ডাইনোসর যখন আবিষ্কারক

আবিষ্কার কি শুধু বিজ্ঞানীরাই করেন? মানে মানুষেরাই?

প্রাণিকুল কি কিছু আবিষ্কার করে না? কিংবা পরিষ্কার করে বললে বলা যায়, ২৩ কোটি বছর আগের ডাইনোসররা, যারা টানা ১৬ কোটি বছর পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে, তারা কি কিছু আবিষ্কার করে যায়নি মানুষের জন্য?

যদি বলি, দানবাকৃতির সৌরপডস ডাইনোসররা মানুষের জন্য বিরাট এক আবিষ্কার করে গিয়েছিল, তাহলে কি আমরা অবিশ্বাস করব?

শিল-পাটা, যেটা দিয়ে আমাদের দাদি–নানি, মা–খালারা মসলা পিষে গেছেন বা এখনো পেষা হচ্ছে (এখন অবশ্য আধুনিক গিন্নিদের জন্য পাউডার মসলা পাওয়া যায় বাজারে), সেটা কারা আবিষ্কার করল? সামান্য হলেও কিন্তু অসাধারণ আবিষ্কার। বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন মিসরীয়রা প্রথম পাথরে পাথর ঘষে মসলা পেষার আবিষ্কারক। কিন্তু তারও আগে, ২৩ কোটি বছর আগে এই জিনিস আবিষ্কার করে গেছে সৌরপডস ডাইনোসররা (Sauropod dinosaur)। তারা যে মানুষের জন্য আবিষ্কার করেছে, তা নয়। তারা নিজেদের জন্যই আবিষ্কার করেছে এই পদ্ধতি। তারা প্রচুর খেত। সারা দিন ধরেই খেত, দিন শেষে প্রমাণ সাইজের দু–তিনটা পাথরও গিলে ফেলত। জেনেশুনে কেন পাথর গিলত? আসলে ওই পাথরগুলো তার বিশাল পাকস্থলীতে গিয়ে শিল-পাটার কাজ করত। এটাই তার খাদ্য হজমের বৈজ্ঞানিক কৌশল!

পৃথিবীর শেষ সৌরপডস ডাইনোসরকে পাওয়া গেছে গলায় পাথর আটকে মারা যাওয়া অবস্থায়। আহা বেচারা, দিন শেষে সাইজমতো পাথর গেলায় সামান্য এদিক–ওদিক হয়েছিল নিশ্চয়ই!

পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালার ব্যাপারটা কিন্তু মানুষেরই কাজ, আবিষ্কারও বলা যেতে পারে। প্রাচীন মানুষ প্রথম যখন পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলল, তখন একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করল—

এটা কী হলো?

কী হলো?

এই যে আমার হাতটা বিশ্রীভাবে ঝলসে গেল!

এটা মনে হচ্ছে বিরাট কোনো আবিষ্কার করেছ তুমি, এটার একটা নাম দাও।

কোনটার নাম দেব? যেটার কারণে আমার হাতটা ঝলসে গেল, সেটা তো আর দেখাই যাচ্ছে না।

আরে, যেটা দেখা যায় না, সেটার নাম দেওয়ার দরকার কী? তোমার ঝলসানো জায়গাটার একটা নাম দাও।

কী দেওয়া যায়?

‘পুড়ে যাওয়া’।

ওহ্‌, সত্যিই দারুণ নাম হয়েছে! তোমাকে ধন্যবাদ।

লেখক: কার্টুনিস্ট, সম্পাদক, উন্মাদ