রায়চৌধুরী সমীকরণ

অমল রায়চৌধুরী আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণের অন্য রকম সমাধান দিয়েছেন যে সমীকরণের মাধ্যমে সেটাই ‘রায়চৌধুরী সমীকরণ’ নামে খ্যাতি লাভ করেছে

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বিজ্ঞানী ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। আর গত শতাব্দীর শেষের দশক থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর দুই দশকজুড়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আছে যে বিজ্ঞানীর নাম, তিনি স্টিফেন হকিং। আইনস্টাইন কিংবা হকিংয়ের মূল বৈজ্ঞানিক অবদান সম্পর্কে পরিষ্কার কোনো ধারণা বিজ্ঞানজগতের বাইরের অনেকের না-ও থাকতে পারে, কিন্তু মহাবিশ্বের রহস্যসন্ধানে এই দুই বিজ্ঞানীর অবদান সম্পর্কে অনেক কিছুই তাঁরা জানেন প্রচারমাধ্যমের কল্যাণে। হকিংয়ের মতো এত প্রচার আর কোনো বিজ্ঞানী এখনো পাননি। হকিং জটিল গাণিতিক সমীকরণের মাস্টার মেকার বা ওস্তাদ ছিলেন। মহাবিশ্বের সূক্ষ্ম রহস্য তিনি উন্মোচন করেছেন জটিল সব গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে। কিন্তু তিনি সাধারণ পাঠকের জন্য অনেকগুলো জনপ্রিয় বিজ্ঞানবিষয়ক বই লিখেছেন, যেগুলোতে বলতে গেলে কোনো গাণিতিক সমীকরণ ব্যবহার করেননি।

তাঁর নিজের গবেষণার ভিত্তি গড়ে উঠেছে যেসব মৌলিক সমীকরণের ওপর, সেগুলোর একটা তালিকা যদি তিনি দিতেন, সেখানে প্রথম দিকেই থাকত রায়চৌধুরী সমীকরণের কথা। এই সমীকরণ যিনি তৈরি করেছেন, সেই অমলকুমার রায়চৌধুরী প্রায় অচেনা একজন বিজ্ঞানী। আজ তাঁকে যাঁরা চেনেন, তাঁরাও চেনেন মূলত স্টিফেন হকিংয়ের কারণে। অমলকুমার রায়চৌধুরীর সমীকরণকে ‘রায়চৌধুরী সমীকরণ’ হিসেবে প্রথম উল্লেখ করেছিলেন স্টিফেন হকিং তাঁর নিজের পিএইচডি থিসিস লেখার সময়। তারপর থেকে মহাবিশ্বের রহস্যসন্ধানের তাত্ত্বিক গবেষণায় রায়চৌধুরী সমীকরণ ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। এই সমীকরণকে আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির একটি প্রধান প্রায়োগিক সমীকরণ হিসেবে ধরা হয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব সম্পর্কে এত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা যিনি করেছেন, কে তিনি? কে এই অমলকুমার রায়চৌধুরী?

কৃষ্ণগহ্বর গবেষণার কথা আসলে অমলকুমার রায়চৌধুরীর অবদানের কথা স্বীকার করতে হবে
গণিতের সবচেয়ে কাছের সাবজেক্ট ফিজিকস। অমলকুমার পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৯৪৪ সালে।

অমলকুমার রায়চৌধুরী জন্মসূত্রে বাংলাদেশের সন্তান। তাঁর জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বরিশালে। তাঁর বাবা সুরেশচন্দ্র রায়চৌধুরী ছিলেন কলকাতার এক স্কুলের গণিত শিক্ষক। অমলের লেখাপড়া কলকাতাতেই। ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তাঁর। গণিতের জটিল সমস্যার সম্পূর্ণ নতুন ধরনের সমাধান করে ভীষণ আনন্দ পেতেন অমলকুমার। ১৯৪২ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাস করার পর গণিতে মাস্টার ডিগ্রি নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর বাবার তাতে ভীষণ আপত্তি ছিল। গণিতে প্রথম শ্রেণির এমএসসি হয়েও তাঁকে স্কুলে শিক্ষকতা করে কোনোরকমে সংসার চালাতে হচ্ছিল। তাই তিনি চাননি তাঁর ছেলেকেও একই ধরনের অভাব-অনটনের ভেতর দিয়ে যেতে হোক।

গণিতের সবচেয়ে কাছের সাবজেক্ট ফিজিকস। অমলকুমার পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৯৪৪ সালে। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স তখন অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত। স্যার সি ভি রমণ ওখান থেকে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৩০ সালে। পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় খুব নামডাক তখন এই অ্যাসোসিয়েশনের। এমএসসি পাস করার পর এখানে রিসার্চ ফেলোশিপ পেলেন অমলকুমার রায়চৌধুরী। এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির ল্যাবে কাজ শুরু করলেন তিনি। পরবর্তী চার বছর ধরে তিনি অনেক চেষ্টা করেও পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারলেন না। পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে তিনি কোনো আগ্রহই পেলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন, ভুল পথে অগ্রসর হচ্ছেন।

এক্স-রে ছাড়া অন্য পদার্থবিজ্ঞান বলতে তখন নিউক্লিয়ার ফিজিকস। মেঘনাদ সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিকস চালু করেছেন। কিন্তু মাস্টার্সে পড়ার সময় তিনি দেখেছেন, মেঘনাদ সাহা ছাত্রদের সঙ্গে সহজ ব্যবহার করেন না, কথায় কথায় ধমক দেন। অমলকুমার মেঘনাদ সাহার কাছে যেতে চান না। অ্যাসোসিয়েশনের ফেলোশিপ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আশুতোষ কলেজে। শিক্ষক হিসেবে অল্প দিনের মধ্যেই তিনি ছাত্রদের খুব প্রিয় হয়ে উঠলেন। কিন্তু শুধু ক্লাসরুমে পড়িয়ে একাডেমিক জগতে উন্নতি করা যায় না, তা অমলকুমার জানেন। তিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করতে চাইলেন। গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর দক্ষতা আছে। তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিতের অধ্যাপক এন আর সেন তখন রিলেটিভিটি রিসার্চ গ্রুপ তৈরি করেছেন। অমলকুমার সেখানে যোগ দিলেন। গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলো তাঁর। তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো ফিজিক্যাল রিভিউতে, ১৯৫১ সালে।

গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলো তাঁর। তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো ফিজিক্যাল রিভিউতে, ১৯৫১ সালে।

আশুতোষ কলেজে ক্লাসরুমে পড়ানোর চাপ অনেক বেশি। সারা দিন ক্লাস নিয়ে পরের দিনের ক্লাসের জন্য রেডি হতে হতে গবেষণার জন্য তেমন কোনো সময় থাকে না। তাঁর জন্য গবেষণাপ্রধান চাকরি হলে সুবিধা হয়।

১৯৫২ সালে তিনি আরেকটি ফেলোশিপের জন্য দরখাস্ত করলেন অ্যাসোসিয়েশনে। ১৯৫২ সালে গবেষণা শুরু করলেন সেখানে। এবার অনেকটা নিজে নিজে গবেষণা শুরু করতে হলো তাঁকে। কারণ, তখন তাঁর প্রফেসররা সবাই পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করছেন। সত্যেন বসু তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আইনস্টাইনের সঙ্গে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে সত্যেন বসু খ্যাতিমান হয়েছেন অনেক বছর হয়ে গেল। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন সত্যেন বসু, কিন্তু তাঁর বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিসটিকস নিয়ে নিজে খুব বেশি কাজ করেননি। আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির প্রয়োগে মহাবিশ্বের স্ফীতি সম্পর্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন জাগছে অমলকুমারের মনে। তিনি সে সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য গেলেন সত্যেন বসুর কাছে। কিন্তু সত্যেন বসু খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। ভীষণ দমে গিয়েছিলেন অমলকুমার। নিজে নিজে গবেষণা করে তিনি লিখে ফেললেন তাঁর দ্বিতীয় গবেষণাপত্র ‘কনডেনসেশান্স ইন এক্সপান্ডিং কসমোলজিক্যাল মডেলস’। ১৯৫২ সালে তা প্রকাশিত হলো আমেরিকার ফিজিক্যাল রিভিউতে।

