পদার্থবিজ্ঞানের সেরা ১০

২০২২ সাল বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ছিল দারুণ এক বছর। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, জৈবরসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, মহাকাশবিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এ বছর অনেক উন্নতি ঘটেছে। ফিউশন রিয়্যাকটর থেকে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, অনেক ক্ষেত্রে উন্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। এতসব গবেষণার মধ্য থেকে সেরা ১০ বেছে নেওয়া কঠিন। তাই এটিকে ঠিক সেরা ১০ নয়, বলা চলে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ১০টি গবেষণার তালিকা। অনলাইনে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘেঁটে, কখনো বিজ্ঞানীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়ে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। তবে এটি ক্রমান্বয়ে সাজানো নয়।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক এ বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাগুলোর কথা...

১. কক্ষতাপমাত্রায় কোয়ান্টাম প্রভাব পর্যবেক্ষণ

এ বছর বিসমাথভিত্তিক এক ধরনের টপোলজিক্যাল ইনসুলেটরে কোয়ান্টাম প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতদিন এসব প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা যেত মূলত পরমশূন্য তাপমাত্রায়। প্রথমবারের মতো কক্ষতাপমাত্রায় তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশি-মার্কিন বিজ্ঞানী, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ইউজিন হিগিনস অধ্যাপক ও গবেষক এম জাহিদ হাসান।

কোয়ান্টাম প্রযুক্তিকে দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী করতে হলে কক্ষতাপমাত্রায় সেটাকে কার্যকর করে তোলা জরুরী। এজন্য এই গবেষণা পদার্থবিজ্ঞানের একটি মাইলফলক। এর ফলে ভবিষ্যতে গুরুত্বের কারণে এটি ঠাঁই পেয়েছে বিখ্যাত জার্নাল নেচার ম্যাটেরিয়ালস-এর অক্টোবর সংখ্যার মলাটে।

২. ফিউশন রিয়্যাকটরের নতুন সম্ভাবনা

অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। নিরাপদ ও অবারিত শক্তি পাওয়ার সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য উপায় এই ফিউশন বিক্রিয়া। প্রথমবারের মতো এ বছর বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়ায় কার্যকর শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। ডিসেম্বরে এ কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ডিপার্টমেন্ট। তবে এখনই খুব প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিদায় জানানোর সময় আসেনি। এই শক্তিকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে এখনও প্রায় এক দশক অপেক্ষা করতে হবে, এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ফিউশন শক্তি তৈরির পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল মানুষ, এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

৩. হলোগ্রাফিক ওয়ার্মহোল

প্রথমবারের মতো কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে ওয়ার্মহোলের প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালটেকের একদল বিজ্ঞানী। কম্পিউটার সিমুলেশনে তৈরি করেছেন ওয়ার্মহোল।

ওয়ার্মহোল হলো স্থানকালের মধ্যে একধরনের সুড়ঙ্গ। খুব অল্প সময়ে অকল্পনীয় দুরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব এর মাধ্যমে। বাস্তবে ওয়ার্মহোলের প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে তাত্ত্বিকভাবে এর অস্তিত্ব আছে। যদিও বিজ্ঞানীরা ওয়ার্মহোলের বৈশিষ্ট্য বা খুঁটিনাটি সম্পর্কে এখনও প্রায় কিছুই জানেন না।

হলোগ্রাফিক ওয়ার্মহোলের এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে। গবেষণাটির আনুষ্ঠানিক নাম, কোয়ান্টাম কমিউনিকেশন চ্যানেলস অব ফান্ডামেন্টাল ফিজিকস। এর উদ্দেশ্য ছিল কোয়ান্টাম মহাকর্ষকে ভালোভাবে বোঝা। কোয়ান্টাম মহাকর্ষ মূলত কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও সাধারণ আপেক্ষিকতাকে এক সুতোয় বাঁধার তত্ত্ব। এই গবেষণার মাধ্যমে সেদিকেই আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণা ওয়ার্মহোলকে আরও ভালোভাবে জানার নতুন দরজা খুলে দেবে আমাদের সামনে। এর মাধ্যমে বাস্তব ওয়ার্মহোলের বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে, তা যেমন জানা যাবে; তেমনি বোঝা যাবে, বাস্তবে ওয়ার্মহোল পাওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি কেমন হতে পারে। সব মিলিয়ে তাই এটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা বলেই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।

