সমন্বিত তত্ত্ব আবিষ্কারের দাবি গবেষকদের!

দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও মহাকর্ষ তত্ত্বকে একীভূত করার চেষ্টা করছেনপ্রতীকী ছবি

মহাকর্ষ তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে একীভূত করে একটি সমন্বিত তত্ত্ব দিয়েছেন ইউভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) একদল পদার্থবিদ। তাতে আইনস্টাইনের দেওয়া স্থান-কালের ধারণা সংরক্ষিত আছে বলে দাবি করেছে গবেষক দলটি। নেচার কমিউনিকেশনফিজিক্যাল রিভিউ এক্স জার্নালে সম্প্রতি এ বিষয়ে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন তাঁরা।

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে দুটি মূল ভিত্তির ওপর। এক, কোয়ান্টাম তত্ত্ব। ক্ষুদ্রতম কণার জগৎকে ব্যাখ্যা করে এটা। দুই, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা। এটা মহাকর্ষকে স্থান-কালের বক্রতা হিসেবে ব্যাখ্যা করে। অর্থাৎ বৃহৎ পরিসরে এ তত্ত্ব কার্যকর। সমস্যা হলো, তত্ত্ব দুটি পরস্পরকে পুরোপুরি সমর্থন করে না। ফলে প্রকৃতির অনেক কিছু আজও ব্যাখ্যা করা যায় না। দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা এ দুটি তত্ত্ব একীভূত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সফলতা আসেনি।

অনেক বিজ্ঞানী ধারণা করেন, তত্ত্ব দুটি একীভূত করতে হলে আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্বকে সংশোধন অথবা কোয়ান্টাইজড করতে হবে। এই চিন্তার ওপর ভিত্তি করে মহাকর্ষের কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে দুটি অনুকল্প দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেগুলো হলো, স্ট্রিং তত্ত্ব ও লুপ কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব। কিন্তু এখনও পরীক্ষামূলক প্রমাণ না মেলায় সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাও পায়নি।

নতুন এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ইউসিএলের পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোনাথন ওপেনহাইম। তাঁদের মতে, স্থানকালের ধারণা হয়তো ভুল নয়। তাই স্থান-কাল পরিমার্জনের বদলে তাঁরা কোয়ান্টাম তত্ত্ব সংশোধনের দিকে নজর দেন। একে ‘পোস্টকোয়ান্টাম থিওরি অব ক্লাসিক্যাল গ্র্যাভিটি’ বলছেন তাঁরা।

নেচার কমিউনিকেশনের প্রকাশিত দ্বিতীয় গবেষণাপত্রে তাঁদের এই তত্ত্ব যাচাইয়ের জন্য একটি পরীক্ষার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে পরীক্ষাটি হলো, খুব নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা কোনো বস্তুর ভর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন ফ্রান্সে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ ব্যুরোতে আদর্শ ১ কেজি ভরের ধাতব সিলিন্ডার সংরক্ষিত আছে। এটি নিয়মিতভাবে মাপা হয়। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিমাপের তারতম্য গাণিতিক ধারাবাহিকতার চেয়ে কম হয়, তাহলে তত্ত্বটি বাতিল করা হতে পারে। তা না হলে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

তবে তত্ত্বটি সঠিক কি না, তা জানতে অন্তত ২০ বছর সময় লাগবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে আরও নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। নতুন এ তত্ত্ব সঠিক প্রমাণিত হলে তা হবে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। পদার্থবিজ্ঞানের অনেক কিছুই বদলে যাবে চিরতরে।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: ফিজিক্স ডট অর্গ