মহাবিশ্বের গঠন ও স্ফীতিসংক্রান্ত গবেষণার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছিল ১৯৩০–এর দশকে স্যার এডিংটনের নেতৃত্বে। কিন্তু পরের দুই দশকে সেই উৎসাহে বেশ ভাটা পড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সবার উৎসাহ চলে গিয়েছিল নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানের দিকে। ১৯৫০-এর দশকে অমলকুমার রায়চৌধুরী যখন আপেক্ষিকতার তত্ত্বে নতুন গবেষণা শুরু করেছিলেন, তখন সেই ক্ষেত্র খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। সেই অর্থে অমলকুমার জনপ্রিয় পথে অগ্রসর হননি। আইনস্টাইনের রিলেটিভিস্টিক ফিল্ড ইকুয়েশন বা ক্ষেত্র সমীকরণের সমাধান দিয়েছিলেন জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সোয়ার্জশিল্ড। সোয়ার্জশিল্ডের সমাধান থেকে সিঙ্গুলারিটি এবং ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনাদিগন্তের হিসাব করা সম্ভব হয়েছে। মহাকর্ষ বলের টানে নক্ষত্রগুলো সংকুচিত হয়ে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার সর্বজনগ্রাহ্য তত্ত্ব তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

১৯৫৩ সালে অমলকুমার রায়চৌধুরী যখন সিঙ্গুলারিটি বিষয়ে তাঁর আরেকটি গবেষণাপত্র ‘আরবিট্রেরি কনসেন্ট্রেশান্স অব ম্যাটার অ্যান্ড দ্য সোয়ার্জশিল্ড সিঙ্গুলারিটি’ প্রকাশ করেন, হকিংয়ের বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। সোয়ার্জশিল্ড দেখিয়েছিলেন, কীভাবে সিঙ্গুলারিটি অর্জিত হবে। আর অমল রায়চৌধুরী দেখিয়েছেন, কী কী শর্তে সিঙ্গুলারিটি এড়িয়ে চলা যাবে এবং এ ঘটনাটাই প্রকৃতিতে বেশি ঘটছে।

রায়চৌধুরী সমীকরণের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে পেয়েছি স্টিফেন হকিং ও রজার পেনরোজের সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব এবং ব্ল্যাকহোলের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান।

