আজন্ম বসবাস যাঁর নিঃশব্দ ও কোয়ান্টামের অদ্ভুত জগতে

পল ডিরাক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জগতে এক কিংবদন্তি নাম। আইনস্টাইনের পরে বিশ শতকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মেধাবী বিজ্ঞানী হিসেবে ধরা হয় তাঁকে। রিচার্ড ফাইনম্যানের মতো বিজ্ঞানী তাঁকে গুরু মেনেছেন জীবনভর। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে একসুতোয় গেঁথে আবিষ্কার করেছিলেন ডিরাক সমীকরণ। এই সমীকরণ থেকে জানা গিয়েছিল পদার্থের একটি নতুন রূপের খোঁজ—প্রতিপদার্থ। এ কাজের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ অন্যান্য বিজ্ঞানীর নাম যে হারে উচ্চারিত হয় আড্ডায়, গল্পে, বিজ্ঞানীদের মজার মজার ঘটনা নিয়ে লেখা নানান বইয়ে; সেসব জায়গায় তিনি একরকম অদৃশ্য।

ঠিক কী করেছিলেন ডিরাক? সেটা বোঝার জন্য আসুন, একটুখানি পেছনে ফিরে যাই।

ডিরাক গণিত খুব ভালো বুঝতেন। অনার্সে তাঁর একটি কোর্স ছিল প্রজেক্টিভ বা অভিক্ষেপ জ্যামিতি নিয়ে।

আসলে ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতিতে যেমন রেখা মানে বিন্দুর সমষ্টি, অভিক্ষেপ জ্যামিতি এদিক থেকে কিছুটা ভিন্ন। আলাদা কিছু নিয়ম এবং স্বতঃসিদ্ধ নিয়ে গড়ে ওঠা এই জ্যামিতিকে বুঝতে হলে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে সমান্তরাল সরলরেখা। ইউক্লিডিয়ান বা সমতল জ্যামিতিতে, সমান্তরাল সরলরেখা অসীমেও নিজেদের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে চলতেই থাকে। কিন্তু অভিক্ষেপ জ্যামিতিতে, অসীমে গিয়ে সমান্তরাল সরলরেখা দুটো মিলেও যেতে পারে, একে অন্যকে ছেদ করতে পারে নির্দিষ্ট বিন্দুতে। যেহেতু বাস্তবে মহাবিশ্বের স্থান-কাল অনেক ক্ষেত্রেই বাঁকানো, মানে সমতল নয়; সে জন্য পদার্থবিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রেই এটি কাজে লাগে। ডিরাকের ক্ষেত্রেও এটি কাজে লেগেছিল। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার যুগান্তকারী কিছু তত্ত্ব তিনি এর ওপর ভিত্তি করেই সাজিয়েছিলেন।

১৯২৩ সালে স্কলারশিপ বা বৃত্তি নিয়ে কেমব্রিজে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে যান ডিরাক। পিএইচডি করার জন্য একজন অ্যাডভাইজার বা উপদেষ্টা শিক্ষক লাগে। ডিরাকের উপদেষ্টা ছিলেন র৵ালফ ফাউলার। তিনি ডিরাককে নিলস বোরের নতুন পারমাণবিক মডেল, মানে পরমাণুর গঠন নিয়ে বোরের তত্ত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এই মডেলের সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত।

বোরের মডেল বলে, কেন্দ্রের নিউক্লিয়াসকে ঘিরে গোলাকার কক্ষপথ ধরে পাক খায় ইলেকট্রন। ইলেকট্রনের চাইলেই যেকোনো পরিমাণ শক্তি থাকতে পারবে না। যে কক্ষপথে আছে, সেই কক্ষপথের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তিই কেবল তার মাঝে থাকবে। শক্তি বেরিয়ে গেলে ইলেকট্রনটা এক লাফে নিচের কক্ষপথে চলে যাবে। আর অতিরিক্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি পেলে, এক লাফে চলে যাবে ওপরের কক্ষপথে।

বোরের তত্ত্বের পরে, আরও আধুনিক ও গ্রহণযোগ্য একটি পরমাণু মডেলের প্রস্তাব করেন সমারফিল্ড। সেই হিসেবে ইলেকট্রনের কক্ষপথ গোলাকার নয়; বরং উপবৃত্তাকার।

