পৃথিবী—আমাদের বাসস্থান। সবুজ প্রকৃতি, নীল সমুদ্র আর মনোরম সব দৃশ্যের কথাই মনে হয় আমাদের এই গ্রহটির কথা ভাবলে। বিস্ময়কর এর প্রকৃতি। পরতে পরতে তার নানা রহস্য। তবে এই অপার সৌন্দর্যের সঙ্গে রয়েছে কিছু ভয়ংকর বাস্তবতা। এমনই এক বাস্তবতার নাম তেজস্ক্রিয়তা। প্রকৃতির সৌন্দর্যের বদলে তেজস্ক্রিয়তার কারণে মৃত্যুর ছায়া পড়েছে অনেক জায়গায়।
সাধারণত মাটি, পাথর, পানি ও বায়ুতে প্রাকৃতিকভাবেই তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়। ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম এবং পটাশিয়ামের আইসোটোপের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করে। কিছু স্থানে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি। এ স্থানগুলোকে বলে ‘তেজস্ক্রিয় হটস্পট’। তবে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা ও পারমাণবিক দুর্ঘটনার ফলেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে পরিবেশে তেজস্ক্রিয় দূষণ হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পৃথিবীর এমন ৭টি তেজস্ক্রিয় স্থান নিয়েই এ আলোচনা।
১. হ্যানফোর্ড সাইট, যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করে। ১৯৪০-এর দশকে ওয়াশিংটনে নির্মিত হয় হ্যানফোর্ড পারমাণবিক কেন্দ্র। ম্যানহাটন প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মিত এই হ্যানফোর্ড ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য অপরিহার্য প্লুটোনিয়াম উৎপাদন কেন্দ্র।
প্রতি কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম তৈরির জন্য হাজার গ্যালন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হতো এখানে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করেছিলেন, এই বর্জ্য থেকেও মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থেকে মুনাফা অর্জনের এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিষাক্ত বর্জ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থাও ছিল না সেখানে। এই অবহেলার পরিণাম ছিল ভয়াবহ। বছরের পর বছর অস্থায়ী ভূগর্ভস্থ বর্জ্যের ট্যাঙ্কগুলো ধীরে ধীরে স্থায়ী হয়ে ওঠে। পরে তাতে ফাটল ধরে এবং বিষাক্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটিতে মিশে যায়। পারমাণবিক শক্তি কমিশনও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। এই অবহেলার কারণে হ্যানফোর্ড এবং এর আশপাশের এলাকা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং বিষাক্ত কাদামাটিতে ভরে ওঠে, যা কয়েক প্রজন্ম ধরে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এ জন্যই পরবর্তীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক জোর দেওয়া হয়। বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপন্ন বর্জ্য থেকে এ ধরনের দূর্ঘটনা আর সেভাবে ঘটতে দেখা যায় না। কারণ, এখন প্রয়োজনীয় ও যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়।
২. মেইলু-সু, কিরগিজস্তান
কিরগিজস্তানের একটি শহর মেইলু-সু। এককালে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো শহরটি। কারণ, প্রাকৃতিকভাবেই এই এলাকা ছিল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এখানে খনন কাজ শুরু করে এবং খনি থেকে উত্তোলিত ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য। খনন কাজের সময় প্রচুর তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সেগুলো শহরের চারপাশে মাটি চাপা দিয়ে এবং কূপ বানিয়ে রাখা হতো। প্রায় দুই মিলিয়ন ঘনমিটার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ২৩টি ভিন্ন ডাম্পিং সাইটে ফেলে রাখা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পরিবেশ দূষণ করতে থাকে সেগুলো। ১৯৯২ সালে ভূমিধ্বসে একটি বর্জ্য-কূপ ভেঙে ১ হাজার ঘনমিটার তেজস্ক্রিয় পদার্থ নদীতে মিশে যায়। ফলে নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যায়। এই দূষণের প্রভাব শুধু নদীতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এর প্রভাব পড়ে নদীর আশপাশের শহরগুলোতেও। তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে আসার ফলে মানুষের ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় আশপাশের এলাকায়।
৩. ফুকুশিমা, জাপান
