ইলেকট্রনিকস পাঠশালা-৮
এন-টাইপ ও পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর যেভাবে কাজ করে
সাইকেল চালানো শিখতে হলে কেবল তত্ত্ব শিখলেই হয় না, সত্যিকারে চালিয়েই শিখতে হয়। একইভাবে ইলেকট্রনিকস শিখতে হলে তত্ত্বের পাশাপাশি হাতে-কলমে সার্কিট তৈরি করতে হয়। সার্কিটের বিভিন্ন বিন্দুতে পরিমাপ করে তত্ত্বের সঙ্গে তার মিল-অমিলের কারণ চিন্তা করে খুঁজে বের করতে হয়। আবার কেবল সার্কিট তৈরিই নয়, কীভাবে তাকে খোলসবন্দী করে অন্য সবার ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, তা-ও শিখতে হয়। নইলে ওই সার্কিট কোনো কাজে আসবে না। এই পাঠশালায় তাই কিছু কাজের সার্কিট বানানো শেখানো হবে। সেই সঙ্গে তার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় তত্ত্বও ধাপে ধাপে আলোচনা করা হবে। তাতে একসঙ্গে সব কটি দিকই শেখা হয়ে যাবে
এন-টাইপ ও পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর
গত সংখ্যার পর
আগের পর্বে এন-টাইপ ও পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের কথা উল্লেখ করেছিলাম। এদের নিয়েই আজকের পর্বে আলোচনা করব। পর্ব ৩-এ আমরা দেখেছি, একটি জার্মেনিয়াম সেমিকন্ডাক্টরের পরমাণুগুলো কীভাবে বাইরের কক্ষপথের চারটি ইলেকট্রনের মাধ্যমে চারদিকের আরও চারটি পরমাণুর সঙ্গে কোভ্যালেন্ট বন্ড (বন্ধন) তৈরি করে। ফলে একটি কেলাসিত কঠিন পদার্থ হিসেবে জার্মেনিয়ামের স্ফটিক (Crystal) পাওয়া যায়। সেখানে আরও আলোচনা করেছিলাম, কীভাবে তাপশক্তি পেয়ে কিছু কিছু ইলেকট্রন তাদের বন্ড ভেঙে মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়ায় এক পরমাণু থেকে অপর পরমাণুুর কাছে। আবার এর ফলে ভেঙে যাওয়া বন্ডের জায়গায় একটি ইলেকট্রনের ঘাটতি বা চাহিদা তৈরি হয়, যাকে আমরা বলেছি মুক্ত গর্ত বা হোল। এই মুক্ত ইলেকট্রন ও হোলকে আমরা এককথায় ‘মুক্ত বাহক’ বা ‘ক্যারিয়ার’ (Free carrier) বলি। কারণ, এ দুটিই সেমিকন্ডাক্টরে বিদ্যুৎ-প্রবাহের বাহন। এখানে একটু বলে রাখি, তামা, রুপা ইত্যাদি ধাতব পদার্থে যে বিদ্যুৎ-প্রবাহ হয়, সেখানে বাহন হিসেবে থাকে কেবল মুক্ত ইলেকট্রন। এখানে মুক্ত হোল বলে কিছু নেই। অর্থাৎ মুক্ত হোলের ধারণা শুধু সেমিকন্ডাক্টরের জন্য প্রযোজ্য, ধাতব কন্ডাক্টরে নয়।
বর্তমানে ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসগুলোর বেশির ভাগই সিলিকন ব্যবহার করে তৈরি। এর কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি হলো পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে সিলিকনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। কীভাবে? আমাদের আশপাশে সব বালুকণা হচ্ছে সিলিকন ডাই-অক্সাইড, অর্থাৎ একটি সিলিকনের পরমাণু আর দুটি অক্সিজেন পরমাণুর সম্মিলন। তবে বালু থেকে সিলিকনকে আলাদা করার উপায়টি কিন্তু খুব সহজ নয়, অনেক জটিল প্রক্রিয়ায় অনেক শক্তি খরচ করে তা করতে হয়। আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে, সাধারণ তাপমাত্রায় সিলিকনে মুক্ত বাহকদের সংখ্যা কম, জার্মেনিয়ামে বেশি।
অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বিশুদ্ধতা খুঁজি, কিন্তু এখানে ইচ্ছা করে খাদ মেশানো হচ্ছে। খাদ মেশানোর বিষয়টি সিলিকনকে ভিত্তি করে আলাপ করব এখন।
সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা সাধারণত সূক্ষ্মভাবে বিদ্যুৎ-প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। তাই সাধারণ তাপমাত্রায় এ মুক্ত বাহকদের সংখ্যা কিছুটা কম হলে ভালো। তবে বেশি কম হলেও আবার চলবে না। সিলিকন প্রকৃতিগতভাবে একটি সঠিক স্থানে আছে বলেই এর এত কদর।
আগে আলোচনা করা থার্মিস্টর তৈরির জন্য বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করা হয়, এতে কোনো খাদ (Impurity) থাকে না। কিন্তু এন-টাইপ ও পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর হচ্ছে খাদ মেশানো সেমিকন্ডাক্টর। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিতভাবে অন্য কোনো পদার্থের পরমাণু এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি বেশ মজার।
অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বিশুদ্ধতা খুঁজি, কিন্তু এখানে ইচ্ছা করে খাদ মেশানো হচ্ছে। খাদ মেশানোর বিষয়টি সিলিকনকে ভিত্তি করে আলাপ করব এখন। ছবি ১-এ দেখা যাচ্ছে, একটি কেলাসিত সিলিকনে চারদিকে সিলিকন (ঝর) পরমাণুুর মাঝখানে একটি ফসফরাস (P) পরমাণু। কীভাবে এটি ঢোকানো হয়, তা আমরা আলোচনা করব না। এর জন্য বিভিন্ন জটিল পদ্ধতি রয়েছে। ফসফরাস পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথে রয়েছে পাঁচটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন, আর মূল কেলাসের সিলিকন পরমাণুর রয়েছে চারটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন। একটু বলে রাখি, যেকোনো পরমাণুর ভ্যালেন্স ইলেকট্রনগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আর পরমাণুুর যোজনী বা ভ্যালেন্সি এ সংখ্যা দিয়েই নির্ণয় করা হয়।
আধুনিক ইলেকট্রনিকসের যে বিপ্লব আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা কিন্তু খাদমিশ্রিত পি-টাইপ ও এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তা সম্ভব হতো না।
