সেই পুরোনো গল্প। একটা গ্লাস তার অর্ধেকটা পানিতে ভরা। এখন একজন আশাবাদী দেখলে বলবে, ‘গ্লাসটা অর্ধেক ভরা।’ আর হতাশাবাদী বলবে, ‘গ্লাসটা অর্ধেক খালি!’
কিন্তু বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কী ঘটবে? ধরা যাক, একজন প্রাণিবিজ্ঞানী তিনি অর্ধেকটা গ্লাস দেখে বলবেন,
‘আগে বলুন, ওই অর্ধেকটা পানি কিসের? ড্রেনের, না ট্যাপের? যদি ড্রেনের হয় তাহলে তাতে যত মিলিয়ন মাইক্রো অর্গানিজম আছে, তাতে করে শহরের অর্ধেক মানুষের ডায়রিয়া হয়ে যাবে...।’
আর যদি রসায়নের কোনো বিজ্ঞানী হন তাহলে কী বলবেন তিনি, ওই অর্ধেকটা গ্লাস দেখে? তিনি বলবেন, ‘কে বলেছে ওই গ্লাস অর্ধেকটা ভরা? গ্লাস পুরোটাই ভরা। অর্ধেকটা পানিতে বাকি অর্ধেকটা বাতাসে...সেই বাতাসে অক্সিজেন আছে, নাইট্রোজেন আছে, কার্বন ডাই-অক্সাইড আছে...।’
আর যদি হন পদার্থবিদ? তিনি বলবেন, ‘আমাকে একটা চামচ দাও।’
—চামচ কেন?
—আমি চামচ দিয়ে গ্লাসের অর্ধেক পানিকে চক্রাকারে ঘোঁটা দেব।
—কেন?
—তাতে করে গ্লাসের পানিতে সেন্ট্রিফুগাল ফোর্স তৈরি হবে।
—তাতে লাভ?
—বাহ তখন সবাই দেখবে অর্ধেক পানিতেই বাইরে থেকে পুরো গ্লাস কীভাবে ভর্তি দেখায়, এটাই ফিজিকস!
বলা বাহুল্য, মনে হচ্ছে বিজ্ঞানীরা বেশির ভাগই আশাবাদী। তাঁরা যেন গ্লাসটা ভরাট দেখতেই বেশি আগ্রহী, সেটা যেভাবেই হোক না কেন। অর্ধেক গ্লাস খালি, না ভর্তি এই proverbial phrase টা আসলেই কতটা বৈজ্ঞানিক আর কতটা দার্শনিক—বিষয়টা বুঝতে এক বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ একটা সরাইখানায় ঢুকল। সে দেখল সবাই গ্লাস নিয়ে বসে আছে। সবার গ্লাসেই অর্ধেক তরল। সে প্রথমজনকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার টেবিলের ওপর গ্লাসের অর্ধেক তরল দেখে আপনি কী ভাবছেন? অর্ধেক ভরা, না খালি?’
—একটা না, আমি তো দুটো গ্লাস দেখছি। আপনি কোনটার কথা বলছেন? ডান দিকেরটা, না বাঁ দিকেরটা?
বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ বুঝল এই ব্যাটা বেহেড হয়ে গেছে। সে দ্বিতীয়জনকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার টেবিলের ওপর গ্লাসের অর্ধেক তরল দেখে আপনি কী ভাবছেন? অর্ধেক ভরা, না খালি?’ দ্বিতীয়জন একটু চিন্তা করল। তারপর বলল, যেহেতু গ্লাসের ওপরে খোলা তাই গ্লাসের ওপরের অর্ধেক পড়ে গেছে! নিচে যেহেতু বন্ধ তাই নিচের অর্ধেক আছে! তরুণ বুঝল এই ব্যাটাও বেহেড!
দান দান তিন দান। বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ তৃতীয়জনকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার টেবিলের ওপর গ্লাসের অর্ধেক তরল দেখে আপনি কী ভাবছেন? অর্ধেক ভরা, না খালি?’ লোকটি মৃদু হেসে বলল,
—দেখুন আমি একজন অপটোমেটরিস্ট। দু-এক গ্লাস না খেলে আমার ক্লায়েন্টদের সঠিক পরামর্শ দিতে পারি না।
বলা বাহুল্য, এরপর বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ দ্রুতই স্থান ত্যাগ করে!