১৯৫৫ সালে ফিজিক্যাল রিভিউতে প্রকাশিত হয় অমল রায়চৌধুরীর সবচেয়ে বিখ্যাত গবেষণাপত্র ‘রিলেটিভিস্টিক কসমোলজি’। এখানেই প্রথম প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত সমীকরণ, যেটাকে স্টিফেন হকিং ও জর্জ এলিস ‘রায়চৌধুরী সমীকরণ’ নামে প্রথম উল্লেখ করেছিলেন তাঁদের গবেষণাপত্রে, ১৯৬৫ সালে। কী ছিল অমল রায়চৌধুরীর সেই গবেষণাপত্রে? রায়চৌধুরী সমীকরণটি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি থেকে জানা যায়, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু মহাবিশ্বের প্রসারণ সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হলে সঠিকভাবে বুঝতে হবে মহাবিশ্বের গঠন। তত্ত্বীয় সুবিধার জন্য আমরা ধরে নিই, মহাবিশ্ব জ্যামিতিকভাবে সুষম গোলাকার। ক্রমশ স্ফীত হচ্ছে, সেখানেও আইনস্টাইনের সমীকরণের সোয়ার্জশিল্ড সমাধানের একটি পর্যায়ে ধরে নিচ্ছি এর স্ফীতিও সুষম।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি মহাবিশ্ব ঘূর্ণমান হয়, তাহলে স্ফীতির কী অবস্থা হবে? স্ফীতি যদি সুষম না হয়, তাহলে কী অবস্থা হবে? সিঙ্গুলারিটি পাওয়ার ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ কি নির্দিষ্ট নাকি অসীম? এই প্রশ্নগুলোর গুরুত্ব সীমাহীন। অমল রায়চৌধুরী আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণের অন্য রকম সমাধান দিয়েছেন যে সমীকরণের মাধ্যমে সেটাই ‘রায়চৌধুরী সমীকরণ’ নামে খ্যাতি লাভ করেছে। সেই সমীকরণে মহাবিশ্বের সব পদার্থের ওপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব হিসাব করা হয়েছে। মহাকর্ষ বল নির্দেশক রাশির সঙ্গে একটি ঋণাত্মক চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয়েছে সিঙ্গুলারিটির পথের গন্তব্য। অর্থাৎ পারস্পরিক আকর্ষণে সবকিছু এক বিন্দুতে মিলেমিশে যেতে চায়। কিন্তু অন্যান্য অনুষঙ্গের কারণে তা বাস্তবে হচ্ছে না। সমীকরণের আরেকটি ধনাত্মক রাশি মহাবিশ্বের স্পিন বা ঘূর্ণন নির্দেশ করছে। এই ঘূর্ণন মহাবিশ্বের সিঙ্গুলারিটি অর্জনের পথে বাধা দিচ্ছে। আরেকটি রাশি মহাবিশ্বের বিকৃতির পরিমাণ নির্দেশ করছে। এই বিকৃতি ঘটে মূলত অনেকগুলো ঘটনার সম্ভাবনার ওপর। সার্বিকভাবে রায়চৌধুরী সমীকরণ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে মহাবিশ্বের স্ফীতির সম্ভাবনার বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এর ফলেই মহাবিশ্বের স্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এই সমীকরণের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে পেয়েছি স্টিফেন হকিং ও রজার পেনরোজের সিঙ্গুলারিটি তত্ত্ব এবং ব্ল্যাকহোলের আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান।

১৯৫৩ সালে অমলকুমার রায়চৌধুরী যখন সিঙ্গুলারিটি বিষয়ে তাঁর আরেকটি গবেষণাপত্র ‘আরবিট্রেরি কনসেন্ট্রেশান্স অব ম্যাটার অ্যান্ড দ্য সোয়ার্জশিল্ড সিঙ্গুলারিটি’ প্রকাশ করেন, হকিংয়ের বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। সোয়ার্জশিল্ড দেখিয়েছিলেন, কীভাবে সিঙ্গুলারিটি অর্জিত হবে। আর অমল রায়চৌধুরী দেখিয়েছেন, কী কী শর্তে সিঙ্গুলারিটি এড়িয়ে চলা যাবে এবং এ ঘটনাটাই প্রকৃতিতে বেশি ঘটছে।

অমলকুমার রায়চৌধুরী নিজের গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন কোনো সুপারভাইজার ছাড়াই। ১৯৬১ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের ফিজিকস ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে অবসর গ্রহণ করার পর আরও দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাম্মানিক ফেলো হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। সারা জীবন নিজের মতো করে গবেষণা চালিয়ে গেছেন। ২০০৪ সালে তাঁর শেষ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালের ১৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জীবদ্দশায় অমলকুমার রায়চৌধুরীকে নিয়ে খুব একটা চর্চা হয়নি। তবে ব্ল্যাকহোল–সংক্রান্ত গবেষণা ও অন্যান্য তথ্যের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। ফলে রায়চৌধুরী সমীকরণের এখন নানাবিধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে ব্ল্যাকহোলের তত্ত্বের জন্য রজার পেনরোজ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রায়চৌধুরী সমীকরণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক শাখা, বিশেষ করে ফ্লুইড ডায়নামিকস এবং ইলেকট্রোডায়নামিকসে রায়চৌধুরী সমীকরণের ব্যাপক বিস্তার ঘটবে।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক, বায়োমেডিকেল ফিজিকস বিভাগ, আরএমআইটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া