সিডি দিয়ে বানাও বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র

সবকিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি। আর পরমাণু আলোর রঙের ওপর প্রভাব ফেলে। একেক পরমাণু থেকে তাই একেক ধরনের বর্ণালি পাওয়া যায়। বর্ণালীমিতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আলো নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বের করতে পারেন, কোন মৌলের পরমাণু থেকে এই আলোটা আসছে। আর এটা করার জন্য তাঁরা ব্যবহার করেন বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র।

বিজ্ঞানীদের মতো অনেক ভালো বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র হয়তো আমরা বানাতে পারব না, কিন্তু চাইলে বাসায় বসেই তৈরি করে ফেলা যাবে কাজ চালানোর মতো ছোটখাটো বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র। তুমিও চাইলে সেটা বানাতে পারবে, সিডি দিয়ে!

যা যা লাগবে

১. কার্ডবোর্ডের টয়লেট-রোল টিউব

২. শক্ত কার্ডবোর্ড

৩. একটা সিডি (যেটা তুমি আর ব্যবহার করবে না!)

৪. টেপ

৫. কালো কাগজ

৬. কাঁচি

৭. আঠা

ধাপ ১

প্রথমে কালো কাগজটা নিয়ে গোল করে মুড়ে নিতে হবে। তারপর টয়লেট-রোল টিউবটার ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে সেটা। ফলে টিউবের ভেতরের প্রতিফলন কমে যাবে এবং বর্ণালিটা ভালোভাবে বোঝা যাবে।

ধাপ ২

এবার টেপ দিয়ে সিডির ওপরের চকচকে আবরণটা তুলে ফেলতে হবে। কাজটা খুবই সহজ। চকচকে অংশটার ওপরে টেপ লাগিয়ে, টান দিয়ে তুলে নিলেই হবে। উঠে যাবে চকচকে আবরণ।

ধাপ ৩

টিউবটার পরিধি থেকে কিছুটা বড় করে একটা কার্ড কেটে নিতে হবে। এবার কার্ডটার মাঝখানে আয়তাকার একটা অংশ কেটে নিতে হবে কাঁচি দিয়ে। এখন টিউবের মাথায় টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে কার্ডটা।

ধাপ ৪

দুটো ছোট কার্ড লাগবে। কার্ড দুটো মিলে সেই আয়তাকার কাটা জায়গাটা ঢাকতে পারলেই চলবে। এখন এদের ওই কাটা জায়গার ওপরে এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে খুব সামান্য ফাঁকা থাকে। আঠা দিয়ে ওভাবেই লাগিয়ে দিতে হবে কার্ড দুটোকে।

ধাপ ৫

এবারে টিউবের ওমাথাকে সিডির মাঝখানের ফুঁটোটা থেকে একটু দূরে, একপাশে আঠা দিয়ে ভালো করে জুড়ে দিতে হবে। এইতো, তৈরি হয়ে গেল বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র!

ধাপ ৬

চোখের একদম কাছাকাছি ধরে, সিডির মধ্য দিয়ে যেকোনো আলোর উৎসের দিকে তাকাও। দেখবে সিডির গায়ে ফুটে উঠেছে সাতরঙা বর্ণালি।

বর্ণালির বিজ্ঞান

বিজ্ঞানীদের জন্য বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র আসলে দারুণ কাজের জিনিস। বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত গ্যাসের দিকে তাকালে কালোর মাঝে নানা রঙের আলোর রেখা দেখা যায়। এই যে কালোর মাঝে নির্দিষ্ট তরঙ্গের আলোর রেখা এরা সব পদার্থের জন্য এক হয় না। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিটা পদার্থের বর্ণালি ভিন্ন হয়। হাইড্রোজেন যে তরঙ্গের বর্ণালি দেয়, অন্য কেউ তেমনটা দেয় না। একইভাবে সোডিয়াম যেটা দেয়, সেটাও আর কেউ দেয় না। সরল কথায় এদের তুলনা করা যায় আমাদের টিপসইয়ের সঙ্গে। মানুষের যেমন হাত এবং আঙুল দূর থেকে দেখতে একই রকম লাগলেও টিপসই নিলে ভিন্ন ভিন্ন ছাপ পাওয়া যায়, তেমনি প্রতিটি পদার্থের বর্ণালি নিলে দেখা যায়, সবগুলোই আলাদা। (নিচে কার্বন ও পারদের নিঃসরণ বর্ণালি দেখানো হলো।)

নক্ষত্রের বুকে এ রকম উত্তপ্ত গ্যাস থাকে। বিজ্ঞানীরা তাই পৃথিবীর এক কোণে, গবেষণাগারে বসে, বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রেখে যেকোনো নক্ষত্রের আলোর দিকে তাকিয়ে চট করে বলে দিতে পারেন, ওই নক্ষত্রের বুকে কী কী পদার্থ আছে। মজার না ব্যাপারটা?

মহাবিশ্বের বিচিত্র সব রহস্যও ফাঁস করে দেয় বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র

শুধু উপস্থিত পদার্থের ওপরে নির্ভর করে বর্ণালি তৈরি হয় না। তাপমাত্রা, গতি, চাপ, চৌম্বকক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ও বর্ণালির ওপরে প্রভাব ফেলে। সে জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাইলে এক বর্ণালিমিতি ব্যবহার করেই মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তুর ব্যাপারে অনেক কিছু জেনে ফেলতে পারেন। যেমন, নিচে ওরিওন নেবুলার একটা ছবি আছে। এর মধ্যে নতুন সব গ্রহ ও নক্ষত্র তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্ণালিমিতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এসব গ্রহ-নক্ষত্রের জন্মপ্রক্রিয়ার ব্যপারে অনেক কিছু জেনেছেন। দেখা গেছে, পানি, অ্যালকোহলসহ নানা ধরনের পদার্থ আছে। এবার বুঝলে তো, বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?