১৯২৪ সালের মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে সে সময় মানুষ যতটুকু জানত, সবটা শিখে ফেললেন ডিরাক। তাঁর কাছে মনে হলো, কোথাও যেন একটা ঘাপলা আছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব গাণিতিকভাবে যে রকম সুন্দর, কোয়ান্টাম তত্ত্ব এখনো সে পর্যায়ের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। আরও ভালো কিছু লাগবে। তখনো জানতেন না, সেই ভালো কিছুটা বছরখানেকের মধ্যে তাঁর হাতে চলে আসবে—হাইজেনবার্গের অপ্রকাশিত গবেষণাপত্র।

সেপ্টেম্বর, ১৯২৫। ফাউলার ডিরাকের কাছে একটি অপ্রকাশিত গবেষণাপত্র নিয়ে এলেন। হাইজেনবার্গ নামের তরুণ এক পদার্থবিজ্ঞানী এটা ফাউলারের কাছে পাঠিয়েছে।

হাইজেনবার্গ তাঁর গবেষণাপত্রে ইলেকট্রনকে একটি রেখায় আবদ্ধ হিসেবে ভেবেছেন। ইলেকট্রন এই রেখায় বা কক্ষপথে আগপিছ করতে পারে। এই হিসেবে সমীকরণ কষে হাইজেনবার্গ দেখালেন, উচ্চশক্তির স্তরে ইলেকট্রনের লাফিয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখানোর জন্য শুধু একটা সংখ্যা যথেষ্ট নয়। বরং একদল সংখ্যা লাগবে—একটি ম্যাট্রিক্স। ম্যাট্রিক্স নিয়ে আমাদের দেশে উচ্চমাধ্যমিক গণিতে পড়ানো হয়।

ছবি-১: (E=mc2)2 + (pc)2
Kazi Akash

এখানে ঝামেলা হলো, বোরের তত্ত্ব থেকে ইলেকট্রনের কক্ষপথ যেভাবে কল্পনা করে নেওয়া যায়, এ ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। হাইজেনবার্গের তত্ত্বটি ছিল খাঁটি গাণিতিক তত্ত্ব। এখানে কল্পনা করে নিয়ে, সেই হিসেবে কিছু ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু গণিতবিদদের জন্য এটা আনন্দের বিষয় হয়েই এল। কারণ, পর্যবেক্ষণ এবং এক্সপেরিমেন্ট থেকে পাওয়া সংখ্যা এতে বসিয়ে, তা থেকে আরও পূর্ণাঙ্গ ধরনের পারমাণবিক তত্ত্ব গড়ে তোলার সম্ভাব্য একটি পথ খুলে দিল হাইজেনবার্গের আবিষ্কার।

সবই ঠিক ছিল, কিন্তু হাইজেনবার্গ আটকে গিয়েছিলেন গাণিতিক সমস্যার জালে। ইউক্লিডিয়ান বা দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির সঙ্গে পরিচিত হাইজেনবার্গ আটকে গেলেন ম্যাট্রিক্সের গুণের ঝামেলায়। আমরা জানি, ম্যাট্রিক্সের গুণ করার সময় ক্রম বদলে গেলে গুণফলও বদলে যায়। খুব সরল করে বললে, ম্যাট্রিক্সের ক্ষেত্রে a×b এবং b×a এক জিনিস নয়। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করতে হয়, সেটা হাইজেনবার্গ জানতেন না। কিন্তু ডিরাক জানতেন। গ্র্যাসম্যান বীজগণিত থেকে শুরু করে অভিক্ষেপ জ্যামিতি—সবকিছুই তাঁর নখদর্পণে। হাইজেনবার্গের গবেষণাপত্র পড়ার পরে ডিরাক ভাবতে বসলেন। পুরো এক মাস চিন্তাভাবনা করার পর একটা ভালো জিনিস মনে পড়ে গেল তাঁর। পয়সন ব্র্যাকেট। জটিল একধরনের গাণিতিক অপারেশন। জিনিসটা মূলত একধরনের অপ্রতিসম ম্যাট্রিক্স ডিফারেনসিয়েশন। এটিই হাইজেনবার্গের পেপারের আরও গভীরে যাওয়ার চাবিকাঠি।

