সাউন্ড সায়েন্টিস্ট

Abdul Gaffar

এক বৃদ্ধা মহিলা শপিং করতে ঢুকেছে একটা শপিং মলে। সে একটা গিফট কিনবে তার ভাড়াটের জন্মদিনে দেওয়ার জন্য। কিন্তু শপিং মলের গিফট কর্নারের কাউন্টারে কাউকে না দেখে অবাক হলো। তাকিয়ে দেখে পাশেই সানগ্লাস পরে একজন লম্বা লোক দাঁড়িয়ে। তাকেই বলল,

—কিছু মনে করবেন না, আমি এখানে কাউকে দেখছি না। আপনি কি বলতে পারবেন এই জিনিসটা কী? আমি আমার ভাড়াটের জন্য একটা গিফট কিনতে চাচ্ছি। এখানে গিফট আইটেমগুলো সবই বেশ আধুনিক, কিন্তু কোনটা কী, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

লোকটা বলল, ‘মাফ করবেন, আমি একজন অন্ধ। কাজেই দেখতে পারছি না আপনার হাতের জিনিসটা ঠিক কী। তবে আমি একজন সাউন্ড সায়েন্টিস্ট। জিনিসটা আপনি মাটিতে ফেলুন। শব্দ শুনে আমি বলে দিচ্ছি এটা কী।’

—সত্যি শব্দ শুনেই বলে দিতে পারেন আপনি? বলে বৃদ্ধা মহিলা জিনিসটা মাটিতে ফেলল। শব্দ হলো। লোকটা বলল, ‘জিনিসটা একটি অত্যাধুনিক ফ্লাওয়ার ভাস। প্লাস্টিকের তৈরি, তবে খুব বেশি দিন টিকবে না, দাম পড়বে ১ হাজার টাকার মতো।’

—আশ্চর্য, আপনি মাটিতে পড়ার শব্দ শুনে এত কিছু বলে দিলেন, আপনি তো দারুণ বিজ্ঞানী।

—জি সাউন্ড সায়েন্সে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি করেছি ১০ বছর আগে।

—সত্যি আমি সৌভাগ্যবান। আপনি দামটা বলে দিচ্ছেন এটা আমার জন্য আরও সুবিধা হলো। কারণ এত দাম দিয়ে আমি আমার ভাড়াটের জন্য গিফট নিতে চাচ্ছি না। আচ্ছা এবার এটা মাটিতে ফেলি, বলুন দেখি এটা কী? বলে মহিলা আরেকটা জিনিস মাটিতে ফেলল। শব্দ হলো। লোকটা বলল, ‘এটা একটা কাঠের তৈরি কয়েন রাখার ব্যাংক। তবে জিনিসটা সম্ভবত বাচ্চাদের জন্য। আপনার ভাড়াটের জন্য মানানসই হবে না হয়তো। আর এর মূল্য ৭৫০ টাকা।’

—তাহলে এটা? বলে মহিলা আরেকটা জিনিস মাটিতে ফেলল!

—এটা একটা কলমদানি কাস্ট আয়রনে ঢালাই, মূল্য ১৩৬০ টাকা।

—না দাম বেশি। এবার এটা ফেলি...

মহিলা জিনিসটা মাটিতে ফেলল, শব্দও হলো। শব্দবিজ্ঞানী বলল, ‘এটা একটা বিশেষ ধরনের অত্যাধুনিক কফিপট। চিনেমাটির তৈরি। আপনার পছন্দ না হলেও মনে হয় এটা আপনাকে নিতে হবে। কারণ এটা এইমাত্র ভেঙে তিন টুকরা হয়েছে...মূল্য ২ হাজার ৫০০ টাকা।’

সেই হতভাগা বৃদ্ধা আর সাউন্ড সায়েন্টিস্ট সেই ব্লাইন্ডম্যানের প্রসঙ্গ থাক। আমরা বরং ‘ব্লাইন্ডম্যান পারসপেকটিভে’ আসি। বিজ্ঞানমনস্ক ছবি আঁকতে গেলে ওয়ান ডিগ্রি, টু ডিগ্রি, থ্রি ডিগ্রি পারসপেকটিভের একটা ব্যাপার আছে। এ ছাড়া রয়েছে আরও চারটি ভিন্ন কনসেপচুয়াল পারসপেকটিভ। তার একটা হচ্ছে এই ‘ব্লাইন্ডম্যান পারসপেকটিভ’। এটা আসলে কিছুই না, সেই অন্ধদের হাতি দর্শনের মতো একটা ব্যাপার। তো সেই ব্লাইন্ডম্যান পারসপেকটিভের ব্যাপারটাই হাতে-কলমে বুঝতে একটা হাতির কাছে কয়েকজন অন্ধকে আনা হলো। হাতিটা অবশ্য মৃত ছিল বলেই এই পরীক্ষা করা সহজ হলো। একজন অন্ধ মৃত হাতির গায়ে হাত দিয়ে বলল, ‘এটা একটা দেয়াল।’ একজন পায়ে হাত দিয়ে বলল, ‘এটা একটা পিলার।’ একজন লেজে হাত দিয়ে বলল, ‘এটা দড়ি।’ একজন দাঁতে হাত দিয়ে বলল, ‘এটা নির্ঘাত একটা তলোয়ার।’ একজন হাতির শুঁড়ে হাত দিয়ে বলল, ‘এটা অবশ্যই একটা হোসপাইপ।’ একজন কানে হাত দিয়ে বলল, ‘এটা পাখা।’ তবে একজন অন্ধকে পাওয়া গেল, সে হাতির গায়ে হাত না দিয়ে আশপাশে কিছু খুঁজছে!

—তুমি কী খুঁজছ ওখানে? পারসপেকটিভ গবেষক বিরক্ত হয়ে জানতে চাইল।

—টাকা।

—কিসের টাকা?

—হাতি মরলে লাখ টাকা না? সেই টাকা!