ডপলার এফেক্ট কী

মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে—এই কথা জানা গেছে ডপলার এফেক্ট বা ডপলার ক্রিয়ার মাধ্যমে। এই একই কারণে দূর ও নিকটগামী অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দের তীক্ষ্মতায় পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু ঠিক কীভাবে ঘটে ডপলার ক্রিয়া? আর কীভাবেই-বা আমরা এটা আবিষ্কার করলাম?

ডপলার ক্রিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, কোনো মহাজাগতিক বস্তু দূরে চলে যাচ্ছে, নাকি কাছে আসছে?ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাস

১৮৪০-এর দশকের শুরুর দিকের কথা। অস্ট্রীয় পদার্থবিদ ক্রিশ্চিয়ান ডপলার দেখলেন, উত্স থেকে দর্শকের দূরত্বের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় শব্দ ও আলোর তরঙ্গের দৈর্ঘ্য। ১৮৪৫ সালে বিষয়টি পরীক্ষা করেন ক্রিস্টফ বাইস ব্যালট। তিনি গেলেন এক দল গায়কের কাছে। তাঁদের চলন্ত ট্রেনে বসে একটি নির্দিষ্ট সুর বাজাতে বললেন। নিজে দাঁড়িয়ে রইলেন প্ল্যাটফর্মে। দেখলেন, ট্রেন তাঁকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় বদলে যাচ্ছে সুর।

ডপলার ক্রিয়া কী?

আপনি রাস্তায় হাঁটছেন। পাশ দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে চলে গেল একটি অ্যাম্বুলেন্স। এটি কাছে আসার সময় বেড়ে গিয়েছিল সুরের তীক্ষ্মতা। আবার কমে গিয়েছিল আপনাকে পেরিয়ে চলে যাওয়ার সময়। এটিই ডপলার ক্রিয়া। শব্দতরঙ্গের সংকোচন ও প্রসারণের ফল এটি। কতটা তীক্ষ্ম শব্দ শুনবেন, সেটা নির্ভর করবে শব্দের কম্পাঙ্কের ওপর। কম্পাঙ্ক হলো প্রতি সেকেন্ডে উত্পন্ন স্পন্দনের সংখ্যা। সাইরেনের মূল কম্পাঙ্ক একই থাকলেও গাড়ি কাছে আসার সময় একই সংখ্যক তরঙ্গকে সংকুচিত হয়ে ছোট্ট স্থানে জায়গা করে নিতে হয়। ফলে আপনার শোনা শব্দের কম্পাঙ্ক ও তীক্ষ্মতা বাড়ে। গাড়ি দূরে যাওয়ার সময় শব্দতরঙ্গগুলো লম্বা জায়গায় থাকায় তীক্ষ্মতা কমে। গাড়ির শ্রোতার কাছে এই তীক্ষ্মতা একই থাকে।

ডপলার ক্রিয়া
ছবি: বিজ্ঞানচিন্তা

এক কথায়

শব্দের আপাত তীক্ষ্মতা উত্স ও শ্রোতার মধ্যকার দূরত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। দূরত্ব কমলে তীক্ষ্মতা বেড়ে যায়। দূরুত্ব বাড়লে তীক্ষ্মতা কমে।

লাল ও নীল সরণ

শব্দের মতোই ডপলার ক্রিয়া (Doppler Effect) আলোর জন্যও প্রযোজ্য। আলোর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক থেকে এর রং চেনা যায়। ফলে একটি গতিশীল বস্তুর রং কীভাবে বদলাচ্ছে, তা জেনে বের করা যায় যে বস্তুটি আমাদের থেকে দূরে যাচ্ছে, নাকি কাছে আসছে। মার্কিন জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল এ প্রক্রিয়ায় আবিষ্কার করেন, অধিকাংশ গ্যালাক্সি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সম্প্রসারিত হচ্ছে মহাবিশ্ব। কারণ, অধিকাংশ মহাজাগতিক বস্তু থেকে আসা আলোর কম্পাঙ্ক কমে ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে গিয়ে দৃশ্যমান বর্ণালির লাল অংশের দিকে সরে যাচ্ছে (Redshift)। কিছু নক্ষত্র ও গ্যালাক্সির আলো আবার সরে যাচ্ছে নীল প্রান্তের দিকে (Blueshift)। এর অর্থ, এরা আমাদের কাছে আসছে। কারণ, দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম এবং নীল আলোর বেশি।