কথা নয়। একই বছর ডাচ রেডিও জ্যোতির্বিদ আলবার্ট বসমা আরও ডজনখানেক সর্পিল ছায়াপথের পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যেও একই ধরনের ধর্ম লক্ষ দেখা গেল। এটাই অবশেষে জ্যোতির্বিদ সম্প্রদায়কে বোঝাতে সক্ষম হয় যে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব সত্যিই আছে। অনেকবার চুলচেরা হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে, মহাবিশ্বের এ ধরনের অদ্ভুত, অদৃশ্য বস্তুর পরিমাণ ২৭ শতাংশ। আরও আছে ৬৮ শতাংশ ডার্ক এনার্জি। বাকি মাত্র ৪ শতাংশ বস্তু আমাদের চেনাজানা বস্তু। আর সিংহভাগ বা ৯৬ শতাংশ আমাদের কাছে অধরা। ত্রিশের দশক থেকে এ পর্যন্ত অজানা-অদৃশ্য এ বস্তু সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা গেছে। তাতে কোনো সমাধান নয়, বরং আরও গভীর হয়েছে আমাদের অজানাটাই। কারণ, খুঁজে পাওয়া যায়নি ওই রহস্যময় বস্তু ও শক্তি। তাই ডার্ক ম্যাটার এখন বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ডার্ক ম্যাটারের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হলে হয়তো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য জানা যাবে। সঠিকভাবে বোঝা যাবে মহাবিশ্বকে। কে জানে, আমরা হয়তো সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কোনো কণা আবিষ্কার করে বসব

ডার্ক ম্যাটার নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হলো গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মহাকাশের অন্যান্য ভারী বস্তুর মতোই ডার্ক ম্যাটারও আলোকে বাঁকিয়ে দিতে পারে। মহাকাশে চোখ রেখে জ্যোতির্বিদেরা মাঝেমধ্যে অদ্ভুত কিছু বিষয় দেখতে পান। একবার দেখা গেল, মহাকাশের এক প্রান্তে একটা গ্যালাক্সি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটার সৌন্দর্য উপলব্ধি করার আগেই আরেকটা ধাঁধা জট পাকিয়ে উঠল। কারণ, টেলিস্কোপটা সামান্য একটু সরাতেই দেখা গেল, আগের গ্যালাক্সিটাই হুবহু আরেক প্রান্তেও দেখা যাচ্ছে। একই আকৃতি, একই রঙের। দুটো গ্যালাক্সির আলোয় এতই মিল যে জ্যোতির্বিদেরা নিশ্চিত বুঝতে পারলেন, ও দুটি আসলে একই গ্যালাক্সি। একই গ্যালাক্সিকে দুই জায়গায় দেখে একটা বিষয় নিশ্চিত বোঝা যায়, আমাদের আর ওই গ্যালাক্সির মাঝখানে যদি ভারী ও অদৃশ্য বস্তু থাকে, তাহলেই কেবল এমনটা হওয়া সম্ভব। কারণ, এই অদৃশ্য ভারী বস্তু তখন একটা বিশালাকৃতির লেন্সের মতো কাজ করবে। তাই তার প্রভাবে গ্যালাক্সি থেকে আমাদের কাছে আসা আলো বেঁকে যাবে। তখন একই গ্যালাক্সিকে মহাকাশের দুই জায়গায় দেখা যাবে।

ডার্ক ম্যাটার–সংক্রান্ত সম্প্রতি পাওয়া আরেকটা প্রমাণ অবিশ্বাস্য রকম উদ্ভট বলে মনে হয়। জ্যোতির্বিদেরা মহাকাশে একটা মহাজাগতিক সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করেছেন। দুটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের সংঘর্ষ। কোটি কোটি বছর আগে এটি সংঘটিত হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে এই সংঘর্ষে গ্যাস ও ধুলার মতো সাধারণ পদার্থগুলোর বড় ধরনের বিস্ফোরণ দেখা গেল। এর বাইরে আরেকটা ঘটনা দেখে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। সংঘর্ষ এলাকাটা ভালো করে খেয়াল করে তাঁরা দেখলেন, ডার্ক ম্যাটারের দুটি বিশাল গুচ্ছ সংঘর্ষের মুখে পড়ল। কিন্তু এমনভাবে একটা আরেকটার ভেতর দিয়ে চলে গেল যেন কিছুই হয়নি। না, এবারও ডার্ক ম্যাটার চোখে দেখেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গুচ্ছ দুটির পরোক্ষ বিচ্যুতির প্রভাব মেপে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, সাধারণ পদার্থ যেমন সংঘর্ষে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়, ডার্ক ম্যাটার তেমন নয়।

