জাদুর চিরুনি

ছয় বছরের ছোট্ট তুতুল। পাকা পাকা কথা বলে, কাজ করে। একটা চিরুনি নিল সে। টেবিলের উপর থেকে। মা বসে আছেন খাটে, তাঁর চুল ছাড়া। রেশমের মতো শুকনো ঝরঝরে চুল। ফ্যানের বাতাসে উড়ছে সেগুলো। তুতুল চিরুনি নিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করল। কিন্তু ঠিক মতো হচ্ছিল না। মা বললেন, ব্যথা পাচ্ছি তুতুল, ওভাবে আঁচড়িও না। তুতুল কথা শোনে না। মা বললেন, বকা খাবে, নাকি বাদাম খাবে?

জবাবে তুতুল বলল, বাদাম খাব। মা বললেন, তাহলে চিরুনি রেখে দাও। তুতুল চিরুনি ঘরের মেঝেতে ফেলে দিল। ছোট ছোট কাগজের কিছু টুকরো পড়ে ছিল মেঝেতে। চিরুনি গিয়ে পড়ল কাগজের সেই টুকরোগুলোর ওপর। তুতুল বলল, বাদাম দাও মা। মা বললেন, দিচ্ছি এখানে একটু বোসো।

মা গেলেন বাদাম আনতে। মেঝে থেকে চিরুনি তুলে নিল তুতুল। অবাক ব্যাপার! চিরুনির সঙ্গে কাগজের টুকরো আটকে আছে। তুতুল ছুটতে ছুটতে গেল মায়ের কাছে। বলল, মা দেখ, দেখ, জাদুর চিরুনি।

মা তুতুলের মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলল, না বাবা, এটা জাদুর চিরুনি নয়। এটা স্থির বিদ্যুৎ। তুতুল আরেকটা চিরুনি নিল। পুষি ঘুমিয়ে ছিল পাশের ঘরে। তুতুল চিরুনি নিয়ে পুষির লোম আঁচড়ে দিল। ঘুম ভেঙে গেল পুষির। তবুও পুষি উঠল না। চিরুনির আঁচড়ে পুষি আরাম পাচ্ছে। তুতুলের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে। বালিশ থেকে তুলো বেরিয়ে উড়ছে ঘরময়। তুতুল ফ্যান বন্ধ করে দিল। তুলা পড়ল খাটের ওপরে। তুতুল চিরুনিটা ঠেকাল তুলা উপর। কিছু তুলা উঠে এল চিরুনির সঙ্গে। তুতুল আবার দৌড়ে গেল মায়ের কাছে। বলল, মা এটাও জাদুর চিরুনি। মা বলল, না বাবা, এটা স্থির বিদ্যুৎ।

তুতুল ঘুড়ি তৈরির জন্য বায়না করছিল কদিন ধরে। মা পাতলা কাগজ দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করে দিল। মেঝেই পড়ে রইল কাগজের কাটা টুকরোগুলো। বাবা মেলা থেকে একটা রঙিন টিউব কিনে দিয়েছিল। কাচের তৈরি। ভেতরে জরি মেশানো রঙিন পানি। টিউবটাতে একটু ধুলো লেগে গিয়েছিল। তুতুলর মায়ের একটা রেশমি কাপড় রোদে শুকাতে দেওয়া ছিল। তুতুল সেই কাপড় দিয়ে টিউবটা ভালো করে মুছল। মা ততক্ষণে বাদাম নিয়ে হাজির। কাচের টিউবটা ঘুড়ির পাশে রেখে তুতুল মায়ের কাছে বাদাম খেতে এল।

মাদাম ফুরাল এক সময়। তুতুল কাচের টিউবটা আবার নিতে গেল তুতুল। অবাক ব্যাপার! রঙিন পাতলা কাগজের কয়েকটা টুকরো কাচের টিউবের সঙ্গে উঠে এল। তুতুল দৌড়ে গেল মায়ের কাছে। বলল, মা, মা, দেখ, জাদুর টিউব। মা বললেন, না বাবা, এটাও স্থির বিদ্যুৎ।

তুতুলের মাথায় ‘স্থির বিদ্যুৎ’ কথাটা বারবার ঘুরপাক খেতে লাগল। বিদ্যুৎ নামটা ও শুনেছে। বিদ্যুতে বিপদ আছ, জাজে সে কথাও। মা প্রায়ই বলেন ভেজা হাতে সুইচে ধরবে না, প্লাগ খুলতে যাবে না, তাহলে নাকি শক করবে। তুতুল বুঝতে পেরেছে, বিদ্যুৎ খুব উপকারি জিনিস। আবার খুব বিপদেরও জিনিস। কিন্তু বুঝতে পারছে না, স্থির বিদ্যুৎ কী? মাকে প্রশ্ন করল, মা, স্থির বিদ্যুৎ মানে কী?

মা বললেন, যে বিদ্যুৎ স্থির থাকে। যে বিদ্যুৎ চলতে পারে না। সেটাই স্থির বিদ্যুৎ। আর যে বিদ্যুৎ দিয়ে লাইট, ফ্যান চলে, সেটা চল বিদ্যুৎ।

তুতুল মনে মনে বলল, ওহ্, এই ব্যাপার। তা সহজ করে বললেই হয়। যে বিদ্যুৎ জাদুর বিদ্যুৎ, যে বিদ্যুতে বিপদ নেই, সেটাই স্থির বিদ্যুৎ। যে বিদ্যুৎ দানবের বিদ্যুৎ, যে বিদ্যুতে বিপদ আছে, যে বিদ্যুৎ অনেক কিছু করতে পারে, উপকারও করতে পারে, অপকারও করতে পারে, তাই চল বিদ্যুৎ। মা যে কেন সহজ করে বলে না!

লেখক: মহাব্যবস্থাপক, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড