নিউটনের গতিসূত্র

পেছনের কথা

বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের গতির সূত্রগুলো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগের ফলাফল ব্যাখ্যা করে। বল হচ্ছে ধাক্কা দেওয়া বা টান দেওয়ার মত ব্যাপারগুলো, যেমন মহাকর্ষ, ঘর্ষণ অথবা চুম্বকত্ব। বল দেখা যায় না, কিন্তু এদের প্রভাব অনুভব করা যায় এবং এর ফলাফল গণনাও করা যায়। বল বস্তুর গতি ও গতির দিক পরিবর্তন করতে পারে। চাপ ও ওজনের পেছনেও রয়েছে বলের কারসাজি। গতির তিনটি সূত্র অনেকগুলো বল ভারসাম্য অবস্থায় থাকলে বা না থাকলে কী ঘটে, তার বর্ণনা দেয় এবং সমান ও বিপরীতমুখী বলের ধারণা ব্যাখ্যা করে।

সংক্ষেপে গতির সূত্র

কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়ারত বলগুলোর সাম্যাবস্থার ব্যাখ্যা গতির প্রথম সূত্র। স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু একই গতিতে চলতে থাকবে। এই প্রবণতা জড়তা (ওহবত্ঃরধ) হিসেবে পরিচিত।

দ্বিতীয় সূত্র ব্যাখ্যা করে কোন কার্যকরী বল ভারসাম্যহীন অবস্থায় থাকলে কী ঘটনা ঘটে। একই দিকে কাজ করলে আরও বেশি বল প্রয়োগ করলে বস্তুটি ত্বরিত হয়। বস্তু যত বড়, তাকে গতিশীল করতে তত বেশি বল প্রয়োজন।

‘প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে’—এটা নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র। কোনো বস্তু অন্য একটি বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে অপর বস্তুটিও ঠিক একই পরিমাণ বল প্রথম বস্তুর ওপর প্রয়োগ করে।

১৬৮৭ সালে প্রিন্সিপিয়াতে এ সূত্রগুলো প্রথম প্রকাশিত হয়। নিউটন মূলত সৌরজগতের গ্রহগুলোর আবর্তন ব্যাখ্যা করতে সূত্রগুলো প্রতিপাদন করেন।

নেপথ্যের নায়ক

স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন একাধারে গণিতবিদ, পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ। ১৬৪২ সালের বড়দিনে তাঁর জন্ম (পুরোনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে)। তাঁর বিখ্যাত বই ফিলসফি ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকাতে মহাবিশ্বের বলবিদ্যা গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন তিনি। মহাকর্ষের তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন সেখানে। তিনি বলেন, মহাবিশ্বের সবকিছু একই পদার্থবিদ্যার সূত্রের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। আলোকতত্ত্ব, রং ও ক্যালকুলাসের ওপরও তাঁর কাজ রয়েছে। এমনকি তাঁর আইডিয়াগুলো ৩০০ বছর পরও ব্যবহূত হচ্ছে। তাঁর অর্জন এখানেই থেমে থাকেনি। তিনিই প্রথম প্রতিফলক টেলিস্কোপ তৈরি করেন। বিজ্ঞানী নিউটন একসময় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এমনকি রয়্যাল মিন্টের (ধাতব মুদ্রা তৈরির কারখানা) একজন মাস্টার ছিলেন। ১৬৯৯ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্রিটেনের সব মুদ্রা তৈরির দায়িত্বে বহাল ছিলেন।

তাঁকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৭২৭ সালে তিনি মারা যান।

গ্রন্থনা: তড়িৎকৗশল বিভাগ, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস