রক্ত গবেষক!

আমি তো একজন ডাক্তার, মানুষের কলকবজা নিয়ে কাজ করি, ওষুধ দিয়ে বা কখনো কেটেকুটে আমরা ঠিকঠাক করি

একজন কার মেকানিকের কাছে গাড়ি নিয়ে এলেন এক ডাক্তার। তার গাড়িতে কিছু সমস্যা হচ্ছে, সেটা দেখাতে। কার মেকানিক দেখেটেখে ঠিকঠাক করে দিল। তারপর বিল করল। বিল দেখে ডাক্তার আঁতকে উঠলেন!

এত টাকা বিল? আমি তো একজন ডাক্তার, মানুষের কলকবজা নিয়ে কাজ করি, ওষুধ দিয়ে বা কখনো কেটেকুটে আমরা ঠিকঠাক করি। কই আমরা তো কখনো এত চার্জ করি না। আপনি গাড়ির কলকবজা নেড়েচেড়ে এত টাকা বিল করলেন, এর মানে কী?

দেখুন স্যার, সেই আদম-হাওয়ার সময় থেকে শুরু করে মানুষের শরীরের কলকবজার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু গাড়ির মডেল প্রতিবছর চেঞ্জ হচ্ছে। তার মানে কী? আমাকে সব সময় আপগ্রেড হতে হচ্ছে গাড়ির মডেলের সাথে তাল মিলিয়ে! ঠিক কি না।

ডাক্তার লা জবাব। তবে কথায় বলে না এক মাঘে শীত যায় না। এবার সেই কার মেকানিক গেল সেই ডাক্তারের কাছে তার কোনো শারীরিক অসুবিধার জন্য। ডাক্তার দেখেটেখে প্রেসক্রিপশনের সাথে বিভিন্ন টেস্টের একটা বিল ধরিয়ে দিলেন।

এত টাকা? কার মেকানিক আঁতকে উঠল। আমি তো একজন কার মেকানিক, গাড়ির কলকবজা ঠিক করি, কই আমরা তো এত টাকা চার্জ করি না...যদিও প্রতিবছর গাড়ির মডেল বদলাচ্ছে। কিন্তু মানুষের শরীরের কলকবজা সেই আদম–হাওয়ার যুগ থেকে একই আছে। শুনে ডাক্তার এবার স্মিত হাসলেন। বললেন—

হ্যাঁ, কথা ঠিক, মানুষের মডেল বদলায়নি। কিন্তু রোগের মডেল তো প্রতিমুহূর্তে বদলাচ্ছে। করোনার কথাই যদি ধরি... প্রথমে ছিল করোনা, তারপর ডেলটা, তারপর অমিক্রন...যান রক্তের টেস্টটা করিয়ে আনুন, আগে আপনার রক্তের গ্রুপটা জানতে হবে।

মশারা স্যার মানুষের রক্তের বিভিন্ন ফ্লেভার যাতে পায়, তাই এই ব্যবস্থা। আমরা যেমন স্যার কোক, ফান্টা, পেপসি—বিভিন্ন ফ্লেভারের পানীয় খাই, ওই রকম আরকি...তার মানে বুঝতে পারছেন মশারা পরিবেশবান্ধব; মানুষ না।

এবার কার মেকানিক লা জবাব। একটু দম নিয়ে বলল, স্যার, এই যে মানুষের একেকজনের রক্তের গ্রুপ একেক রকম, এটা কেন স্যার?

দেখুন, এর জবার আমার কাছে নেই। এটা যিনি আদম-হাওয়া সৃষ্টি করেছেন, তিনি বলতে পারবেন।

স্যার, আমি জানি। ভ্রু নাচিয়ে কার মেকানিক বলে।

মানে! কী জানেন? ডাক্তার অবাক।

স্যার মানুষে মানুষে এই যে রক্তের গ্রুপের ভেদাভেদ, এটা স্যার মশাদের কারণে।

মশাদের কারণে? ডাক্তার হতভম্ব!

জি স্যার। মশারা স্যার মানুষের রক্তের বিভিন্ন ফ্লেভার যাতে পায়, তাই এই ব্যবস্থা। আমরা যেমন স্যার কোক, ফান্টা, পেপসি—বিভিন্ন ফ্লেভারের পানীয় খাই, ওই রকম আরকি...তার মানে বুঝতে পারছেন মশারা পরিবেশবান্ধব; মানুষ না। তবে স্যার...এবার কার মেকানিক গলা নামিয়ে ফেলে। প্রায় ফিসফিস করে বলে, আমি একজন বিজ্ঞানীকে চিনি, যিনি মানুষের রক্তের গ্রুপ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি চেষ্টা করছেন মানুষের সব রক্তের গ্রুপকে একটা গ্রুপে নিয়ে আসার।

তাই নাকি, তিনি কে? তার ল্যাবরেটরিই–বা কোথায়?

স্যার, এক গভীর জঙ্গলে একটা প্রাচীন কবরস্থানের ভেতরে, তিনি একাই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন; বহু বছর ধরে।

কিন্তু তিনি কে? কী নাম তার?

তিনি আর কেউ নন, তিনি সেই বিখ্যাত কাউন্ট ড্রাকুলা!

লেখক: কার্টুনিস্ট; সম্পাদক, উন্মাদ