আগের দিনে বৈদ্যুতিক বাল্বকে মানুষ বলত বিজলী বাতি। অন্ধকারে সুইচ টিপলে বিজলী বা ইলেকট্রিক বাল্বের আলোয় ভরে যেত ঘর। ছোটবেলায় খুব কৌতূহল হতো, কীভাবে ঘটনাটা ঘটে? বাল্বের ভেতর আগুন জ্বালালো কে? কখন জ্বালালো? খালি সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে!
বড় হয়ে জানতে পারলাম, শুধু সুইচ টিপলেই আলো জ্বলে না। বিদ্যুৎ নামে এক প্রকার শক্তি আছে, যা ব্যবহার করে আলো জ্বালানো, পাখা ঘোরানোসহ আরও অনেক কাজ করা যায়। সুইচ মূলত সেই বিদ্যুৎশক্তির সঙ্গে বাল্বের বর্তনী সম্পন্ন করে। বর্তনী বলতে বিদ্যুতের চলাচলের পথের কথা বলছি। সুইচ যখন ‘অন’ করা হয়, তখন এই পথ পুরোপুরি তৈরি হয়।
এই বিদ্যুৎ শক্তি আসে অনেক দূরদূরান্ত থেকে তারের মাধ্যমে। সুইচ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাল্বের সঙ্গে বর্তনী সম্পন্ন হয়। বাল্বের ভেতরের ফিলামেন্ট বিদ্যুতের প্রবাহে প্রচণ্ড উত্তপ্ত হলে আলো দেওয়া শুরু হয়। আগের দিনের ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্বগুলোতে মূলত এ ঘটনাই ঘটত। এখন আরও নানা পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আলো তৈরি করা হয়।
মজার বিষয় হলো, বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয় না। আগে সুইচ টেপার সঙ্গে সঙ্গেই যেমন আলো জ্বলে উঠত, এখনও জ্বলে। সঙ্গে সঙ্গে কথাটা বোধহয় ঠিক নয়। কারণ, কিছু সময় তো অবশ্যই নেয়। প্রশ্ন হলো, সেই সময়টা কত? বিদ্যুতের গতি আসলে কেমন?
অনেকে বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আর বিদ্যুৎ প্রবাহকে এক জিনিস ভাবেন। তাই ধরেই নেন যে বিদ্যুতের গতিও বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের গতির সমান, অর্থাৎ সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। কিন্তু ঘটনা মোটেও এমন নয়। বিদ্যুৎ প্রবাহ আর বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ একটু ভিন্ন জিনিস।
বিদ্যুৎ প্রবাহ বলতে বোঝায় কোনো পরিবাহীর (যেমন তার) মধ্যে দিয়ে ইলেকট্রনের ধীরগতির প্রবাহ। অন্যদিকে, বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ হলো বিদ্যুৎ ও চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে তৈরি একধরনের তরঙ্গ। আলো, মাইক্রোওয়েভ, এক্সরে— সবই এর মধ্যে পড়ে। শূন্যস্থানসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ভেতর দিয়ে এ তরঙ্গ সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে চলে।
বিদ্যুৎ প্রবাহ ধীরগতির ইলেকট্রন দিয়ে তৈরি হলেও আলো আমরা যে মুহূর্তে জ্বলতে দেখি, সেটি আসলে বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের দ্রুত গতির কারণে হয়। বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের প্রভাবে পরিবাহীর মধ্যে ইলেকট্রন প্রতি সেকেন্ডে গড়ে প্রায় ১ মিলিমিটার পথ অতিক্রম করে। এই গতিকে বলা হয় ইলেকট্রনের ড্রিফট ভেলোসিটি।
বিদ্যুৎশক্তি নিজে এত ধীরে চলে না। বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গের আকারে, প্রায় আলোর গতিতে (আলোর গতির ৯০% পর্যন্ত) ইলেকট্রন প্রবাহের উলটো দিকে তারের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে এটি। একে বলা যায় বিদ্যুতের গতি। তবে এখানে একটা কিন্তু আছে। সবসময় এই গতিতে বিদ্যুৎ চলে না। মাধ্যমটা কতটা বিদ্যুৎ পরিবাহী, তার ওপর বিদ্যুৎ শক্তির গতি নির্ভর করে। রোধের পরিমাণ বেশি হলে ইলেকট্রনের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং গতি কমে যায়। বিপরীতে, যদি পরিবাহকের মধ্যে বেশি মুক্ত ইলেকট্রন থাকে, তবে বিদ্যুৎ সংকেত সহজে প্রবাহিত হয় এবং গতি বেশি হয়। বিদ্যুৎ সংকেতের গতি মূলত নির্ভর করে পরিবাহকের বৈশিষ্ট্য, এর রোধ এবং এতে থাকা মুক্ত ইলেকট্রনের ঘনত্বের ওপর। পরিবাহকের রোধ বেশি হলে ইলেকট্রনের চলাচল কমে যায়। ফলে তাপ উৎপন্ন হয়। এ কারণেও হ্রাস পেতে পারে বিদ্যুতের গতি।