রাজপুত্রের হাতে জাদুর কাঠি পড়লে যা হয়, তা–ই হলো। নভেম্বরের শেষাশেষি এসে ডিরাক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ওপর একটি গবেষণাপত্র লিখলেন—দ্য ফান্ডামেন্টাল ইকুয়েশনস অব কোয়ান্টাম মেকানিকস। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মৌলিক সমীকরণসমূহ।

হাইজেনবার্গের দেখানো পথে হাঁটেননি তিনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ ধরে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মৌলিক সূত্রগুলো আবিষ্কার করেছেন। এই সূত্রগুলো থেকে নিউটনের চিরায়ত বলবিদ্যার সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সম্পর্কটুকুও বোঝা যায়। গবেষণাপত্র বা পেপার প্রকাশের আগে পেশাগত কৃতজ্ঞতা হিসেবে হাইজেনবার্গের কাছে নিজের পেপারের এক কপি পাঠিয়ে দিলেন ডিরাক।

তিন সপ্তাহের মধ্যে রয়্যাল সোসাইটি ডিরাকের পেপার প্রকাশ করল। এর মধ্য দিয়ে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ইতিহাস চিরদিনের জন্য বদলে গেল। ডিরাকের নাম লেখা হয়ে গেল স্বর্ণাক্ষরে।

হাইজেনবার্গ ওদিকে জার্মানির গোটিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাক্স বর্নের অধীন কাজ করছেন। বোরের মতো বর্নও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা দিকপালদের একজন। হাইজেনবার্গ দ্রুতই ডিরাককে জবাব লিখলেন। জানালেন, ডিরাকের পেপারে বলা চমৎকার উপায়ে না হলেও কিছু কাজ ইতিমধ্যেই গোটিনগেনে করা হয়েছে। টেকনিক্যাল কিছু প্রশ্নও করলেন তিনি চিঠিতে। এর মধ্য দিয়ে হাইজেনবার্গ আর ডিরাক চমৎকার বন্ধু হয়ে গেলেন।

পিএইচডি সম্পূর্ণ হয়নি, অথচ ডিরাককে সবাই চিনে গেছে্ন। কেমব্রিজে নিয়মিত লেকচার দিয়ে বেড়াচ্ছেন। শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী, সবাই আসছেন, তাঁর কথা শুনছেন। ডেনমার্কে নিলস বোর ইনস্টিটিউটে একদল বিজ্ঞানী, আর ওদিকে জার্মানির গোটিনগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইজেনবার্গ-ম্যাক্স বর্নের দল যা গবেষণা করছেন, ডিরাক একাই তাঁদের পাল্লা দিয়ে যাচ্ছেন সমানতালে। এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই মঞ্চে এলেন আরেক দিকপাল। শ্রোডিঙ্গার।

শ্রোডিঙ্গার কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করলেন। তাঁর অস্ত্র বা তত্ত্ব হলো ওয়েভ মেকানিকস বা তরঙ্গ বলবিদ্যা। এটা যে শুধু এক্সপেরিমেন্টের সঙ্গে মিলল, তা নয়; বিজ্ঞানীরা আবারও কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে কল্পনায় বসিয়ে চিন্তা করার পথ খুঁজে পেলেন।

শ্রোডিঙ্গারের তত্ত্বকে হাইজেনবার্গ পুরো বিরক্তিকর বলে ভাবতেন। শ্রোডিঙ্গার আবার কল্পনার বাইরে গিয়ে ভাবার কথা শুনলে নাক সিঁটকাতেন। এ কারণে শ্রোডিঙ্গারের সঙ্গে হাইজেনবার্গের একটা ঝামেলা লেগে গেল।

এদিকে সব ঝামেলার বাইরে থেকে ১৯২৬ সালে, ২৩ বছর বয়সে নিজের পিএইচডি পেপারটি লিখে শেষ করলেন পল ডিরাক। পরবর্তী সময়ে এই পেপারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে ফার্মি-ডিরাক পরিসংখ্যান।