২০১১ সালে জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ফলে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিধ্বংসী আঘাত হানে ৫০ ফুট উচ্চতার সুনামি! বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা অনুযায়ী, বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটা বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এত ভয়ংকর দুর্ঘটনার কথা সে সময় কেউ কল্পনা করেনি। ভূমিকম্প ও সুনামির যুগ্ম আঘাতে ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ভূমিকম্পের ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার পর জরুরি জেনারেটরগুলো চুল্লিগুলোকে ঠান্ডা রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে গলতে শুরু করে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি এবং পরে বিস্ফোরণ ঘটে। তিনটি সক্রিয় চুল্লি থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে বায়ুমণ্ডলে। দূষিত বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত পুলগুলো ভেঙে মিশে যায় সমুদ্রে।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ফলে ফুকুশিমার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল ব্যাপকভাবে দূষিত হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হলেও বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এখনও পরিবেশে ছড়িয়ে আছে। ফলে প্রায় ১৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারায় ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৪. চেরনোবিল, ইউক্রেন
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম অধ্যায়ের সাক্ষী হয় চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। একটি পরীক্ষার কারণে ভয়াবহ এ বিপর্যয়ের সূচনা হয়। এক্সটার্নাল পাওয়ার এবং কুল্যান্ট বা শীতক পাইপে একই সঙ্গে সমস্যা দেখা দিলেও স্টিম বা বাষ্পীয় টারবাইন ইমার্জেন্সি ফিডওয়াটার পাম্প, অর্থাৎ নিরাপদ শীতলীকরণ ব্যবস্থা কতটুকু যথাযথভাবে চালাতে পারে, এ নিয়ে সেদিন গভীর রাতে কেন্দ্রের চতুর্থ চুল্লিতে একটি পরীক্ষা চালানো হয়। কিন্তু কর্মীদের ভুলে এ সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় বন্ধ হয়ে যায় পারমাণবিক চুল্লিও। ফলে কর্মীরা রিঅ্যাক্ট্যার রিস্টার্ট দেয় টারবাইন টেস্টের জন্য। এ সময় তারা কন্ট্রোল রড যেভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়, সেরকম একটি কনফিগারেশনে রিঅ্যাক্টর চালু করে। পরীক্ষা শেষে রিঅ্যাক্টর পুরোপুরি বন্ধ বা শাটডাউন করে দেওয়া হয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। এ সময় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে রিঅ্যাক্টরে, নষ্ট হয়ে যায় শীতলীকরণ ব্যবস্থা। ফলে উত্তপ্ত হতে থাকে চুল্লি। এই উত্তাপের কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে চুল্লির ওপরের ১ হাজার টন ওজনের কংক্রিটের ছাদ ভেঙে পড়ে। উন্মুক্ত চুল্লি থেকে বেরিয়ে আসা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে বায়ুমণ্ডলে। আশপাশের এলাকায় তৈরি হয় বিষাক্ত মেঘ। ৩১ জন কর্মী ও দমকল কর্মী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের তীব্র প্রভাবে আক্রান্ত হন।
কিন্তু বিপর্যয়ের সর্বনাশা প্রভাব এখানেই শেষ হয়নি। বিস্ফোরণের প্রায় ২০ ঘণ্টা পর বাইরের বাতাস প্রবেশ করে উন্মুক্ত চুল্লিতে। ফলে আগুন ধরে যায়। এই আগুন জ্বলে টানা ১০ দিন ধরে। এতে বিষাক্ত ধোঁয়া ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে।
চেরনোবিল বিপর্যয়ের প্রভাব ছিল ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী। কয়েক লাখ মানুষকে তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচাতে আশপাশের এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও অনেকে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আজও চেরনোবিল বিপর্যয়কে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রভাব এখনো শেষ হয়নি। এখনো সেখানকার শহরগুলোতে তেজস্ক্রিয়তার ভয়াবহতা বিদ্যমান।
৫. সাইবেরিয়ান কেমিক্যাল কম্বাইন প্ল্যান্ট, রাশিয়া
সাইবেরিয়ান কেমিক্যাল কম্বাইন ছিল সাইবেরিয়ার একটি পুরোনো ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধি কারখানা। দীর্ঘদিন ধরে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছিল এতে। সোভিয়েত আমলে এই পদ্ধতিতে কারখানার তরল তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানির কূপে ফেলে দেওয়া হতো। ১৯৯৩ সালে কারখানার রেডিও-টেকনোলজি প্ল্যান্টে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে এ কেন্দ্রের দুই তলা ভবন ধ্বসে যায়। প্লুটোনিয়াম ও ইউরেনিয়ামের ট্যাঙ্ক দুটি ধ্বংস হয়ে গেলে এই দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তেজস্ক্রিয় গ্যাসের মেঘ প্রায় ৭৭ বর্গমাইল এলাকা দূষিত করে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগে ৪ মাস।