হলোগ্রাফিক ওয়ার্মহোল

৪. চ্যাম্পিয়ন সেমিকন্ডাক্টর

সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী হিসেবে কিউবিক বোরন আর্সেনাইড দারুণ কার্যকর। এ ব্যাপারে আলাদাভাবে গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিজ্ঞানীদের দুটি দল। পরীক্ষণের মাধ্যমে তাঁরা দেখান, সিলিকনের তুলনায় এটির অনেক ভালো তাপ পরিবাহিতা এবং হোল মোবিলিটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সেমিকন্ডাক্টরে ইলেকট্রনের যেসব জায়গা শূন্য বা কম, সেসব জায়গাকে বলা হয় হোল। হোলের গতিশীলতাকে বলা হয় হোল মোবিলিটি। সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে এই হোল মোবিলিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত সিলিকনের হোল মোবিলিটি নতুন আবিষ্কৃত এই সেমিন্ডাক্টরের হোল মোবিলিটির তুলনায় বেশ কম। ফলে সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর চালিত যন্ত্রগুলোর গতি একটা নির্দিষ্ট সীমার পর আর বাড়ানো যায় না। তা ছাড়া সিলিকনের তাপ পরিবাহিতা কম হওয়ায় এসব যন্ত্র খুব অল্প সময়েই গরম হয়।

কিউবিক বোরন আর্সেনাইডে এ সমস্যাগুলো প্রায় নেই বললেই চলে। তাই একে বলা হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন সেমিকন্ডাক্টর। ভবিষ্যতে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের চিপ তৈরিতে সিলিকনের বদলে ব্যবহার করা যাবে এটি, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেজন্য এখনও বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ, এখন পর্যন্ত কেবল গবেষণাগারেই বিজ্ঞানীরা এর কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন।

৫. টেট্রানিউট্রনের সন্ধান

চারটি নিউট্রন কণাকে একসঙ্গে বলা হয় টেট্রানিউট্রন। পারমাণবিক কণা যে চার্জবিহীন অবস্থায় মুক্তভাবে থাকতে পারে, তার প্রমাণ এই টেট্রানিউটন। জাপানের রিকেন নিশিনা সেন্টারের তেজস্ক্রিয় আয়ন বিম ফ্যাক্টরিতে বিজ্ঞানীরা এই টেট্রানিউট্রন তৈরি করেছেন। এজন্য তরল হাইড্রোজেনকে হিলিয়াম-৮ নিউক্লিয়াস দিয়ে আঘাত করা হয়। সংঘর্ষের ফলে হিলিয়াম-৮ নিউক্লিয়াসটি ভেঙে তৈরি হয় একটা আলফা কণা ও একটি টেট্রানিউট্রন। চার্জবিহীন এই পারমাণবিক পদার্থটি খুবই অল্প সময়ের জন্য মুক্ত থাকতে পারে। এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মাত্র ১০-২২ সেকেন্ডের জন্য এদেরকে আলাদা করতে পেরেছিলেন। তবে এ সময়টাই যথেষ্ট কণাগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য। এই সাফল্য কণাপদার্থবিজ্ঞান গবেষণায় দারুণ কাজে আসবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডার্মস্টাট-এর ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অধ্যাপক মেইটাল ডুয়ার।

দলটি এখন টেট্রানিউট্রনের মধ্যে আলাদা আলাদা নিউট্রনগুলো আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরিকল্পনা করছে। চারটি নিউট্রন ছাড়াও ছয়টি এবং আটটি নিউট্রন ধারণকারী নতুন কণা তৈরি ব্যপারেও এই গবেষকরা কাজ করবেন ভবিষ্যতে।

টেট্রানিউট্রন

৬. থার্মোফটোভোলটাইক কোষ

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির গবেষকেরা এ বছর তৈরি করেছেন বিশেষ ধরনের তাপীয়কোষ। এ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি কর্মদক্ষতার সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। একে বলা হচ্ছে থার্মোফটোভোল্টাইক বা টিপিভি কোষ।

বর্তমানে যে সৌরশক্তির প্যানেল বা সৌরকোষ দেখি আমরা, সেগুলো দৃশ্যমান আলোকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তর করে। আর নতুন এই কোষ তড়িৎ শক্তি তৈরি করবে দৃশ্যমান আলোর চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ, অর্থাৎ অবলাল আলো থেকে। ফলে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে পারবে এই যন্ত্রটি। যেমন বিভিন্ন তাপীয় শক্তির স্টোরেজ সিস্টেম, সূর্যের বিকিরণ এবং নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া থেকে নির্গত তাপীয় বর্জ্য ইত্যাদি থেকে বেরিয়ে আসা অবলাল আলো থেকে শক্তি তৈরি করতে পারবে এই কোষ।

কর্মদক্ষতা বেশি হওয়ায় আগের যেকোনো টার্বাইনভিত্তিক জেনারেটর থেকে এটা হবে অনেক সাশ্রয়ী। গ্রিন এনার্জি বা নিরাপদ শক্তির পৃথিবী গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই থার্মোফোটোভোল্টাইক কোষ, এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।

৭. মহাকর্ষে আহারোনভ-বোহম প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মহাকর্ষ ক্ষেত্রে আহারোনভ-বোহম প্রভাব শনাক্ত করেছেন। ১৯৪৯ সালে প্রথম এ বিষয়টি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা। আহারোনভ-বোহম প্রভাব মূলত একটি কোয়ান্টাম ঘটনা, যেখানে চার্জিত কণার তরঙ্গ ফাংশন বৈদ্যুতিক বা চৌম্বকীয় সম্ভাব্যতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিদ্যুৎ বা চৌম্বকক্ষেত্র শূন্য হলেও কণার ওপর প্রভাব পড়ে। ১৯৬০ এর দশকেই এই প্রভাবের প্রমাণ পান বিজ্ঞানীরা। এ বছর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদরা অতিশীতল পরমাণু ব্যবহার মহাকর্ষ ক্ষেত্রে এই প্রভাব লক্ষ্য করেছেন।