তা ছাড়া পরমাণুগুলোর জন্য আটটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন হচ্ছে একটি কাঙ্ক্ষিত অবস্থা, এ অবস্থায় সে সবচেয়ে স্থিতিশীল হতে পারে। বিশুদ্ধ সিলিকনের কেলাসে এই কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীল অবস্থা পাওয়ার জন্য প্রতি সিলিকন পরমাণু তার পাশের চারটি পরমাণুর সঙ্গে ভ্যালেন্স ইলেকট্রন এক মজার পদ্ধতিতে ভাগাভাগি করে। অর্থাৎ নিজের চারটি ইলেকট্রন কিছু সময়ের জন্য পাশের চারটি পরমাণুকে ধার দেয়। আবার পাশের চারটি পরমাণু থেকে একটি করে মোট চারটি ইলেকট্রনও সে কিছু সময়ের জন্য ধার নেয়। তাহলে কিছু না কিছু সময়ে সে নিজের চারদিকে আটটি ইলেকট্রন পেয়ে যায়। পাশের পরমাণুগুলোর প্রতিটিই এভাবে চারদিকের চারটি চারটি করে পরমাণুর সঙ্গে ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে কিছু সময়ের জন্য যার যার পাশে কাঙ্ক্ষিত আটটি ইলেকট্রন পেয়ে যায়। এভাবে এদের মধ্যে পারস্পরিক একটি আকর্ষণ বা বন্ড (Bond) তৈরি হয় এবং কেলাসটি শক্তিশালী একটি কঠিন পদার্থ হিসেবে টিকে থাকতে পারে। ভ্যালেন্স ইলেকট্রনের মাধ্যমে এ বন্ড তৈরি হয় বলে একে কো-ভ্যালেন্ট বন্ড বলা হয়। রূপক হিসেবে বলা যায় যে সিলিকন পরমাণুগুলোর সবারই যেহেতু সম্পদের অভাব রয়েছে, তাই তারা একটি সহমর্মী সমাজ তৈরি করে স্থিতিশীল হয়, যেখানে সবাই সম্পদ ভাগাভাগি করে প্রত্যেকের প্রয়োজন পূরণ করে নেয়।
এখন ফসফরাস পরমাণুটির রয়েছে পাঁচটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন। সিলিকনের সমাজে টিকতে হলে তার চারটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন কাজে লাগছে। পঞ্চম ইলেকট্রনের সেখানে কোনো জায়গা নেই। সে খুবই মৃদু আকর্ষণে ফসফরাসের চারদিকে কক্ষপথে ঘুরতে থাকে, তা-ও পরমশূন্য তাপমাত্রায়, অর্থাৎ ০ কেলভিনে (-২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার কাছাকাছি তাপমাত্রায়। তাপমাত্রা একটু বাড়লেই তার পঞ্চম ইলেকট্রনটি বেরিয়ে গিয়ে অন্যান্য সিলিকন পরমাণুর চারদিকে কক্ষপথে ঘুরতে থাকে, এর কাছে কিছুক্ষণ, অন্যটির কাছে কিছুক্ষণ, এভাবে। রূপক হিসেবে বলা যায় যে অন্যদের থেকে বেশি সম্পদ নিয়ে এ সমাজে টিকে থাকা যাবে না। টিকতে হলে ফসফরাসকে তার পঞ্চম ইলেকট্রনকে দান করে দিতে হবে, সবাই তাকে ভাগাভাগি করে ভোগ করবে। অর্থাৎ সে হবে মুক্ত ইলেকট্রন। এ জন্য ফসফরাসকে এখানে বলা হয় Donor impurity বা দাতা খাদ। ইলেকট্রনটির তরফ থেকে দেখলে কবিতার ভাষায় বলা যায়, সব ঘরে মোর ঠাঁই আছে, তাই কোথাও বাঁধি না ঘর। এ রকম অনেক ফসফরাস পরমাণু গোটা সিলিকনের কেলাসের বিভিন্ন জায়গায় ঢুকিয়ে দিতে পারলে সাধারণ তাপমাত্রায় অনেক মুক্ত ইলেকট্রন পাওয়া যাবে। একটি ব্যাপার খেয়াল করা দরকার, বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টরে একটি মুক্ত ইলেকট্রন তৈরি হলে একটি মুক্ত হোলও তৈরি হয়, এখানে কিন্তু সে ব্যাপারটি ঘটছে না। এখানে মুক্ত ইলেকট্রনের বিপরীতে কোনো মুক্ত ‘হোল’ তৈরি হচ্ছে না। তবে পাশাপাশি সাধারণ তাপমাত্রায় কিছু সিলিকন পরমাণুর বন্ড ভেঙে কিছু