ভারতের নামী তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী অশোক সেন। ১৯৫৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক। যুক্তরাষ্ট্রের স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেছেন ফার্মিল্যাবে ও স্ট্যানফোর্ড লিনিয়ার এক্সেলেটর কেন্দ্রে। ভারতে ফিরে প্রথমে যোগ দেন টাটা ইনস্টিটিউটে। বর্তমানে এলাহাবাদ হরিশ্চন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গবেষণা করছেন তিনি। ড. সেন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও স্ট্রিংতত্ত্ববিদ হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। স্ট্রিং থিওরির বিস্তারিত ব্যাখ্যার পাশাপাশি কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি–সম্পর্কিত নানা জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন তিনি। পেয়েছেন পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম সেরা পুরস্কার ‘ফান্ডামেন্টাল ফিজিকস পুরস্কার’। ভারত সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত এই বাঙালি বিজ্ঞানী রয়্যাল সোসাইটির সদস্য। এ ছাড়া ২০১৪ সালে অত্যন্ত সম্মানিত ডিরাক মেডেলও পান এই তাত্ত্বিক পদার্থবিদ। সম্প্রতি হাই এনার্জি ফিজিকস–বিষয়ক বিশেষ এক আয়োজনে বাংলাদেশে এসেছিলেন এই বিজ্ঞানী। ছেলেবেলা, দেশে বিজ্ঞানচর্চা আর সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বিজ্ঞানচিন্তার সঙ্গে। এই আলাপচারিতায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। সঙ্গে ছিলেন বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার এবং সহসম্পাদক আবদুল গাফফার।

বিজ্ঞানচিন্তা: শুরুতেই আপনার শৈশব, কৈশোর ও লেখাপড়া সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার ছেলেবেলা সম্পর্কে কিছু বলুন।

অশোক সেন: উত্তর কলকাতায় জন্ম আমার। সেখানেই বড় হয়েছি। বিএসসি পর্যন্ত আমার শিক্ষাজীবন কলকাতাতেই কেটেছে। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় নামে এক বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনার হাতেখড়ি। খুব উন্নত মানের না হলেও লেখাপড়ার মান সেটার খুব খারাপও ছিল না। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে আমি বেশ কয়েকজন ভালো শিক্ষক পেয়েছিলাম। অমল রায় চৌধুরী, বিখ্যাত রায়চৌধুরী সমীকরণের জনক—সরাসরি আমার শিক্ষক ছিলেন। থার্মোডায়নামিকস পড়াতেন তিনি। আমি যে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠি, এর পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল। আমাদের ব্যাচে সবাই খুব আগ্রহী ছিল পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে। স্নাতকের পর কানপুরের আইআইটিতে পড়তে যাই। ওখানে মাস্টার্স করি পদার্থবিদ্যায়। তারপর তো যুক্তরাষ্টে পাড়ি দিই। স্টোনি ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করি।

বিজ্ঞানচিন্তা: এখন কী নিয়ে গবেষণা করছেন?

অশোক সেন: বর্তমানে এলাহাবাদের হরিশ্চন্দ্র রিসার্চ সেন্টারে গবেষণা করছি। স্ট্রিং থিওরি নিয়ে। স্ট্রিংতত্ত্বের তো অনেকগুলো ক্ষেত্র আছে, এগুলোর বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রেই আমার কাজ। ব্ল্যাকহোলে স্ট্রিংতত্ত্ব প্রয়োগ করা হচ্ছে। এটা নিয়ে আমি কাজ করেছি। আরও নানা রকম মৌলিক হিসাব-নিকাশ নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। স্ট্রিং থিওরি নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ চলছে। কিন্তু এখনো অনেক ফাঁক রয়ে গেছে এই তত্ত্বে। আমি সেই ফাঁকফোকরগুলো পূরণের চেষ্টা করছি। তবে আমার মূল আকর্ষণ স্ট্রিং ডুয়েলিটি নিয়ে। একই ফিজিক্যাল তত্ত্বকে স্ট্রিং থিওরির বিভিন্ন বর্ণনায় কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, সেটাই আসলে স্ট্রিং ডুয়েলিটির মূল কাজ। এগুলো নিয়েই আমার গবেষণা।

বিজ্ঞানচিন্তা-মেটাল আয়োজিত বিজ্ঞানবক্তৃতায় বক্তব্য রাখছেন অশোক সেন

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনার পিএইচডি ছিল সবল নিউক্লীয় বল নিয়ে। সেখান থেকে কেন আপনি স্ট্রিং তত্ত্বের দিকে ঝুঁকলেন?

