করোনা ভ্যাকসিন

Kazi Akash

স্কুলের ড্রইং ক্লাসে বাচ্চারা ছবি আঁকছে। একটু পর স্যারের কাছে সবাই ছবি জমা দিচ্ছে। স্যার মার্কিং করছে। কেউ দশে ছয়, কেউ আট, কেউবা পাঁচ পেয়েছে। একজন দেখা গেল সাদা খাতা জমা দিয়েছে?

এই তুই আঁকিসনি?

এঁকেছি তো স্যার।

কই এঁকেছিস? সাদা খাতা দেখছি।

আমি স্যার ভাইরাস এঁকেছি। করোনাভাইরাস, খালি চোখে দেখা যায় না তো।

হ্যাঁ, এখন দেশজুড়ে একটাই আলোচনা, কোভিড–১৯, করোনাভাইরাস! পৃথিবীর তাবৎ বড় বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট সবাই মুখ চুন করে বন্ধ ঘরে বসে আছেন, কোয়ারেন্টিনে। তাঁদের স্টকে হাইড্রোজেন বোমা, অ্যাটম বোমা, নিউট্রন বোমা...কোনো কিছুই আর কাজে আসছে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সামান্য আরএনএর একটা বল, যার চারদিকে প্রোটিনের আস্তরণ! কোভিড–১৯ ভাইরাস এখন সবার জন্য মহা মহা ত্রাস!

সবাই তাকিয়ে আছে বিজ্ঞানীদের দিকে। কখন করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করবেন তাঁরা? তারপর আবার নতুন করে বেঁচে উঠবে পৃথিবীর মানুষ?

এই সময় দেখা গেল, এক বিজ্ঞানী দরজা–জানালা লাগিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর ল্যাবে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করে যাচ্ছেন। বাইরে সবাই অপেক্ষমাণ। এই গবেষক–বিজ্ঞানী নির্ঘাৎ করোনার ভ্যাকসিন বোধ করি আবিষ্কার করে ফেলতে যাচ্ছেন। এ সময় বিজ্ঞানী দরজা খুলে বের হলেন—

তোমাদের কারও কাছে হেক্সিসল আছে?

জি জি আছে। দু–তিনজন হেক্সিসল বের করে দিল। সবার পকেটে, ব্যাগে এখন দু–একটা করে এই জিনিস থাকে ছোট–বড় শিশিতে। বিজ্ঞানী আবার ঢুকে গেলেন তাঁর ল্যাবে। মিনিট দশেক পরে বের হলেন আবার।

স্পেয়ার গ্লাভস হবে কারও কাছে?

জি জি অবশ্যই আছে। দু-তিনজন দু–এক জোড়া গ্লাভস বের করে দিল। বিজ্ঞানী গ্লাভস নিয়ে আবারও ঢুকে গেলেন। বাইরে ফিসফাস আলোচনা চলছে। ‘এত বড় গবেষক, তাঁর ল্যাবে কি এসব নেই? বারবার বাইরে থেকে চেয়ে নিচ্ছেন যে?’

‘মনে হয় শর্ট পড়ে গেছে। তাঁর গবেষণায় তো বারবার ভাইরাস নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে, গ্লাভস বদলাতে হচ্ছে।’

‘তা–ও ঠিক’ অন্যরা সমর্থন করে।

অবশেষে বের হলেন বিজ্ঞানী তাঁর ল্যাব থেকে। কপালের ঘাম মুছলেন। খুক খুক করে কাশলেন বলেও মনে হলো। সবাই ভেতরে ভেতরে আঁতকে উঠল। শেষ পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হলেন না তো আবার? একজন সাহস করে প্রশ্ন করল, ‘স্যার, শেষ পর্যন্ত কি বের করতে পেরেছেন?’

পেরেছি।

ওহ হুররে...চারদিকে একটা আনন্দের হুল্লোড় উঠল যেন।

তাহলে স্যার আমরা কোভিড–১৯–এর ভ্যাকসিন বের করতে পেরেছি অবশেষে?

অ্যাঁ? না, আমার মুঠোফোনটা হাই কমোডে পড়ে গিয়েছিল, ওটা বের করতে পেরেছি শেষ পর্যন্ত!

লেখক: কার্টুনিস্ট, সম্পাদক, উন্মাদ