চলে গেলেন নোবেলজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ
চলে গেলেন কিংবদন্তী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৩ জুলাই মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
পদার্থবিজ্ঞানের জগতের বাইরে অনেকের কাছেই তিনি হয়তো দ্য ফার্স্ট থ্রি মিনিটস বইটির জন্য সুপরিচিত। বিখ্যাত এই বইটি তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। মহাবিশ্বের জন্ম এবং এর পরবর্তী তিন মিনিটে ঘটে যাওয়া বিষ্ময়কর সৃষ্টির সেরা গল্পটি তিনি শুনিয়েছেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। প্রতি সেকেন্ডের এক ভাগের একশ কোটি ভাগ সময়ে কী ঘটেছে, তাও ব্যাখ্যা করেছেন বিস্তারিতভাবে, সহজ ভাষায়। তবে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন ওয়াইনবার্গ ছিলেন এক জীবিত কিংবদন্তী। দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও তড়িৎ-চৌম্বক বলকে একীভূত করার জন্য তিনি শেলডন লি গ্ল্যাশো এবং আব্দুস সালামের সঙ্গে ১৯৭৯ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তার এই নোবেলজয়ী কাজটা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে করা হলেও তিনি পরবর্তীতে ইউনির্ভাসিটি অব টেক্সাস অস্টিনে মৃত্যুকাল অবধি কর্মরত ছিলেন।
মহাবিশ্বের সবকিছুর পেছনে কারিকুরি করে মূলত ৪টি বল। মহাকর্ষ বল, বিদ্যুৎচুম্বক বল, শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল ও দুর্বল নিয়ক্লিয়ার বল। পদার্থবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই চারটি বল আসলে সৃষ্টির শুরুতে একসঙ্গে ছিল। অর্থাৎ, গাণিতিকভাবে এই চারটি বলকে একীভূত করে যদি কোনো তত্ত্ব দাঁড় করানো যায়, তাহলে এ তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে মহাবিশ্বের সব কিছুকে। পুরোপুরিভাবে জানা যাবে মহাবিশ্ব কীভাবে কাজ করছে। এ তত্ত্ব ব্যবহার করে হিসেব করে বের করে ফেলা যাবে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, কী হচ্ছে বহুদূরের কোনো গ্যালাক্সি কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের বুকে। ওয়াইনবার্গ, গ্ল্যাশো এবং আব্দুস সালাম দুটো বলকে একীভূত করে সবকিছুর তত্ত্বের খোঁজে বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেক দূরে। তাঁদের কাজের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ অবকাঠামো বা স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এই মডেলের হাত ধরেই বর্তমানে অস্থিতিশীল অতিপারমাণবিক কণাদের আচরণ ব্যাখ্যা করা হয়।
ওয়াইনবার্গের মৃত্যুর খবর শোনার পর তাই ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জন কার্লোস বায়েজ বলেন, ‘সবকিছুর তত্ত্বের খোঁজে বিজ্ঞানীদের এতদিনের নিরন্তর ছুটে চলা। এর ভেতরে অল্প কয়েকজন বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টাই সত্যিকার অর্থে কাজ করেছে, এগিয়ে নিয়েছে বিজ্ঞানকে। এর একজন নিউটন, যিনি পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরে, মহাবিশ্বে সবখানে মহাকর্ষ কীভাবে কাজ করে, তা ব্যাখ্যা করেছেন। তারপর ম্যাক্সওয়েল একীভূত করেছেন বিদ্যুৎ ও চুম্বককে। এর পরেই এসেছেন ওয়াইনবার্গ, গ্ল্যাশো এবং আব্দুস সালাম, যাঁরা দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ও বিদ্যুৎচুম্বক বলকে এক সুতোয় গেঁথে আবিষ্কার করেছেন তড়িৎ-দুর্বল বল (Electroweak Force)।’
ওয়াইনবার্গ বলতেন, ‘বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, কোন প্রশ্নগুলো করতে হবে তা খুঁজে বের করা।’ ছোট্ট কথায় বিজ্ঞানকে এরচেয়ে ভালোভাবে বোঝানো কঠিন।
পদার্থবিজ্ঞানের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৩ মে।
লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও লাইভ সায়েন্স