ছবি-২: ছক্কায় ঘোরানোর ক্রম গুরুত্বপূর্ণ
Kazi Akash

১৯২৭ সাল। পিএইচডি শেষ। কেমব্রিজ ছেড়ে ডিরাক চলে এলেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যা চর্চার কেন্দ্র—কোপেনহেগেন এবং গোটিনগেনে। হাইজেবার্গের বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতির সঙ্গে তাঁর সরাসরি পরিচয়ও এখানেই।

এবার কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জগতে দ্বিতীয় বিখ্যাত কাজটি করলেন ডিরাক। পদার্থের সঙ্গে আলোর কোয়ান্টাম মিথস্ক্রিয়া নিয়ে একটি পেপার লিখলেন। দ্য কোয়ান্টাম থিওরি অব এমিশন অ্যান্ড অ্যাবসর্পশন অব রেডিয়েশন। পদার্থের বিকিরণ শোষণ ও নিঃসরণের কোয়ান্টাম তত্ত্ব। তাঁর এই তত্ত্ব আলোকতরঙ্গ এবং আলোক-কোয়ান্টামকে একীভূত করল। জন্ম নিল কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি নতুন শাখা। কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিকস (কিউইডি)।

কোনো পরমাণু যখন একটি ফোটন শোষণ করে, মহাবিশ্ব থেকে একটুখানি আলো উধাও হয়ে যায়। আবার কোনো পরমাণু যখন আলো নিঃসরণ করে, মহাবিশ্বে একটি ফোটনের আবির্ভাব হয়। এ ব্যাপার নিয়ে প্রথমবারের মতো সফল ব্যাখ্যা দিল কিউইডি। আগের কোনো তত্ত্ব মহাবিশ্বে কোনো কোয়ান্টাম বস্তু, যেমন ফোটনের জন্ম বা ধ্বংসের ব্যাখ্যা দেয়নি। ডিরাক এমন এক মহাবিশ্বের কথা কল্পনা করলেন, যেখানে পরমাণুরা অসীমসংখ্যক শূন্য শক্তির ফোটন ধারণ করে। ফলে পরমাণুকে যথেষ্ট শক্তি দেওয়া হলে সে শূন্য শক্তির ফোটনকে বাস্তব ফোটন হিসেবে নিঃসরণ করতে পারে।

ইলেকট্রন নিয়ে পুরোপুরি মেতে গেলেন ডিরাক। সমস্যাটা আগে থেকেই ছিল। ইলেকট্রনদের ব্যাখ্যা করার জন্য শুধু কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান যথেষ্ট হচ্ছিল না। শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ বলবিদ্যার সমীকরণ সবকিছু মোটামুটি ঠিকভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারছে, কিন্তু ইলেকট্রনের স্পিনের ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পারছে না।

এদিকে ঋণাত্মক শক্তি নিয়ে একটা ঝামেলায় পড়ে গেছেন সবাই। এই ঝামেলার সমাধান কিছুতেই করা যাচ্ছে না। সমাধান নিয়ে কথা বলার আগে সমস্যাটা কী, সেটা একটু ভালোভাবে বুঝে নেওয়া যাক।

এই ঝামেলার শুরুটা হয়েছে আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্য। আপেক্ষিকতা তত্ত্ব বলে, কোনো একটা বিশালাকার বস্তু স্থির অবস্থায় থাকলেও এর মাঝের পরমাণুর মধ্যে শক্তি জমে থাকে। এই শক্তির পরিমাণ E=mc2। আর এটা যখন ছুটতে থাকবে, তখন এই স্থিতিশক্তির সঙ্গে যোগ হবে গতিশক্তি। পিথাগোরাসের উপপাদ্য থেকে খুব সহজেই এই শক্তিটা হিসাব করা যায়। পিথাগোরাসের উপপাদ্যের বক্তব্য হলো, একটা সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ এর ভূমি আর লম্বের বর্গের যোগফলের সমান। কাজেই একটা বিশালাকার বস্তুর মোট শক্তির বর্গ (E2) হবে এর স্থির অবস্থায় শক্তি (mc2) এবং এর গতিশক্তির (pc) বর্গের যোগফলের সমান।