অর্থাৎ চার্জিত পরমাণুর তরঙ্গ ফাংশন শুধু বিদ্যুৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারাই নয়, মহাকর্ষ ক্ষেত্র দ্বারাও প্রভাবিত হয়। মহাকর্ষীয় ধ্রুবক নিখুঁতভাবে বের করার জন্য এই প্রভাবটি কাজে লাগানো যেতে পারে বলে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। এ ছাড়া মহাকর্ষকে আরও ভালোভাবে বুঝতেও গবেষণাটি কাজে আসবে।

৮. আলো বিকিরণ ও শোষণের নিখুঁত উপায়

অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টেফান রটার এবং ফ্রান্সের রেনেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথিউ ডেভির নেতৃত্বে একটি দল অ্যান্টিরিফ্লেকশন পদার্থ তৈরি করেছেন। সেটা জটিল মাধ্যমের ভেতর দিয়ে আলোকে নিখুঁতভাবে পাঠাতে পারে।

পাশাপাশি ইসরায়েলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তৈরি করেছেন একধরনের অ্যান্টিলেজার। এর সাহায্যে যেকোনো পদার্থ আলোর তরঙ্গ বিস্তৃত কোণে শোষণ করে নিতে পারে। এ দুই প্রযুক্তি আলোকপদার্থবিজ্ঞানের এক মাইলফলক। দূর মহাকাশ পর্যবেক্ষণ বা পারমাণবিক পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে দারুণ কাজে আসবে এই প্রযুক্তি দুটি।

৯. দ্বিমাত্রিক পদার্থবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত

পদার্থবিজ্ঞানীরা গ্রাফিন নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন আগেও। গ্রাফিন নামটিও তাই প্রায় সবারই পরিচিত হওয়ার কথা। এটি বিশেষভাবে সজ্জিত কার্বন পরমাণু দিয়ে তৈরি এক ধরনের ক্রিস্টাল। ট্রানজিশন মেটাল ডাই-কালকোজেনাইড বা টিএমডি নামের একধরনের গ্রাফিন এ বছর নতুন করে বিজ্ঞানমহলের আলোচনার মধ্যে ছিল।

এক পরমাণু সমান পুরু এই গ্রাফিনের শিট থেকে থেকে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ পদার্থ। গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ দম্পতি অধ্যাপক জি শান এবং অধ্যাপক কিন ফাই মাক। দ্বিমাত্রিক পদার্থবিজ্ঞানে এটি নতুন আলোড়ন তৈরি করেছে।

১০. ভারী বোসন

প্রায় এক দশক আগে শেষবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন রাজ্যে স্থাপিত টেভাট্রন কলাইডার ব্যবহার করে ভাঙা হয়েছিল পরমাণুর প্রোটন। এরপর থেকে বিজ্ঞানীরা এখানে মৌলিক কণা ডব্লিউ বোসন শনাক্ত ও এর প্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ডব্লিউ বোসন কণা দুর্বল পারমাণবিক বলের জন্য দায়ী। এ বছর তাঁরা এক গবেষণাপত্রে বোসন শনাক্ত এবং এর ভর পরিমাপের বিষয়টি জানান। গোলমালটা শুরু হয় তখনই। বিজ্ঞানীরা দেখেন, পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলে ডব্লিউ বোসনের যে ভর বলা আছে, তা থেকে তাঁদের পাওয়া কণাটির ভর বেশ কিছুটা বেশি। প্রায় ০.১ শতাংশ।

ভরের এই গড়মিল পদার্থবিদদের চিন্তায় ফেলে দেয়। এটা কি তবে নতুন ধরণের কণা? হৈচৈ শুরু হয় বৈজ্ঞানিক মহলে। স্ট্যার্ন্ডাড মডেল ভুল নয়। তার প্রমাণ আগেই পাওয়া গেছে ইউরোপের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার থেকে। বিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিক ও গাণিতিক অনুমানের কাছাকাছি ভর পেয়েছিলেন সেই কণাত্বরক যন্ত্রে। তাহলে কি নতুন কোনো ভারী বোসন কণা পাওয়া গেল? নাকি গবেষকদের হিসেবে গোলমাল? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এ বছর এপ্রিল থেকে আবারও চালু হয়ে লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার। এই কণাত্বরক যন্ত্রটিও ব্যবহার করা হচ্ছে এ গবেষণায়।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: বিজ্ঞানচিন্তা, কোয়ান্টা ম্যাগাজিন, ফিজিকস ওয়ার্ল্ড, নেচার, উইকিপিডিয়া, ফিজিকস ডট অর্গ