সাধারণত বৃষ্টির পর আকাশে রংধনু দেখা যায়। রংধনুর সাত রং—বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। সহজে মনে রাখার জন্য বলা হয় বেনীআসহকলা। রং-বেরঙের রংধনুর দেখতে আমাদের সবারই ভালো লাগে। কিন্তু কীভাবে সৃষ্টি হয় এই রংধনু?
এটা বুঝতে হলে একটু প্রিজমের কারসাজি বুঝতে হবে। প্রিজম হচ্ছে স্বচ্ছ কাঁচ বা প্লাস্টিকের তৈরি ত্রিকোণাকার এক ধরনের বাক্স। সাদা আলো প্রিজমের মধ্য দিয়ে গেলে সেটি বিভিন্ন রঙে ছড়িয়ে পড়ে। একে বলে বিচ্ছুরণ। প্রকৃতিতে রংধনু গঠনের পেছনেও এমন ধরনের আলোর বিচ্ছুরণ কাজ করে।
আলো যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যায়, তখন এর গতি পাল্টে যায়। অর্থাৎ, আলো দিক পরিবর্তন করে। আলো কতটা বেঁকে যাবে তা নির্ধারণ করে ওই বস্তুর প্রতিসরাঙ্ক। কোনো মাধ্যমে আলোর গতি কতটা কমবে, তার মাপকাঠি হচ্ছে প্রতিসরাঙ্ক। বাতাস, পানি, কাঁচসহ প্রতিটি বস্তুর প্রতিসরাঙ্ক ভিন্ন।
খালি চোখে আমরা বিভিন্ন রঙের আলো দেখতে পাই। তবে সাদা রঙের আলো কোনো আলাদা আলো নয়। এটি অনেকগুলো রঙের মিশ্রণ। কাঁচের প্রতিসরাঙ্ক একেক রঙের আলোর জন্য একেক রকম হয়। তাই সাদা আলো প্রিজমের ভেতর দিয়ে গেলে প্রতিটি রঙের আলো বেঁকে যায় আলাদা আলাদা কোণে। ফলে আলোকরশ্মিগুলো একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে যায়। তখন আমরা রংধনুর সাতটি রং দেখতে পাই। এর নাম আলোর বিচ্ছুরণ।
বৃষ্টির পর আকাশ দেখতে পরিষ্কার মনে হলেও বাতাসে পানির কণা ভাসতে থাকে। ভাসমান এসব পানির কণা ছোট ছোট প্রিজমের মতো কাজ করে। বাতাসের চেয়ে পানির প্রতিসরাঙ্ক আলাদা। তাই প্রিজমের মতোই সূর্যের আলো পানির কণা ভেদ করার সময় বেঁকে যায়। তখন সূর্যের আলো সাত রঙে ভাগ হয়ে যায়। আকাশে এই রংগুলোকেই আমরা রংধনু হিসেবে দেখি। সাধারণত সূর্যের বিপরীত দিকে রংধনু দেখা যায়।
রংধনুর সাত রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলাদা আলাদা হয়। ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বলেই আলোগুলোর রং একেক রকম হয়। একই কারণে প্রতিটি আলো ভিন্ন ভিন্ন কোণে বেঁকে যায়। যেমন, লাল আলো ৪২ ডিগ্রি কোণে বেঁকে গেলেও বেগুনি আলো বাঁকে ৪০ ডিগ্রি কোণে। রংধনুর অন্যান্য রং ৪০-৪২ ডিগ্রি কোণের মধ্যেই বেঁকে যায়। এ কারণেই রংধনুর রংগুলোকে সবসময়ই দেখা যায় একটি নির্দিষ্ট সারিতে।