‘নোবেল জয়ের খবর শুনেও স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগায়নি’—পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী জন মার্টিনিস

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী জন মার্টিনিসছবি: একাথিমেরিনি

মার্কিন বিজ্ঞানী জন মার্টিনিস চলতি বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পেয়েছেন ব্রিটিশ গবেষক জন ক্লার্ক ও ফরাসি বিজ্ঞানী মিশেল দ্যভোরে। ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং ইলেকট্রিক সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন গবেষণার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

জন মার্টিনিসের জন্ম ১৯৫৮ সালে। তিনি ১৯৮৭ সালে জন ক্লার্কের অধীনে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। নোবেল জয়ের পর তিনি অ্যাডাম স্মিথকে একটা সাক্ষাৎকার দেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন জিনাত শারমিন

জন মার্টিনিস: হ্যালো, জন মার্টিনিস বলছি।

অ্যাডাম স্মিথ: হ্যালো, আমি অ্যাডাম স্মিথ, নোবেল প্রাইজ ডটঅর্গ থেকে বলছি।

জন মার্টিনিস: দারুণ। আমাকে ফোন করার জন্য ধন্যবাদ।

 

অ্যাডাম স্মিথ: আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে ভালো লাগছে। আর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন।

জন মার্টিনিস: হ্যাঁ, আজ সকালটা বেশ ব্যস্তই কেটেছে বলতে হবে। কিন্তু অনুভূতিটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

অ্যাডাম স্মিথ: খবরটা কীভাবে জানলেন?

জন মার্টিনিস: ঘটনাটা একটু মজার। আমি আগেই ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি। আর আমার স্ত্রী পাশের ঘরে রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত বই পড়ছিলেন। সাধারণত এমনই হয়। হঠাৎ তিনি একের পর এক ফোন কল পেতে শুরু করলেন। তিনিই সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে পারলেন, কিছু একটা ঘটছে। আমার স্ত্রী খুব দয়ালু। তিনি আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবর দেননি। আমাকে ঘুমাতে দিয়েছেন। কারণ তিনি জানেন, ওই মুহূর্তে আমার ঘুমটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি সকাল সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠি। তখন তিনি আমাকে নোবেল পুরস্কারের বিষয়টি জানান। সকাল ছয়টার মধ্যেই সাংবাদিকেরা আমাদের বাসায় সাক্ষাৎকার নিতে চলে আসেন। তারপর থেকে একটানা ফোন আর ই-মেইল চলছে। বেশ মজাই লাগছে।

অ্যাডাম স্মিথ: অবিশ্বাস্য! এত বড় খবরেও তিনি আপনার ঘুম ভাঙাননি। শান্তভাবে সবকিছু সামলেছেন! সত্যিই প্রশংসনীয়।

জন মার্টিনিস: একদম ঠিক বলেছেন। তিনি খুবই যত্নশীল। দুই ঘণ্টা আগে জানলে কী-ই বা হতো! শুধু ঘুমটা নষ্ট হতো। তাহলে এত ব্যস্ত একটি দিন আমাকে ক্লান্তি নিয়েই পার করতে হতো। তবে হ্যাঁ, উত্তেজনায় তিনি সারা রাত আর ঘুমাননি!

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী জন মার্টিনিস
ছবি: একাথিমেরিনি

অ্যাডাম স্মিথ: নোবেলজয়ীরা একেকজন পৃথিবীর মানবসম্পদ। প্রত্যেক নতুন বিজয়ীর একজন রক্ষাকর্তা প্রয়োজন। আপনার তো সেই রক্ষাকর্তা আগে থেকেই আছেন।

জন মার্টিনিস: একদম ঠিক। আমার স্ত্রী এখন আমার প্রেস ম্যানেজারের মতো কাজ করছেন। তিনি ফোন কল ও অন্যান্য যোগাযোগ সামলাচ্ছেন। পুরোনো ছাত্রছাত্রী ও সহকর্মীরা অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা খুব দারুণ।

অ্যাডাম স্মিথ: দারুণ! আপনি কি ভাবার সুযোগ পেয়েছেন, এই পুরস্কার আপনার কাছে ঠিক কী অর্থ বহন করে?