এই ‘অতিভুজ’ সূত্র আর E2 এর মাঝের সম্পর্ক ব্যবহার করে অস্কার ক্লেইন শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণের একটা সাধারণ রূপ দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন। ২৫ এর বর্গমূল যেমন +৫ এবং -৫, দুটোই হতে পারে, তেমনি E2 এর বর্গমূলও দুটো হতে পারে—একটা ধনাত্মক এবং আরেকটা ঋণাত্মক। যেহেতু একটা ত্রিভুজের অতিভুজের বাস্তব দৈর্ঘ্য থাকে, সেহেতু বাস্তবে অতিভুজের ঋণাত্মক মানটাকে মিথ্যা বলে ধরে নেওয়া হয়। একইভাবে আইনস্টাইনের সূত্রের সঙ্গে পিথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করলে  শক্তির জন্য যে ঋণাত্মক সমাধান পাওয়া যায়, সেটাকে ধরে নেওয়া হলো মিথ্যা। কিন্তু এটা বিজ্ঞানীদের খুব অস্বস্তিতে ফেলে দিল। কারণ, সমীকরণটা মূলত লেখা হয়েছিল শক্তির বর্গের জন্য, অর্থাৎ E2 এর জন্য। হুট করে কোনো কথাবার্তা ছাড়া এর মধ্যে থেকে ঋণাত্মক সমাধানটাকে আসলে ফেলে দেওয়া যায় না।

কিন্তু ডিরাক ঠিক করলেন, তিনি এই হেঁয়ালিকে উপেক্ষা করবেন। কাজেই তিনি E2 এর বদলে E নিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। শুনে মনে হতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অত সহজ নয় আসলে ব্যাপারটা। একটা বেশ দুরূহ সমস্যা তাঁকে সমাধান করতে হবে। নতুন করে অতিভুজের দৈর্ঘ্য, অর্থাৎ E-এর সঙ্গে অন্য দুই বাহুর সম্পর্ক (স্থির অবস্থায় শক্তি এবং গতিশক্তি) বের করতে হবে। কিন্তু এবারে আর আগের মতো এই দুটোর একটাকেও বর্গ করা যাবে না! এই সেই মৌলিক কাজ, যেটা করে ডিরাক ইলেকট্রনের জন্য কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সবকিছুকে একেবারে খাপে খাপে বসিয়ে ফেললেন।

আসলে তিনি খুব দ্রুতই বুঝে ফেলেছিলেন, এই দুটো পরিমাণ যদি সাধারণ সংখ্যা হয়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কিন্তু এরা যদি দুটো ভিন্ন মাত্রার সংখ্যা হয়, তাহলে এটা সম্ভব হতে পারে। আবারও ম্যাট্রিক্সের দ্বারস্থ হলেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে ম্যাট্রিক্সটা হবে দুই মাত্রার, অর্থাৎ দুটো কলামের প্রতি কলামে দুটো করে সংখ্যা বিন্যস্ত থাকবে। গণিতবিদেরা ম্যাট্রিক্সের যোগ আর গুণের নিয়ম বের করেছেন এবং এই ম্যাট্রিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। যেমন বিদ্যুৎ, চুম্বক ইত্যাদি। এই ম্যাট্রিক্সের একটা চমৎকার বৈশিষ্ট্য আছে। আপনি যদি দুটো ম্যাট্রিক্স a এবং bকে a×b হিসেবে গুণ করেন, তাহলে যে ফলাফল পাওয়া যাবে, উল্টোভাবে b×a করলে সব সময় একই ফলাফল পাওয়া যায় না। প্রথমবার শুনে এটা বেশ অদ্ভুত মনে হলেও এমন প্রচুর উদাহরণ আছে, যেখানে এই ক্রম খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এটাই ডিরাকের সমীকরণ সমাধানের চাবিকাঠি।

