প্রাঙ্ক

একটা প্যাসেঞ্জার প্লেন একটু নিচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। এক যাত্রী জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল, হঠাৎ সে আঁতকে উঠল, ‘একি দেখছি!’ সে দেখে, একঝাঁক পাখি উড়ে যাচ্ছে প্লেনের খুব কাছ দিয়ে, কিন্তু সব কটি উল্টো হয়ে উড়ছে। তার মানে, প্লেন উল্টো হয়ে উড়ছে। সে আতঙ্কে চিৎকার–চেঁচামেচি করতে থাকল। তার চিৎকারে অন্য যাত্রীরা জানালা দিয়ে তাকাল। সবাই একই দৃশ্য দেখল যে একঝাঁক পাখি উল্টো হয়ে উড়ছে। তার মানে এটা নিশ্চিত, প্লেনটা উল্টো হয়ে উড়ছে। আতঙ্কে প্লেনের ভেতরে হাউমাউ শুরু হয়ে গেল।

খবর পেয়ে প্লেনের পাইলট ছুটে এলেন। তিনি সবাইকে শান্ত হতে বললেন। তারপর তিনিও জানালা দিয়ে তাকালেন। হ্যাঁ, ঘটনা সত্যি, সব পাখি উল্টো হয়ে উড়ছে। তারপর পাইলট একটা অট্টহাসি দিলেন।

পাইলট হাসি থামিয়ে বললেন, ‘শুনুন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের প্লেন কিন্তু সোজা হয়েই উড়ে চলেছে। বরং পাখিগুলো উল্টো হয়ে উড়ছে।’

—কী বলছেন, পাখি কেন উল্টো হয়ে উড়বে? যাত্রীরা জানতে চাইল।

—কারণ, ওগুলো হামিংবার্ড। পৃথিবীতে হামিংবার্ডই একমাত্র পাখি, যার ডানার বল এবং সকেটে এমন মেকানিজম আছে যে সে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত যেকোনো ডিরেকশনে উড়তে পারে। উল্টো হয়েও উড়তে পারে। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের প্লেনের পাশ দিয়ে তারা উল্টো হয়ে কেন উড়ছে, সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার...

যাত্রীরা শান্ত হয়ে এবং হতভম্ব হয়ে বসে রইল।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হামিংবার্ডের দল কেন দল বেঁধে উল্টো হয়ে উড়ছে? বরং তাদের কাছে যাওয়া যাক।

—আচ্ছা, আমরা দল বেঁধে উল্টো হয়ে উড়ে চলেছি কেন? সবচেয়ে কম বয়স্ক হামিংবার্ডটি বয়সে প্রবীণ হামিংবার্ডকে প্রশ্ন করল।

—১ নম্বর কারণ হচ্ছে, মানুষেরা ইদানীং প্রাঙ্ক করা পছন্দ করে, আমরা একটু প্রাঙ্ক করলাম ওদের সঙ্গে। আর ২ নম্বর এবং আসল কারণ হচ্ছে, তোমাদের কি মনে হয় পৃথিবীটা সোজা চলছে? মানুষেরা পৃথিবীটাকে যেভাবে চালাচ্ছে, আমরা সেভাবেই উড়ছি!

হঠাৎ পাখির দল দেখে, তাদের পাশ দিয়ে দুটি কুমির উড়ে চলেছে। এবার তারা আঁতকে উঠল! এটা কী করে সম্ভব, ডানা ছাড়া কুমির কী করে ওড়ে? প্রবীণ হামিংবার্ড চিৎকার করে উঠল

—তোমরা কী করে উড়ছ ডানা ছাড়া? নিশ্চয়ই আমাদের সঙ্গে প্রাঙ্ক করছ।

—আমরা উড়ছি কে বলল? আমরা বসে সূর্যের তাপ নিচ্ছি...কেন তোমরা কি হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার সূত্র ভুলে গেছ?

লেখক: কার্টুনিস্ট; সম্পাদক, উন্মাদ