জন মার্টিনিস: সত্যি বলতে, নোবেল পাওয়ার আশা কেউ করতে পারে না। এটি অনেক বড় একটি স্বীকৃতি। আমি কৃতজ্ঞ যে নোবেল কমিটি আমাদের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর বিষয় হলো, আমাদের শুরু করা কাজটি এখন এক হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সবাই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও সুপারকন্ডাকটিং কিউবিট নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের পরীক্ষাগুলো অনেক নতুন গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে। এটাই সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি। তবে নোবেল পুরস্কারও কম নয়! মিশেল দ্যভোরে ও জন ক্লার্কের সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য।

অ্যাডাম স্মিথ: আজ সকালে (৭ অক্টোবর) জন ক্লার্ক বলছিলেন, আপনারা তিনজন যখন গবেষণা শুরু করেন, সেই সময়টা কত অসাধারণ ছিল। আপনারা একে অপরকে খুব অনুপ্রাণিত করতেন।

জন মার্টিনিস: নিঃসন্দেহে। আমরা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অবদান রেখেছি। তখনকার দিনে এই সিস্টেমের পদার্থবিদ্যা ছিল চিন্তার বাইরে। আমাদের একদম মৌলিক বিষয়গুলোও নিজে থেকে বুঝে নিতে হয়েছিল। কারণ আমাদের আগে কেউ এই কাজ করেনি। জন ক্লার্ক ছিলেন অসাধারণ নেতা। আর মিশেলের সঙ্গে আমি প্রতিদিন কাজ করতাম, যা আমার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন মানুষদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা ছিল বিরাট সৌভাগ্যের। আমি আজও সেই উদ্যম আমার গবেষণাগারে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি।

অ্যাডাম স্মিথ: এখন আপনি আপনার নতুন কোম্পানি ‘কোল্যাব’-এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করছেন।

জন মার্টিনিস: হ্যাঁ।

অ্যাডাম স্মিথ: এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?

জন মার্টিনিস: কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা বাস্তবে অনেক কঠিন। এতে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিশাল জটিলতা রয়েছে। আমরা এখন কিউবিট উৎপাদনের মানোন্নয়নের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছি। এখানে এখনো অনেক উন্নতির সুযোগ আছে। কীভাবে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টেকসই উপায়ে এই প্রযুক্তি তৈরি করা যায়, আমরা তা নিয়েই কাজ করছি।

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী জন মার্টিনিস
ছবি: চালমারস

অ্যাডাম স্মিথ: চার দশক আগের মতোই এখনো আসল বিষয়টি হলো, সঠিক সময়ে সঠিক মানুষদের একত্র করা।

জন মার্টিনিস: একদম তাই—সঠিক সময়, সঠিক মানুষ, সঠিক মনোযোগ। এখন পার্থক্য শুধু এটুকু যে, এখন আমাদের দরকার সঠিক কোম্পানি আর প্রযুক্তি। আসলে যে কোনো নতুন উদ্ভাবনে সহযোগিতাই মূল চাবিকাঠি।

 

অ্যাডাম স্মিথ: নতুন কিছু করার অদম্য রোমাঞ্চ আর কৌতূহল থেকেই সবকিছুর জন্ম…

জন মার্টিনিস: ঠিক তাই, আর আমরা গবেষকেরা সেটা খুবই উপভোগ করি।

অ্যাডাম স্মিথ: আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল। জানি আজ আপনি অসংখ্য সাক্ষাৎকারে ব্যস্ত, তাই বেশি সময় নিচ্ছি না। আপনার এই অসাধারণ দিনের জন্য শুভেচ্ছা রইল।

জন মার্টিনিস: অনেক ধন্যবাদ, খুব ভালো লাগল।

সূত্র: নোবেল প্রাইজ ডটঅর্গ