এমন একটা উদাহরণ হলো রুবিকস কিউব। রুবিকস কিউব নিয়ে খেলেন, এমন প্রত্যেকেই জানেন, এটাকে top clockwise ঘুরিয়ে ডান দিকে ঘোরালে যে প্যাটার্ন পাওয়া যাবে, উল্টোভাবে ঘোরালে পাওয়া যাবে খুবই ভিন্ন একটা প্যাটার্ন। এটা দেখার আরও সহজ উপায় হলো একটা ছক্কা। একটা ছক্কাকে যদি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরিয়ে তারপর আনুভূমিকভাবে ঘোরানো হয়, তাহলে যা পাওয়া যাবে, প্রথমে আনুভূমিকভাবে ঘুরিয়ে পরে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরালে কিন্তু কখনোই সেই একই জিনিস পাওয়া যায় না। এ জন্যই ম্যাট্রিক্স জিনিসটা ‘ক্রম গুরুত্ব বহন করে’, এমন যেকোনো ত্রিমাত্রিক বস্তুকে ঘোরানোর হিসাব রাখার জন্য বেশ কাজের।

মানে a আর b যদি দুটো ম্যাট্রিক্স হয়, এরা তাহলে ডিরাকের সমস্যা সমাধান করে ফেলতে পারে। এদের ক্ষেত্রে a2=1 এবং b2=1 সত্যি হলে, a×b সমান যেমন শূন্য নয়, তেমনি অবশ্যই b×a সমানও শূন্য নয়। কিন্তু এদের যোগফল, a×b + b×a = 0 হতে পারে।

অবশেষে অনেক পরিশ্রম এবং চিন্তাভাবনার পর ডিসেম্বরের শুরুতে এসে পুরো সমস্যা সমাধান করলেন পল ডিরাক। ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে বস্তুর স্থির অবস্থায় শক্তি, গতিশক্তি এবং এদের মোট শক্তির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি এমন একটা সমীকরণ আবিষ্কার করে ফেললেন, যেটা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা সূত্রের সঙ্গেও বেশ মানিয়ে যায়। এর ভারিক্কি নাম দ্য ফান্ডামেন্টাল ওয়েভ ইকুয়েশন অব দ্য রিলেটিভিস্টিক থিওরি অব ইলেকট্রন। ইলেকট্রনের জন্য আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মৌলিক তরঙ্গ সমীকরণ। ডিরাক সমীকরণ!

১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে দ্য কোয়ান্টাম থিওরি অব দ্য ইলেকট্রন নামে তাঁর এ–বিষয়ক পেপারটি রয়্যাল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়। বলে রাখা প্রয়োজন, ডিরাকের এই সমীকরণ আধুনিক ইলেকট্রনিকসের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

দেখা গেল, ঋণাত্মক শক্তি সমস্যার সমাধান ঠিকই হয়েছে, কিন্তু এই সমাধান জোর দিয়ে বলছে, ঋণাত্মক শক্তির অস্তিত্ব আছে। তার মানে সব ভরযুক্ত কণার জন্য ঋণাত্মক প্রতিকণা থাকতে হবে। অর্থাৎ ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রোটনের জন্য থাকবে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত প্রতিপ্রোটন। আবার ঋণাত্মক ইলেকট্রনের জন্য থাকবে ধনাত্মক চার্জযুক্ত প্রতি-ইলেকট্রন। এই প্রতি-ইলেকট্রনের নাম দেওয়া হলো পজিট্রন।