অশোক সেন: শুরুতে আমার মূল আকর্ষণ ছিল হাই এনার্জি ফিজিকস নিয়ে। সে জন্য পোস্ট ডক্টরাল করতে যাই যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মিল্যাবে। হাই এনার্জি ফিজিকসের অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করতে শুরু করি। তখন জন শোয়ার্জের একটা ফিজিকস রিপোর্ট আমার হাতে আসে। সেটা পড়তে শুরু করি। স্ট্রিং থিওরির পাইওনিয়ারদের একজন তিনি। সেই রিপোর্ট পড়তে গিয়েই স্ট্রিং থিওরি আকর্ষণ করে আমাকে। এর কিছুদিন পর এডওয়ার্ড উইটেনের স্ট্রিং তত্ত্বের একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। তারপর মাইকেল গ্রিন আর জন শোয়ার্জের স্ট্রিং তত্ত্ব সাড়া ফেলে দেয়। এসব ঘটনাই আমাকে স্ট্রিং তত্ত্বের প্রতি আগ্রহী করে।

বিজ্ঞানচিন্তা: আপনিই তো প্রথম ব্রেকথ্রু পুরস্কার পেয়েছিলেন?

অশোক সেন: শুধু আমিই নই। আমার সঙ্গে আরও আটজন পেয়েছিল এই পুরস্কার। হ্যাঁ, আমরাই প্রথম এই পুরস্কার পেয়েছি।

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার বেশির ভাগ পাঠক কিশোর-তরুণ। তাদের জন্য সহজ ভাষায় স্ট্রিং থিওরি বুঝিয়ে বলুন।

অশোক সেন: এটা বোঝার জন্য আগে পদার্থবিজ্ঞানের একটা দুর্বলতার কথা জানতে হবে। সেটা হলো মহাকর্ষ বলের সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বৈরিতা। সবল নিউক্লীয়, দুর্বল নিউক্লীয় কিংবা বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বলকে কোয়ান্টাম মেকানিকস দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু মহাকর্ষ বলকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কোয়ান্টাম তত্ত্বের মূল কথা হলো, প্রকৃতির উপাদানগুলো ভাঙলে একসময় মূল কণিকাগুলো পাওয়া যায়। কিন্তু স্ট্রিং থিওরি বলে, এই মূল কণাগুলোও আসলে একধরনের তন্তু বা সুতার কম্পন। সেই সুতা বা স্ট্রিংগুলোর বিভিন্ন মোডে কম্পনের কারণেই সেগুলোকে কণা হিসেবে আমরা দেখি। এটা শুধু একটা গাণিতিক চিন্তা থেকে শুরু হয়েছিল। তখন অবশ্য মহাকর্ষের সঙ্গে এর সম্পর্কের কথা কেউই ভাবেনি। পরে দেখা গেল, স্ট্রিং থিওরিতে একটা মৌলিক কণা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসছে, সেটা ঠিক মহাকর্ষের মতো আচরণ করে। সেই কণাটা কোয়ান্টায়িত। অর্থাৎ কোয়ান্টাম মহাকর্ষের একটা তত্ত্ব পাওয়া গেল স্ট্রিং থিওরি থেকে। এটা আসলে পেনিসিলিন আবিষ্কারের মতো অপ্রত্যাশিত এক আবিষ্কার। সেখান থেকে স্ট্রিং থিওরির পথচলা শুরু হয়। এর মূল অংশে আছে গেজ থিওরি। অনেকে মনে করে, ভবিষ্যতে সব শক্তিকেই এই স্ট্রিং থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে। কিন্তু সেটা এখনো সম্ভব হয়নি। এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে।

বিজ্ঞানচিন্তা: স্ট্রিং থিওরির পরীক্ষামূলক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। তাই অনেকে বলেন, এর টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

