আমরা চোখে মোটামুটি এক কোটি রং আলাদা করে দেখতে পাই। পৃথিবীর সবকিছু তাই ভীষণ রঙিন হয়ে ধরা দেয় আমাদের কাছে। তবে এটাও সত্য যে অনেক কিছুর রং আমরা শনাক্ত করতে পারি না। আয়না ঠিক তেমন একটা জিনিস। আসলে আয়নার রং কী, সেটা দেখা তো দূরে থাকুক, কল্পনাও করা যায় না।
চিন্তায় পড়ে গেছেন? কিংবা হয়তো ভাবছেন, কেন, আয়নার রং তো রুপালি বা সাদা! কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো, কথাটা কি সত্যি? যদি হয়, তাহলে রঙিন কাপড় পরে আয়নায় দাঁড়ালে আমরা সেই রং দেখি কীভাবে?
প্রশ্নটা না বুঝলে একটু ব্যাখ্যা করি। সাদা আলো মূলত সাত রঙের মিশ্রণ। বেগুনি, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। সংক্ষেপে, বেনীআসহকলা। যেকোনো বস্তুর ওপরে আলো পড়লে বস্তুটা আলোর অনেকটা অংশ শুষে নেয়। তারপর খানিকটা অংশ প্রতিফলিত করে। যে জিনিস আমরা লাল দেখি, সেটা আসলে সাদা আলোয় থাকা অন্য আলোগুলো শুষে নেয়, প্রতিফলিত করে শুধু লাল আলো। একইভাবে যে বস্তু সবুজ আলো প্রতিফলিত করে, আমরা সেটাকে সবুজ দেখি।
আয়না মূলত আলোর প্রায় সবটা প্রতিফলিত করে। অর্থাৎ যে আলোটা আয়নার ওপর গিয়ে পড়ে, সেটাকেই আয়না উল্টোদিকে ফেরত পাঠায়। এ কারণে আয়নায় সব ছবিই আমরা উল্টোভাবে দেখি। এখন কোনো আয়না যদি তার ওপর পড়া সবটুকু আলোই ফেরত পাঠাত, তাহলে আমরা আয়নার রং বলতে পারতাম সাদা বা সাদার মতো কিছু। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় কোনো কিছুই নিখুঁত বা শতভাগ কর্মক্ষম নয়। আয়নাও তাই। অর্থাৎ, কোনো আয়নাই শতভাগ আলো ফেরত পাঠাতে পারে না। কিছুটা আলো আয়না নিজেই শোষণ করে নেয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫১০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো সাধারণ আয়না খুব ভালোভাবে ফেরত পাঠাতে পারে। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে আমরা হালকা সবুজ রং বলি। আগেই বলেছি, কোনো বস্তু থেকে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো ফিরে আসে বা প্রতিফলিত হয়, সেটাই হচ্ছে বস্তুর রং। তাই বিজ্ঞান বলে, আয়নার রং আসলে হালকা সবুজ!
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, র্যাংকরেড