কিছু মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটার–সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনেছেন। সেগুলো হলো এর ভর আছে, এগুলো অদৃশ্য, সাধারণ পদার্থ এর সংস্পর্শে কিছু হয় না বলে মনে হচ্ছে, ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে ডার্ক ম্যাটারের সংঘর্ষেও কিছুই হয় না। এটুকুই সম্বল। এ ছাড়া ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে আমরা আর কিছুই জানি না। এসব দেখে মনে হয়, পদার্থবিজ্ঞানও মাঝেমধ্যে বোটানির মতো শুধু তালিকা তৈরি করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।

আমাদের চেনাজানা সাধারণ পদার্থ চারভাবে মিথস্ক্রিয়া করে। সেগুলো হলো মহাকর্ষ, বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং সবল নিউক্লিয়ার বল। বলে রাখা ভালো, এই বলগুলোর অস্তিত্ব কেন আছে, তা–ও এখনো অমীমাংসিত। আমরা শুধু বলগুলোকে তালিকাবদ্ধ করেছি, ব্যস। তবে এ চারটি বল ব্যবহার করে কণা পদার্থবিজ্ঞানের সব কটি পরীক্ষা ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু ডার্ক ম্যাটারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এরা একমাত্র মহাকর্ষ ছাড়া আর কোনো বলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে না। বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করলে ডার্ক ম্যাটারকে অনেক আগেই দেখা যেত। আবার এরা সবল বা দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের সঙ্গেও মিথস্ক্রিয়া করে না বলেই এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে। এই অদৃশ্য বস্তুরা হয়তো এমন কোনো মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়, যা আমাদের কাছে এখনো অজানা, কিংবা আমাদের টেলিস্কোপ বা ডিটেক্টরে তা ধরা পড়ে না। সে কারণেই ডার্ক ম্যাটার নিয়ে গবেষণা করা এত কঠিন। ডার্ক ম্যাটারের যে মহাকর্ষ আছে, তা নিশ্চিত। কারণ, এর ভর আছে। আর ভর আছে বলেই তা ছায়াপথের নক্ষত্রগুলোকে ছিটকে যাওয়া আটকে রাখতে পেরেছে। এটাই ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের শক্ত প্রমাণ। এ ছাড়া এই বস্তু দূরবর্তী ছায়াপথের আলো বাঁকিয়ে দেয় এবং বিপুল মহাজাগতিক সংঘর্ষে দিব্যি নির্লিপ্ত থাকতে পারে। অ্যাকশন মুভির নায়কেরা বিস্ফোরিত গাড়িকে পেছনে ফেলে যে রকম স্লো মোশনে নায়কোচিতভাবে হেঁটে আসে, ডার্ক ম্যাটারও তেমন। তাহলে স্বীকার করে নেওয়া যায়, ডার্ক ম্যাটার দারুণ কিছু একটা।

ডার্ক ম্যাটার ধাঁধার সমাধান হিসেবে ধারণা করা হয়, ছায়াপথগুলো হয়তো কোনো অদৃশ্য বলয় ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এই বলয়ে পদার্থের পরিমাণ ছায়াপথের সব নক্ষত্রের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। সম্প্রতি হাবল স্পেস টেলিস্কোপে তোলা ছবিগুলো কম্পিউটারে বেশ সতর্কভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। এর মাধ্যমে মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটারের বণ্টনের একটা মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

