সৌরঝড়ে বেতার তরঙ্গ ব্ল্যাকআউট

হঠাৎ সৌরঝড়ের আঘাতে বিপর্যস্ত পৃথিবীর কিছু অঞ্চলের বেতার তরঙ্গ। স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কিছু অঞ্চলের বেতার তরঙ্গ সাময়িকভাবে ব্ল্যাকআউট বা সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সূর্যপৃষ্ঠের অতিঘন চৌম্বক এলাকা থেকে নির্গত হয় এই সৌরশিখা।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সোলার ডায়ানামিকস মানমন্দির সৌরশিখার ধরন ও শক্তির পরিমাণ রেকর্ড করে। তারা জানায়, এটি ছিল এম-৫ ধরনের মাঝারি শক্তির সৌরশিখা। 

এআর৩১৪১ নামের সৌরকলঙ্ক (Sunspot) থেকে স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটে সৌরশিখাটির উৎপত্তি। এই শিখাটি যে বিকিরণ তৈরি করে, তাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আয়নিত হয়। এমনটাই বলছে স্পেসওয়েদার ডট কম।

সৌরজগতের আলোর প্রধান উৎসের বুকে কালো দাগ—সৌরকলঙ্ক

সূর্যপৃষ্ঠে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় কালো কিছু অঞ্চল। দূর থেকে এগুলোকে দেখায় দাগের মতো। এই অঞ্চলগুলোকে ইংরেজিতে বলে সানস্পট। বাংলা করলে দাঁড়ায়, সৌরকলঙ্ক। সৌরজগতের আলোর প্রধান উৎসের বুকে কালো দাগ—নামকরণ যে যথার্থ, তা বলতেই হবে! শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র থেকে এদের উৎপত্তি। 

এই সৌরঝড়ের আঘাতটি এত অপ্রত্যাশিতভাবে হয়েছে যে বিজ্ঞানীরাও বেশ অবাক হয়েছেন এ ঘটনায়। স্পেসওয়েদারলাইভ এক টুইটবার্তায় জানিয়েছে, ‘সৌরশিখাটি ছিল পুরো অপ্রতাশিত। আমরা এর কোনো পূর্বাভাস দিতে পারিনি বলে ক্ষমাপ্রার্থী।’

সৌরশিখা কী পরিমাণ এক্সরে বিকিরণ করছে, তার ওপর ভিত্তি করে দ্য ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নোয়া (NOAA) একে A, B, C, M এবং X—এই ৫টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। প্রতিটা ক্যাটাগরি আগেরটার চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী।

কাছ থেকে সৌরকলঙ্কের ছবি

এসব সৌরশিখার আয়নিত কণা থেকে তৈরি এক্সরে ও গামা বিকিরণ যখন পৃথিবীতে এসে পৌঁছে, তখন বায়ুমণ্ডলে উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ বেতার তরঙ্গ বাধাগ্রস্থ হয়। সৌরশিখার শক্তি বেশি হলে পৃথিবীর যে অঞ্চলে এর আঘাত আসে, সে অঞ্চলের স্বাভাবিক বেতার তরঙ্গ পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। অবস্থাভেদে এ ধরনের বেতার ব্ল্যাকআউটকে R1 থেকে R5 পর্যন্ত পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। সাম্প্রতিক ঘটনাটি R2 ধরনের ব্ল্যাকআউট।

কোন অঞ্চলে সৌরশিখার প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করে পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থানের ওপর। 

১৭৭৫ সাল থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের সক্রিয়তা (Solar activity) পর্যবেক্ষণ করছেন। দেখা গেছে, সূর্য ১১ বছরের একটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায়। প্রতিটি চক্রের কিছু সময় সৌরঝড় বা সৌরশিখার পরিমাণ থাকে কম, কিছু সময় আবার বেশি থাকে। বর্তমানে সূর্য বেশি সক্রিয়তার সময় পার কাছে। নোয়া-র মতে, সূর্যের কম সক্রিয় থাকার সময়ের তুলনায় বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ সানস্পট তৈরি হয়েছে।

সূর্যের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার কারণে উচ্চশক্তির আয়নিত কণা, এক্সরে ও গামা বিকিরণ পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে আছড়ে পড়ার পরিমাণ বেড়েছে। সেজন্যই ঘটছে বেতার তরঙ্গ ব্ল্যাকআউটের মতো ঘটনা। আরোরা বা মেরুজ্যোতির পরিধিও বেড়েছে একই কারণে। দক্ষিণ মেরুর জ্যোতি ছড়িয়ে পড়েছে পেনসিলভানিয়া, আইওয়া এবং ওরিগন পর্যন্ত।

সামনের বছরগুলোতে সৌরশিখার আঘাত আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যের সক্রিয়তা স্বাভাবিক হওয়ার আগে আগামী ২০২৫ সালে এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। তবে এ নিয়ে জনসাধারণের দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স