হকিংয়ের কিছু স্মরণীয় মন্তব্য

আজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ৮০ তম জন্মদিন।

ধারণত আমরা স্টিফেন হকিংকে চিনি ব্ল্যাকহোল, বিগ ব্যাং বা হকিং রেডিয়েশন দিয়ে। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর কিছু মন্তব্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যেমন বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে (ডিসেম্বর ২০১৪) তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স—এআই) পরিপূর্ণ বিকাশ শেষ পর্যন্ত মানবপ্রজাতির সমাপ্তি ঘটাতে পারে। সে তার নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিতে পারে এবং নিজেকে এমনভাবে ক্রমেই দ্রুততর গতিতে পুনর্সজ্জিত করতে পারে...মানুষ হয়তো এই গতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সময়টুকু পাবে না। কারণ মানবপ্রজাতির অভিযোজন ঘটেছে খুব ধীরগতিতে।

তাহলে বুঝুন, আমাদের আবিষ্কার কত বড় বিপদ হয়ে উঠতে পারে। রোবট সোফিয়া আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে গেছে। একদিন হয়তো এই সোফিয়াদের বুদ্ধিমত্তা মানুষকে বন্দী করবে।

আরেকটা মূল্যবান বাস্তব কথা দেখুন। মহাবিশ্বের অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে ডিসকভারি চ্যানেলে (২০১০) ‘অন ইনটু দ্য ইউনিভার্স উইথ স্টিফেন হকিং’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অসম্পূর্ণতা ছাড়া আপনার-আমার অস্তিত্বই থাকত না!

২০০৭ সালে ৬৫তম জন্মদিনের কিছু আগে তিনি কৃত্রিম শূন্য মাধ্যাকর্ষণ (জিরো গ্র্যাভিটি) পরিভ্রমণ করেন। কেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি দেখাতে চাই, যতক্ষণ মনের জোর থাকে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য তার দমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।

অনেক সময় কারও মনে হতাশা দেখা দেয়। তাদের উদ্দেশে স্টিফেন হকিং পিপলস ডেইলি অনলাইনে (জুন ২০০৬) বলেছেন, কেউ আত্মহত্যা করতে চাইলে করতে পারেন, কিন্তু আমি মনে করি সেটা বিরাট ভুল হবে। জীবন যত তিক্তই হোক, সেখানে সব সময় আপনি কিছু না কিছু করতে পারেন এবং সফল হতে পারেন। যেখানে জীবন, সেখানেই আশা।

পৃথিবীতে মানববসতি কত দিন টিকে থাকবে? এ সম্পর্কে হকিংয়ের ধারণা বারবার পরিবর্তিত হতে দেখেছি আমরা। যেমন আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম (১৯৮৮)-এ তিনি লিখেছিলেন, সূর্যের বুকে পৃথিবীর ভেঙে পড়তে লাখ লাখ লাখ লাখ কোটি বছর (থাউজ্যান্ড মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন ইয়ারস) লাগবে। তাই এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

এরপর তিনি দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর সঙ্গে সাক্ষাত্কারে (অক্টোবর ২০০১) বলেন, আমার মনে হয় মানবপ্রজাতি যদি মহাজগতে ছড়িয়ে না পড়ে তাহলে আর আগামী ১ হাজার বছর টিকবে না। ...তবে আমি আশাবাদী। আমরা অন্য নক্ষত্রজগতে চলে যেতে পারব।

যদি গ্রহান্তরের কেউ (এলিয়েন) আসে? এ সম্পর্কে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ‘ইন নেকেড সায়েন্স: এলিয়েনস কন্টাক্ট’ অনুষ্ঠানে (২০০৪) তিনি বলেন, আমার মনে হয় মহাবিপর্যয় ঘটে যাবে। ভিনগ্রহের ওরা সম্ভবত আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত হবে...।

মৃত্যুর ১৬ বছর আগে, ২০০২ সালে স্টিফেন হকিং বলেন, তাঁর ইচ্ছা, তাঁর সমাধিস্তম্ভে যেন হকিং রেডিয়েশনের সূত্রটি লিখে রাখা হয়।