অশোক সেন: মৌলিকভাবে স্ট্রিং থিওরির কিন্তু প্রমাণ আছে। খুব উচ্চশক্তিতে পার্টিকেলগুলোর বিস্ফোরণ ঘটালে স্ট্রিংগুলোর কাঠামো দেখতে পাওয়ার কথা। সমস্যা হচ্ছে, এটা দেখতে যে স্কেলের মাইক্রোস্কোপ দরকার, সেটা এখন আমাদের হাতে নেই। বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপটি ১০-১৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের কোনো বস্তু দেখতে পারে। এগুলোর সাহায্যে খুদে কণিকাদের দেখা সম্ভব। কিন্তু স্ট্রিংগুলোর দৈর্ঘ্য ১০-৩৩ সেন্টিমিটার। এই রেঞ্জে যদি কোনো মাইক্রোস্কোপ নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে স্ট্রিং দেখা সম্ভব। এখনই এই রেঞ্জের মাইক্রোস্কোপ তৈরি সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে হয়তো সম্ভব হবে। আর তখন যদি স্ট্রিং কাঠামো দেখা সম্ভব না হয়, কেবল তখনই স্ট্রিং থিওরিকে বাতিল বলা যাবে, তার আগে নয়। সে পর্যন্ত যাওয়ার আগে আমাদের কী করার আছে? হতে পারে যে আমরা আশা ছেড়ে দিই। যেদিন এমন ক্ষমতার মাইক্রোস্কোপ আমাদের হাতে আসবে, সেদিন আবার স্ট্রিং থিওরি নিয়ে গবেষণা শুরু করব। আরেকটা হতে পারে, এই ধারণার ওপর নির্ভর করেই আমাদের সেই গবেষণা অব্যাহত রাখা।

বিজ্ঞানচিন্তা: স্ট্রিং থিওরির সফলতা ঠিক কোথায় বলে আপনি মনে করছেন?

অশোক সেন: স্ট্রিং থিওরির মূল সফলতা হলো কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি ব্যাখ্যা করতে পারা। অবশ্য এটা ব্যাখ্যার চেষ্টা অনেকগুলো তত্ত্ব দিয়েই করা হয়েছে। এর মধ্যে লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি আছে। আরও কিছু তত্ত্ব আছে। কিন্তু স্ট্রিং থিওরির শক্তিমত্তার জায়গা হলো, অন্য সব তত্ত্বের চেয়ে এটা দিয়েই কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। আবার এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলোও অনেক বেশি যুক্তিসংগত।

বিজ্ঞানচিন্তা: মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি নিয়ে স্ট্রিং থিওরি কী বলে?

অশোক সেন: স্ট্রিং থিওরি ব্যবহার না করেও কিন্তু মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি ব্যাখ্যা যায়। মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। আগে মনে করা হতো এই প্রসারণ একদিন থেমে যাবে। তখন মহাবিশ্ব সংকুচিত হবে। কিন্তু ডার্ক এনার্জি আবিষ্কারের পর বদলে যায় হিসাব। বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত, মহাবিশ্বের প্রসারণ কখনো থামবে না। সময়ের সঙ্গে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা কমতে থাকবে। একসময় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌছাবে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের তাপীয় মৃত্যু হবে। বর্তমান প্রচলিত তত্ত্ব সেকথা বলে। কিন্তু ফিল্ড স্ট্রিং ফিল্ড থিওরির হিসাবটা একটু অন্য রকম। ধরা যাক, কণাগুলোর জন্য কোয়ান্টাম ফিল্ড আছে—উঁচু-নিচু। অনেকটা পাহাড়ে ভরা কোনো জায়গার কথা ভাবতে পারেন। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে, প্রতিটা উপত্যকায় একটা করে কণা থাকতে পারবে, যদি উপত্যকাগুলোর সর্বনিম্ন শক্তিতে (অ্যাবস্যুলেট মিনিমাম) থাকে। তো আমাদের মহাবিশ্বের কণাদের ক্ষেত্র, এর যেসব বিন্দুতে কণা আছে, সেগুলো সর্বনিম্ন শক্তিতে আছে বলেই কণারা থাকতে পারছে। আর এই কণাগুলো দিয়েই মহাবিশ্ব তৈরি। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্বে বলা হচ্ছে, মহাবিশ্বের কণাগুলো যে বিন্দুতে বসে আছে, ওগুলো অ্যাবস্যুলেট মিনিমাম নয়, লোকাল মিনিমাম। একটা সময় গিয়ে লোকাল মিনিমাম অবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তখন কণাগুলো আর এই বিন্দুতে থাকতে পারবে না। চলে যাবে অ্যাবস্যুলেট মিনিমাম শক্তির বিন্দুতে। আর সেই বিন্দুগুলো আসলে আলাদা আরেকটা মহাবিশ্বের (যেটা আসলে অ্যাকচুয়াল মহাবিশ্ব) অংশ। তাই লোকাল অবস্থা ভেঙে পড়লে আমাদের বর্তমান মহাবিশ্বের আর অস্তিত্ব থাকবে না। এই মহাবিশ্বের সব উপাদান চলে যাবে আরেকটি মহাবিশ্বে। কিন্তু এটা একটা দুর্বল সম্ভাবনা। এটা যদি ঘটে, তাহলে তাপীয় মৃত্যুর আগেই আমরা অ্যাকচুয়াল মহাবিশ্বে চলে যাব। আর তা নাহলে তাপীয় মৃত্যুই ঘটবে, যাকে বলা হয় বিগ ফ্রিজ।

বিজ্ঞানচিন্তা: এ দেশের কোনো শিক্ষার্থী যদি আপনার সঙ্গে গবেষণা করতে চায়, তাকে কী বলবেন?

অশোক সেন: প্রথমেই আমাদের ইনস্টিটিউটে আবেদন করতে হবে। এখানে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হলে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। মনোনীত হলে কাজ করার সুযোগ মিলবে সহজেই।

বিজ্ঞানচিন্তা: দেশে স্ট্রিং গবেষণা শুরু করতে চাইলে আমাদের কী কী করা উচিত?

অশোক সেন: এখানকার পরিস্থিতি তো আমি জানি না। ভারতে যেভাবে শুরু হয়েছিল, সেটা বলতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও কিছু গবেষণা ইনস্টিটিউট শুরু করা হয় সেখানে। ওখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের এসব রিসার্চ ইনস্টিটিউটেও বেশ কিছু মৌলিক গবেষণার কাজ হচ্ছিল। বাইরে থেকেও অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আনা হয়েছিল। এখন আমাদের মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিসার্চ ইনস্টিটিউট আলাদা করা উচিত হয়নি। একসঙ্গে থাকলে আরও বেশি শিক্ষার্থী এই গবেষণাগুলোতে অংশ নিতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে মিলিয়ে রিসার্চ ইনস্টিটিউট চালু করলে অধ্যাপকেরাও কাজ শুরু করার সুযোগ পাবেন। শিক্ষার্থীরাও তখন এসব গবেষণায় অংশ নিতে পারবে।

বিজ্ঞানচিন্তা: আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশের বাইরে গেলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা কষ্ট। কীভাবে তাদের দেশে ফিরিয়ে বিজ্ঞান গবেষণায় নিযুক্ত করা যায়?

অশোক সেন: এখানে ফিরিয়ে আনার জন্য একটা আকর্ষণ প্রয়োজন। একজন-দুজন তো আর ফিরবে না। বরং পুরো একটা দল হিসেবে ফিরলে কাজ করা সুবিধা। যখন তারা এখানে কাজ করবে, তখন দলের সঙ্গে বিদেশি বিজ্ঞানীদের যুক্ত করতে পারলে ভালো। মৌলিক গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের জোগানও দিতে হবে। আবার ভালো বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া এখানে কাজ করেও যেন দেশের বাইরে তিনি গবেষণার সুযোগ পান, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

বিজ্ঞানচিন্তা: দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে এগিয়ে। এর সঙ্গে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলো নিয়ে আঞ্চলিক একটা গবেষণা বলয় তৈরি করা যায় কি না, যেমনটা ইউরোপে হয়েছিল সার্ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।‌

অশোক সেন: দক্ষিণ এশিয়ার সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এটা অসম্ভব কিছু নয়। আবার সব সময় সরকারকেই ভাবতে হবে, এমনও নয়। এখানকার ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই উদ্যোগ নিতে পারে। সেখানে শুরুতেই হয়তো সব দেশকে একত্র করা যাবে না। হয়তো দুটো দেশ মিলেই শুরু করতে পারে। চীন, কোরিয়া আর জাপান মিলে যেমন এশিয়ান ফিজিকস স্কুল করে। একবার শুরু করা গেলে সেটা এগিয়ে নেওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু হবে না। ভারতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগ করে। সেটা এ দেশেও শুরু হতে পারে।

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের অনেকেই বিজ্ঞানী হতে চান। তাঁদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

অশোক সেন: বিজ্ঞানী হতে গেলে আগ্রহ থাকা চাই। কারও যদি আগ্রহই না থাকে, তাহলে এ পথে আসা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞানে সমস্যা কখনো একই ধারায় চলে না। দেখা যায় বহু চেষ্টা করেও অনেক সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো পরীক্ষা বাস্তবে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখানে বিজ্ঞানীর সবচেয়ে বড় ক্ষমতা হলো মানসিক শক্তি। এমন অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য তরুণ বিজ্ঞানীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। আগ্রহ আর অধ্যবসায় কাজে লাগিয়ে সামনে এগোতে হবে। ব্যর্থ হলেই পথ বদলে নেওয়া চলবে না।

বিজ্ঞানচিন্তা: বিজ্ঞানচিন্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

অশোক সেন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

অনুলিখন: আলিমুজ্জামান