কিন্তু এই কণারা আছে কোথায়? ডিরাক এর ব্যাখ্যা দিলেন ভ্যাকুয়াম দিয়ে। তিনি বললেন, যেটাকে আমরা ভ্যাকুয়াম বা শূন্য বলি, ওটা আসলে একেবারে শূন্য নয়; বরং সীমাহীন এক গর্তের মতো, যেটার মাঝ দিয়ে একটা মই নিচে নেমে গেছে। এই মইয়ের প্রতিটা ধাপ হলো একটা করে সম্ভাব্য কোয়ান্টাম অবস্থা, ইলেকট্রনেরা চাইলে এসব জায়গায় থাকতে পারে। ইলেকট্রনদের জন্য মইয়ের একেবারে ওপরের ধাপটার শক্তির পরিমাণ হলো শূন্য। আর এর নিচের সব কটি হলো ঋণাত্মক শক্তির অবস্থা। ডিরাকের ভাবনাটা ছিল এমন, নিচের সব কটি ধাপ যদি এরই মাঝে ভরে গিয়ে থাকে, তাহলে আর কোনো ইলেকট্রন চাইলেও ওই ঋণাত্মক জায়গাগুলোতে যেতে পারবে না। ফলে পদার্থ স্থিতিশীল অবস্থাতেই থাকতে পারবে। তার মানে যেটাকে আমরা ‘ভ্যাকুয়াম’ বলি, ওটা আসলে একটা অসীম এবং শান্ত সমুদ্র। যতক্ষণ কেউ একে ঘাঁটাবে না, ততক্ষণ এটা একেবারে শান্ত থাকবে। ফলে এটা কারও চোখেও পড়বে না। ভরা এই সমুদ্রকে ভিত্তি ধরে বাকি সব শক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা যাবে। অর্থাৎ ডিরাকের ‘সমুদ্র পৃষ্ঠতল’ শক্তির হিসেবে শূন্যকে নির্দেশ করবে।

কাজেই ডিরাকের ভ্যাকুয়ামের হিসেবে এই সমুদ্র থেকে যদি কোনো ইলেকট্রন কোনোভাবে হারিয়ে যায়, তাহলে এটা একটা শূন্যস্থান বা ‘হোল’ রেখে যাবে। ঋণাত্মক শক্তির এবং ঋণাত্মকভাবে চার্জিত একটা ইলেকট্রনের অনুপস্থিতির ফলে যে হোল সৃষ্টি হবে, তাকে সমুদ্র পৃষ্ঠতলের সঙ্গে তুলনা করলে মনে হবে ধনাত্মকভাবে চার্জিত ধনাত্মক শক্তির একটা কণা। এরই নাম পজিট্রন। সে সময় এটা ছিল একটা উদ্ভট আইডিয়া। ৮০ বছর পর আজও কোয়ান্টাম মেকানিকসকে এখনো অমন অদ্ভুতই মনে হয়।

এখন কথা হলো, কেমন করে একটা ঋণাত্মক শক্তির ইলেকট্রন স্থানচ্যুত হয়ে হারিয়ে যেতে পারে, যার ফলে ভ্যাকুয়ামের এই সমুদ্রে একটা হোল দেখা যাবে? উত্তর—প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। যেমন গামা রশ্মি। যদি গামা রশ্মি যথেষ্ট শক্তিশালী হয়, এটা দিয়ে একটা ঋণাত্মক শক্তির ইলেকট্রনকে কিক করে ধনাত্মক শক্তির অবস্থায় নিয়ে ফেলা যেতে পারে (মানে মইয়ের নিচের ধাপ থেকে কিক করে ওপরের ধাপে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে)। এর ফলে যেটা হবে, সেটা এমন—গামা রশ্মির কিক খেয়ে একটা ধনাত্মক ইলেকট্রন যেমন বেরিয়ে আসবে, তেমনি একই সঙ্গে ভ্যাকুয়ামের সমুদ্রে একটা হোলও দেখা যাবে। এই হোল মূলত ঋণাত্মক চার্জ এবং শক্তির অনুপস্থিতি। তো ঋণাত্মক চার্জের অনুপস্থিতিকে দেখা যাবে ধনাত্মকভাবে চার্জিত অবস্থা হিসেবে এবং ঋণাত্মক শক্তির অনুপস্থিতিকে দেখা যাবে ধনাত্মক শক্তি হিসেবে। অর্থাৎ ফলাফল হিসেবে দেখা যাবে, কিছু গামা রশ্মি দুই ভাগ হয়ে, একটা ‘ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন’ এবং একটা ‘ধনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন’ বা পজিট্রনে রূপান্তরিত হয়ে গেছে!

১৯৩২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কার্ল অ্যান্ডারসন ক্লাউড চেম্বার এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে ডিরাকের ধনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন, মানে পজিট্রন আবিষ্কার করেন। এর মাধ্যমে মানুষের হাতে ধরা দেয় প্রতিপদার্থ। কে জানত, গাণিতিক তত্ত্বের হাত ধরে ঋণাত্মক শক্তির অদেখা কণাকে বাস্তবে হাজির করে ফেলা আসলেই সম্ভব?