মুক্ত ইলেকট্রন ও মুক্ত হোলও থাকবে, তবে তার সংখ্যা হবে অনেক কম। যার কারণে ফসফরাস মিশ্রিত গোটা সিলিকনের স্ফটিকের টুকরাটির মধ্যে অনেক বেশিসংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন ও অল্প কিছু মুক্ত হোল থাকবে। সংখ্যার একটি ধারণা দিই। এক সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও পুরুত্বসম্পন্ন একটি কিউব আকৃতির সিলিকনের স্ফটিকে থাকে প্রায় ১০২৪টি (১-এর পর ২৪টি শূন্য) সিলিকনের পরমাণু।
স্ফটিকের বিভিন্ন স্থানে ১০১৫টি (১-এর পর ১৫টি শূন্য) সিলিকন পরমাণু সরিয়ে ফসফরাস ঢুকিয়ে দিলে তা থেকে মুক্ত ইলেকট্রন পাওয়া যাবে ততগুলো। কিন্তু এ ফসফরাস খাদযুক্ত সিলিকন স্ফটিকে সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় সিলিকনের ভ্যালেন্স বন্ড ভেঙে তৈরি হবে মাত্র ১০৫টি (১-এর পর ৫টি শূন্য) করে মুক্ত ইলেকট্রন ও মুক্ত হোল। তাহলে মোট মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা হলো ওপরের দুটি সংখ্যার যোগফল, যা প্রায় ১০১৫ (১-এর পর ১৫টি শূন্য)-এই থাকবে। এখানে ছোট সংখ্যাটি এত ছোট যে যোগফলে তার কোনো প্রভাব থাকবে না। আর মোট মুক্ত হোলের সংখ্যা হলো মাত্র ১০৫ (১-এর পর ৫টি শূন্য)। তাহলে মুক্ত ইলেকট্রনের সংখ্যা মুক্ত হোলের সংখ্যা থেকে প্রায় ১০১০ (১-এর পর ১০টি শূন্য) গুণ বেশি।
তাই এ ধরনের ফসফরাস খাদযুক্ত সিলিকনের একটি টুকরার দুই পাশে যদি ব্যাটারি সংযোগ দিয়ে একটি ইলেকট্রিক ফিল্ড (Electric field) বা বৈদ্যুতিক বলক্ষেত্র তৈরি করা যায়, তবে তার প্রভাবে যে বিদ্যুতের সৃষ্টি হবে, তাতে মুখ্য অবদান থাকবে মুক্ত ইলেকট্রনগুলোরই। মুক্ত হোলের অবদানও থাকবে, কিন্তু সেটি হবে খুবই সামান্য, ওপরে দেওয়া সংখ্যার অনুপাতে। এ জন্য ফসফরাস খাদযুক্ত সিলিকনের এ স্ফটিকে মুক্ত ইলেকট্রনগুলোকে বলা হয় মেজরিটি ক্যারিয়ার (Majority carrier) আর মুক্ত হোলগুলোকে বলা হয় মাইনরিটি ক্যারিয়ার (Minority carrier)। এখানে মেজরিটি ক্যারিয়ার হচ্ছে নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন, তাই negative শব্দের আদ্যক্ষরটি নিয়ে এ ধরনের খাদযুক্ত সেমিকন্ডাক্টরকে বলা হয় এন-টাইপ (n-type) সেমিকন্ডাক্টর।
ছবি ২-এ দেখা যাচ্ছে, একটি কেলাসিত সিলিকনের চারদিকে সিলিকন (ঝর) পরমাণুর মাঝখানে একটি বোরন (B) পরমাণু। বোরনের আছে তিনটি ভ্যালেন্স ইলেকট্রন। যেহেতু চারদিকের সিলিকন পরমাণুর সঙ্গে ভ্যালেন্স বন্ড তৈরি করার জন্য তার একটি ইলেকট্রনের অভাব রয়েছে, তাই একটি ভ্যালেন্স বন্ড গঠিত হবে না, সেখানে থেকে যাবে একটি মুক্ত হোল, আগের তৃতীয় পর্বে যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিলিকনের সহমর্মী সমাজ বলে, তোমার কম থাকলে কি হবে? আমরা সবাই তোমাকে আমাদের ইলেকট্রন কিছু সময়ের জন্য ধার