রিচার্ড ফাইনম্যান

‘প্রকৃতির চেতনা বুঝতে পারাই হচ্ছে বিজ্ঞান।’

বলেছিলেন পদার্থবিদ রিচার্ড ডিক ফাইনম্যান, যিনি ম্যানহাটান প্রজেক্টের অন্যতম বিজ্ঞানী, নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তিনি খুব অদ্ভুত একটা মানুষ ছিলেন। তিনি যেকোনো তালা বা লক সে যত জটিলই হোক না কেন, একবার দেখলেই বুঝে ফেলতেন, এটা কীভাবে খুলতে হয়। লক খোলা তাঁর একটা নেশার মতো ছিল, হবিও বলা যায়। বিখ্যাত ম্যানহাটান প্রজেক্টে বড় বড় বিজ্ঞানী যখন কাজ করছিলেন একসঙ্গে; তখন প্রচণ্ড গোপনীয়ভাবে বিভিন্ন লকারে সব অতীব জরুরি কাগজপত্র, ডকুমেন্টস লুকানো ছিল। কিন্তু ফাইনম্যান তাঁর যখন যে কাগজটা দরকার, সেটা সেই লোকের (বা বিজ্ঞানীর) রুমের লকার খুলে নিয়ে জেনে নিতেন। ব্যাপারটা এ রকম, ‘আরে ওকে বলে লকার খুলিয়ে কাগজ নেওয়ার দরকার কী? সময় নষ্ট; আমিই খুলে বের করে নিই না কেন?’ পরে জরুরি গোপনীয় কাগজ আবার সেই লোকের হাতে হাতে ফেরত দিতেন। সেই লোক (হয়তো তিনিও কোনো বড় বিজ্ঞানী) হতভম্ব, ‘এটা আপনার হাতে গেল কীভাবে? এটা তো আমার লকারে ছিল!’

ফাইনম্যান একটা সময় হঠাৎ ছবি আঁকাআঁকি শুরু করে দিলেন, বেশ সিরিয়াসলি। তিনি আর্টিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন বলা যায়। তাঁর ছবি বিক্রিও হতে শুরু করল। তিনি ভাবলেন, তিনি নোবেল প্রাইজ পাওয়া বিখ্যাত পদার্থবিদ, এ জন্য কি তাঁর ছবি বিক্রি হচ্ছে? তিনি তখন একটা ছদ্মনাম নিয়ে ফেললেন। সেটা হচ্ছে ‘ও-ফে’। না, তারপরও তাঁর ছবি বিক্রি হতে লাগল। তাঁর আরেকটা শখ ছিল কিংবা বলা যায় এটাই ছিল তাঁর প্রধান শখ, সেটা হচ্ছে বঙ্গ বাজানো। তিনি সুযোগ পেলেই বিভিন্ন কনসার্টে বা অনুষ্ঠানে বঙ্গ বাজাতে খুব পছন্দ করতেন।

একবার একটা কনসার্ট হবে। কিন্তু সেই কনসার্টের বঙ্গবাদককে পাওয়া যাচ্ছে না। কনসার্টের আয়োজকেরা বিপদে পড়ল। কী করা? এদিকে ফাইনম্যানের পরিচিত একজন আয়োজকদের গিয়ে বলল, তার পরিচিত একজন আছে, সে ভালো বঙ্গ বাজায়। তাকে বলে দেখা যেতে পারে।

‘সে বাজাবে?’

‘আমি বললে বাজাবে, তবে একটু অসুবিধা আছে।’

‘কী অসুবিধা?’

‘লোকটা আবার নোবেল প্রাইজ পেয়েছে।’

‘উফ...।’ আয়োজকেরা বিশেষ বিরক্ত হলো। বঙ্গ বাজাতে পারে, এটাই তো যথেষ্ট ছিল। তার আবার নোবেল প্রাইজ পাওয়ার দরকার কী পড়ল? শেষ পর্যন্ত তারা রাজি হলো, ফাইনম্যান বঙ্গ বাজাতে পারেন একটা শর্তে। তিনি যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, এটা অ্যাট এনি কস্ট গোপন রাখতে হবে।

পরে ফাইনম্যানকে জানানো হলো তিনি কনসার্টে বঙ্গ বাজাতে পারবেন, তবে নোবেল প্রাইজের ব্যাপারটা কেউ যেন না জানে। ফাইম্যান তো মহাখুশি। নোবেল নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা নেই। আগেও ছিল না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে রাতে তাঁকে ফোন করে জানানো হয় যে তিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, এক বিখ্যাত সাংবাদিকই জানান খবরটা। রাত গভীর ছিল, তাঁর ঘুম ভেঙে খবর দেওয়ায় তিনি বিশেষ ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন সেই সাংবাদিকের ওপর। চিত্কার করে বলেছিলেন, ‘খবরটা সকালে দিলেও তো চলত, নাকি?’ ফাইনম্যানের চিত্কারে স্ত্রীর ঘুমও ভেঙে যাওয়ায় যথারীতি স্ত্রী জানতে চাইলেন,

‘কী হয়েছে? কী এমন খবর সকালে দিলেও চলত?’

‘আর বোলো না, আমি নাকি নোবেল পুরস্কার পেয়েছি।’ বলে ফাইনম্যান দ্বিতীয় দফায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওদিকে হতভম্ব স্ত্রী ব্যাপারটা বুঝে আনন্দে চিত্কার–চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। তখন ফাইনম্যানের ধারণা হলো, বড় কোনো ব্যাপারই বোধ হয় ঘটেছে! এই হচ্ছে আমাদের ফাইন ম্যান...ফাইনম্যান...রিচার্ড ডিক ফাইনম্যান।

লেখক: কার্টুনিস্ট, সম্পাদক, উন্মাদ