১৯৩০ সালে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে ডিরাক একটি বই লেখেন। দ্য প্রিন্সিপাল অব কোয়ান্টাম মেকানিকস। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা তখনো শিশু। ফলে দেখা গেল, ডিরাকের লেখা এত জটিল হয়ে গেছে যে এটা পড়তে গিয়ে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। ১৯৩৫ সালে বইটির পরবর্তী সংস্করণ করা হয়। ডিরাক সবকিছু তাঁর পক্ষে যতটা সম্ভব সহজ করে লেখেন। আজও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সব শিক্ষার্থীর জন্য এই বই পড়াটা বাধ্যতামূলক বলে গণ্য করা হয়।

১৯৩৩ সালে শ্রোডিঙ্গারের সঙ্গে যুগ্মভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জেতেন পল ডিরাক। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক তত্ত্বের নতুন কার্যকর রূপ আবিষ্কারের জন্য এই বিজ্ঞানীদের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো।’

এই বড় কাজগুলোর সঙ্গে আরও টুকটাক কিছু কাজ করে গেছেন ডিরাক। ম্যাগনেটিক মনোপলের ধারণা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। একমাত্রিক স্ট্রিং তত্ত্বের কথা বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, হতে পারে, ইলেকট্রনের মতো মৌলিক কণাগুলো একমাত্রিক স্ট্রিং বা সুতা। সে সময় এটি জনপ্রিয়তা পায়নি। ১৯৬০-৭০–এর দশকে স্ট্রিং তত্ত্ব আবার ফিরে আসে। তবে এটি ডিরাকের বলা স্ট্রিং তত্ত্বের চেয়ে অনেক ভিন্ন। এখানে মাত্রার সংখ্যা ১১টি। তবে মূল কথাটি সেই একই, মৌলিক কণারা হয়তো স্ট্রিং দিয়ে গঠিত।

১৯৩২ সালে ডিরাক কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে একটি পেপারও প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে কেউ ল্যাগ্রাঞ্জের তত্ত্বকে এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে চায়নি। ডিরাকের এই পেপার পড়েই বিখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান এ নিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করেন। ফলস্বরূপ তিনি আবিষ্কার করেন ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম। এই আবিষ্কার ফাইনম্যানকে নোবেল পুরস্কার পর্যন্ত এনে দিয়েছিল!

আসলে ডিরাকের গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকাও এত বড় যে এই ছোট কলেবরে এর তেমন কিছুই উল্লেখ করা গেল না। কিন্তু বিজ্ঞানী ডিরাকের পাশাপাশি ব্যক্তি ডিরাকের কথা না বললে আসলে তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হবে। শুধু বিজ্ঞানী হিসেবেই নয়, ডিরাকের মতো মানুষও যে পৃথিবী খুব বেশি পায়নি, এ কথা একেবারে চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়।

ডিরাকের সম্মানে ১৯৯৫ সালে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন, স্যার আইজ্যাক নিউটনের পাশে তাঁকে একটি স্মারক সমাধি দেওয়া হয়। সেখানে তাঁর এপিটাফে ডিরাক সমীকরণের একটি রূপ লেখা আছে। যে সমীকরণের হাত ধরে মানুষ প্রতিপদার্থের খোঁজ পেয়েছিল। ইলেকট্রনের জন্য পূর্ণাঙ্গ কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডায়নামিকস তত্ত্ব বসে গিয়েছিল খাপে খাপে। অসীম গাণিতিক সৌন্দর্য নিয়ে যে সমীকরণ আমাদের যুগ যুগ ধরে ডিরাককে মনে করিয়ে দেবে।

পল ডিরাকের এপিটাফে এর চেয়ে যথার্থ কিছু আসলে বসানো যেত না।

লেখক: উচ্ছ্বাস তৌসিফ, শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সূত্র: উইকিপিডিয়া, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগো ডটকম;

অ্যান্টিম্যাটার, ফ্র্যাঙ্ক ক্লোজ, ভাষান্তর: উচ্ছ্বাস তৌসিফ, প্রকাশক: প্রথমা