দেব, যেন তুমিও তোমার বাইরে কিছু সময় আটটি ইলেকট্রন দেখতে পাও। তাই অন্য সিলিকন পরমাণু থেকে ভ্যালেন্স ইলেকট্রন এসে বোরনের ঘাটতি পূরণ করে দেয় আর তার নিজের পাশে তৈরি হয় একটি মুক্ত হোল। তখন আবার অপর একটি সিলিকন পরমাণু তার ইলেকট্রনকে পাঠিয়ে দেয় আগের ত্যাগী সিলিকনের কাছে, আর নিজের পাশে ইলেকট্রনের ঘাটতি বা মুক্ত হোল তৈরি করে। এভাবে চলতে থাকে। ফলে মনে হবে যে মুক্ত হোলটি স্ফটিকের মধ্যে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে। অনেক সংখ্যায় বোরন পরমাণু সিলিকন স্ফটিকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে সাধারণ তাপমাত্রায় ততগুলো মুক্ত হোল পাওয়া যাবে। যেহেতু বোরন পরমাণুটি অন্যের কাছ থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করছে, তাই একে বলা হয় acceptor impurity বা গ্রহীতা খাদ।
আগের এন-টাইপের মতোই এখানেও তাপশক্তির কারণে সিলিকনের ভ্যালেন্স বন্ড ভেঙে কিছু মুক্ত ইলেকট্রন ও মুক্ত হোল তৈরি হবে, কিন্তু এদের সংখ্যা হবে অতি নগণ্য। আগের এন-টাইপের উদাহরণের সংখ্যাগুলো ঠিক উল্টিয়ে দেওয়া যায় এ ক্ষেত্রে। ফলে এ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ-প্রবাহে মুখ্য অবদান রাখবে মুক্ত হোল। যেহেতু ইলেকট্রিক ফিল্ডের প্রভাবে মুক্ত ইলেকট্রন যেদিকে চলে মুক্ত হোল চলে তার বিপরীত দিকে, তাই মুক্ত হোলকে একটি পজিটিভ চার্জযুক্ত কণা হিসেবে কল্পনা করা যায়। বোরন খাদ মেশানো সিলিকনে যেহেতু অসংখ্য মুক্ত হোল থাকে আর স্বল্পসংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন থাকে, তাই এখানে মুক্ত হোল হচ্ছে মেজরিটি ক্যারিয়ার (Majority carrier) আর মুক্ত ইলেকট্রন হচ্ছে মাইনরিটি ক্যারিয়ার (Minority carrier)। যেহেতু মেজরিটি ক্যারিয়ার হচ্ছে কাল্পনিক পজিটিভ চার্জযুক্ত মুক্ত হোল, তাই এ ধরনের খাদযুক্ত সেমিকন্ডাক্টরকে বলা হয় পি-টাইপ (p-type) সেমিকন্ডাক্টর, positive শব্দের আদ্যক্ষরটি নিয়ে।
আধুনিক ইলেকট্রনিকসের যে বিপ্লব আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা কিন্তু এ খাদমিশ্রিত পি-টাইপ ও এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টরের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বিশুদ্ধ সেমিকন্ডাক্টর দিয়ে তা সম্ভব হতো না। আগামী কয়েকটি পর্বে আমরা আলোচনা করব ডায়োড কীভাবে একমুখী বিদ্যুৎ-প্রবাহের বাল্ব হিসেবে কাজ করে, ডায়োডের কিছু প্রয়োগ ও আরও নতুন নতুন ব্যবহার—যেমন এলইডি, ফটো-সেন্সর, সোলার সেল, ইত্যাদি।
তবে সেমিকন্ডাক্টরে প্রকৃতিগতভাবে সহমর্মী সমাজের যে পরিচয় পেলাম, তা সুন্দর, স্থিতিশীল মানব সমাজ তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে পারে কি? পাঠককে পাশাপাশি এ চিন্তাও করতে অনুরোধ করব।