এ দুর্ঘটনার পরে জানা যায়, সাইবেরিয়ান কেমিক্যাল কম্বাইনে আরও ২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি দৈনন্দিন কাজের সময় এই কারখানা থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ গ্রাম প্লুটোনিয়াম বায়ুমণ্ডলে নির্গত হতো। বিস্ফোরণের ফলে তেজস্ক্রিয় দূষণ এলাকাটিকে এখনও বসবাসের অযোগ্য করে রেখেছে।
৬. সেলাফিল্ড, ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের কুম্বরিয়া উপকূলে অবস্থিত একটি বড় বহুমুখী পারমাণবিক কেন্দ্র সেলাফিল্ড। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে সেলাফিল্ড পারমাণবিক প্রক্রিয়াকরণ কারখানার ‘উইন্ডস্কেল নং ১’ পাইলের পারমাণবিক চুল্লিতে আগুন লেগে যায়। তিন দিন ধরে পুড়তে থাকে ১১ টন ইউরেনিয়াম। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সত্ত্বেও কারখানার কর্মী ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যায়। চুল্লি ধ্বসে পড়ার এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। আসলে বেশির ভাগ শ্রমিককে আগুন সম্পর্কে বলাই হয়নি। যারা জানত, তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে বলা হয়েছিল। এই ঘটনা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। তাদের অনিশ্চিত, অকার্যকর প্রতিক্রিয়া জনগণের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থের বর্জ্য ফেলায় হাজার হাজার সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হয়। আর দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে ভোগে হাজার হাজার মানুষ। সেলাফিল্ড পারমাণবিক কেন্দ্রের দীর্ঘ বিতর্কিত ইতিহাস, দুর্ঘটনা এবং পরিবেশ দূষণের কারণে ২০২২ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৭. চার্চ রক ইউরেনিয়াম মিল, মেক্সিকো
১৯৭৯ সালে নিউ মেক্সিকোর চার্চ রক ইউরেনিয়াম মিলে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি ছিদ্রের সাহায্যে ১ হাজার ১০০ টন ইউরেনিয়াম এবং ৯৪ মিলিয়ন গ্যালন বিষাক্ত বর্জ্য পুয়ের্কো নদীতে প্রবাহিত হয়। ফলে প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত দূষণ ছড়িয়ে পরে। এই দুর্ঘটনায় থ্রি মাইল দ্বীপের পারমাণবিক দুর্ঘটনার চেয়েও তিন গুণ বেশি বিকিরণ নির্গত হয়। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটা তেজস্ক্রিয় পদার্থের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা এই চার্চ রক। এই দুর্ঘটনার পরিবেশগত ক্ষতি ছিল অপরিসীম। তেজস্ক্রিয়তা পানি, প্রাণী, গাছপালা এবং নাভাজো জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার ফলে নাভাজো জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেয়।
শেষ কথা
এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমাদের সব সময় শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। ওপরের ঘটনাগুলো আমাদের কী বলে? পারমাণবিক কেন্দ্র বা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করে দিতে হবে? সত্যি বলতে, কোনো কিছুই পরমভাবে নিরাপদ বানানো সম্ভব নয়। আর জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে অনেক নিরাপদ ও টেকসই পরমাণু বিদ্যুৎ। তবে প্রাকৃতিক ভয়ংকর দুর্যোগ—সুনামি বা ভূমিকম্প কিংবা উল্কাপাত, এ ধরনের বিপদের বেলায় আগে থেকে কিছু বলা যায় না। তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হয়। চেষ্টা করা হয় একাধিক ফেইল সেইফ বা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখতে যেন চুল্লিতে কোনো সমস্যা না হয়। এত সবের পরেও যদি সমস্যা হয়েই যায়, তবে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা থেকে ক্ষতির মাত্রা যেন খুব কম থাকে, লক্ষ্য রাখা হয় সেদিকে।
তবে ওপরের ঘটনাগুলো সবচেয়ে বড় করে দেখায় অবহেলার বিষয়টি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই শুধু নয়, যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই অবহেলা না করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা নিলে যেকোনো বিপদের মোকাবিলা করা সম্ভব।