কিন্তু ডার্ক ম্যাটার–সংক্রান্ত যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি, সেটি হলো এরা কী দিয়ে তৈরি। এই উত্তরের খোঁজে এখন সবাই হামলে পড়েছে। কয়েকজন বিজ্ঞানীর ধারণা, এটা সাধারণ পদার্থ দিয়েও হয়তো তৈরি হতে পারে। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম ব্যাপারটা হলো, তা হয়তো খুব অস্পষ্ট। অর্থাৎ এরা বাদামি বামন নক্ষত্র, নিউট্রন স্টার, কৃষ্ণগহ্বর এবং এ রকম আরও কিছু দিয়ে তৈরি হতে পারে, যারা প্রায় অদৃশ্য। এসব বস্তু ব্যারিয়নিক পদার্থের মতো একত্রে পিণ্ডের মতো হয়ে থাকে। মানে হলো, এসব পদার্থ আমাদের পরিচিত ব্যারিয়ন কণা (যেমন নিউট্রন ও প্রোটন) দিয়ে তৈরি হতে পারে। এদের একত্রে বলা হয় ম্যাচো বা MACHO (ম্যাসিভ অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল কমপ্যাক্ট হ্যালো অবজেক্ট)।

অন্য বিজ্ঞানীদের ধারণা, ডার্ক ম্যাটার হয়তো নিউট্রিনোর মতো খুব উত্তপ্ত নন-ব্যারিয়নিক পদার্থ (এদের বলা হয় উত্তপ্ত গুপ্তবস্তু)। নিউট্রিনো এতই জোরে ছোটে যে তারা কোনোভাবে ডার্ক ম্যাটার আর প্রকৃতিতে দেখা ছায়াপথের সঙ্গে পিণ্ড তৈরি করতে পারে না। তবু অনেকে হাল ছেড়ে দিয়ে ভাবেন, ডার্ক ম্যাটার পুরোপুরি নতুন ধরনের কোনো পদার্থ দিয়ে তৈরি, যাদের বলা হয় কোল্ড ডার্ক ম্যাটার বা WIMPS (উইকলি ইন্টারঅ্যাকটিং ম্যাসিভ পার্টিকেল)। এ ধারণা অনুযায়ী, এরা হয়তো নতুন কোনো বলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। আবার সাধারণ পদার্থের সঙ্গে এই বলের মিথস্ক্রিয়া হয়তো অতি দুর্বল। ডার্ক ম্যাটার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এরাই এখন শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু ওই অনুমান পর্যন্তই। ডার্ক ম্যাটার মহাকর্ষ ছাড়া অন্য কোনো অজানা বলের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে কি না, তা আমরা জানব কীভাবে? তার উত্তর আমরা জানি না। তবে আমরা আশা করি, তেমনই কিছু একটা হয়তো ঘটে। কারণ, তাহলেই কেবল তাদের শনাক্ত করা সহজ হয়ে উঠবে। এ ধারণা প্রমাণ করার জন্য কিছু পরীক্ষার ডিজাইন করা হয়েছে। তেমনই এক পরীক্ষায় একটা কনটেইনারে শীতল ও সংকুচিত নিষ্ক্রিয় গ্যাস ভরে রাখা হয়েছিল। কনটেইনারের চারপাশে ডিটেক্টর রেখে আশা করা হলো যে গ্যাসটির একটা পরমাণু কোনো ডার্ক ম্যাটারের সঙ্গে ধাক্কা খাবে এবং তা ডিটেক্টরে ধরা পড়বে। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটতে দেখা যায়নি। এর কারণ এমনও হতে পারে যে আমাদের ডিটেক্টর এখনো ডার্ক ম্যাটার শনাক্ত করার মতো যথেষ্ট সূক্ষ্ম হয়ে ওঠেনি। তাই আরও সূক্ষ্ম ডিটেক্টরের জন্য ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর উপায় নেই।

আরেকটা পদ্ধতিতে ডার্ক ম্যাটার শনাক্ত করার কথা ভাবা হয়েছিল। সেটা হলো, উচ্চ শক্তির পার্টিকেল কলাইডার ব্যবহার। এ যন্ত্রে প্রোটন বা ইলেকট্রনকে অতি উচ্চগতিতে চালনা করে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটানো হয়। ফলে কণাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এই চূর্ণগুলো এরপর নতুন সজ্জায় একত্র হয়ে নতুন কণা গঠিত হয়। অনেকটা আলকেমির মতো ব্যাপার যেন। বিজ্ঞানীরা আশা করেন, এভাবে কোনো একদিন হয়তো পার্টিকেল কলাইডারে ডার্ক ম্যাটার পাওয়া যাবে।

