বিজ্ঞানের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রাণিবিদ্যার ক্লাস নিতে গিয়ে ভাবলেন, হাতে-কলমে শিক্ষা অতীব জরুরি। স্কুলের পাশেই একটা গরুর খামার। তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেলেন সেই খামারে। প্রাণীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একটা পরিচিত বড়সড় প্রাণী দিয়েই নাহয় শুরু হোক।
—বাচ্চারা, আমরা কোথায়?
সবাই সমস্বরে চেঁচাল, ‘গরুর খামারে।’
—গুড। আমরা কী শিখব আজ?
—গৃহপালিত প্রাণী গরু সম্পর্কে।
—ভেরি গুড। এই যে দেখো, একটা গরু এখানে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এ থেকে আমরা কী শিখলাম?
—গরু একটি শান্তশিষ্ট প্রাণী।
—ভেরি ভেরি গুড। বিজ্ঞানশিক্ষায় পর্যবেক্ষণ অতীব জরুরি।
এ সময় এক শিক্ষার্থী হাত তুলে বলল, ‘স্যার, এই গরুর তো শিং নেই?’
—চমত্কার প্রশ্ন। ঠিক ধরেছ, এই গরুর শিং নেই। কেন নেই, এ বিষয়ে আমরা জানব এই খামারের কর্ণধারের কাছ থেকে। বয়স্ক কর্ণধার পাশে গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়ানো ছিলেন। তিনি কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন,
—দেখো বাচ্চারা, অনেক কারণেই গরুর শিং না থাকতে পারে। তার আগে বুঝতে হবে, শিং কী? শিং প্রাণীদের আত্মরক্ষার একটি অঙ্গ, যেমন ধরো গন্ডার, তার একটিমাত্র শিং। কিন্তু সেটি আসলে তার শিং নয়, সেটি অনেকগুলো চুলের সমাহার। কিন্তু সেটাকেই আমরা শিং বলে ধরে নিই এবং সেই একটিমাত্র শিং দিয়েই গন্ডার আত্মরক্ষা করতে পারে।
—বাচ্চারা, তাহলে আমরা কী শিখলাম? প্রাণিবিজ্ঞানের শিক্ষক ফের চিত্কার করে উঠলেন।
—আমরা শিখলাম, গন্ডার আত্মরক্ষার জন্য এক শিং ব্যবহার করে, আর গরু দুই শিং।
—গুড, গুড, ভেরি গুড।
—এবার আসা যাক, শিং নেই কেন। কর্ণধার ফের শুরু করলেন, ‘জেনেটিক কারণে সাধারণত শিং গজানো আর না গজানো নির্ভর করে। তোমরা জানো, সব প্রাণীর শরীরে জীবকোষ থাকে। সেই জীবকোষে ক্রোমোজোম বলে একটা জিনিস থাকে...’
বিজ্ঞানের শিক্ষক দেখলেন, এই লোক তো বেশি গভীরে চলে যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা এতটা বুঝবে না। তিনি গলা নামিয়ে ফিসফিস করে তা–ই বললেন কর্ণধারের কানে কানে।
—তবে...কর্ণধার তাঁর বক্তব্যে ব্রেক কষলেন। ‘তবে গরুটির কেন শিং নেই, সেটা বলা যাক এবার। তোমরা জানতে চাও?’
—জি জি, জানতে চাই। শিক্ষার্থীরা সমস্বরে চেঁচাল।
—এর শিং নেই। কারণ, এটি আসলে একটা ঘোড়া!
এ সময় সবাই দেখল, দড়ি হাতে একটা লোক খামারের বাইরে ঘুরঘুর করছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। সবার কৌতূহল হলো, লোকটা কে? কর্ণধার জানালেন, লোকটা তাঁর খামারের ম্যানেজার। ‘এই, তুমি এখানে কী করছ?’ কর্ণধার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
সে পাল্টা জবাব দিল, ‘ইয়ে...মানে...আমি একটু দোটানায় আছি...মনে করতে পারছি না, খামারের কোনো গরু হারিয়েছি, না তার গলার দড়িটা খুঁজে পেয়েছি!’
—গর্দভ, তুমি তোমার চশমা হারিয়েছ। ক্রুদ্ধ কর্ণধার গরগর করলেন রাগে।
সবাই আশ্চর্য হয়ে দেখল, লোকটার হাতে একটা সাপ। যাকে বলে ‘সর্প ভ্রমে রজ্জু’ আরকি। প্রাণিবিজ্ঞানী ভাবলেন, যাক ভালোই হলো, এক ঢিলে দুই পাখি মারা গেল। আগামী ক্লাসে সরীসৃপ পড়ানোর কথা ছিল। শিক্ষার্থীরা তখন ‘সাপ! সাপ!!’ বলে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। তাদের সবার একসঙ্গে চেঁচাতে ভালো লাগে।