তৃতীয় পদ্ধতিটা হলো, মহাকাশের যে জায়গায় ডার্ক ম্যাটারের পরিমাণ বেশি বলে মনে হয়, সেদিকে দুরবিন তাক করা। আমাদের সবচেয়ে কাছের যে জায়গায় ডার্ক ম্যাটার রয়েছে বলে মনে করা হয়, সেটা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র। ধারণা করা হয়, ডার্ক ম্যাটারের দুটি কণা হয়তো অনবরত সংঘর্ষের মুখে পড়ে এবং পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। ডার্ক ম্যাটার যদি কোনোভাবে নিজেদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে, তাহলে ডার্ক ম্যাটারকে সংঘর্ষের মুখে পড়ে সাধারণ পদার্থে পরিণত হবে হয়তো। এ রকম কোনো ঘটনা যদি প্রায়ই ঘটে, তাহলে ডার্ক ম্যাটার থেকে এভাবে গঠিত সাধারণ পদার্থের হয়তো শক্তির নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকবে। আর টেলিস্কোপের মাধ্যমে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বও প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু সেটা করার জন্য আমাদের নিজেদের ছায়াপথের কেন্দ্র সম্পর্কে আরও অনেক কিছুই জানতে হবে, যা এখনো আমাদের কাছে গভীর এক রহস্যের উৎস।

এসব আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের আবিষ্কার ও অগ্রগতি যে এখনো গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত, তার ইঙ্গিত দেয় ডার্ক ম্যাটার। কারণ, মোটা দাগে বলা যায়, মহাবিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ সম্পর্কে আমরা জানি। বাকি ৯৬ শতাংশ (যার মধ্যে ২৭ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার এবং ৬৮ শতাংশ ডার্ক এনার্জি) অজানা, অমীমাংসিত। ডার্ক ম্যাটারের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হলে হয়তো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য জানা যাবে। সঠিকভাবে বোঝা যাবে মহাবিশ্বকে। কে জানে, আমরা হয়তো সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কোনো কণা আবিষ্কার করে বসব। হয়তো তার জন্য আবিষ্কৃত হবে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন কোনো সূত্র, নতুন ধরনের মিথস্ক্রিয়াসহ নতুন নতুন আরও অনেক কিছু।

ডার্ক ম্যাটার–সংক্রান্ত জটিল ধাঁধাটা বোঝার জন্য গোয়েন্দা শার্লক হোমস কিংবা এরকুল পোয়ারোকে উদাহরণ হিসেবে টেনে আনা যায়। ধরা যাক, বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা শার্লক হোমস দুর্ধর্ষ কোনো খুনের তদন্তে নেমেছেন। সহকারী ওয়াটসনকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে দেখলেন, খুনের মোটিভ আছে, প্রমাণ আছে, কিন্তু খোদ মৃতদেহটাই নেই। স্রেফ অদৃশ্য। এমন ঘোরতর রহস্যময় ঘটনার সামনে ভুরু কুঁচকে কপাল ছাড়িয়ে মাথার চাঁদিতে উঠলেও শার্লক হোমসকে দোষ দেওয়া যায় না। বিজ্ঞানেও এই মুহূর্তে ঠিক এমনই এক রহস্যের নাম ডার্ক ম্যাটার। বিজ্ঞানীরা তো এক অর্থে বিজ্ঞানজগতের সত্যানুসন্ধানী, গোয়েন্দা। তাঁরা প্রকৃতির রহস্য উদ্‌ঘাটন করেন। প্রকৃতির পর্দা খুলে উন্মোচন করেন গহিন, গোপন জগৎ। তাই যারা ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হতে চায়, তাদের জন্য ডার্ক ম্যাটার রহস্য ভালো একটা কেস। এই কেস সমাধানের জন্য এই মুহূর্তে আমাদের হাতে যেসব ক্লু আছে, সেগুলো হয়তো রহস্য সমাধানে সহায়তা করতে পারে। নতুন বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে এ রহস্য উদ্‌ঘাটন করবেন, সে প্রত্যাশা করা ছাড়া এখন আর কোনো পথ নেই। ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের জন্য শুভকামনা।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ডার্ক ম্যাটার অ্যান্ড ডার্ক এনার্জি, ব্রায়ান ক্লেগ;

উই হ্যাভ নো আইডিয়া, জর্জ চ্যাম ও ড্যানিয়েল হোয়াইটসন; উইকিপিডিয়া